রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১১

স্মৃতিচারনের সমস্যা (আবারো !)

৩টি মন্তব্য :
জ্ঞাত এক পাঠকের মেইল পেলাম সেদিন। উনি অভিযোগ করেছেন আমার স্মৃতিচারনে নাকি শুধুই দূঃখ খুঁজে পান। অভিযোগ অস্বীকার করছি নাব্যপারটা ইচ্ছেকৃত। প্রবাস জীবনের শুরু বা বর্তমান সময়ের নানা সমস্যা বা কস্টকর ব্যপারগুলো অনেকেই এড়িয়ে যান  নানা কারনে। এহুলোকে এড়িয়ে তুলে ধরেন নানান সুখকর সব ঘটনা যার অনেকটুকুই সত্য না। এটাকে ঠিক মিথ্যে বলাও যাবে না। যেমন, 'মা আমি লাল গাড়ি কিনেছি' অথচ ছেলে হয়তো ট্রেনে চেপে যাতায়াত করে। মাকে খুশি করার জন্য ছেলের এতটুকু মিথ্যে মায়ের খুশির কাছে ম্লান হয়ে যায়। তবে অনেকেই বাড়িয়ে বলতে পছন্দ করেন। ব্যপারটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যপার, এ ব্যপারে আমার মাথা ব্যথা নেই।

এখন কথা হচ্ছে কেনো আমি সুখের অনুভূতি বাদ দিয়ে দূঃখের সওদা করছি। সওদা করা রূপক অর্থে ব্যবহার করা হলেও আদতে সবাই যখন সুখের কথা বলে আমি না হয় দূঃখ বা কস্টের দিকটাই তুলে ধরি। সুখ- দূঃখ মিলেইতো আমাদের দিন রাত্রি।

২০১১ শেষ হতে চল্লো। স্মৃতি ভান্ডারে কত কিছুই জমা হচ্ছে। মাঝে সাজে মনে হয় এমন কোনো প্রযুক্তি থাকতো যার মাধ্যমে সব স্মৃতিকে কোনো হার্ড ড্রাইভে নামিয়ে প্রিন্ট করা যেতো বা সোজা ব্লগে তুলে দেয়া যেতো। ব্যপরাটা মন্দ হতো না। তবে সমস্যাও কম হতো না ! এমন কিছু হয়তো নিজের অজান্তে বের হয়ে এলো যা কাউকে জানাতে চাই না  



রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১১

গল্পের পেছনের গল্প

৪টি মন্তব্য :
দেশে থাকতে বিটিভির একটা ডকু-বিজ্ঞাপনের দেখেছিলাম বারান্দায় অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন আবুল খায়ের। ঘরের ভেতর থেকে হঠাৎ করে ভেসে আসলো সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর কান্না। দরজা খুলে দাই এসে বল্লো মেয়ে হয়েছে। আবুল খায়ের সংগে থাকা নাতিকে নিয়ে মোনাজাত করছেন। দৃশ্যটার মাঝে অন্যরকম এক পরিতৃপ্তি আছে। সিনেমা বা নাটকে আমরা প্রায়শই দেখি সদ্য জন্ম নেয়া শিশুকে কোলে নিয়ে পিতার মুখ, চারপাশে হাসি মাখা একগাদা মুখ। দূর্ভাগ্য এর কোনোটাই আমার ভাগ্যে লেখা ছিলো না ।  দু ছেলের জন্ম নেবার সময় মোনাজাত করবার মতো দাদা পায়নি আমার ছেলেরা, পাশে পায়নি একদল স্বজনের হাসিমাখা মুখ। পাশে ছিলাম শুধুই এই মানুষটি, কান্নারত আমার বউ আর মাতৃরুপী ধাত্রী।

শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১৭

৫টি মন্তব্য :
বাসা পাওয়া বেশ ঝক্কি ঝামেলার ব্যপার। আমার জন্য সেটা ছিলো জীবন মরন সমস্যা। একে ওকে বলি বাসার কথা, সবাই হাঁ বলে কিন্তু কারো কাছ থেকে সারা শব্দটি পাওয়া যচ্ছিলো না। এমনি এক সময় এক বন্ধু আশির্বাদ হয়ে আসলো। ওর কাছ থেকে শুনলাম দুজন বাংলাদেশী নাকি বাসার জন্য বোর্ডার খুঁজছে। উনাদের সাথে কথা বলে ঠিক করলাম যেই শর্তই হোক না কেনো ঐ বাসায় উঠবো।

সে দিন বাসায় কেউ ছিলো না। সবাই যথারীতি আমাকে না জানিয়েই সিডনী গিয়েছিলো। একলা বাসায় সব কিছু গুছিয়ে ট্যাক্সি ডেকে যখন সেই নতুন বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম তখন এক অপার্থিব শান্তি লেগেছিলো। মনে হচ্ছিলো পিঠের উপর থেকে বিশাল এক বোঝা নেমে গেলো। ৪ বেড রুমের নতুন বাসায় লোক বলতে আমি আর আরেক বাংলাদেশী সিনিয়র। নতুন হাউসমেটকে নিয়ে ছোট খাটো গল্প লিখে যাবে, গল্প না বলে রম্য রচনা বল্লেই মনে হয় বেশী মানানসই হবে।


বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১১

সুখের লাগিয়া - কবি জ্ঞানদাসের পদাবলী

কোন মন্তব্য নেই :
সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু  

সুখের লাগিয়া                  এ ঘর বাঁধিনু 
অনলে পুড়িয়া গেল | 
অমিয়া-সাগরে                 সিনান করিতে 
সকলি গরল ভেল || 
সখি কি মোর করমে লেখি | 
শীতল বলিয়া                 ও চাঁদ সেবিনু 
ভানুর কিরণ দেখি || 
উচল বলিয়া             অচলে চড়িতে 
পড়িনু অগাধ জলে | 
লছিমি চাহিতে           দারিদ্র্য বেঢ়ল 
মাণিক্য হারানু হেলে || 
নগর বসালাম           সায়র বাঁধিলাম 
মাণিক পাবার আশে | 
সাগর শুকাল          মাণিক লুকাল 
অভাগার করম-দোষে || 
পিয়াস লাগিয়া       জলদ সেবিনু 
বজর পড়িয়া গেল | 
জ্ঞানদাস কহে       কানুর পিরীতি 
মরণ অধিক শেল || 
কি অসাধারন !

মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১৬

1 টি মন্তব্য :

জানি না এটা সবারই হয় কি না, তবে আমার প্রায়শই হয়। প্রথম পরিচয়েই অনেককে আপনা মনে হয়, প্রথম বারের মতো যাওয়া নতুন জায়গাকে আপন মনে হয়। ও'কোনোরের বাসাটাকে কেনো জানি প্রথম বারেই আপন মনে হয়নি। মানুষগুলো কেন যেনো ছাড়া ছাড়া মন মানসিকতার। ঠিক আমি যেমনটি পছন্দ করি সেমনটি নয়, আন্তরিকতার দারুন অভাব পদে পদে। যে বন্ধুর জন্য এ বাসায় উঠেছিলাম সে বন্ধুটিও কেমন যেনো বিশাল বদলে গিয়েছে, আবেগহীন ব্যবসায়ী মনোবৃত্তির। যখন বাসার সবাই বুঝতে পারলো আমার হাতে টাকা পয়সা তেমন একটা নেই ব্যবহারেও পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম সবার মাঝে। শেখ সাদির সেই বিখ্যাত গল্পটির মতো, পোষাকে ব্যবহার বদলে যায়। পোষাককে রূপক অর্থে ব্যবহার করলেও এ গল্পকে নিজের অভিজ্ঞতার মাঝে খুঁজে পাই প্রায়শই।

বাসায় সর্বেসত্তা ছিলো বন্ধুপত্নী। ভারতীয় পান্জাবী এই মেয়েটি প্রথম থেকেই আমাকে পছন্দ করতে পারেনি। হয়তো আমার স্বাধীন চেতা স্বভাবের কারনেই হোক বা আর্থিকভাবে দুধেল হবার সম্ভাবনা নেই বলেই হোক। আমার সেই বন্ধুটিও ছিলো বউ এর একান্ত বাধ্যগত। বউ এর কথায় উঠতো আর বসতো। আশে পাশের সবাই এটা নিয়ে হাসাহাসি করলেও তার বিকার ছিলো না এতে। পড়াশুনা ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী অভিবাসী হতে বউ এর নির্ভর করা ছাড়া তার ‌ উপায়ও ছিলো না। তবে ওদের একেকজনের প্রতি সত্যিকারে ভালোবাসার প্রসংশা করতেই হয় সব সময়। বাসায় অন্য যে ছেলেটি ছিলো সেও বন্ধুভাবাপন্ন ছিলো না একদমই। বন্ধুপত্নীর সারমেয় সুলভ একান্তবাধ্যগত ছেলেটিও কেমন জানি উন্নাসিক আচরন করতো। মুখে বা আচরনে প্রকাশ না করলেও সেটা বুঝতে আমার সমস্যা হতো না।

বাসায় রান্না বান্নায় তেমন একটা সমস্যা ছিলো না। বন্ধুপত্নী নিয়মিতই রান্না করতো। আমরা তাকে সাহায্য করতাম। মাঝে সাজে আনাড়ী ভাবে আমিও রান্না করতাম। মনে হয় খেতে ভালোই হতো সে সময়, সবাই বেশ মজা করেই খেতো। বড় সরো বাজারগুলো একবারে করা হতো। সপ্তাহের বাজার করার পর রিসিট গুলো এক সাথে রেখে দেয়া হতো। মাসের শেষে হিসেব করে যার যার ভাগ দিয়ে দিতো। যেদিন প্রথমবারের মতো সেই বাসার রান্না ঘরে ঢুকি তখন সেই বাংলাদেশী ছেলেটি নন স্টিক ফ্রায়িং প্যান কি জিনিস আর সেটা কিভাবে ধুতে হয় সেটা শিখিয়ে দিচ্ছিলো যেনো আমি জীবনেও নন স্টিক ফ্রায়িং  ‌প্যান দেখিনি। আমিও হাসি চেপে বাধ্যগত ছাত্রের মতো সব কিছু শিখে নিচ্ছিলাম।

রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১৫

1 টি মন্তব্য :
 ক্যানবেরায় এসে স্কুল জীবনের এক বন্ধুর (?) বাসায় উঠবার সৌভাগ্য (?) হয়েছিলো। বিদেশ বিভূঁয়ে একলা থাকতে হবে না ভেবে মনটা বেশ হালকা ছিলো। ও'কোনোর নামে এক সাবার্বের ৩ বেডরুমের একটা পুরাতন ছিমছাম বাসা। আমার জন্য বরাদ্দ করা ছোট্ট রুমটিতে কোনো বিছানা ছিলো না। ঘরের এককোনে পাতা একটা ম্যাট্রেস, একটা পড়ার টেবিল আর একটা কাবার্ড। কথা ছিলো সপ্তা শেষে ৭০ ডলার, বিদ্যুত, গ্যাসের বিল আর খাওয়া দাওয়ায় যা খরচ আসে তার ভাগ দিতে হবে। এতে আপত্তি থাকবার কথা না, যেখানে যে নিয়ম। বাসায় বন্ধু,বন্ধু পত্নী আর একটা বাংলেদেশি ছেলে। ছেলেটি বাদে সবার পড়াশোনা শেষ। বন্ধু আমার পড়াশোনা শেষ না করেই ডলারের নেশায় উদয় অস্ত ম্যাকডোনাল্ডসে কামলা দেয়, সেই সাথে তার বউ। সবারই গাড়ি আছে আমি ছাড়া।

প্রথম হপ্তাটা ভালোই গেলো। ব্যাংকে গিয়ে ইউ এস ডলার ভাঙানো, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া, ওরিয়েন্টশন উইকের নানা কিছুতে যোগ দেয়া আর ইউনির এখান সেখানে ঘুড়ে বেড়ানো। ক্লাস তখনো শুরু হতে সপ্তাহ খানেক বাকি ছিলো। হাতে তেমন কিছু করার ছিলো না ঘুমোনো ছাড়া। আশে পাশে এমন কেউ ছিলো না যে এখানে সেখানে ঘুড়িয়ে কিছু দেখাবে। বাসের টিকেট কিনে যেখানে যাবার কথা সেখানে না গিয়ে ভুল করে কতযে অন্য জায়গার চলে গিয়েছিলাম সেটা মনে পরে বেশ মজা লাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য ৫০% ডিসকাউন্টে সে সময় টিকিট কেনা যেতো। টার্ম টিকিট ছিলো ৫৫ ডলার, উইক ডেজ এ যত খুশি ইচ্ছা ততবার ব্যবহার করা যেতো। উইক এন্ডের জন্য আরেকটা টিকিট কিনেছিলাম ১০ কি ১২ ডলার দিয়ে।

