শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০০৭

কোন মন্তব্য নেই :
১ . " স্বাতী " আমার জীবন সংগিনী ,ওর গায়ে হলুদ


২. " স্বাতী " আমার জীবন সংগিনী ,ওর গায়ে হলুদ

৩. সুমি ও সিয়া

Posted by Picasa

মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০০৭

মফিজের ভারত ভ্রমন - ২ ( মালদা টু আলিগড় ট্রেন জানি )

কোন মন্তব্য নেই :
সন্ধা ৬ টায় ট্রেনে চেপে বসলাম আমি ও আমার সেই বন্ধু।দুজনেরই উপরের বাংকে সিট পড়েছে।কি আর করা, আশা ছিল নিচে পড়বে , দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে যাবে দীর্ঘপথ।
প্রথমেই ঝামেলা হোলো এক বিহারীর সাথে।বিহারীরা এমনিতেই কেমন যেনো অসভ্য টাইপের হয়।
যাই হোক ট্রেন চলা শুরু হলো।বিহার আসতেই সাবধান হয়ে গেলাম, শুনেছিলাম বিহারীরা চোর,অসভ্য ও আক্রমনাত্মক হয়।সিট নিয়ে গ্যানজাম করে।অনেক রাতে টের পেলাম কে জানি আমার পায়ের উপর শোয়া।দেখি এক ব্যাটা।আমি সরতে বল্লাম, সে এমন এক দৃষ্টিতে তাকালো যে আর সাহস পেলাম না কিছু বলার।আর সেই বন্ধু আমার অবস্থা দেখে আর হাসে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি টয়লেটের সামনে বিশাল কিউ।সেই ৩ রাত ২ দিনের লম্বা জার্নিতে আর টয়লেটে যাওয়া হয়নি ।অবাক হচ্ছেন ? জনাব কথা সত্য।
বিহার আসতেই ভাষাও বদলে গেলো, বিচিত্র উচ্চারনে হিন্দি।হিন্দি এমনিতেই কম বুঝি ,তার উপর বিচিত্র উচ্চারন ! ট্রেন কোনো স্টেশনে থামতেই যেই জিগ্যেস করে " এ ট্রেইন কাঁহা যায়া " আমি বলি " মুঝে নেহি জানতা " , উত্তরে যে অবাক করা দৃষ্টি পেয়েছিলাম তা এখনও ভুলতে পারি না।
বলতে পারবেন ' মংফুলি ' কি ? মংফুলি শুনেই দিলাম ডাক , দেখি বাদাম ! আরেকটা জিনিস খেয়েছিলাম ' কাকড়ি' শসার মতো খেতে , গরমে অসাধারন।দীর্ঘ রাস্তায় কত বার যে মাটির ভাঁড়ে চা খাওয়া হয়েছিল তা মনে নেই, অসাধারন ছিল চা, সাথে সিগারেট। আমি আমার বাংক থেকে আমার বন্ধুর সাথে সিগারেট শেয়ার করি আর সবাই চেয়ে চেয়ে দেখে।
পথে পরিচয় হোলো বি.এস.এফ এর অফিসারের সাথে, পানজাবি ।তার খুব আগ্রহ বি.ডি.আর এর ব্যপারে।মনে যা আসলো তাই বলে গেলাম, সে তো অবাক।কিছু বাংগালী ছেলের সাথে পরিচয় হয়ে গেলো, মজার সব ছেলে।দিল্লিতে কাজ করে সবাই।সারা পথে তারা অনেক সাহায্য করেছিল।
ট্রেনে খাবার অডর্ার নিয়ে যায় একবার।প্রথম বার মিস করেছিলাম ।তাই পথে লুচি আর আলু ভাজি খেতে হয়েছিল।দ্্বিতীয় দিন আর ভুল করিনি।খাবার আসার পর দেখি বিশাল পাতে প্রচুর ভাত, যেনো আমরা সবাই খাদক, তবে রান্না ভালো ছিল।
পথে কত জায়গা যে পড়েছিল মনে নেই।লৌখনও, একাহাবাদ, পাটনা; ঐতিহাসিক সব জায়গা।মোগল সরাই এ ট্রেন অনেক ক্ষন থেমেছিল।মথুরা আসার পর রাধা-কৃষনের কথা মনে পরা গিয়েছিল।পুরি- বেনারস আসার পর দেখলাম জটাধারি সাধু।ট্রেন থেকে দেখা যাচ্ছিল বিখ্যাত সব ঘাটগুলোকে।অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম আর খুবি ইচ্ছা হচ্ছিল নেমে যেতে।কিন্তু হয়নি।বেটার নেক্সট টাইম বলে নিজেকে শান্ত করেছিলাম।যেখানেই ট্রেন থামছিল আমরা দুই বন্ধু নেমে হাঁটছিলাম, যেনো দুই শিশু।
খুব সকালে আমরা আলিগড় পৌছুলাম।জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখি আবাক করা দৃশ্য।লাইন ধরে মানুষ প্রাতকৃত সারছে। আমরা যে তাকিয়ে আছি তার কোনো ভৃুক্ষেপই নেই, যেনো সবি স্বাভাবিক ব্যপার।ট্রেন থেকে যখন নামলাম তখন বিদ্ধস্থ অবস্থা দুজনেরই। রিকসা নিয়ে রওয়ানা হলাম স্যার সৈয়দ নগরের দিকে।ওখানেই হবে আমাদের সমায়িক নিবাস।

