মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১২

ক্যামেরা বাজী

কোন মন্তব্য নেই :
বেশি দিন আগের কথা না। তখন মানুষের হাতে হাতে ক্যামেরা লাগানো মোবাইলতো দূরের কথা বাসায় টেলিফোন থাকাটাই গল্প করার মতো ব্যপার ছিলো। ডায়াল ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে ফোন করে ক্রস কানেকশনে প্রেম নিয়ে গানও গাওয়া হতো তখন। পুরো শহর ঘুড়ে এক আধজন মানুষের কাছে ক্যামেরা মিলতো। বাসার সবাই সেজে গুজে মুখে পাউডার লাগিয়ে স্টুডিওতে যেতো ছবি তুলতে। বাসার পুরোনো এলবাম ঘাঁটলে সবার বাসাতেই এমন অনেক ছবি পাওয়া যাবে। সেটা সেই এনালগ যুগের কথা। শেখ হাসিনার হাস্যকর ডিজিটাল বাংলাদেশ হবারও অনেক আগের কথা।

যুগ বদলেছে। মানুষের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন, সেই ফোনে গান শোনা থেকে শুরু করে মায় ছবি পর্যন্ত তোলা যায়। সস্তা ডিজিটাল স্টিল ক্যামেরাও হাতের নাগালে। আগে ছবি তুলবার সময় যদি দেখা যেতো হিসেব থেকে একটি ছবি তোলা গিয়েছে বেশী তবে মনটা ভরে যেতো খুশিতে। প্রিন্ট করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবার তর সইতো না। ১৯৮৪ কি ৮৫ এর দিকে একটা ইয়াসিকা ক্যামেরা কেনা হয়েছিলো। পরিবারতো দূরের কথা পুরো বংশেই প্রথম ক্যামেরা। পাড়া দোকান থেকে ফিল্ম ভরে ছবি তুলে সেই ছবি ঢাকায় পাঠাতে হতো প্রিন্ট করবার জন্য। রংপুর শহরে তখন কোনো কালার ল্যাব ছিলো না। এক সপ্তাহ পর যখন ছবি হাতে পাওয়া যেতো তখন সবার মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যেতো দেখতে। এর মাথা কাটা গিয়েছেতো ওর হাতা এমন ছবিও মুগ্ধতার দৃস্টিতে দেখে এলবামে রেখে দেয়া হতো সযতনে। অতিথি আসলে সে এলবাম বেড় করা হতো আলমিরা থেকে। ১ যুগ পরে আমেরিকা থেকে একটা ডাউস সাইজের হ্যান্ডি ক্যাম কেনার পর ধুম পড়লো ভিডিও করতে। সারা রাত ব্যাটারি চার্জ করে ছোট্ট ক্যাসেটে ৪০ মিনিটের ভিডিওগুলো করবার পর সেটা ভিসিআর এ দেখবার আমেজটা ছিলো অন্য রকম।

এতো গেলো শখের ক্যামেরাবাজীর কথা। যারা ক্যামেরা ও ছবির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো তারা আরো দু ধাপ এগিয়ে এসএলআর ক্যমেরা ব্যবহার করতেন। সাথে থাকতো লম্বা ডাউস সাইজের সব লেন্স। দেখলেই কেমন জানি লাগতো। ক্যামেরার কারিগরী ব্যপারগুলোও জানতে হতো নিজেদেরকেই। ছোট খাটো সারাই থেকে শুর করে ছবি প্রিন্ট করাটাও নিজেকেই করতে হতো। এরকম অনেকের বাসাতেই ডার্ক রুম নামক একটা রুম থাকতো যেখানে কাপড় শুকানোর দড়িতে কাপড়ের বদলে ছবি শুকানো হতো। রাতে প্রসেস করে সকালের চা হাতে ছবিগুলো দেখা হতো।

সময় বদলেছে এখন। সেই এসএলআর ক্যামেরার বদলে এসেছে ডিএসএলআর ক্যামেরা। হার্ডকোর ক্যামেরাবাজ দের পাশাপাশি শখের ক্যামেরাবাজরাও ছবি তোলার জন্য ডিএসএলআর কিনছেন। দামও কমে আসছে। ক্যামেরা চালাবার জন্য যে কঠিন ও গভীর কারিগরি জ্ঞন দরকার ছিলো তার বদলে কিছু ম্যানুয়াল আর টিপস পড়েই দারুন সব ছবি তুলছেন অনেকেই। আগে যেখানে অনেক সময় ও ধৈর্য নিয়ে যে ছবি তোলা হতো সেখানে ইচ্ছে মতো ক্যামেরা খিঁচে যাওয়া যায়। ভালো না লাগলে আরেকটা তুলো, তুলতেই থাকো - ঝড়ে বক মারো রে টাইপের আর কি। আগে যত্ন করে ছবি তোলার পর আর কোনো কারসাজী করা যেতো না,  ‌এখন ছবি তোলার পর ফটোশপে ছবিতে কারসাজী করা যায়। হাজার হাজার ছবিতে টেরাবাইটের হার্ড ডিস্ক ভরে ফেল যায়।

কোথাও গেলেই দেখা যায় এক দল লোক গম্ভীর মুখে গলা লম্বা লেন্স ওলা ডিএসএলআর লাগিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন আর হেঁটে বেড়ানো পিঁপড়ে থেকে শুরু করে সাজুনে ললনাদের ছবি তুলতে ব্যস্ত। কাঁধে ব্যাগ , শরীরে কয়েক হালি পকেট ওলা জ্যাকেট পড়া সদা ব্যস্ত শুয়ে - বসে - বেঁকে - বকের মতো এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছবিতোলায় ব্যস্ত মানুষগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে " আম্মো ক্যাম্রা কিনুম একডা, ফাডায়ামু সব "।