প্রথম যেবার শপিং করতে মলে গেলাম তখন বিশাল মল দেখে অনেক অবাক হয়েছিলো। ঢাকায় তখনো বড়সরো কোনো শপিং সেন্টার হয়নি। আমার কাছে নইু মার্কেট বা চাঁদনি চকই বিশাল কিছু। মলের সব কিছু ঝকমকে তকতকে। একটা সস্তা মোবাইল কেনার দরকার ছিলো। অপটাসের মোটোরলা সেট সহ একটা প্রিপেইড কালেনশন নিয়েছিলাম। দাম পড়েছিলো ৬০ কি ৭০ ডলার, সাথে ৩০ ডলারের ক্রেডিট। বাসায় এসে দেখি দোকানদার ৩০ ডলার চার্জ করেছে। ইচ্ছে হচ্ছিলো দোকানে গিয়ে বাকি টাকাটুকু দিয়ে আসে কিন্তু অচেনা শহরে কিছুই যে চিনি না। পরে একটা ম্যাপ কিনে নেয়ায় বেশ কাজে লেগেছিলো। ম্যাপ রিডিং জানায় ক্যানবেরায় কোথায় কি আছে বা কোন জায়গা কত দূর তা জানতে বেশ সহজ হয়েছিলো। যেখানেই যেতাম সাথে ম্যাপ থাকতো।

হোস্টেলে জীবনের অনেকটা সময় থাকার পরো মনটা খুব খারাপ লাগতো সে সময়। খুব ইচ্ছে করতো দেশে কথা বলতে। বাংলাদেশী এক ভদ্রলোকের দওকান থেকে ফোন কার্ড কিনে প্রথম যখন ফোন করি দেশে সে সময় টুকুর কথা এখনো মনে আছে। মন হচ্ছিলো কত যোগ কথা বলি না। কতকিছু বলার ছিলো কিন্তু অনেক কিছুই যেনো বলা হলো না। মাঝে তো একবার সরাসুরি ফোন করে বসেছিলাম দেশে। ৫/৭ মিনিট কথা বলার পর যখন মাসের শেষে বিল পেয়েছি তখনতো আক্কেল গুরুম অবস্থা। পুরো ১২ ডলার বিল এসেছে আমার নামে।

ও'কোনোরের বাসায় থেকেছিলাম মাস ২ কি আড়াই। সে এক ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা। আমার শত্রুরও যাতে এমনি না হয়।

সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১১

Jervis Bay tour & Whale watch October 2011

কোন মন্তব্য নেই :

খুব সহজেই আমরা মেনে নেই

1 টি মন্তব্য :
মরা যারা স্বেচ্ছায় বা একান্ত বাধ্য হয়ে প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছি তাদের জীবনটা আসলে শুরু হয় এদেশে জন্ম নেয়া অন্য যে কারো ২০/২৫ বছর পরে থেকে। আসলে বলতে চাচ্ছি এরা আমাদের চাইতে দৌড় শুরু করে ২০/২৫ বছর আগে থেকে। এটা আসলে যারা পড়াশোনা করতে এসে থিতু হয়েছে তাদের জন্য। যারা দেশের প্রতিস্ঠিত জীবন ছেড়ে বা নতুন করে জীবন শুরু করবার জন্য বিদেশে এসেছে তাদের দৌড় শুরু করতে হয় আরো পর থেকে।

প্রবাস জীবনের প্রথম অবস্থার ধাক্কা সামলে যখন কিছুটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলবার ফুসরত মেলে তখন এক সময় আমরা আবিস্কার করি নতুন কিছুর। পড়াশোনা বা অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে থেকেও চাকুরি করতে হয় বয়সে ছোট কারো নিচে। সময়ে নিজ অবস্থান বদলালেও সেই কমবয়সী মানুষটিরও অবস্থান বদলে যায়। হাজারো যোগ্যতা  থাকা সত্বেও অনেক সময় সেই যোগ্যতার পুরুস্কারও মেলে না। অনেকে হয়তো আমার সাথে একমত হবেন না। একবার নিজের অবস্থানের সাথে যা হওয়া উচিৎ ছিলো সেটার একবার তুলনা করুনতো !

পোস্টের শীরোনামে যাই থাকনা কেনো বাস্তবতা কিন্তু অন্য কথা বলে। খুব সহজেই আমরা এসব মেনে নেই,  আসলে মেনে নিতে বাধ্য হই। দেশে থাকতে সংখ্যালঘুদের বৈষম্যের শিকার হবার কথা শুনেছি, উপলব্ধি করিনি। এখন নিজে বা আশে পাশের অনেককে এর মাঝ দিয়ে যেতে দেখে উপলব্ধি করছি হাড়ে হাড়ে। বৈষম্যের শিকার হওয়া বড্ড কস্টের। সেটা বর্ণের দোষ দেই বা অন্য যে কিছুরই দোষ দেই।

রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১১

কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (Bangladesh Police clerance) সার্টিফিকেট পাবেন

কোন মন্তব্য নেই :
নানা কাজে আমাদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। অনেকেরই জিজ্ঞাসা থাকে কিভাবে তা পাওয়া সম্ভব। তাদের জন্যই এই পোস্ট।

যারা স্থায়ী ঠিকানা ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকায় তারা ঢাকা মেট্টোপলিটান পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়ান স্টপ সার্ভিস থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবেন, আর যারা ঢাকার বাহিরে তারা তাদের স্থায়ী ঠিকানার পুলিশ কমিশনার / পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে।

ধাপ সমূহ:

১) পাসপোর্টের ১- ৬ পাতা এবং অন্য সকল পাতা যেখানে পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে বা কোনোরকম সংযোজন অথবা সংশোধন করা হয়েছে সেই সব পাতার ফটোকপি প্রথম শ্রেণীর  ‌গ্যাজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করাতে হবে। প্রবাসীরা সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস/হাইকমিশনের কনস্যুলার শাখা থেকে তা সত্যায়িত করাবেন।

২) পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা ঢাকায়  হলে ঢাকা মেট্টোপলিটান পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে আবেদন করতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের এই সাইটে বিস্তারিত পাওয়া যাবে।
 ঢাকার বাহিরে হলে সংশ্লিস্ট জেলার পুলিশ সুপার বা থানার ওসির বরাবর আবেদন করাতে হবে।

৩) প্রবাসীরা ডাক যোগে আবেদন পত্র ও পাসপোর্টের সত্যায়িত পাতা দেশে কোনো আত্নীয়র কাছে পাঠাবেন। যিনি আপনার পক্ষ হয়ে কাজ করবেন তাকে অথারাইজ করে একটা চিঠি এর সাথে সংযুক্ত করা ভালো।

৪) সোনালী ব্যাংকে হতে ৳৫০০ টাকার "ট্রেজারী চালান" আবেদন পত্রের সাথে যুক্ত করতে হবে।
ট্রেজারি চালান করার সময় এই কোডটি দরকার হবে 1 - 2 2 0 1 - 0 0 0 1 - 2 6 8 1। চালানের আবেদন পত্র বিনে পয়সায় ব্যাংকে পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ সময় তা বাহির হতে ২/৫ টাকার বিনিময়ে কিনতে হয়।

৫) ট্রেজারী চালান, আবেদন পত্র ও পাসপোর্টের সত্যায়িত পাতা এক সাথে গেঁথে ঢাকা পুলিশ মেট্টো পুলিশ হেডকোয়ার্টারে জমা দিতে হবে। আবেদন পত্রে নিজের মোবাইল নাম্বার লিখে দিতে পরামর্শ দিচ্ছি যাতে কাজ শেষ হলে বা দরকারে কেউ যোগাযোগ করতে পারে। 

৭) ঢাকা মেট্রো পুলিশের ভাষ্য মতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে ৭ দিন সময় লাগবে। এটা মুলত কাগজে কলমে, বাস্তবতা ভিন্ন। নির্ভর করে কত দ্রুত পুলিশ কাজ করছে। নিজে যোগাযোগ করে কাজ করলে কাজ দ্রুত হয়, নচেৎ বলা মুশকিল কত দিন লাগবে।

৮) ঢাকা মেট্রো পুলিশ হেড কোয়ার্টারের ওয়ান স্টপ সার্ভিস এ আবেদন পত্র জমা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। টোকেনে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাবার তারিখ দেয়া থাকে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট আনবার সময় মূল পাসপোর্ট সাথে নিতে পরামর্শ দিচ্ছি। অনেক সময় ওরা সেটা দেখতে চায় ।

৯) যেকোনো এক সময় সংশ্লিস্ট থানা থেকে যোগাযোগ করা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ৭ দিন পর সার্টিফিকেট হাতে পাবেন।

৮) আবেদনে থানার নাম অবশ্যই পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করতে হবে।

১০) ঢাকার বাহিরের ব্যপরাটা একটু ভিন্ন। সেখানে আবেদন পত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেবার পর তারা সেই জেলার পুলিশ সুপার সেটা স্থায়ী ঠিকানার থানায় পাঠিয়ে দেবে। থানা থেকে সব কিছু যাচাই করে তা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে তা পররাস্ট্র মন্ত্রালয়ে পাঠাবে ( এটা প্রবাসীদের ক্ষেত্রে )। পররাস্ট্র মন্ত্রানালয়ের কনস্যুলার শেকশন থেকে দূতাবাস/হাই কমিশনের সই যাচাই করে তা আবার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে থানায় পাঠানো হবে। থানা হতে ক্লিয়ারেন্স সার্টোফিকেট হাতে হাতে সংগ্রহ করতে হবে। এই পর্বে প্রতিটি ধাপ অনেক সময় লাগে। এর জন্য আবেদনকারীকেই নিজ উদ্যোগে এই কাজ গুলো করতে হবে। পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলে সেটা মাস খানেকের বেশী লাগবে।  থানা হতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ও একটি ফোরওয়ার্ডিং লেটার পররাস্ট্র মন্ত্রানালয়ের কনসুলার সেকশন সকাল ১১ এর মধ্যে হাতে হাতে জমা দিলে সেই দিন ২ পর তা দিয়ে দেয়। তবে ব্যস্ততার কারনে সেটা পরের দিনও পেতে পারেন।

প্রতিটি কাজের জন্য যথেস্ঠ পরিমান " ঘুষের " প্রয়োজন পড়বে যাকে ভদ্র ভাষায় 'চা পানির টাকা' বলা যেতে পারে। ঘুষের পরিমান ব্যক্তি ও পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করবে।  হাতে সময় নিয়ে কাজ শুরু করা উচিৎ। অন্তত মাস দুয়েকতো অবশ্যই।

এখানে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের ওয়েব ঠিকানা দিলাম যেখান থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
প্রবাসীরা তাদের নিজ নিজ দেশের হাইকমিশন/দূতাবাসের ওয়েব সাইট ঘেঁটে আরো বিস্তারিত জানতে পারবে। স্পেনে যারা থাকেন তাদের জন্য পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। বিস্তারিত ঢাকা মেট্টো পুলিশের যে ওয়েব ঠিকানা দিলাম সেখান হতে জানতে পারবেন।


আশা করি এই পোস্ট অনেকেরই কাজে লাগবে।

আস্তালা ভিস্তা।

স্মৃতিচারনের সমস্যা

২টি মন্তব্য :
কার কাছে জানি একবার শুনেছিলাম স্মৃতিচারন নাকি বয়স হবার লক্ষন ! বয়স যে থেমে নেই সেটা সত্য। বলা যায় জীবনের আধেকটা সময় পার হয়ে এসে স্মৃতির ভান্ডারে অজস্র স্মৃতি জমা হয়েছে। প্রবাস জীবনের স্বেচ্চা নির্বাসন নিয়ে একটা সিরিজ লেখা শুরু করেছিলাম। এক সময় লক্ষ্য করলাম সেটা বেশ কয়েকটা পর্বে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। হয়তো সময়ে আরো অনেক কিছুই লেখা হবে কিন্তু একটা সময় আবিস্কার করলাম স্মৃতিচারন বেশ বিড়ম্বনার বিষয়।

সময়ে অনেক কিছুই ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। আবার অনেক কিছুই লিখতে চাইলেই লেখা যায় না। অনেক অপ্রিয় সত্য আছে যা মুখ ফসকে থক্কু আঙুল ফসকে লিখে ফেল্লে অনেকেই বেজার হতে পারে। স্মৃতি নামক ধারাবাহিক নাটকের অনেক পাত্র-পাত্রীই এখনো বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে যাদের নিয়ে লিখলে তাদের চটকে যাবার সম্ভাবনা অনেক। আবার অনেক কিছুই আছে যা বল্লে প্রতিপক্ষ লেখককে ঘায়েল করবার মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে যেতে পারে। কে চায় বুঝে শুনে অন্যের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে !

তারপরো হয়তো অনেক কিছুই লিখতে হবে। লিখতে হবে নিজের জন্যই। তারপরো অনেক কিছুই লেখা হবে না। মস্তিস্কের এক কোনায় অনেক কিছুই জমা হয়ে থাকবে। মানুষের মস্তিস্ক স্ক্যান করে যদি তার স্মৃতিগুলো বের করা যেতো তবে মন্দ হতো না।

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১১

কেমন যেনো ভোঁতা হয়ে যাচ্ছি

কোন মন্তব্য নেই :
একটা সময় ছিলো যখন পৃথিবীর সব কিছুই এমন ভাবে স্পর্শ করতো যেনো এর প্রতিক্রয়া না জানালে মনে হয় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। আর এখন আশে পাশে কত কিছুই ঘটে যায় কিন্তু খুব স্বাভাবিক  ভাবেই এমন ভাব করে এড়িয়ে যাই যেনো কিছুই ঘটেনি। প্রতিদিন সকালে দেশের  পত্রিকার চোখ বূলাই , মৃত্যুর খবর পড়ি , দুর্ঘটনার খবর পড়ি , ধ্বংসের খবর পড়ি কিন্তু পরমুহুর্তেই ভুলে যাই। প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিকের মতো নিজেকে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এটা কি আত্মকেন্দ্রিকতা নাকি ভোঁতা হয়ে যাওয়া ?

