রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১১

রক্তারক্তি কান্ড

২টি মন্তব্য :
য় পাবার কিছু নেই। এখানে রক্তারক্তি ঘটবে না।

গত পরশু ৩৮ বারের মতো রক্ত দিলাম। বিদেশের মাটিতে ১৩ বার আর দেশে ২৫ বার। অনেক কিছুই গুনে রাখতে ভুলে গেলেও রক্ত দেবার কথা ইচ্ছে করেই যত্ন করে মনে রাখি। কেনো ! উহু , সেটা এখন বলা যাবে না।

প্রথম যেবার রক্ত দেই তখন কলেজে পড়ি। ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে সন্ধানীর স্টলে। রক্ত দেবার পর এক গ্লাস গরম কোক আর একটা টি-শার্ট, টি শার্টের লোভে রক্ত যে দিয়েছিলাম সেটা অস্বীকার করছি না এতো বছর পর। রক্ত দেবার পর প্রচুর পানি পান করতে হয় ঘাটতি পূরনের জন্য, দেশে কেনো যে কোক - পেপসি দেয় সেটা বুঝতে পারি না !

দ্বিতীয় বার রক্ত দেই আমার এক খালাকে। ব্রেস্ট ক্যান্সার অপারেশনের জন্য উনাকে বারডেমে রক্ত দিয়েছিলাম। রক্ত ব্যবস্থাপনায় সে সময় রারডেম ছিলো সেরা। রক্ত নেবার আগে কত কথা - কত খাতির, রক্ত নেবার পর আর অপারেশন শেষে সেই যে উনি খোঁজ কবর নেয়া বন্ধ করলেন সেটা এখনো চলছে। তখন খারাপ লাগলেও এখন আর লাগে না। অনেক মানুষ এরকমই হয়।

কলেজের পড়বার সময় একবার ঢাকা মেডিক্যাল সন্ধানী থেকে একটা টিম এসেছিলো । সুন্দরী আপুদের দ্বারা হাতে সেবার সূঁচ ফোটাবার ভয়াবহ খারাপ অভিজ্ঞতা হবার পর ঠিক করেছিলাম আর কোনোদিন ওদের কাছে হাত বাড়াবো না রক্ত দিতে। যদিও এ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি, অনেক বারই সন্ধানীর কাছে রক্ত দান করতে হয়েছে। যত বারই রক্ত দিয়েছি ততবারই মনে হয়েছে এরা এত কস্ট দেয়া কেনো ! ভেইন খুঁজে পেতে কেনোই বা এতো ঝামেলা পোহাতে হয় এদের !

একবার পাশের বাসার ছোট্ট ছেলেটিকে রক্ত দেবার কথা ছিলো। এলিফ্যান্ট রোডের গলিতে হেঁটে যাবার সময় ছেলেটিকে প্রায়ই দেখতাম বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে। যেদিন রক্ত দেবার কথা ছিলো সে দিন শুনলাম ছেলেটি মরে গেছে। কি যে কস্ট লেগেছিলো। ছেলেটির থ্যালাসমিয়া ছিলো। কি সুন্দর দেখতে ছিলো সেই ছোট্ট ছেলেটি, কি বিষন্ন মাখা চোখ। এর পর প্রায়ই মোহাম্মদপুরের রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড সেন্টারে যেতাম রক্ত দিতে। যেখানে রক্ত দিতাম তার পাশেই একটা বড় ঘরে রক্ত দেয়া হতো। মানুষগুলোর রক্ত মারা যাচ্ছে, সারাটা জীবন রক্ত নিয়ে যেতে হবে। কি অসহ্য জীবন ওদের।

কুমিল্লার এক বিখ্যাত ও অনেক প্রাচীন স্কুলের হেড স্যারকে রক্ত দিয়েছিলাম, উনার ডেংগি হয়েছিলো। স্যারের অসুখ সেরে যাবার পর কিভাবে যেনো উনি আমার ঠিকানা যোগার করলেন। একরকম জোর করেই উনার ছেলের বাসায় নিয়ে এক গাদা খাওয়ালেন। রক্ত দেবার পর গ্রহীতা যাতে আমার সাথে যোগাযোগ না করতে পারে তার চেস্টা থাকে আমার। কেউ কৃতজ্ঞ হয়ে এমন কিছু করুক সেটা আমার পছন্দ না। রক্ত দান একটা নিশর্ত দান।

কলেজ পাশ করে অফুরন্ত অবসরে একটা ছোট ব্যবসা শুরু করে দিয়েছিলাম। তেমন আহামরী কিছু না। ফোন - ফ্যাক্সের ব্যবসা। জীবন বাঁচাতে যদিও ব্যবসার কোনো প্রয়োজন ছিলো না তবুও জীবনে চিনতে ব্যবসা বানিজ্য অনেক কাজে লাগে। মাঝে সাজে এক ভদ্রলোক ফোন করতে আসতেন। টিকাটুলীর মোড়ে পানির ট্যাংকির নিচে ছাপড়া ঘরে থাকতেন, এক সময় হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন, ফ্যাক্টরি বন্ধ হবার পর ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করতেন। উনার নামটা মনে নেই। একবার এরওর কাছে ফোন করে রক্তের জন্য চেস্টা করছিলেন। পিজি হাসপাতালে উনার ব্উয়ের জড়ায়ু ফেলে দেয়া হবে। আমি বল্লাম রক্ত দিবো। পিজি হাসপাতালে রক্ত দেবার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। যেই লোক রক্ত নেবার দ্বায়িত্বে ছিলো তার ব্যবসা ছিলো রক্তে বেচা। সেই ভদ্র লোক রক্ত না কিনে কেনো দাতা নিয়ে এসেছিলেন তার জ্বালা আমার উপরে ঝেড়েছিলেন প্রচন্ড ব্যথা দিয়ে। টিকাটুলীর সেই ভদ্রলোক বউ এর অপারেশন শেষ হবার পর উনার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ছোট্ট একটা ছাপড়া ঘরে থাকা- সেই ঘরে রাঁধা। ভদ্রলোক একজন বীর বিক্রম।

এভাবে অনেক রক্ত দিয়েছি। জানিই না আমার রক্ত কার ধমনিতে প্রবাহিত হয়েছিলো। বিদেশে এসেও থেমে থাকেনি রক্ত দেয়া। জিনিসটা কেনো জানি নেশার মতো।

চলবে

সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১১

ঠিক কি গালী দিলে আদালত অবমাননা হবে না ?

কোন মন্তব্য নেই :
জ কাল মনে হয় "আদালত অবমাননা" একটি নিত্যকার ঘটনা। লজ্জাবতী পাতার মতোই আদালত আজ কাল এতো বেশী স্পর্শ কাতরতায় ভুগে যে আজ একে ওকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখে স্কুলে বাচ্চাদের মতো সবক দেয়, ধমক দেয়। মাