বিদেশে যে
সোনার হরিণ নাই সেইটা জানা ছিলো। জীবনটা যে খুব আরামের হবে সেইটাও জানা ছিলো। তার
পরো যদি কেউ প্রশ্ন করে 'এতোই যদি
বুঝো তাইলে কেন আসলা বিদেশে ?', সোজা
সাপ্টা উত্তর দেই ' তুলনামুলক
একটু বেশী ভালো থাকার জন্য'। উত্তরে
সন্তুস্ট হয় কি না জানার আগ্রহ নাই আমার। আমার উত্তর আমি সৎ ভাবেই দেই।
যাই হোক, কাজের
কথায় আসি। নিজের টাকায় পড়তে আসছিলাম। বাবার ইউ
এন পিস কিপিং মিশনে কামানো জমানো টাকা থেকে কিছু টাকা নিয়া বিদেশে আসছিলাম, পকেটের
ছিলো ১৫০০ ডলার। সেই ডলার এই সেই খরচে ২ মাসেই শেষ। চোখে আন্ধার দেখছিলাম। পরের
সেমিস্টারের ফি - বাসা ভাড়া - খাওয়া খরচ ; সব
মিলে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। আল্লাহর দুনিয়ায় কিছুই থাইমা থাকে না, আমারো
থাকে নাই। রেস্টুরেন্টের হাড়ি পাতিল ধোয়া - মোটেলের বিছানা তৈড়ি করা - সুপার
মার্কেট পরিস্কার করা ইত্যাদি অনেক কিছুই করছি। জীবনটা ছিলো দিন আনি দিন খাই
অবস্থা - পুরাই দিন মজুর। এক বিন্দু হারাম ইনকাম করি নাই এইটা ভাইবা মনে শান্তি
লাগে। সময় বদলাইছে, পরিস্থিতি পরিবর্তন হইছে। বিশাল
কিছু যে হইছি সেইটাও না। সুযোগে আত্মপ্রচার করে নিলাম।
অনেক প্যাঁচাল পারার পর আসল কথায় আসি। আজকে মে দিবস। নামের আগে অনেকে মহান
লাগায়, আমি
লাগাই না - অহেতুক বিশেষন লাগাইলেই শ্রদ্ধা/সম্মান বাড়ে না। যতোই বড় শ্লোগান দেই
মে দিবস নিয়া, কিন্তু
নিজে ব্যক্তিগত ভাবে শ্রমিক জীবনের মাঝ দিয়ে না গেলে সেই কস্ট - সেই সংগ্রামের
অনুভূতিটা আসলে বোঝা যায় না। লেখা পড়া শেখা বেশির ভাগ শহুড়ে মধ্যবিত্ত আসলে সেইটা
বুঝে না। উচ্চমধ্য আর উচ্চ বিত্তরা অন্য জগতে বাস করে, তারা
কি ভাবে সেইটা তারাই জানে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ শ্রমিকরই দিন আনি- দিন খাই
অবস্থা। কাজ আছে তো পেটে ভাত - না থাকলে উপাস। সন্চয় কি জিনিস সেইটা উনারা জানেন
না। শ্রম অধিকার কাগজে কলমেই থাকে। এইবার নিজের দিকেই তাকাই না কেনো ! বাসায় কাজের
মানুষকে মানুষ হিসাবে সমান মর্যাদা না দিয়া - তাদের অধিকার না দিয়ে মে দিবস নিয়া
যদি বুলি ছোটাই সেইটা বিশাল ভন্ডামী।
এক সময় আমিই এই শ্রমিক শ্রেণীর অংশ ছিলাম - এখনো আছি,যদিও
আর্থিক সামান্য উন্নতি ঘটছে। ঢাকায় খুব সকালে দল বাঁইধা ছেলে - মেয়েররা গার্মেন্টস
এ কাজ করতে যায়, মাইলের
পর মাইল হাঁইটা; হাঁটাটা
বড় লোকের মতো স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য না - টাকার অভাব ও টাকা বাঁচানোতে। আমিও এক
সময় টাকার অভাবে প্রচন্ড ঠান্ডায় বা প্রচন্ড গরমে মাইলের পর মাইল হাঁটছি। গরীব
শ্রমিকের বাড়ি যায়া দেখেন কি খায় ! ডাল ভাত নচেৎ আলু ভর্তা, দেশে
ডালের যে দাম ডালও জোটে কিনা সন্দেহ। আমিও সস্তা নুডুলস আর শুধু ডাল-ভাত খায়া সারা
সপ্তাহ পার করছি অনেক অনেক মাস। টাকার অভাবে অনেক মাস কিছুই কিনি নাই। কাজ করায়া
টাকা মাইরা দিছে বেশ কয়েকবার, কিছুই
করতে পারি নাই। কস্ট কইরা ভাঙা চোরা বাসায় থাকছি মাসের পর মাস। উপরের সব গুলাই
আমাদের দেশে শ্রমিক ভাই- বোনদের জীবনে সব সময়ই ঘটে। বুকে হাত দিয়া বলতে পারি, বিদেশে
না আসলে শ্রমিক জীবনের যাতনা - কস্ট - গর্ব কোনোটাই বুঝতে ও জানতে পারতাম না। আমি
হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারি এই সব মানুষদের জীবনকে।
আমরা এখন দিবস মাইনা আবেগ দেখাই। ডিসেম্বর - মার্চ আসলে মুক্তিযু্দ্ধের চেতনা
বারে , ফেব্রুয়ারী
আসলে বাংলা প্রেম বাড়ে। অন্য সব মাসে সেই আগের অবস্থা। আমারো একই অবস্থা, মে
দিবস আসতেই শ্রমিক প্রেম বাইরা গেলো। টিপিক্যাল মিডল ক্লাস। কাইলকাই ভুইলা যামু।
পৃথিবীর সকল মানুষ শান্তিতে থাকুক।