পরিবারের সমস্যার কথা শুনি, অর্থ সংকটের কথা শুনি, অসুস্থতার কথা শুনি - সবকিছু এড়িয়ে যাই যেনো কোথাও কিছু হয়নি।  আসলে আত্মকেন্দিক হয়ে যাচ্ছি। ছোট হয়ে যাচ্ছি জীবনের কাছে।

বুধবার, ১১ মে, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১৪

২টি মন্তব্য :
বিয়ের জন্য প্রচুর টাকার দরকার ছিলো। সেমিস্টার ব্রেকের ২ মাসে সময়ও ছিলো অফুরন্ত। ল্যান্ডলেডি এক রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিলো যেখানে গেলে কাজ পাওয়া যাবে। দূপুরে শেফের সাথে কথা বলে সন্ধ্যায় কাজে যোগ দিলাম। কাজ বলতে সেই গতানুগতিক কাজ। "এল রেন্চ" যাকে আমরা সংক্ষেপে রেন্চ বলতাম, সেই রেস্টুরেন্টে দু মাস কাজ করেছিলাম। ওদের স্পেশালিটি ছিলো "স্টেক"। দু মাসে ওদের মেন্যুতে যত রকম স্টেক ছিলো তার স্বাদ গ্রহন করবার সৌভাগ্য হয়েছিলো। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হয়তো অতো স্টেক খাওয়াই হতো না।

দেশ থেকে ঘুরে আসবার পর এল রেন্চ এ যোগ দেবার পর হঠাৎই রেস্টুরেন্টটি বন্ধ হয়ে গেলো। রেস্টুরেন্ট বিক্রি হয়ে যাবে এ রকম একটা কথা হাওয়ায় ভাসলেও হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবে সেটা হেড শেফও জানতো না। সন্ধ্যায় কাজে গিয়ে শুনি সেটাই তাদের শেষ রাত। ওখানে কাজ করবার সময় রিচার্ড নামে এক জার্মান-অজি শেফের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। পাগলা কিছিমের সেই শেফ মধ্যবয়সে এসে নার্সিং এ পড়া শুরু করেছিলো। শেফ হবার আগে সে ছিলো একজন রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ারফো্সের এয়ারক্রাফট মেইনট্যান্স ইনজিনিয়ার।
পাশের রেস্টুরেন্ট "কর্কে" লোক খুঁজছিলো। কিছু দিন সেখানে কাজও করলাম। ভালো লাগছিলো না রেস্টুরেন্টের কাজ। "কর্কের" স্পেশালিটি ছিলো "পিৎজা" । প্রাণ ভরে পিৎজা খাওয়া হয়েছিলো। রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন 'লুসি' নামে এক ভদ্রমহিলা। রেস্টুরেন্ট বন্ধ হবার সময় মাঝে সাজে এক মধ্যবয়সী লোককে দেখতাম চেয়ার টেবিল গুছিয়ে রাখতে , ঝাড়ু দিতে। পরে জানতে পেরেছিলাম সেই ভদ্রলোক ছিলেন "লুসির" ২য় স্বামী , যিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি ল্যাজেসলেটিভ এসেমব্লির একজন এমএলএ ছিলেন লেবার পার্টি থেকে।
যে দিন লুসিকে বল্লাম যে আমি কাজ করতে চাচ্ছি না, লুসি খুব অবাক হয়েছিলো। মন খারাপ করে বলেছিলো " সবাই কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে"। অনেক খারাপ লেগেছিলো কথাটা শুনে। কর্কে কাজ করবার সময় ন্যাথান নামে একজন শেফের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। সে এক বছর পড়াশুনার গ্যাপ দিয়ে পিৎজা বানানোর কাজ করছিলো। এএনইউতে ব্যবসা প্রশাসনে পড়া তুখোর ছাত্র ন্যাথানের এই কান্ড দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম যেখানে সবাই পড়াশুনা তাড়াতাড়ি শেষ করতে মরীয়া হয়ে যায়। শেষ যখন ন্যাথানের ই মেইল পাই তখন সে প্রাইস ওয়াটার হাউসে কাজ করে দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ায়।
দুদিনের জন্য "লা ডলসে ভিটা" নামে একটা ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে কাজ করেছিলাম। ওটা ছিলো অন্য একজনের বদলি। ওদের স্পেশালিটী ছিলো হোম মেইড "পাস্তা"। অসাধারন পাস্তার স্বাদ মনে হয় এখনো মুখে লেগে আছে।

এই ছিলো আমার স্বল্পস্থায়ী কিচেনহ্যান্ড ক্যারিয়ার। এখন নিজের রান্নাঘরে বউয়ের কিচেন হ্যান্ড, বিনে বেতনে 'অনারারী কিচেন হ্যান্ড '। টাকার প্রয়োজনে কাজ করেছি কিন্তু শিখেছি অনেক। দেশে শেখা মিথ্যা অহমিকা ঝেড়ে ঝুড়ে নতুন মন মানসিকতা তৈড়ি হয়েছিলো কাজ করতে করতে। সেই রকম পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বাতিক, সময়ানুবর্তিতা , কঠোর পরিশ্রম , হড়েক রকম মানুষের সাথে মেশা ও তাদের জানা-বোঝা, কাজকে সম্মান করা, মানুষকে সম্মান করতে শেখা, ম্যানার শেখা ইত্যাদি কত যে শিখেছি যার সুফল এখন ভোগ করছি।

সারা জীবন হোস্টেলে নারী বিবর্জিত পরিবেশ বড় হওয়া আমি যখন মেয়ে ওয়েট্টেসদের সাথে মিশেছি তখন মেয়েদের নিয়ে যে অহেতুক সংকোচ ছিলো তা কখন কেটে গিয়েছিলো টেরই পাইবি। ভেবেছিলাম এখানে বর্নবাদী আচরনের শিকার হবো, এক চারমার্সে বুড়ো ইহুদি এন্ড্রুর ছাড়া কারো কাছ থেকে এরকম আচরন লক্ষ্য করিনি। নতুন দেশে গেলে সেখানকার মানুষদের কাছ থেকে না মিশলে অনেক কিছুই অজানা রয়ে যায় যা অনেক বাংলাদেশীর মাঝে লক্ষ্য করেছি, আমি শিখেছি অনেক কিছু এদের কাছ থেকে। অনেক অনেক কিছুই শিখেছি। অনেক কিছু।

সোমবার, ৯ মে, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১৩

1 টি মন্তব্য :
প্রবাসে বাঙালিদের মাঝে এক অদ্ভুত প্রবনতা নিয়ে ব্লগার রাগিব হাসানের লেখা ব্লগটা বেশ মজাদার। নিজের অভিজ্ঞতার সাথে দারুন মিল খায়। আমিতো মাঝে মাঝে মজা করি বাংলাদেশের সবাই বিদেশে গিয়ে ম্যানেজার পদ ছাড়া কাজই করে না। প্রবাস জীবনে প্রথম অবস্থার সংগ্রাম মুখর সময়টুকু কেনো যেনো সবাই এড়িয়ে চলতে ভালোবাসে। হতে পারে এটা হীমনন্যতা থেকে চলে আসে, কিন্তু এটায় আমি অসততাই খুঁজে পাই। ছাত্রাবস্থায় আমরা অনেক কিছুই করেছি। কেউবা সুপার মার্কেটে কাজ করেছি, কেউ বা রেস্তোরায়, কেউ বা ক্লিনারের। বিচিত্র সব কাজকে এক কথায় "কামলা" দেয়া বলি আমরা। আমিতো বলি যতদিন না স্বাধীনভাবে কিছু করা হচ্ছে ততদিন মানুষ কামলাই, সে সাদা কলার হোক না নীল কলারেরই হোক। গোলামী গোলামীই, হয়তো পরিস্থিতি ও পরিবেশ ভিন্ন।
যাই হোক, চারমার্সে কাজ করার সময় একটা ইন্ডিয়ান রেস্তোরায় কাজ করতাম সপ্তাহে দু দিন। পোস্ট ছিলো " তান্দুরী শেফ "। আদতে সেটা ছিলো একটা সব্যসাচী চাকরী। আমিই তান্দুরী শেফ, আমিই কিচেন হ‌্যান্ড, আবার আমিই ম্যানেজার ! ঘন্টায় বেতন ভয়াবহ কম, ঘন্টায় ৮ ডলার। আক্রার বাজারে সেটাই ছিলো অনেক বড় আমার কাছে। রেস্তোরায় কোনো কাস্টমার আসলে মালিককে ফোন দিতে হতো। তারা সপরিবারে এসে রান্না বান্নার কাজ শেষ করে টাকা পয়সার হিসেব নিয়ে রেস্তোরা বন্ধ করে যেতেন। অদ্ভুত এক রেস্তোরা ছিলো সেটা।
ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের খাবার দাবারের অনেক গল্প শুনেছিলাম, চেখে দেখবার সৌভাগ্য হয়নি কখনোই। সেই ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে কাজ করবার সুবাদের নিজেই চিকেন তান্দুরী বানাতাম, সেই সাথে গরম গরম নান। মাঝে সাজে ল্যাম্ব কাটলেট, তান্দুরী প্রণ আর নানা নামের কাবাব। নিজেই সেগুলো খেতাম, কি আর করা কাস্টমার নেই ! অবশ্য মালিকের অনুমুতিও নিয়ে নিয়েছি সব সময়। ফিজিয়ান ইন্ডিয়ান মালিকও আপত্তি করতো না। রেস্তোরা দেখে শুনে রাখছি, এতো কম বেতনে সেও লোক পাচ্ছে কাজ করাবার, একটু আধটু খেতে চাইলে সে হাসি মুখেই অনুমুতি দিয়ে দিতো।

কাজের শুরুতেই তান্দুরীতে কয়লা দিয়ে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিতে হতো। এর পরে সব গুছিয়ে রাখতে হতো কিচেনে। আমার কাজ ছিলো মুলত তান্দুরী কেন্দ্রীক। সপ্তাহে একদিন একজন পেশাদার ভারতীয় শেফ এসে নান রুটির ডো, সিংগাড়া যাকে ভারতীয়রা সামুচা বলে,সব রকমের সস, মাংস গুলো আধা রান্না করে যেতেন। সপ্তাহের বাকি সময়টুকু সেই আধা রাঁধা মাংসের সাথে সস মিশিয়ে কাস্টমারদের সার্ভ করা হতো। রান্না বান্নার এ কাজটি মালিক বা মালিকের বউই করতেন। ভারতীয় রেস্তোরায় এটা একটা খুবই প্রচলিত ব্যপার। যেমন বাটার চিকেন সস, কোরমা সস, রোগেন জশ সস ইত্যাদি সস বানিয়ে রাখা হতো বড় বড় কনটেইনারে। কাস্টমার ল্যাম্ব রোগেন জশ চাইলে রোগেন জশ সসের সাথে আধা রান্না করা ল্যাম্ব মিশিয়ে সস প্যানে চড়িয়ে দেয়া হতো, সাথে তাজা কাটা পেঁয়াজ , ধনে পাতা কুচি আর সামান্য কিছু তাজা মশলা। আবার বিফ রোগেন জশ চাইলে ল্যাম্বের বদলে বিফ। কোরমার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এভাবেই একই সস দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামের আইটেম চালিয়ে দেয়া হয় ভারতীয় রেস্তোরা গুলোতে।
প্রথম প্রথম তান্দুরীতে নান বানানো বেশ ভয়ংকর ব্যপার হলেও সময়ে সেটা ঠিক হয়ে যায়। প্রথম দিনে প্রচন্ড গরম তান্দুরীতে হাত ডুকিয়ে নান বানানোর সময় ডান হাতে পোড়া দাগগুলো এখনো আছে। তান্দুরীতে অন্যান্য কিছু বানানোর সময়ও বেশ সাবধান থাকতে হয়, নচেৎ একটু দেরী হলেই পুড়ে যেতে পারে সব কিছু। একটা বিশাল কড়াইয়ে গরম তেলে সামুচা,পাকোড়া, পাপাদাম যাকে আমরা পাপড় বলি ভাজা হতো। আমি সেখানে মাঝে মাঝে নান ভাজতাম। প্রচন্ড গরমে এক নিমিশে পুরির মতো ফুলে উঠবার পরপরই নামিয়ে ফেলতে হতো। মালিক এটা দেখে আরেকটা নতুন আইটেম যোগ করে দিয়েছিলো মেন্যুতে।

এই রেস্তোরায় কাজ করবার সময় একটা বাজে ব্যপার লক্ষ্য করেছি যা শুনেছি অন্য অনেক ভারতীয় রেস্তোরাতেই হয়ে থাকে। কাস্টমার হয়তো ৩ খানা সামুচার অর্ডার দিয়ে ২ খান কেলেন, বাকি সেই সামুচা ফেরত আসার পর মালিক সেটা রেখে দিতেন আরেক কাস্টমারের জন্য। অজি রেস্তোরা হলে এঁটো কোনো খাবার সোজা বিনে চলে যেতো। এ জিনিসটা অনেক বারই লক্ষ্য করেছি আমি এদের করতে।

