বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০১০

নীতিমালা ভাঙার পোস্ট

কোন মন্তব্য নেই :
মধ্যযুগের কোনো এক সময় আমার এক চাকমা বন্ধু 'ছিলো'। ছিলো বলার অনেক কারন আছে। সেটা না হয় অন্য একদিন বলা যাবে।

নামের শেষ অংশে চাকমা থাকায় তাকে চাকমা বল্লাম। অনেক হয়তো নাক উঁচু করে বলতে পারেন আদিবাসী বা পাহাড়ি কেনো বল্লাম না ! নামে কি এসে যায় বাহে? আমি বাঙালি , ও চাকমা। খেল খতম।

সময়টা নব্বইয়ের দশক। পাহাড়ে শান্তি বাহিনী আছে, আর্মিও আছে। তখনো নিষিদ্ধ বস্তুর মতো সংবাদপত্র গুলোতে সতর্কতার সাথে পাহাড় সম্পর্কিত খবর গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। তার মাঝেও লোগাং ম্যাসাকারের মতো খবর চলে আসে কানে। শান্তিবাহিনী ৯ বাঙালি কাঠুরেকে নৃশংষ ভাবে হত্যা করেছে জাতীয় খবর যেভাবে প্রথম পাতায় চলে আসে তেমনভাবে অবশ্য বাঙালি সেটেলারদের দ্বারা হত্যার ছবি কখনোই আসে না। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ব্যনারে পাহাড়িদের মিছিলও পত্রিকার শেষ পাতায় ' দয়া ' করে ছাপা হয়।

পাহাড় কেনার স্বপ্ন আমার ছোট বেলা থেকেই। আমার সেই চাকমা বন্ধুকে এই স্বপ্নের কথা বলতেই সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। বলে কি ' ওর ভিটা বাড়ী দখল করে নাকি আমার স্বপ্নের পাহাড়ে বাংলো বানাবো ' ! আমি পাহাড়ের ছবি দেখাই, রাঙামাটির সেই তথাকথিত ঝুলন্ত ব্রীজ দেখাই, কাপ্তাই লেক দেখাই। ও বলে কাপ্তাইয়ের লেকের নিচে ওর নাড়ি পোতা। আমি অবহেলা ভরা হাসি দেই। আমি হাস্যজ্বল পাহাড়ি নারীর ছবি দেখিয়ে প্রেমের কথা বলি, ওর চোখ জ্বল জ্বল করে উঠে ক্ষোভে। আমি আমাদের দেশপ্রেমিক মেধাবী ও সাহসী সেনাবাহিনীর কথা বলি, ওর চোখে ঘৃনা দেখতে পাই। আমি পাহাড়ে শান্তির কথা বলি, ও বলে সীমান্তের ওপারে রিফিউজি ক্যাম্পে আটকে থাকা পিসিমার কথা। আমি বিশ্বাষ করি না, ওর চোখে পানি জমতে দেখি। ও কখনোই বলেনি ওর কাকা কিভাবে মারা গিয়েছিলো শুভলং পাহাড়ে, ও কখনোই বলে নাই কি হয়েছিলো সেই রাতে ওর কাকি মার। আমরা জানি সবকিছুই, কিন্তু ভাব করি যেনো কিছুই জানি না।

একদিন জিগেস করি সব কিছু। ও বলতে চায় না। চাপাচাপি করতে চাই নাই। আবারো জিগেস করি। ওর মুখে আগুন দেখতে পাই। হতাশা - ক্ষোভ - প্রতিহিংসা - ঘৃনায় মেশানো অন্য এক আগুন। এক সময় মুখ শক্ত করে বলে " সব বাঙালি মায়রে খানকির পোলাদের মায়রে চুদি" ।

------
এ লেখার উদ্দেশ্য কিছু না । হয়তো অন্য কোথাও পড়া কোনো লেখা থেকে কোনো কিছু লেখার অনুপ্রেরনা। এটাকে সিরিয়াসলী নেয়ার কিছু নাই। যে বন্ধুর কথা বল্লাম তার নাম যুক্তিসংগত কারনেই বলা যাবে না। এক সময় শান্তিবাহিনীর উঁচু স্তরের এক নেতা ছিলেন। গল্পাচ্ছলে বলা হলেও এর সত্যতা ১০০%।
সুম্মা আমিন।

শনিবার, ১৫ মে, ২০১০

আসুন গনতন্ত্র শিখি

কোন মন্তব্য নেই :

ভিডিও ঋণ: উইকিলিকস (http://www.wikileaks.com)

গ ন ত ন্ত্র
মানবতা
মুক্তি

আসুন এদের কাছ থেকে গনতন্ত্র শিখি
মানবতা শিখি
শিখি কি সুন্দর ও দক্ষ ভাবে মানুষ হত্যা করা যায়
কি নিপূনভাবে ঠান্ডা মাথায় হাসতে হাসতে ....................

আমি আমার খাতা খুল্লাম
শিখতে চাই

বুধবার, ১২ মে, ২০১০

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১

২টি মন্তব্য :
শুরুর গল্প

দেখতে দেখতে ৬ বছর হয়ে গেলো এদেশে। অনেক গল্প, অনেক স্মৃতি। । অর্ধযুগ পেড়িয়ে সেই সব ছোট ছোট গল্পকে সূতোয় গাঁথবার জন্য অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম। সময়ের সাথে অনেক স্মৃতিই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। কিছু গল্প না বলা গল্প হয়ে যাচ্ছে। অনেক ব্যর্থতা , অনেক সফলতা।  হয়তো অনেক কিছুই বলা হবে, হয়তো অনেক কিছুই না বলা রয়ে যাবে। একান্তই ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর কিছু ঘটনা ও বিষয় ছাড়া হয়তো অনেক কিছুই লেখা হবে।


প্রস্তুতিপর্ব

অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসবো এরকম একটা ইচ্ছা প্রথম থেকেই ছিলো। পৃথিবীতে আরো দেশ থাকতে অস্ট্রেলিয়াকে কেনো পছন্দ করেছিলাম তা মনে নেই। সে কারনেই মনে হয় অন্য কোনো দেশের জন্য চেস্টাও করা হয়নি।

দেশে আন্ডারগ্র্যাড শেষ করেই ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এখানে সেখানে ভর্তির আবেদন করা। রিসার্চ ওয়ার্কের চাইতে কোর্স ওয়ার্ককে বেছে নিয়েছিলাম প্রথম থেকেই। হয়তো সরাসুরী নিজ পেশাতে ঢুকে যাবার ইচ্ছে থেকেই। অস্ট্রেলিয়ায় বিচিত্র কারনে ইন্টারন্যাশলাল স্টুডেন্টদের জন্য স্কলারশীপ খুব কম। স্কলারশীপ বা গ্র্যান্টের চেস্টা করেও তেমন লাভ হয়নি।  যেগুলো আছে সেগুলোর জন্য চেস্টা করতে সময়ের অভাবও ছিলো। নিজ যোগ্যতা নিয়ে সংশয়ই ভুগেছি বলেই মনে হয় চেস্টাতেও অনেক গাফলতী ছিলো। শেষ মেশ নিজের টাকায় পড়তে চলে আসা।

অস্ট্রেলিার ভিসা পাবার খবর পাই ২৫শে জানুয়ারী ২০০৪। ভিসা নেয়া হয় ১৫ জানুয়ারী। বিমান যখন মাটি ছেড়ে আকাশে উড়বার প্রস্তুতি নেয় সেই দিনটি ছিলো ১৩ই ফেব্রুয়ারী ২০০৪, সময় সকাল ১ টা। অস্ট্রেলিয়া পৌঁছি সন্ধ্যে ৭ টা, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০০৪।

জীবনের আরেকটি অধ্যায় শুরু হলো।

মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০১০

"মা" তোমায় ভালোবাসতে দিবস লাগে না

কোন মন্তব্য নেই :
"মা" তোমায় ভালোবাসতে দিবস লাগে না।
হয়তো ফোন করা হয়নি ঘটা করে,
হয়তো কার্ড পাঠানো হয়নি,
কিছুই করা হয়নি,
কিছুই বলা হয়নি,
তারপরো তারপরো
"মা" তোমায় ভালোবাসতে দিবস লাগে না।।

২ বছর ১০ মাস ৪ দিন। মাকে দেখি না।
দেশ দেখি না।
৫৫৯৯ মাইল
৯০১১ কিলোমিটার
ইচ্ছে হয়, স্বপ্ন দেখি।
 