মফিজের ভারত ভ্রমন - ১ ( রাজ শাহি টু মালদা )

কোন মন্তব্য নেই :
১৯৯৬ , এইচ.এস.সি পাস করে মহা উত্‍সাহে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি।তখন ভারতে পড়াশোনা করবার একরকম হিরিক ছিল।
ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের মাধ্যমে আমিওএকটা স্কলারশিপের এপ্লাই করে ফেল্লাম। যা আছে ভাগ্যে এ রকম একটা ভাব। আই.আই.টি তে ভর্তিহবার মার্কস আসে নাই, তাই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল সম্বল। অনেক দিন কেটে গেলো খবর আসে না, ভাবলাম আর হবে না। একদিন হঠাত্‍ চিঠি আসলো, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সুযোগ হয়েছে।

সময় নাই হাতে একদম তখন একদম।রাজশাহিতে ছিলাম তখন আমি বাবার কাছে।তড়িঘড়ি করে রাজশাহি ইন্ডিয়ান ডিপুটি হাইকমিশন থেকে ভিসা নিলাম।

মিশন ঃ আলিগড়।
পথ ঃ অজানা।
সংগি ঃ কেউ না।

খুব সকালে সোনা মসজিদের দিকে যাত্রা, সাথে বাবার বডিগার্ড।পথে মনে হোলো সিগারেট কেন হয় নি। কানসাটে গাড়ি থামাতে বল্লাম চা খাবার জন্য। চা খাবার ফাঁকে ৪ প্যাকেট বাংলা ৫৫৫ কিনে ফেল্লাম।
সোনা মসজিদ চেক পোষ্টে কোনো রকম সমস্যা হয়নি।চা খেতে খেতে সব কিছু শেষ করে ভারতের উদ্দেশ্য হাঁটা দিলাম।
ঢোকা মাত্র বি.এস.এফ ।পাসপোর্ট দেখানোর পর গেলাম কাস্টমস এ।সাথে তেমন কিছুনা, তবুও হয়রানি করে চেক করলো সব, কথা বলার ফাঁকে জানতে পারলাম কাস্টমস অফিসারের বাড়ি ছিল আমাদের ওদিকে, সাথে সাথে চা চলে এলো।নাড়ির টান কি জিনিস সেটা টের পেলাম আরেকবার সে দিন।
ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে শুনতে পেলাম বাস ধর্মঘট ! ম হা সমস্যা, সরকারি বাস ছাড়া আর কিছু নাকি চলবে না। ২ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর একটা টাটা বাস আসলো , দেখে মনে হলো ২য় মহাযুদ্ধের আমলের।বাসে চড়ে বসলাম। টিকিট ৫ রুপি, গন্তব্য মালদা টাউন।
বাসে উঠেই সিগারেট ধরালাম, দেখি ২ জন আবার বলে ঊঠলো " দাদা কি হচ্ছে ? "
আমি নিরাসক্ত মুখে বল্লাম "সিগারেট খাই"
এবার তারা বলে " ওপারের ছেলে ছোকরারা আদব লেহাজ একদমি শেখে নি "
আমি বলি " ঠিকই কইসেন" বলে এক গাল ধোঁয়া ছাড়লাম।আসলেই বেয়াদব।

রাস্তায় আরেক সমস্যা , কিছুদূর যাবার পর পর বাস বন্ধ হয়ে যায়। সবাই মিলে ঠেলি, চালু হয়।এভাবে ঠেলা ধাককার পর মালদা পোঁছুলাম ১ ঘন্টা পর। মালদা গিয়েই শুনি স্টেট বাস ছাড়া সব বন্ধ, টিকিট পাওয়া অসম্ভব। এদিকে পেটে চামচিকা বুকডন দিচ্ছে, শুনেছিলাম হিন্দু হোটেলে খাবার নাকি অসাধারন হয়।গেলাম এক রেস্টুরেন্টে খেতে।'মহা মায়া হিন্দু হোটেল', মেনুঃ মুড়ো ঘন্টো ও ভাত।ওপার বাংলায় আবার আমাদের মতো নিয়ম না, যত বারি ভাত নিচ্ছি ততবারি দেখি ওয়েটার জোরে জোরে বলছে এক হাতা ভাত ! আর ম্যানেজার সাথে সাথে খাতায় লিখে নিচ্ছে। আজিব ব্যাপার সব।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোজা মালদা ট্রেন ষ্টেশনে, উদ্দেশ্য আলিগড়ের টিকিট কাটা। লাইনে দাড়িয়া আছি তো আছিই, লাইন আর আগায় না। সামনে দেখি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে ।হেবি মানজা মারা।হাতে দেখি ইকোনো বলপেন।বুঝলাম বাংলা আদমি।পরিচিত হলাম। সেও আলিগড় যাচ্ছে।লারে লাপ্পা।পুরো ভ্রমনে সে ছিল আমার সাথী।অনেক কষ্ট করে মালদা - আলিগড় এর টিকিট পেলাম।
খরচ হলো ৩৩০ রুপি (প্রায়) ফারাককা এক্সপেস, স্লিপিং ক্লাস ,দুরত্ব ১৩৫৬ কিলোমিটার, ২ দিন ৩ রাতের বিশাল জার্নি,
সন্ধা ৬ টায় ট্রেন ।
-------------
মফিজ নামকরনের মাজেজা ঃ দেশের যে অংশ থেকে এসেছি সেখানকার মানুষদের অন্যরা মজা করে মফিজ বলে, তাই আমিও মফিজ।