কাজের শুরুতেই আমি বলে দিয়েছিলাম আমি হিন্দি জানি না। এটা বলার কারন হলো যদি তারা জানে আমি হিন্দি পারি ও বুঝি তবে আমার সাথে হিন্দিতেই কথা বলা শুরু করবে যা একটা অত্যাচারের সমান আমার কাছে। হিন্দি জানি না জানতে পেরে তারা আমার সামনে অনেক ব্যক্তিগত আলাপ করতো যা আমি বুঝতে পারলেও না বোঝার ভান করে থাকতাম। একবার কোনো এক কথার উত্তরে হিন্দিতে উত্তর দেয়ার পর তারা এতো অবাক হয়েছিলো যে আমার কাছেই খারাপ লেগেছিলো ব্যাপারটা।

ভারতীয় রেস্তোরার মালিকদের মাঝে খারাপ ব্যবহার করার দূর্নাম আছে খুব প্রকট ভাবে। আমি ভাগ্যবান যে সেই রেস্তোরার মালিক অসাধারন ভালো ব্যবহার করতেন আমার সাথে যা এখনো মনে আছে। আরেকটা জিনিস শিখেছিলাম সেখানে, সেটা হলো মুরগি কাটা ! "মহা রাজা'স ‌প্যালেস" নামে সেই রেস্টুরেন্টে কাজ করে আমি শিখেছিলাম কিভাবে, নান বানাতে হয়, কিভাবে তান্দুরী কিচেন - ল্যাম্ব কাটলেট - তান্দুরী প্ণ - হড়েক রকম কাবাব বানাতে হয়। সেই সাথে দারুন সব উত্তর ভারতীয় খাবার। মাঝে সাজেই আমরা সবাই মিলে এক টেবিলে বসে রাতের খাবার খেতাম যা ভারতীয় মালিকদের কাছে আশা করা বেশ কস্টকর।

একদিন সেই রেস্টুরেন্টের পাশে বিশাল এক কনটেইনার পড়ে থাকতে দেখে মালিককে জিজ্ঞেস করাতে বল্লেন উনার এক বন্ধু কিছু জিনিস রেখেছেন সেটায়। আগের পর্বে বলেছিলাম যে সিডনী বেড়াতে গিয়ে ‌ক্যানবেরায় ফেরত এসে চারমার্সের বেকার হবার কাহিনী। ক্যানবেরা এসে আবিস্কার করলাম "মহা রাজা'স প্যালেস" বিক্রি হয়ে গিয়েছে, যা মালিক ইচ্ছে করেই গোপন রেখেছিলাম আমার কাছে।

চারমার্সে চাকরী নেই, ভারতীয় রেস্তোরাও বিক্রি হয়ে গিয়েছে। পুরোদস্তর বেকার আমি তখন। হাতে টাকাও নেই। কি যে করি, ভয়াবহ অবস্থা তখন আমার।

শনিবার, ৭ মে, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১২

২টি মন্তব্য :
চারমার্সে কাজ শুরু করবার দিনটার কথা এখনো মনে আছে। প্রবাস জীবনের প্রথম চাকুরি। অনেকে হয়তো অডজব / প্রপার জব বলে চিন্তিত হতে পারেন তবে আমার কাছে সবগুলোই চাকুরি। দূপুরে ইন্টারভিউ দেবার পর থেকেই মনে হচ্ছিলো কখন সন্ধ্যে আসবে আর কখন কাজ শুরু করবো। পকেট ছিলো গড়ের মাঠ। "ক্যাশ ইন হ্যান্ডে" এ কাজটা ছিলো আমার কাছে চৈত্রের প্রচন্ড দাবদাহে এক পশলা বৃস্টির মতোই আশির্বাদ।
সন্ধ্যা ৫ টার আগেই হাজির হলাম কিচেনে। ছোট্ট এক কিচেনের এক কোনায় আমার আপিস, থুক্কু ডিশ ওয়াশিং মেশিন। "ক্লোভার" নামের এক মেয়ে আমাকে দেখিয়ে দিলো কি করতে হবে। কাজ বলতে কাস্টমারের রেখে যাওয়া প্লেট-গ্লাস ডিশ ওয়াশারে দিয়ে পরিস্কার করা, ধোয়া শেষ হলে পরিস্কার তোয়ালে দ্বারা মোছা, শেফের হাড়ি পাতিল ধোয়া এবং পেছনের শেলফ ও ফ্রিজারে স্টক সাজিয়ে রাখা আর সব কিছু শেষ হলে কিচেন পরিস্কার তকতকে করে রাখা। ডিশ ওয়াশারটা ছিলো আদিম কালের। রেস্টুরেন্ট মালিক পোলিশ মাইগ্রেন্ট এন্ড্রু যে বছর অস্ট্রেলিয়া এসেছিলো সেই ষাটের দশকে কেনা বলে সবাই হাসাহাসি করতো। কিছু ক্ষন কর পরই তাতে গরম পানি দিতে হতো, নাহলে সেটা পুড়ে যাবে !

কাজের শুরুতেই স্যুট থুক্কু এপ্রোন পড়িয়ে দিলো ক্লোভার। লান্চ শিফটের কিচেন হ্যান্ড এক গাদা ডিশ রেখে গিয়েছিলো আমার জন্য। সেগুলো ধুয়ে শেষ করতে না করতেই ডিনারে আসা কাস্টমারদের ডিশ আসা শুরু করলো, সাথে শেফের দেয়া ফ্রায়িং প্যান ও সস প্যানতো আছেই। সব কিছু শেষ করে যখন ঘড়ির দিকে তাকালাম তখন দশটা বাজতে ৫ মিনিট বাকি। ক্লোভার ক্যাশ থেকে ৫০ ডলার বের করে হাতে দিতেই অন্যরকম এক অনুভূতি ছিলো। অনেক দিন টাকার অভাবে সিগারেট খাওয়া হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার জীবনের প্রথম উপার্জনে এক প্যাকেট ডানহিল ব্লু কিনলাম। কি যে অপার্থবি শান্তি লেগেছিলো তা বলে বোঝানো যাবে না।

পরের দিন মালিক এন্ড্রুর সাথে দেখা হলো। সে বল্লো পেছনের কড়িডোর ভালো ভাবে ঝাড়ু দিয়ে ও পানি ঢেলে ভালো ভাবে পরিস্কার করতে। সে বল্লো এটা নাকি আমাকে প্রতিদিনই করতে হবে। করলাম পরিস্কার ভালো ভাবে। সে এতেও সন্তুস্ট হতে পারে না। দিনের পর দিন পরিস্কার না করা করিডোর পরিস্কার করা যে ঝামেলার সেটা তাকে বোঝানোর সাহস হয়নি। কিছু দিন পর সে বল্লো গেস্ট টয়লেটের দিকে লক্ষ্য রাখতে। মাঝে মাঝে সময়করে সেটাও নাকি আমাকে পরিস্কার করতে হবে !

মন প্রাণ দিয়ে কাজ করেছি সেখানে। সব সময়ই ভয় ছিলো এই বুঝি চাকুরি চলে যাবে। চলেও গিয়েছিলো হঠাৎই। সে কথায় পরে আসছি। ইংরেজী মোটামুটি ভালো হলেও ওখানে ওদের কথা বুঝতে অনেক সময়ই খুব সমস্যা হতো। ওরা একটা বলতো আর আমি বুঝতাম আরেকটা। ভাবতাম ওরা বুঝি হাসাহাসি করবে এটা নিয়ে। কিন্তু তা না করে ওরা আমাকে বুঝিয়ে বলতো, অনেক সময়ই ধীরে ধীরে বলতো যাতে আমি বুঝতে পারি। কাজ শুরু হতেই ওয়েট্টেস মেয়েরা এসে জিজ্ঞেস করতো কি খেতে চাই। শুরুতেই কফি বা কোক দিয়ে যেতো, কাজের ফাঁকে এসে বলতো আর কি চাই বা কোনো সাহায্য দরকার কি না। দেশে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই না, দূঃখিত হতে জানি না ভুল করলে। ওখানেই শিখেছি কিভাবে ধন্যবাদ জানাতে হয়, দূঃখ প্রকাশ করতে হয়, অনুরোধ করবার সময় "প্লিজ: বলতে হয়। ক্লোভার ছাড়া আর কারো নাম মনে নেই। এএনইউ এ পড়া একটা মেয়ের কথা মনে আছে। কি মায়া ভরে জিজ্ঞেস করতো কি কফি খেতে চাই। নাম ভুলে যাওয়া এক ওয়েটারের কাজই ছিলো নিজের জন্য শর্ট ব্লাক বানানো আর আমার জন্য একটু নিয়ে আসা। অজি মানুষদের সাথে কাজ করে কাছ থেকে দেখে এদেশের সংস্কৃতি - মননকে যে চেনায় ছিলাম তার প্রভাব এখনো আছে আমার মাঝে।

স্যু ছাড়াও আরো দুই মহিলা ও আরেক ছেলে শেফ কাজ করতো চারমার্সে। ইজিপশিয়ান মহিলার কথা মনে আছে এখনো। উনি তার প্রথম জীবনের গল্প বলতেন কাজের ফাঁকে ফাঁকে। কিভাবে একজন কোয়ালিফায়েড নার্স হয়ে উনি কিচেন হ্যান্ডের কাজ করতেন, কিভাবে উনার ম্যাকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার স্বামী ক্লিনারের কাজ করতেন। বছরের পর বছর সংগ্রামের পর উনি যখন ক্যালভারী হাসপাতালের রিটায়ার্ড নার্সিং ম্যানেজার বা উনার স্বামী স্নোয়ী যখন মাউন্টেইন হাইড্রো ইলেকট্রিক প্লান্টের কনসালট্যান্ট ইন্জিনিয়ার সেই গল্প করে বলতেন আমাকেও কস্ট করতে। সময়ে সবকিছুই উন্নতি হয় , আমারো হবে এটা বলে মনে সাহস দিতেন। চিলিয়ান আরেক মহিলার সাথে দু একবার কাজ করেছিলাম। এন্ডু না থাকলে সে এক গাদা রান্না বান্না করতো নিজের বাসায় নিয়ে যাবার জন্য, আমাকেও ঘুষ সাধতো যাতে আমি কাউকে না বলি। পিটার নামে যে ছেলে শেফ ছিলো সে ছিলো পুরোদস্তর বর্নবাদী। তার সাথে এক রাত কাজ করেই সু'কে বলেছিলা যে আমি পিটার এর সাথে কাজ করতে চাই না।

চারমার্সে কাজ করতে করতে রান্না শিখে গিয়েছিলা, করতে করতে না; দেখতে দেখতে। হড়েক রকম আইটেম যার নাম শোনাতো দূরের কথা চোখেও দেখিনি। আগেই বলেছি অনেক মন প্রান দিয়ে কাজ করতাম। এক সময় দেখা গেলো ৫ ঘন্টার শিফটে যে কাজ করতে হয় সেটা আমি ৪ ঘন্টাতেই শেষ করে ফেলি। এন্ড্রু এসে বল্লো এখন থেকে শিফট ৪ ঘন্টার হবে, টাকাও পাবো ৪ ঘন্টার। ব্যস্ত শিফটে আমি ৪ ঘন্টার টাকা পেতাম, তুলনামুললক ভাবে হালকা শিফটে কাজ করে অন্যরা পেতো ৫ কি সাড়ে ৫ ঘন্টার টাকা।

একবার সিডনী বেড়াতে গেলাম। বেড়িয়ে এসে রোস্টার চেক করতে গিয়ে দেখি আমার নাম নাই। সউ'কে জিজ্ঞেস করাতে সে বল্লো আমার কাজ ভালো না তাই আমি ছাঁটাই। কদিন বাদে বাসে ইজিপশিয়ান শেফের সাথে দেখা হলে উনি বলেছিলেন , সু তার নাতিকে চাকরি দেবার জন্য আমাকে বাদ দিয়েছিলেন।

হঠাৎই বেকার হয়ে গেলাম

(চলবে)

বুধবার, ৪ মে, ২০১১

খুনির চেহারা দেখি

কোন মন্তব্য নেই :
নিজস্ব প্রাতিস্ঠানিক পেশার পাশাপাশি একটা ৪.৫ তারকা হোটেলে রাতের পালা দেখাশোনা করার চাকরি করি। এখানে কাজ করতে ভালো লাগে, হড়েক রকম মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়, হাতে বাড়তি কিছু টাকাও আসে। কাজের সূত্রে মন্ত্রি থেকে শুরু করে রাজমিস্ত্রি সবার সাথেই ডিল করতে হয়। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা জমে নিজ ভান্ডারে। এসব নিয়ে লিখতে গেলে বলা যায় প্রায় প্রতি রাতেই একটা করে ব্লগ লেখা যাবে।