 "মা" তোমায় ভালোবাসতে দিবস লাগে না।।

দেশ বদলালে দিবসও বদলায় সেটা জানা ছিলো না। এ জীবনের কতো কিছুই যে জানার বাকি। উইকি ঘাঁটতে গিয়ে দেখি একেক দেশে একেক দিনে মা দিবস। তবে বেশীর ভাগ দেশেই দেখলাম মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালন করা হয়।

সুবোধ সরকারের লেখা কবিতাটা পড়লাম। ভালো লাগলো বলে নিজ ব্লগে টুকে রাখলাম।

বৃদ্ধাবাস থেকে -সুবোধ সরকার

বত্রিশ বছর আগে একবার আমার ঠোটে
একজন আমাকে চুম্বন করেছিল
এবং
আরো বত্রিশ বছর আগে
আমার প্রথম জন্মদিনে ঠিক একই জায়গায়
তিলের পাশে আমার বাবা
চুম্বন করেছিলেন।

আমার এখন ৬৫, ছেলে আমেরিকা
মেয়ে মাসে একবার দেখা করে যায়
১৩ নম্বর ঘরে।

মাত্র দুটো চুম্বন। দুটোই দারুণ।
আমি প্রতিদিন কাগজ পড়ি। খোঁজ রাখি পৃথিবীর।
আর অপেক্ষা করি ছেলে আমেরিকা থেকে
ঝাড় খেয়ে ফিরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে
জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়বে।

হ্যাঁ, আমি মা, খোকন রে আমি এখনও তোর মা।

শনিবার, ৮ মে, ২০১০

আমার বোনটা ভালোই আছে, আপনার বোনটি ভালো আছে তো?

কোন মন্তব্য নেই :
পয়লা বৈশাখের " গ্যান্জামের " খবর শুনেই সাথে সাথে ছোট বোনটাকে ফোন করে যখন শুনেছি ও ভালোই আছে তখন অন্য রকম শান্তি লেগেছিলো। ছোট বোনটি অবশ্য তখনো জানতো না কি ঘটেছিলো সেই "গ্যান্জামে"। বড় ভাই হয়ে ওকে বলতেও পারি নাই কি হয়েছিলো সেই কনসার্টে। পরে হয়তো ও জেনেছিলো। আমার ভীতু বোনটি এতসব জানবার পর আর কোনোদিন পয়লা বৈশাখের উৎসবে যাবে কি না সেটা নিয়ে বেশ সন্দেহ আছে আমার।

পরের দিন পত্রিকা বের হয়নি। যেদিন পত্রিকা বের হলো সেদিন যত গুলো পত্রিকা পড়া সম্ভব সবগুলোতেই খুঁজে খুঁজে বের করার চেস্টা করেছি আসলেই কি হয়েছিলো সেই (দূ)ঘটনায়। একদল পূরুষ দল বেঁধে এক নারীকে ঘীরে মেতে উঠেছিলো উদ্দাম পাশবিকতায়। একে একে ছিড়ে খুঁড়ে খেতে চেয়েছিলো নারী দেহ। আমরা তথাকথিত ভদ্রলোকেরা যাকে বলি " লাঞ্ছিত "  করা। সংখ্যার বিচারে তা হয়তো শত ছড়ায়নি বা ছাড়িয়েছে। পরের কিছু দিন সবগুলো পত্রিকা শুধুই ঘেঁটেছি এর প্রতিক্রিয়ায় কি হলো তা জানতে। পুলিশ বলেছে ' যেহেতু তারা অভিযোগ পায়নি সেহেতু তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি'। তারা শুনেছে এরকম কিছু একটা ঘটেছে, তবে তা তেমন গুরুতর কিছু ছিলো না! '। স্বীকার করি আর নাই করি;  পুলিশের হাত বাঁধা, চোখ বাঁধা । তারা অনেক সময় তারা দেখেও না দেখার ভান করে, শুনেও না শোনার ভান করে করে। অনেক কিছু করতে চাইলে করতে চাইলে করতে পারে না, অনেক সময় করবার গরজও দেখায় না। 



 ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রি - স্বরাস্ট্র - পররারস্ট্র- কৃষি - সংসদ উপনেতা  যখন একজন নারী তখন কিছু একটা হবে, যেখানে অপরাধিদের রাজনৈতিক পরিচয় বের করা সম্ভব হয়েছিলো। তারা ছিলো তাদেররই বংশবদ ছাত্র লীগের কর্মী। কিছুই করা হয়নি এদের বিরুদ্ধে। একজনকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। যেনো আদৌ কিছু ঘটেনি ! সবকিছু বেমালুম চেপে যাওয়া হচ্ছে। নারীবাদিরাও চুপ। যেনো এ সবকিছুই খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

যে মেয়েগুলো " লাঞ্ছিত " হয়েছিলো তারা কোনোদিনই প্রকাশ্যে কিছু বলবে না। অভিযোগ করতে আসবে না পুলিশের কাছে। একবার "লাঞ্ছিত" হবার পর বার বার "লাঞ্ছিত" হতে তারা চায় না আদালতে । এ সমাজ সাহসী মেয়েদের "খারাপ" মেয়ে বলে। কোনো সাহসে তারা মুখ ফুটে প্রতিবাদ করেবে ? কার কাছে? যে সমাজের প্রত্যেক পুরুষের মাঝেই লুকিয়ে আছে একেকটি ধর্ষকামী পশু।
গত ফেব্রুয়ারী মাসেও এরকম এক ঘটনা ঘটেছিলো ময়মনসিংহের এক কনসার্টে। রিপোর্ট টির শীরোনাম ছিলো "আনন্দমোহন কলেজের উৎসবে দুঃসহ ঘটনা, সবাই নীরব" । এটাও যথারীতি চেপে যাওয়া হয়েছিলো যেনো খুবই সাধারন এক ব্যপার সেগুলো। আমরা এসব ঘটনা চেপে যেতেই ভালোবাসী।

একবার ভাবুনতো, যে মেয়েটি " লাঞ্ছিত " হলো সেই মেয়েটি আপনার বোন বা আমারই ছোট্ট বোন। এবার বাস্তবে ফীরে আসুন, নাহ কিছুই হয়নি বোনটির। ভালো আছে ও। কিন্তু যে মেয়েটি " লাঞ্ছিত " হলো সে মেয়েটিও কিন্তু কারো আদরের ছোট্ট বোন, কারো প্রেমিকা, কারো স্ত্রী , কারো মা , কারো সন্তান।

আমার বোনটা ভালোই আছে, আপনার বোনটি ভালো আছে তো?

শেষ করছি রবির লেখা পোস্টের শেষ অংশগুলো দিয়ে 

আপুমনিরা আপনাদেরকে একটা টিপস দিচ্ছি । এই ঘটনার ব্যাপারে ব্যবস্থা যে নেয়াই দরকার এটা কীভাবে আপনারা উপলব্ধি করবেন। কল্পনা করুন , পয়লা বৈশাখে একটি মেয়ে ক্যাম্পাসে এসেছে উৎসব উদযাপন করতে। হঠাৎ একদল ছেলে হাজার মানুষের সামনে তাকে নগ্ন করে ফেলল। মেয়েটির অসহায় চেহারার দিকে তাকান। দেখুন মেয়েটাকে আপনার নিজের মেয়ের মতো লাগছে কিনা ? আপারা একবার চোখ বন্ধ করে দেখার চেষ্টা করুন তো ! ক্লোজ ইয়োর আইজ , এন্ড ট্রাই টু সি।

রবির এ পোস্ট পড়বার পড়ই কিছু লেখার ইচ্ছে হলো। এজন্য এ লেখার কৃতিত্ব একান্তই রবির।

ছবি সত্বঃ প্রথম আলো


রবিবার, ২ মে, ২০১০

মে দিবসে আর কি বলতে পারি !

কোন মন্তব্য নেই :
ফেসবুকে কবি মুজিব মেহদী ভাইয়ের স্ট্যাটাস
"গৃহবধূদের কথা ভাবছি, যাঁদের কোনো শুক্র-শনি নেই। দিনরাত নেই। আরাম-বিরাম নেই। মে দিবস নেই। কোন মুখে মে দিনের শুভেচ্ছা বলি তাঁদের?"
এর পর আর কি কিছু বলার থাকে ?