২৫শে এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ায় এনজ্যাক ডে পালন করা হয়। বরাবরের মতো আমার হোটেলেও একদল ভেটার্ন উঠেছিলো। এনজ্যাক ডে প্যারেডে অংশ নিতে আসেন , সাথে পূর্নমিলনী। একদল মধ্যবয়স্ক ও বৃদ্ধ মানুষ। হাসি খুশী ফুর্তিবাজ একদল লোক নিজেদের বয়স ভুলে মেতে উঠেন শিশুসুলভ আচরনে। দেখে মনেই হয় না এরাই একসময় হাতে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পরেছিলো ভিয়েতনামের মতো অন্যায় একটা যুদ্ধে, এদের হাতেই মারা গিয়েছিলো অসংখ্য নিরোপরাধ ভিয়েতনামীজ। হয়তো এদের মাঝেই কেউ হয়তো ঠান্ডা মাথায় কোনো ভিয়েতনামীজ শিশুকে হাসতে হাসতে গুলি করে তার মাকে নিয়ে মেতে উঠেছিলো ধর্ষনে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে এদের প্রশ্ন করা বিপদজনক। অনেকেই স্বাভাবিক ভাবে নেয় না। একজনকে প্রশ্ন করেছিলাম কেনোইবা সে সেই যুদ্ধে গিয়েছিলো, তার উত্তর ছিলো তারা বাধ্য ছিলো যুদ্ধে যেতে। সে যুদ্ধের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন করা আরো বিপদজনক। এরকম এক প্রশ্নের উত্তরে বর্নবাদী বাক্য যেমন শুনতে হয়েছিলো তেমন একজনের কাছ থেকে শুনেছিলাম তার যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের কথা। বৃদ্ধ মানুষটি কাঁপতে কাঁপতে বলেছিলেন ' রাতে তার এখনো ঘুম হয় না'। বিবেকের তাড়নার কথা মনে হয় বলতে চাননি।

২৭ এপ্রিল যখন তারা চলে যায় তখন তাকিয়ে দেখছিলাম একদল মানুষকে যাদের মাঝে লুকিয়ে আছে খুনির প্রেতাত্মা। নিস্পাপ হাসির মাঝে লুকিয়ে হাসছে খুনির হাসি। হ্যান্ড শেক করে বিদায় নেবার পর সিংকে হাত ধুতে ধুতে মনে হচ্ছিলো এরাও কারো পিতা - এরাও কারো প্রিয় জন, আবার এরাই কারো হত্যাকারী। হাত ধোয়া যায় কিন্তু এসব মন থেকে মুছতে পারা যায় না। জীবনে পেশাগত কারনে কত কিছুই যে করতে হয়।

সে দিন একদল খুনিকে দেখেছিলাম।

সোমবার, ২ মে, ২০১১

অসহ্য ১১টি ঘন্টা

৩টি মন্তব্য :
হঠাৎই বুকের ব্যথা। ছোটো ছেলেটাকে নিয়ে ঘরে পায়চারী করবার সময় হঠাৎই ব্যথা। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কেনো। তেমন কিছু না ভেবেই সাবধানের মার নেই ভেবে হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে বুকের ব্যথা বলতেই সোজা হুইল চেয়ারে তুলে দিলো। যতই বলি হেঁটে যেতে পারবো ততই সেবিকা বলে তাদের প্রটোকল মেইনটেইন করতে হবে। হুইল চেয়ারে বসিয়ে ভেতরের বিছানায় শুইয়ে ইসিজি করলো, তড়িঘড়ি করে রক্ত নিয়ে পরীক্ষাও করতে দিলো। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে খুব সম্ভবত ইন্জেকশনও দিয়েছিলো একটা। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েচিলাম টেরই পাইনি।

৩ ঘন্টা পর পাশের ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়েছিলো। ঘুম অবশ্য ভেঙে গিয়েছিলো তার আগেই। বিছানায় শুইয়ে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাবার সময় নিজেকে রোগী ভাবতে ভালো লাগছিলো না। ঘন্টায় ঘন্টায় এসে এটা ওটা চেক করছিলো সেবিকারা। মাঝ খানে ওয়ার্ড ক্লার্ক বালিকা এসে ঠিকুজি নিতে ভুলেনি, এখানেও অর্থ। বুকের মাঝে এক গাদা তার লাগানো - মনিটরের টিক টিক শব্দে বড্ড অসহায় লাগছিলো। মাঝে খানে ডিনারে অখাদ্যও গিলতে হয়েছিলো। মশলাহীন- লবনহীন খাবার খেতে খেতে মনে হচ্ছিলো কতকাল ভাত খাই না।

কিছুক্ষন পর পর বাসা থেকে ফোন আসছিলো। উদ্বীগ্ন সহধর্মীনির ফোন পেয়ে যেমন ভালো লাগছিলো তেমনি নিজেকে বড্ড একা লাগছিলো। চারপাশে আমার মতোই এক গাদা অপরিচিত মানুষ শুয়ে আছে; জীবন - মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে যুথরত একদল মানুষ। রাত ১০ টার দিকে এক্স রে করালো। রাত ১২ টা নাগাদ আরেক দফা ইসিজি করা হলো, সাথে রক্ত নেয়া। ঘন্টা দেড়েক পর ডাক্তার এসে বল্লো বড় কোনো সমস্যা নেই। বাসা চলে যেতে পারবো। সাবধানে থাকতে বল্লেন ডাক্তার। ওজন কমাতে হবে। বিড়ি টানা বন্ধ করতে হবে, হাবিজাবী খাওয়া বাদ দিতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি । ডাক্তার বল্লেন কে নিতে আসবে আমাকে। আমি বল্লাম, এই শহরে এই মধ্যরাতে নিতে আসবার মতো কেউ নেই আমার। নিজেকই ড্রাইভ করে চলে যেতে হবে।

হৃদযন্ত্রের অবস্থা সবসময়ই ভালো ছিলো, এখনো আছে।তারপরো সাবধান থাকতে হবে। মাঝে মাঝে কেনো জানি মনে হচ্ছে বুকের মাঝে চিন চিন ব্যথা। ইসিজি ধরতে না পারলেও আমি ধরতে পারি। নিজের জন্যই বাঁচতে হবে, নিজের প্রিয় জনের জন্য বাঁচতে হবে। বড্ড কঠিন এ পৃথিবীতে ক্লান্ত এই মানুষটি বাঁচতে চায়।

সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১১

ঋনময় জীবন

1 টি মন্তব্য :
কটা বাঙলো টাইপের বাড়ীর স্বপ্ন। সামনে লন, পেছনে ব্যাক ইয়ার্ড। বাড়ীর সামনে পার্ক করা হাল মডেলের গাড়ি। ঘর ভরা দামী সব জিনিস পত্র। পড়নে দামী সুগন্ধতিতে মো মো করা দামী কাপড়। হাতে হাল ফ্যশনের দামী মোবাইল ফোন। ঘি মাখন খাওয়া তেল চুকচুকে স্বাস্থ্যকর চেহারা। চকচকে সজাড়ুর মতো জেল দেয়া চুল । বছর শেষে দেশে বেড়াতে যাওয়া বা আশে পাশেই কোথাও বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা। যেনো স্বপ্নের এক জীবন।

এসবের জন্য টাকা দরকার। কুচ পরোয়া নেহী, পাশে আছে ব্যাংক,আছে অন্যান্য অনেক মহাজনী কোম্পানী। টাকা দিতে উদার হস্তে বসে আছে যেনো । মাঝে সাজেই ফোন করে - মেইল করে জানায় টাকা দেবার অধীর আগ্রহের কথা; যেনো দাতা হাতেম তাঈ বসে আছে টাকা দেবার জন্য।

বাড়ী কেনার স্বপ্ন পূরন করার জন্য আছে "হোম লোন"। একটা স্থায়ী চাকুরি, নিশ্চিত আয়, স্থায়ী অভিবাসন আর ক্রেডিট হিস্ট্রি ভালো থাকলেই হোম লোন পাওয়া যায় বেশ সহজেই। বাড়ী কেনার আগেরই "প্রি-এপ্রুভ লোন", বাড়ী পছন্দ করে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বাড়ী কিনে ফেলো। বাড়ী কিনে ফেলা বল্লেও বাড়ী বাঁধা থাকে ঋনদাতার কাছে, ভদ্রভাষায় যাকে বলে মর্টগেজ।

ঘর সাজানোর জন্য নতুন জিনিস পত্র দরকার? বড় বড় দোকানে বাকিতে আসবাব পত্র কিনে ঘর ভরে ফেলো। বড় বড় করে লেখা মুলা ঝুলানো 'নো ইন্টারেস্ট নো ডিপোজিট নো রিপেমেন্ট '। সব কিছুর নিচে পিঁপড়ে আকৃতির ছোট করে লেখা এক গাদা লেখা পড়বার সময় খুব হয়ই কেনার তাগিদে। এখন সময়মতো টাকা পরিশোধ করলেই হলো।

একটা চকচকে হাল মডেলের গাড়ী না হলেই নয়। আছে গাড়ী কেনার জন্য "কার লোন"। ডিলারের কাছে গেলেই "কার ফিনান্সের" হড়েক রকম অফার। ব্যাংক আর মহাজনরাতো আছেনই।

টাকার জরুরী দরকারে আছে "পারসোনাল লোন"। অন্য কিছু কেনার জন্য "ক্রেডিট কার্ড" তো আছেই। একেকজনের কাছে অনেকগুলো করে ক্রেডিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ডে হাজার হাজার ডলারে। হাতে নগদ টাকা না থাকলেই বা কি, ক্রেডিট কার্ড চার্জ করো আর কিনে ফেলো।

বিদেশের ঝলমলে জীবনের পেছনে এই ঋনের অবদান অনেক। টাকা দেবার জন্য মহাজনরা আছেন । স্বামী - স্ত্রী উদায়স্ত কাজ করে যে টাকা জমায় তার সবই যায় সেই সব মহাজনদের কাছে। মাস শেষে যা কিছু অবশিষ্ট থাকে তাও যায় বিল শোধে। বিলের কি অভাব আছে ? ইলেক্ট্রেসিটি বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল, ছেলে মেয়ের স্কুলের বিল, প্রাইভেট হেলথ ইন্সুরেন্স বিল , ফোন বিল, মোবাইল বিল, ক্রেডিট কার্ড বিল। বিলের গল্প বলা শুরু করলে লিস্ট আরো বড় হয়ে যাবে।

ধরা যাক বাড়ীর লোন ৩০ বছরে শোধ করা যাবে। মাসিক ইন্সটম্যান্টে দিতে হবে। যতদিন না দেয়া হয় ততদিন বাড়ী মহাজনের কাছে বাঁধা। একটু উনিশ বিশ হলেই " লাভ লেটার " চলে আসবে। গাড়ীর লোন - ঘরের জিনিস পত্রের লোনে সহ আরো লোনতো আছেই। ক্রেডিট কার্ডের জটিল সুদের বাঁধা ঋণের কথা না বল্লেই নয়।

চাকুরী না থাকলে বাড়ীর লোন শোধ হবে না, গাড়ীর লোন শোধ হবে না, বিল শোধ হবে না, বিল দেয়া হবে না। একটার পর এক চিঠি আসতে থাকবে। বাড়ী যাবে, গাড়ী যাবে, সব শেষে যাবে বউ। এজন্য মহাজনরা আবার "ইনকাম প্রটেকশন ইন্সুরেন্স" করতে বলেন। সেখানেও মাসকে মাস টাকা দিয়ে যেতে হয়।

স্ট্যাটাস মেইনটেইন করতে, স্বপ্ন পূরন করতে এভাবেই ঋনের জালে আস্টে পিস্টে বেঁধে যায় জীবন। খুব কম মানুষই এ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। এক সময় ভাবতাম বিশাল বাড়ী - দামি গাড়ী - বড় চাকুরি ! কতোই না সহজ জীবন। এখন বুঝতে পারি এর রহস্য। নিজেও আস্তে আস্তে আটকে যাচ্ছি সেই ঋন নামক মাকরশার জালে। যতোই ছুটতে চাই ততই আটকে পড়ি। এ এক ঋনময় জীবন।

সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০১১

অভিজ্ঞতা বলে চলমান - ২

কোন মন্তব্য নেই :
জীবনটা একটা শেখার জায়গা। প্রতি মুহুর্তে শিখছি, শেখার চেস্টা করছি আবার শেখা জিনিসও ভুলে সেই ভুল আবারো করছি। এভাবেই অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হচ্ছে আমার জীবন। নিজেকে নিয়েই আমার পৃথিবী। এই পৃথিবী নিজেই সাজাই - নিজেই ভাঙি।

মানুষের কান্র কারখানা আমাকে ভাবায়। মাঝে সাজে কস্ট দিলেও ভেবে চিন্তে মনে হয় এটাই মনে হয় স্বাভাবিক। বিশেষ বিশেষ কারনে অনেক সময়ই ব্যক্তি নাম উল্লেখ করা সম্ভব না হলেও ব্যক্তি চরিত্র নিয়ে লিখতে বেশ ভালো লাগে, মানুষ চেনা যায়।

এমনই এক মানুষ, এমনিতে ভালো - বেশ উপকারী। কিন্তু যেইনা তার সামান্য ঝামেলা শুরু হয় তখন জগৎ সংসার ভুলে স্বার্থপরের মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেন। আশে পাশে কে বাঁচলো আর কে মরলো তাতে তার কিছু এসে যায় না। এই লোকই আবার তার সমস্যায় কাউকে পাশে পান না বলে নিরন্তর অভিযোগ করে যান। এই মানুষটিকে এভাবে ভাবতে চাই " উপকারী কিন্তু নিজের সামান্য সমস্যায় সেই উপকারী ভাবটুকু ভুলে স্বার্থপর হয়ে যান। এই মানুষটি আবার কারও সুসময়ে দারুন উপকারী কিন্তু সেই মানুষটি যখন সামান্য সমস্যা বা ব্যস্ততায় থাকেন তখন অন্য মানুষের দুর্দশার কথা ভাবার সময় পান না। একে কি দুধের মাছি বলা যাবে ! বলা মুশকিল। এতো সহজে স্বীদ্ধান্তে আসা যায় না। তবে এ ধরনের মানুষ সম্পর্কে সাবধান থাকতে হয়।

এক মানুষের সাথে এক সময় বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো বয়স বা আর্থ- সমাজিক ব্যবধান সত্বেও। অনেক দাওয়াত খেয়েছি উনার বাসায় , পাল্টা পাল্টিও চলেছে। একবার টাকা ধার চাইলেন। আমার পক্ষে উনার চাহিদা পুরন করা সম্ভব না হলেও যতটুকু দেয়া সম্ভব ছিলো তা দেবার প্রস্তাব করাতে একরম অপমানজনক ভাবেই তা উড়িয়ে দিলেন। মাঝে সাজে মনে হয় , এরকম টাকার জন্যই মনে হয় আমার সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন। কাজ হাসিল হয়নি তাই সম্পর্ক চালিয়ে যেতেও অনিহা। এ মানুষটির চরি‌ত্রও বিশ্লেষন করতে ইচ্ছে হয়। মানুষ কেনো এরকমটি করে !

যাই হোক, মানুষ এরকমই।

শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১১

একটি চাকা ও একটি দূর্ঘটনা

৩টি মন্তব্য :
দূর্ঘটনা যদি বলে কয়ে আসতো তবে মনে হয় সবাই জীবনটাই পানসে হয়ে যেতো। মাঝে সাজে মনে হয় বেঁচে আছি, অক্ষত আছি  সেটাই বিশাল ব্যপার । ঘটনা আসলে বিশাল কিছু না। গত দু দিন আগে আমার বেবি গলফ 'আতকা মাইরা' আহত হলো। সকালে কাজে যাবার সবার তাড়া থাকে। যদিও আমার তেমন একটা তাড়া ছিলো না।

পার্লামেন্ট সার্কেলে  গাড়ি চলছে আর লেডি গাগার 'বিখাউজ' গান শুনছি। সামনে বিশাল এক ফোর হুইল ড্রাইভের পেছনে বিশাল এক ট্টেইলারে একটা বব ক্যাট। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি কি যেনো ছিটকে পড়লো ট্রেইলার থেকে।  ভাবলাম ওভারটেক করে সামনের গাড়ীকে ইশারা দিয়ে জানাবো সেটার কথা। হঠাৎ দেখি একটা চাকা রাস্তার পাশের কার্ভে ধাক্কা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে আমার গাড়ীর উইন্ডশিল্ডে আঘাত হানলো। সব কিছুই মুহুর্তের মাঝে ঘটলো।

প্রচন্ড শকে আমার মাথা ঠান্ডা থাকে। চারপাশে এতো গাড়ী যে থামানোর উপায় ছিলো না। প্রায় এক কিলোমিটার এভাবে চালানোর পর দেখলাম যে গাড়ী থেকে চাকা পরে গিয়েছিলো সেটা প্রাইম মিনিস্টারের লজের পেছনে বাঁক নিচ্ছে। আমিও পিছু নিলাম। এক সময় দেখি সেটা পিএম লজের পেছনে থেমেও গেলো। আসলে ঘটনা হলো আমার পেছনে যে গাড়ী ছিলো সেটা ঐ গাড়ীর পিছু নিয়ে ইশারা দিয়ে থামিয়েছে। দূর্ঘটনা স্থলের  পর আর কোথাও থামানোর জো ছিলো না। আর সেই ফোর হুইল ড্রাইভারও কিছু টের পায়নি। বাড়ী থেকে নেমে আসবার  পর বুঝতে পারলাম আসল ঘটনা। ট্টেইলারের পেছনে চারটা চাকার মধ্যে বাম পাশের পেছনের চাকার স্ক্রু খুলে চাকা ছিটকে বের হয়ে গিয়েছিলো। আর সেই চাকাই আমার গাড়ীর বারোটা বাজিয়েছে।

দূর্ঘটনাতো আর বলে কয়ে আসে না। দুজন দুজনার ডেটেইলস বদলা বদলি করলাম। বাসায় এসে পুলিশ রিপোর্ট করলাম নেট এ বসে। ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে ফোন করলাম যথারীতি। দূপুর নাগাদ ইন্সিরেন্স কোম্পানী থেকে লোক এসে সব কিছু দেখে শুনে বল্লো সব কিছু ঠিক করতে যা লাগবে তাতে নতুন আরেকটা কেনা যাবে। ওরা গাড়ী ঠিক না করে তার বদলে বাজার দরে দাম দেবার অফার করলো। সচারচর এরা তাই করে থাকে, আমিও সায় দিলাম।

দু দিন থেকে গাড়ী ছাড়া।  বাস ছাড়া গতি নেই। গাড়ী কেনার সময় হাজার ডলার লাগলেও ভাঙা গাড়ী শত ডলারেও কেও কিনতে চায় না। এমনও না যে ইচ্ছে হলো রাস্তার পাশে ফেলে রাখলাম আর আল্লাহর মাল বলে কেউ নিয়ে গেলো।

আজ ব্যাংকে গেলাম কার লোন এপ্রুভ করাতে। ঋনের বোঝা বাড়বে আবারো। ভাগ্যিস চাকাটা উইনন্ডশীল্ডের মাঝ বরাবর পরেনি। পরলে এখন আর ব্লগ লেখা হতো না। 

রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১১

রক্তারক্তি কান্ড

২টি মন্তব্য :
য় পাবার কিছু নেই। এখানে রক্তারক্তি ঘটবে না।

গত পরশু ৩৮ বারের মতো রক্ত দিলাম। বিদেশের মাটিতে ১৩ বার আর দেশে ২৫ বার। অনেক কিছুই গুনে রাখতে ভুলে গেলেও রক্ত দেবার কথা ইচ্ছে করেই যত্ন করে মনে রাখি। কেনো ! উহু , সেটা এখন বলা যাবে না।

প্রথম যেবার রক্ত দেই তখন কলেজে পড়ি। ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে সন্ধানীর স্টলে। রক্ত দেবার পর এক গ্লাস গরম কোক আর একটা টি-শার্ট, টি শার্টের লোভে রক্ত যে দিয়েছিলাম সেটা অস্বীকার করছি না এতো বছর পর। রক্ত দেবার পর প্রচুর পানি পান করতে হয় ঘাটতি পূরনের জন্য, দেশে কেনো যে কোক - পেপসি দেয় সেটা বুঝতে পারি না !

দ্বিতীয় বার রক্ত দেই আমার এক খালাকে। ব্রেস্ট ক্যান্সার অপারেশনের জন্য উনাকে বারডেমে রক্ত দিয়েছিলাম। রক্ত ব্যবস্থাপনায় সে সময় রারডেম ছিলো সেরা। রক্ত নেবার আগে কত কথা - কত খাতির, রক্ত নেবার পর আর অপারেশন শেষে সেই যে উনি খোঁজ কবর নেয়া বন্ধ করলেন সেটা এখনো চলছে। তখন খারাপ লাগলেও এখন আর লাগে না। অনেক মানুষ এরকমই হয়।

কলেজের পড়বার সময় একবার ঢাকা মেডিক্যাল সন্ধানী থেকে একটা টিম এসেছিলো । সুন্দরী আপুদের দ্বারা হাতে সেবার সূঁচ ফোটাবার ভয়াবহ খারাপ অভিজ্ঞতা হবার পর ঠিক করেছিলাম আর কোনোদিন ওদের কাছে হাত বাড়াবো না রক্ত দিতে। যদিও এ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি, অনেক বারই সন্ধানীর কাছে রক্ত দান করতে হয়েছে। যত বারই রক্ত দিয়েছি ততবারই মনে হয়েছে এরা এত কস্ট দেয়া কেনো ! ভেইন খুঁজে পেতে কেনোই বা এতো ঝামেলা পোহাতে হয় এদের !

একবার পাশের বাসার ছোট্ট ছেলেটিকে রক্ত দেবার কথা ছিলো। এলিফ্যান্ট রোডের গলিতে হেঁটে যাবার সময় ছেলেটিকে প্রায়ই দেখতাম বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে। যেদিন রক্ত দেবার কথা ছিলো সে দিন শুনলাম ছেলেটি মরে গেছে। কি যে কস্ট লেগেছিলো। ছেলেটির থ্যালাসমিয়া ছিলো। কি সুন্দর দেখতে ছিলো সেই ছোট্ট ছেলেটি, কি বিষন্ন মাখা চোখ। এর পর প্রায়ই মোহাম্মদপুরের রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড সেন্টারে যেতাম রক্ত দিতে। যেখানে রক্ত দিতাম তার পাশেই একটা বড় ঘরে রক্ত দেয়া হতো। মানুষগুলোর রক্ত মারা যাচ্ছে, সারাটা জীবন রক্ত নিয়ে যেতে হবে। কি অসহ্য জীবন ওদের।

কুমিল্লার এক বিখ্যাত ও অনেক প্রাচীন স্কুলের হেড স্যারকে রক্ত দিয়েছিলাম, উনার ডেংগি হয়েছিলো। স্যারের অসুখ সেরে যাবার পর কিভাবে যেনো উনি আমার ঠিকানা যোগার করলেন। একরকম জোর করেই উনার ছেলের বাসায় নিয়ে এক গাদা খাওয়ালেন। রক্ত দেবার পর গ্রহীতা যাতে আমার সাথে যোগাযোগ না করতে পারে তার চেস্টা থাকে আমার। কেউ কৃতজ্ঞ হয়ে এমন কিছু করুক সেটা আমার পছন্দ না। রক্ত দান একটা নিশর্ত দান।

কলেজ পাশ করে অফুরন্ত অবসরে একটা ছোট ব্যবসা শুরু করে দিয়েছিলাম। তেমন আহামরী কিছু না। ফোন - ফ্যাক্সের ব্যবসা। জীবন বাঁচাতে যদিও ব্যবসার কোনো প্রয়োজন ছিলো না তবুও জীবনে চিনতে ব্যবসা বানিজ্য অনেক কাজে লাগে। মাঝে সাজে এক ভদ্রলোক ফোন করতে আসতেন। টিকাটুলীর মোড়ে পানির ট্যাংকির নিচে ছাপড়া ঘরে থাকতেন, এক সময় হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন, ফ্যাক্টরি বন্ধ হবার পর ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করতেন। উনার নামটা মনে নেই। একবার এরওর কাছে ফোন করে রক্তের জন্য চেস্টা করছিলেন। পিজি হাসপাতালে উনার ব্উয়ের জড়ায়ু ফেলে দেয়া হবে। আমি বল্লাম রক্ত দিবো। পিজি হাসপাতালে রক্ত দেবার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। যেই লোক রক্ত নেবার দ্বায়িত্বে ছিলো তার ব্যবসা ছিলো রক্তে বেচা। সেই ভদ্র লোক রক্ত না কিনে কেনো দাতা নিয়ে এসেছিলেন তার জ্বালা আমার উপরে ঝেড়েছিলেন প্রচন্ড ব্যথা দিয়ে। টিকাটুলীর সেই ভদ্রলোক বউ এর অপারেশন শেষ হবার পর উনার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ছোট্ট একটা ছাপড়া ঘরে থাকা- সেই ঘরে রাঁধা। ভদ্রলোক একজন বীর বিক্রম।

এভাবে অনেক রক্ত দিয়েছি। জানিই না আমার রক্ত কার ধমনিতে প্রবাহিত হয়েছিলো। বিদেশে এসেও থেমে থাকেনি রক্ত দেয়া। জিনিসটা কেনো জানি নেশার মতো।

চলবে

সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১১

ঠিক কি গালী দিলে আদালত অবমাননা হবে না ?

কোন মন্তব্য নেই :
জ কাল মনে হয় "আদালত অবমাননা" একটি নিত্যকার ঘটনা। লজ্জাবতী পাতার মতোই আদালত আজ কাল এতো বেশী স্পর্শ কাতরতায় ভুগে যে আজ একে ওকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখে স্কুলে বাচ্চাদের মতো সবক দেয়, ধমক দেয়। মাঝে সাজে নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত রুল (সুয়োমটো) জারি করে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলেন। তবে মজার ব্যপার হলো আদালতের উনারা এমন সব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান যে সব ব্যপারে সরকারের বৃহৎ স্বার্থ জড়িত নেই। মহিউদ্দীন ফারুকের এই রিপোর্ট পড়বার পর মনে হতে পারে ক্রসফায়ার নিয়ে আদালতের সুয়োমটো দেবার পর এর পর কি হলো ! আদালত কি এর ফলোআপ করেছে নাকি সরকারের ধমকে উনারা "চিমশাইয়া" পড়েছেন ! এতো গেলো উচ্চ আদালতের অবস্থা।

আদালতের এ রকম কর্মকান্ডকে সমালোচনা করাও মহা বিপদ। উনারা "বিব্রত" হন বিচারের শুনানী করতে কিন্তু এই বিব্রত হওয়াকে নিয়ে কথা বলতে গেলে উনারা 'অব-মানিত' বোধ করেন। কারন আদালত নাকি স্বার্বভৌম ! সমালোচনার উর্ধে !