অস্ট্রেলিয়ায় একেক স্টেটে একেকদিনে লেবার ডে পালন করা হয়। যেমন অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরিতে ৮ই অক্টোবর লেবার ডে পালন করা হয়। এখানে মে দিবস হয়তো শ্রমিক সংগঠন গুলো পালন করে, তবে সরকারী ভাবে সেই ৮ ই অক্টোবর লেবার ডে।


দেশে মে দিবস আসলেই হ্যান করুংগা ত্যান করুংগা বলে অনেক গলাবাজী শোনা যায়। বোঝার বয়স হবার পর থেকেই এসব শুনে আসছি। বস্তুত যারা খেটে খায় তারা যেখানে ছিলো সেখানেই রয়ে যায়। নুন্যতম বেতন নিয়ে যতো কথা হয় তত কথা হয়না শ্রেনীভেদ ভাঙার জন্য। মালিক শ্রমিকের মাঝে আকাশ পাতাল ফারাক ঘুচবার কোনো লক্ষনই দেখা যায় না।

মাঝে মাঝেই দেখা যায় বেতন না দিয়ে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কোনো মালিক বা বেতন ভাতা নিয়ে ভাঙচুর - মারামারি। তৈড়ি পোষাক বিক্রি করে কোটি টাকা উপার্জন করা মালিক উৎপাদনে ষোলো আনা কিন্তু বেতন দেবার সময় হাজারো অজুহাত, আঙুল গলে কানা কড়িও গড়াতে চায় না। হাদিসে ঘাম শুকিয়ে যাবার আগেই মজুরি দেবার কথা বলা হয়েছে। আমরা ধর্ম চর্চায় যত টুকু মনোযোগী আমরা ঠিক ততটুকু পালনে রত হলে দেশতো স্বর্গ হয়ে যেতো। দেশে কাজ করবার সময় মাসের বেতন পেতে যতবার মালিকপক্ষকে অনুরোধ করতে হয়েছিলো ঠিক ততটুকু অনুরোধ খোদাকে করলে খোদাও মনে হয় বিরক্ত হয়ে উপর থেকে কিছু পাঠিয়ে দিতেন। বুদ্ধি বেচে খেতে গিয়েও কত বিড়ম্বনা, সেখানে মাথায় ঘাম পায়ে ফেলা শ্রমিকদের কথা ভাবতেই অন্যরকম কস্ট লাগে। বিদেশে এসে যখন দিনমজুরী করতাম তখন অনুভব করতে পেরেছি দেশে যারা দিনমজুরী করছে তাদের কস্টকে। কাজ আছেতো খাওয়া আছে, কাজ নেইতো খাওয়া নেই।

বিদেশে আসবার পর অনেক জায়গাতেই কাজ করেছি। সেটা ভারতীয় রেস্তোরায় তান্দুরী চিকেন বানানো থেকে শুরু করে সফটওয়্যার ফার্মে বুদ্ধি বেঁচা। রাতের পর রাত সুপার মার্কেট ধোয়া মোছাও বাদ যায়নি। তবে যেখানেই কাজ করেছি সেখানেই টাকা ছাড়াও "সম্মান" বলে পেয়েছি, সে সম্মান একজন মানুষ হিসেবে, কোনো কর্মচারী হিসেবে নয়। হয়তো টাকার বিচারে তার কাছে আমি একজন কর্মচারী কিন্তু দিনের শেষে একজন মানুষ। সেখানে আমার বর্ণ, ধর্ম , অর্থ কোনো কিছুই মুখ্য হিসেবে দাঁড়াই নি। এজন্যই হয়তো মাল্টি মাল্টি মিলিওনার বসের সাথে বসে একসাথে বিড়ি ফুঁকতে পারি বা শরীর এলিয়ে কফির মগ হাতে উচ্চ স্বরে হেসে নাম ধরে ঢেকে কথা বলতে পারি।

এক বিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসেও যত ভদ্র আচরনই করি না কেনো, যতো সুশীল কথাই বলি না কেনো দিনের শেষে আমাদের মননটাই আসল।

মে দিবসে একটাই কামনা, অন্তত সম্মান যাতে করে সবাই তাদের শ্রমিকদের। একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষকে যেই সম্মান করে সেই সম্মানটকুই। এত টুকই চাওয়া আমার এই দিনটায়।