আজকের প্রথম আলোর এ সংবাদটা পড়ে ও ছবি দেখে অনেকেই পুলিশকে গালী দিবেন। সেই তিন পুলিশের গালী প্রাপ্যও। তবে আদালতের চেয়ারে বসা ম্যাজিস্ট্রেটের কান্ড দেখলে "আসামী" মানসিক অবস্থা আন্দাজ করা যায়। একজন বিচারক শত প্রমাণ থাকা সত্বেও অভিযুক্তকে জামিন দেবেন, বছরের পর বছর মামলা ঘুড়াবেন কিন্তু বিচার করবেন না ; আর এটার প্রতিবাদ করলেই সেটা আদালত অবমাননা হবে, হাতকড়া লাগিয়ে চ্যাংদোলা করে হাজত খানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিছু দিন আগে এক অভিযুক্ত হাকিমের দিকে স্যান্ডেল ছুড়ে মেরেছিলো বছরের পর বছর বিনা বিচারে জেলে আটকে থাকবার জন্য, শত প্রমাণের পরও জামিন না পাবার জন্য। স্যান্ডেল ছুড়ে মারবার জন্য তাকে শাস্তি হিসেবে জেলে পাঠিয়েও দিয়েছিলো সেই বিচারক, কিন্তু ঠিক কি কারনে সেই মানুষটি এতো ক্ষীপ্ত সেটা দেখার প্রয়োজন সে বোধ করেনি। বাহ বাহ চমেৎকার................

ইত্তেফাকে কিছু দিন আগে একটা সংবাদ বের হয়েছিলো। অন্য সব পত্রিকায় সে খবর খুঁজে পাইনি। হয়তো স্পর্শকাতর আদালতকে ঘাঁটাতে চায়নি বলেই পত্রিকাগুলো সেই সংবাদ ছাপায়নি। হাই কোর্টের একজন বিচারপতি  ট্রফিক কনস্টেবলকে কান ধরান সে কেন সিগন্যালের লালবাতি জ্বলে উঠার পর হাত উঠিয়ে তার গাড়ী থামিয়েছিলো। যে কারণে শত-শত গাড়ির সঙ্গে বিচারপতির গাড়িও আটকা পড়ে স্রেফ এই কারণে। ভাগ্যিস বাংলাদেশ তথাকথিত উন্নত দেশ না, হলে উল্টা এই বিচারপতিরই বিচার হতো। যে বিচারপতিরা নিজেদের ঈশ্বর ভাবেন তাঁদেরকে কি আমি মনে করিয়ে দেব অন্য দেশ হলে কি হতো? [ এ অংশ টুকু নেয়া হয়েছে আলি মাহমেদের ব্লগ থেকে]

আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও নিরুংকুশ মান্যতা আমার আছে। কিন্তু বিচারকের আসনে বসা সেই মানুষটির প্রতি সেই শ্রদ্ধাবোধটা অনেক টুকুই টলে গিয়েছে। নিম্ন আদালতে দলীয় আনুগত্যে নিয়োগ পাওয়া বিচারকের পাল যখন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে রায় বিক্রি করে তখন সেই বিচারকের প্রতি শ্রদ্ধা টলে না যাওয়াটাই স্বাভাবিক। উচ্চ আদালত যখন ভরে যায় দলীয় আদর্শে নিয়োগ পাওয়া অযোগ্য ও ধামা ধরা বিচারকের তখন সেই শ্রদ্ধাবোধ কি আদৌ টলে যায় না ? অনেকেই হয়তো বলতে পারেন " মিয়া কি প্রমাণ আছে তুমার কাছে যে বিচারকরা দূর্নীতি করে না, আর মিয়ে কুন সাহসে তুমি বিচারকদের দুষী সাব্যস্থ করতেছে ?" আমি বলি, যদি বিশ্বাস না হয় তবে ১ দিন আদালত পাড়ায় যান, যদি ৫% এর বেশী সৎ বিচারক পান তবে আমার নাম সুমন বদলে এলিযাবেথ রেখে দেবো। রায় আজ কাল টাকার কাছে বিক্রি হয়, মানুষের বিচারের দাবী দাবীই রয়ে যায়; পূরন আর হয় না।

এ দেশে রাত বারটার সময় জলপাই ধাক্কায়  সুপ্রিম কোর্ট বসে, কিন্তু বছরের পর বছর মামলা নিস্পত্তি হয় না। টাকা থাকে আগাম জামিন নেয়া যায় হাই কোর্ট থেকে, টাকা না থাকলে জামিতো দূরের কথা শুনানীও হয় না, টাকা ক্ষমতা থাকলে সরাসুরী হাইকোর্ট যাওয়া যায়, টাকা থাকলে ধর্ষন মামলার শত প্রমানিত আসামীও খালাস পেয়ে যায় কিন্তু টাকা-ক্ষমতা না থাকলে কিছুই হবার নয় ।

আদালতকে গালী দিতে চাই না। কিন্তু বিচারকদের গালী দিতে চাই। ঠিক কোন গালী দিলে আদালত অবমাননা হবে না ?

একটা গালী দিয়েই দিলাম  " হড্ডিলা ভাঙত কটিৎ পাকত ঢুকায় দিম ", মেজাজ অনেক খারাপ আজকে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে।

সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১১

৬টি মন্তব্য :
আন্ডারগ্র্যাড এ আমার এরকম কোনো আহামরী রেজাল্ট ছিলো না যাতে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেচে এসে আমাকে বৃত্তি দিয়ে বলবে 'এসো বাপু আমাদের এখানে গবেষনা করো বা পড়াশোনা করে পৃথিবীর চেহারা বদলে দাও'। নিজেরও তারা ছিলো অনেক তাড়াতাড়ি বিদেশের একটা ডিগ্রী নিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নেবার। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোর্সওয়ার্কে বৃত্তি খুবই কম বিদেশী ছাত্রদের জন্য। রিসার্চ মাস্টার্সে অনেক বৃত্তি থাকলেও ঐ যে বলেছি কারনটা, সে কারনেই সাহসে কুলোয়নি কিছু চেস্টা করবার। নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সচেতন থাকা উচিৎ সবার, এতে অনেক উটকো ঝামেলা থাকে বাঁচা যায়। 


দেশ থেকে প্রথম সেমিস্টারের টাকা দেয়া থাকলেও মাথার উপরে চাপ ছিলো পরের সেমিস্টারের টাকা জোগার কোথা হতে করবো। ব্যপারটা বেশ কস্টকর যখন টাকার "উৎস" থাকে দূর্বল বা আদৌ থাকে না। দেশ থেকে নিয়ে এসেছিলাম ১৫০০ মার্কিন ডলার। সেটাই ছিলো সম্বল। বাসা ভাড়া - খাবার খরচ - বাসের মাসিক টিকেট ইত্যাদি হড়েক রকম খরচ করবার পর মাস দেড়েক পর আবিস্কার করলুম ব্যাংকের একাউন্টের অবস্থা খুবই করুন। পড়াশোনার ফাঁকে কাজ করতে হবে সেটা জানা ছিলো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সেটা জানা ছিলো না।


কাউকে চিনিও না। যে বন্ধুর কাছে এসেছি সেউ স্বার্থপরতার চরম প্রকাশ দেখিয়ে কেনো জানি এড়িয়ে যায়। বুঝলাম, যা কিছু করতে হবে নিজেকেই করতে হবে। অন্যের ভরসা আমি আমি কখনোই করি না কিন্তু মাঝে সাজে সেটা করতে বাধ্য হতে হয় সেটা জানা ছিলো। একে ওকে কাজের কথা বলি, এখানে ওখানে সিভি পাঠাই কিন্তু কাজ হয় না। বাঙালী যাদের বলেছি তারাও ব্যস্ততার ভানে শুনেও না শোনার ভান করেছিলো , যদিও এদের কারো কারো ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাও ছিলো। তবু এতো বছর পর এসে বুঝতে পারি এদের কেউ কেউ ইচ্ছে করলে সাহায্য করতে পারতো। এভাবেই মানুষ চেনা যায় ।


একদিন এক ক্লাস মেট আমার অবস্থা দেখে বল্লো আপনার সিভিটা বদলাতে হবে। বলে, "মিয়া কাজতো করবেন কিচেন হ্যান্ড বা চেক আউট অপারেটরের কিন্তু সিভিতে কি প্রোগ্রামিং ভাষা জানেন সেইটা দ্যান ক্যান ? সাদা মাটা সিভি বানান যেইখানে খালি নাম ঠিকানা , মোবাইল ফোন নাম্বার আর ইউনির নাম লেখা থাকপে। অন্য সব বাদ" । তথাস্থা, তাই করলাম। সে এটাও বলেছিলো শনিবারের পত্রিকায় কাজের খবর থাকে। পত্রিকা কিনে শনিবার সকাল ৯ টার পর ফোন লাগাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। তাই করা শুরু করলাম। এখানে ওখানে ফোন করি, সবাই নাম ও নাম্বার রেখে দেয়, কাজের জন্য ডাকা দূরকা বাত, ইন্টারভিউ এর জন্যও ডাকে না। এর পর শুরু করলাম হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন রেস্তোরায় সিভি ড্রপ করা। মনে হয় এহেন কোনো রেস্তোরা নাই যেখানে সিভি ড্রপ করি নাই। শহরের কিছুই চিনি না, ম্যাপ হাতে হাঁতি আর রেস্তোরা বা অন্য জায়গা পেলেই সিভি ফেলাই।


এভাবে হাঁটতে হাঁটতে "চারমার্স " নামে এক ছোট্ট এক রেস্তোরায় সিভি ফেলতে গিয়ে মনে হলো কাজ মনে হয় পাবো ! ওয়েট্টেস মেয়েটি সুন্দর হেসে বল্ল বসতে, সে গেলো শেফকে ডেকে আনতে। বয়স্কা মহিলা " সু " ছিলো সেখানকার হেড শেফ। সে বল্লো কোন কোন দিন কাজ শুরু করতে পারবো। আমি বল্লাম অমুক অমুক দিন তমুক তমুক সময়ে। সে নল্লো সেই সন্ধ্যা থেকেই কাজ শুরু করতে।
সন্ধ্যা ৫ - রাত ১০ টা, ঘন্টা ১০ ডলার। দিনের টাকা দিনে। শুর হলো আমার ডিশ ওয়াশার ওরফে কিচেন হ্যান্ড ক্যারিয়ার।
--------------------------------------------------------------------------------------

বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১০

কোন মন্তব্য নেই :
থা ছিলো ডার্লিং হার্বার থেকে ফেরীতে ম্যানলি বিচে যাওয়া হবে কিন্তু পরে হঠাৎ সবাই ঠিক করলো গাড়ীতে যাবে। ঘন্টাখানেক গাড়ী চালানোর পর ম্যানলি বিচে পৌঁছানোর পর সমস্যা দেখা দিলো পার্কিং নিয়ে। প্রচন্ড ব্যস্ত সময়ে পার্কিং পাওয়া একটা বড় সমস্যা। এটাতো ঢাকা নয় যে, যেখানে ইচ্ছে পার্কিং করে ফেল্লাম।

সমুদ্র অবগাহনের কোনো প্রস্তুতি না থাকলেও সমুদ্রের আহবান অর্গ্রাহ্য করা বড্ড কঠিন। বিচে পৌঁছুবার পর সবার তাড়া দেখা গেলো সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বার। কক্সবাজারের সমুদ্রের ঘোলা পানি দেখে অভ্যস্থ চোখ প্রশান্ত মহাসগারের তাসমান সাগরের নীল পানি দেখে যে মুগ্ধতার আবেশ পেয়েছিলো সেটা এখনো চোখে লেগে আছে। পরিস্কার নীল আকাশ আর সাগরের নীল পানি যেনো মিতালী পেতেছে দিগন্তে।



পানিতে দাপাদাপি করবার সময় হঠাৎ কি যেনো এসে পিঠে চাবুকের মতো আছরে পড়লো হঠাৎই। হঠাৎ তীব্র এক জ্বালা। পিঠ বেয়ে কোমরের কাছাকাছি লালচে ফুটকি দেয়া লম্বাটে একটা দাগ। তীব্র যাতানায় অন্য সবাইকে বল্লাম, কেউ গা লাগালোনা এতে। আমিও উদ্যাম দাপাদাপির মাঝে ভুলে গিয়েছিলাম সব কিছু। পরে শুনেছি এটা নাকি 'সি লাইস'। মাঝে মাঝে এটা নাকি ভয়ংকরও হয়ে উঠে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য !

গোসল সেরে বিচের পাশের শাওয়ারের মিস্টি পানিতে সাগরের নোনা পানি ধুয়ে ফেলবার পর বিচের পাশ ঘীরে তৈড়ি করা দেয়ালে পা ছড়িয়ে সাগর দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিলো জীবনটা কত সুন্দর। বিচে শুয়ে থাকা সুর্য স্থানরত অর্ধ নগ্ন মেয়েদের দিকে যে চোখ যায়নি সেটা অস্বীকার করছি না। অনভস্থ চোখে সেটা অন্য রকম লাগলেও কেনো জানি মনের মাঝের "কু"টা ডেকে উঠেনি। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। কেউ বা বিচ তোয়ালেতে শুয়ে চামড়া ট্যান করতে ব্যস্ত, কেউ বা বিচ ফুটবল খেখছে, কেউ বা দূরে সার্ফিং । উচ্ছল প্রানবন্ত এক জীবন।

পেটে চামচিকে বুক ডন দিচ্ছিলো। পকেটে ডলারও ছিলো না যে কিছু কিনে খাবো। অন্যদেরও মনে হয় ক্ষুদা লাগেনি। কি আর করা। গাড়ী নিয়ে সোজা পেনরিথে সোহেলের বাসা গিয়ে খুব ক্লান্ত লাগছিলো। জেট ল্যাগের ধাক্কাটা তখনো সামলে উঠতে পারিনি। ওখানে গিয়ে দিলাম এক লম্বা ঘুম। ঘুম যণ ভাঙলো তখন ক্যানবেরা যাবার প্রস্তুতি নিতে নিতে কখন যে মধ্যরাত হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। পেনরিথ থেকে এমফাইভ ধরে ক্যানবেরার উদ্দেশ্য যখন যাত্রা শুরু হলো তখন সকাল ১টা কি ২ টা বাজে। ওরা বল্লো যেতে নাকি ৩ কি সাড়ে ৩ ঘন্টা লাগবে।



গাড়ী চলছেইতো চলছেই। মনে হচ্ছিলো কখন ক্যানবেরা পৌঁছুবো। রাস্তায় গোল্ডবার্নের কাছে এসে কফি খাওয়া হলো। আমার চোখে ঘুম কিন্তু ঘুমুতে পারছি না। ছোট্ট গাড়ীর পেছনের সিটে গুটিশুটি মেরে বসে বাহিরে তাকিয়ে দেখছি কোথাও কোনো আলো নেই। নেই কোনো জনপদের চিহ্ন। দেশে ঢাকা ছেড়ে দূরে কোথাও যাবার সময় আশে পাশের বাড়ীগুলো দেখে মনে হতো আমি বা আমরা একলা নই। এখানে মনে হচ্ছিলো আমরা বুঝি অন্ধকার কোনো অনিশ্চিৎ গন্তব্যের দিকে ছুটে ছলছি।


ক্যানবেরার কাছাকাছি যাবার পর পাহারের উপর থেকে প্রথমবারের মতো শহরটিকে যখন দেখলাম তখন মনে হলো দূরে মনে হয় কেউ যেনো লাখ লাখ পিদিম জ্বালিয়ে রেখেছে। শুনেছিলাম শহরটি নাকি খুবই ছোট্ট, আলো দেখে মনে হচ্ছিলো যতটুকু ছোট ভেবেছিলাম ততটুকু ছোট আসলে নয়। ও'কোনোরের বাসায় যখন পৌছুলাম তখন প্রায় ভোর। ঘরে জিনিস পত্র রেখে ম্যাট্রেসে শুয়ে মন হচ্ছিলো ঘুমিয়ে পরি এখনই। ঘরে একটা পুরোনো ম্যাট্রেস, পড়ার টেবিল আর একটা কাবার্ড। এ বাসাটিতে ছিলাম ২ কি ৩ মাস। এক অকথ্য অভিজ্ঞতা।

সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

আজ শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস

২টি মন্তব্য :
ব্লগে বা অন্যান্য অনেক লেখায় অনেকেই বড় গলায় ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের ট্রাক উঠিয়ে দেয়ার কথা বলি। ওই ঘটনায় প্রাণ হারান তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইব্রাহিম সেলিম ও দেলোয়ার হেসেন। আমরা অনেকেই সে দিনকে সেলিম - দেলোয়ার দিবস বলে জানি।
হয়তো অনেকেই ভুলে গিয়েছি ; মনে করিয়ে দেবার জন্য বলছি "আজ সেই দিন"।

আমরা শুধু ভুলেই যাই না , তাদের জন্য কিছু করার কথা ভাবীও না। আমাদের সময়ের দাম আছে না !
এটা ব্যপার না, চুতিয়া  সুশীলদের এটা হতেই পারে। নিজেকে জাহির করার জন্য, চেতনাকে লোক দেখানোর জন্য বা নিছক ব্লগে বা কলাম লেখায় ফালতু বাহাবা নেবার জন্য এসবের প্রয়োজন অসীম। দিবস- টিবস হলো আর দশটা "মালের" মতো এটাও একটা মাল;  ব্যবসার পণ্য।

সাবাস বাঙালীর গোল্ডফিশের স্মৃতি।
----------
কালের কন্ঠে তৌফিক মারুফের রিপোর্ট খানা তুলে দিলাম। কালের কন্ঠের পার্মালিংকের কোনো অবস্থা নাই বলে, কপি-পেস্টই ভরসা।

রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

পুলিশ নামা

কোন মন্তব্য নেই :
ষাটের দশকে পুলিশকে কটাক্ষ করে ছন্দে ছন্দে শ্লোগান দেয়া হতো " পুলিশ তুমি যতই মারো, বেতন তোমার দুইশ বারো "। গত চার যুগে বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি গড়িয়েছে। পুলিশের বেতন এখন আর সেই দুইশ বারো নেই, কিন্তু পুলিশের বেতন কম এজন্য পুলিশ দূর্নীতি করে এরকম একটা অজুহাত সব সময়ই দেয়া হয়।

দেখা যাক, পুলিশ আসলে কত বেতন পায়। পুলিশের জন্য সরকারের আলাদা বেতন স্কেল না থাকলেও বেতন ভাতা নির্ধারনের জন্য আলাদা ভাবে একটি স্কেল বর্ননা দেয়া আছে যা এখানে পাবেন।
প্রথমেই বলা দরকার, পুলিশে তিন পর্যায়ে নিয়োগ দেয়া হয়। স্বভাবতই প্রারম্ভিক বেতনও শুরু হয় তিন ভাগে।

পুলিশ কন্সটেবল চাকুরি শুরু করে জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ১৭ থেকে যা ৳৪৫০০ - ২৪০*৭-৬১৮০-ইবি-২৬৫*১১-৯০৯৫,
সাব ইন্সপেক্টর শুরু করে গ্রেড ১১ থেকে যা ৳৬৪০০ - ৪১৫*৭ - ৯৩০৫ - ইবি -৪৫০* ১১-১৪২৫৫ এবং এএসপির শুরু হয় গ্রেড ৯ থেকে যা ৳১১০০০ - ৪৯০ * ৭ -১৪৪৩০ -ইবি -৫৪০*১১ - ২০৩৭০।
সর্বোচ্চ পদের আইজি পান ৳৪০০০০ ( নির্ধারিত ) যা গ্রেড ১ এর বেতন।

পুলিশ বেতনের পাশাপাশি বিশেষ কিছু ভাতা পায়, যা জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ অনুসারে নিম্মরূপ;

কন্সটেবল থেকে শুরু করে ইন্সপেক্টরা ঝুঁকি ভাতা পান ৳ ৫২০
কন্সটেবল থেকে শুরু করে সাব ইন্সপেক্টর চুলকাটার ভাতা পান ৳৬৫
এএসপি এবং এর উপরের কর্মকর্তারা প্রারম্ভিক কিট ভাতা পান ৳ ৮২৪০ এবং বার্ষিক কিট ভাতা (নবায়ন) হিসেবে পান ৳৫০৭০।
ইন্সপেক্টররা ( আন আর্মড ) প্রারম্ভিক কিট ভাতা পান ৳৪১১৯ এবং বার্ষিক কিট ভাতা (নবায়ন) পান ৳৩৩৮০।

কন্সটেবল থেকে শুর করে সাব ইন্সপেক্টরা বিনা মুল্যে পোষাক পান সরকার হতে যার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠা নিত্তকার ব্যপার। এর উপরের পদের কর্মকর্তারা পোষাক ভাতা পান না ও নিজের খরচেই তাদের পোষাক কিনতে হয়।

পুলিশের সব সদস্য ( কন্সটেবল - আইজি ) সরকার থেকে সমান হারে, সরকার এ ক্ষেত্রে ভূর্তকি দিয়ে থাকে বিপুল পরিমানে।

যেখানে আবাসনের ব্যবস্থা আছে সেখানে পুলিশ সদস্যরা সরকারী হারে বেতন থেকে বাসা ভাড়া কাটা হয় কিন্তু যেখানে বাসার ব্যবস্থা নেই সেখানে সরকারী নিয়ম অনুসারে অন্যান্য সব সংস্থার মতোই পুলিশও সমান হারে বাসা ভাড়া পেয়ে থাকেন।

আরো কিছু ভাতা আছে যেমন ট্রাফিক পুলিশ ভাতা, পার্বত্য অন্চল ভাতা, পুলিশ একাডেমী ভাতা, ডিটেকটিভ স্কুল ভাতা, পুলিশ স্টাফ কলেজ ভাতা ইত্যাদি যেগুলোর পরিমান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এগুলোর পরিমান নগন্য।

মুলত পুলিশের জন্য বিশেষ ভাতা ব্যতিত অন্যান্য সব সুযোগ সুবিধা ও বেতনের হার এবং এর বিভিন্ন প্রবৃদ্ধি সরকারী অন্যান্য সব সংস্থার মতোই।

উচ্চতর বেতন স্কেলে পদোন্নতি, সিলেকশন গ্রেডে বেতন ও টাইম স্কেল অন্যান্য সব সরকারী সংস্থাগুলোর মতোই একই নিয়ম মেনে চলে।

বলা দরকার, একজন পুলিশ কন্সটেবল চতুর্থ শ্রেণীর পদমর্যাদা ভোগ করেন, এসআই তৃতীয় শ্রেণীর (বর্তমানে ২য়), ইন্সপেক্টর ও এএসপি প্রথম শ্রেণীর।

শ্রম আইন অনুসারে কর্মঘন্টা পুলিশের জন্য প্রযোজ্য নয়। পুলিশকেবলা হয় ২৪ ঘন্টার চাকুরি। অন্যান্য সংস্থায় যেখানে ৮ ঘন্টার কর্মদিবসের ব্যবস্থা আছে সেখানে একজন পুলিশ সদস্যকে দৈনিক ১৫ - ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হয় অতিরিক্ত কোনো ভাতা বা সুবিধা ছাড়াই।

একজন পুলিশ কন্সটেবল তার চাকুরি জীবনে টাইম স্কেল পেয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড ১০ এ পৌঁছুতে পারেন , সাব ইন্সপেক্টরা সেখানে গ্রেড ৯ পর্যন্ত। এএসপি দের ক্ষেত্রে তা গ্রেড ১ ।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পুলিশের বেতন সরকারের অন্যান্য সব সংস্থার সমান, তার সাথে যুক্ত হয় বিশেষ ভাতা। এ ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর বেতন স্কেল দেয়া গেলো , সাথে রেশন স্কেল। পুলিশের রেশন স্কেলের তথ্য যোগার করা সম্ভব হয়নি। সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে যথারীতি অস্বচ্ছতা তাদের বেতন ও ভাতার বিবরনে। ননকমিশন্ড ও জেসিও দের বেতনের স্কেল তাদের সাইটে দেয়া নাই যথারীতি।

কথা হলো, ঠিক কত বেতন দিলে 'পুলিশের বেতন কম এজন্য দূর্নীতিবাজ' এ দোষ ঘুঁচবে ?

বিঃদ্রঃ এটা কোনো গো + এষনা না , আশ পাশ থেকে জেনে , গুগলিং করে কিছু লেখা। অন্যরা ভুল শোধরিয়ে ও তথ্য যুক্ত করলে বাধিত হবো।

শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

মধ্যরাতের পদাবলী

৩টি মন্তব্য :
চারদিকে শুনশান নিরবতা। হয়তো নতুন বছরের উৎযাপনে ব্যস্ত সবাই। কিন্তু বদ্ধঘরে সে শব্দ পৌঁছুচ্ছে না। ডেস্কে একলা আমি, কাজে ব্যস্ততার ভান করছি।

প্রথম আলোর মহান বিজয় দিবস ২০১০ বিশেষ সংখ্যায় "গেরিলা থেকে সম্মুখ সমর" খ্যাত মাহবুব আলমের লেখা "সাধারণ মানুষের অসাধারণ যুদ্ধ"পড়ছি। বইটি পড়বার সময় ৭১ এর যে সাহসী মানুষগুলোর কথা জেনেছিলাম সেই সাহসী মানুষগুলোর বর্তমান অবস্থা জেনে নিজেকে অনেক স্বার্থপর ও ছোট মনে হচ্ছে। একজন মকতু মিয়া অন্ধ হয়ে শণির আখড়ায় ভিক্ষে করে আর আমিই হয়তো শণির আখড়া দিয়ে যাবার সময় জানলা গলে হাত বাড়ানো হাতে অবহেলা ভরে ২ টাকা দিয়েছিলাম। বইটির প্রতিটি মানুষ আজ ভালো নেই। ৭১ এর সাহসী মানুষগুলো আজ ভালো নেই। আমরা সুবিধাভোগী মানুষগুলো ভালো আছি, ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধীরা ঠিকই ভালো আছে। অথচ যাদের ভালো থাকার অধিকার ছিলো তারাই নেই। হায় স্বাধীনতা !

নতুন বছর শুরু হলো। নতুন চ্যালেন্জ। নতুন জীবন। নতুন ভাবনা । নতুন স্বপ্ন।

তার কতটুকু পূরন হবে ?
সবাইকে নতুন বছরের শুভকামনা।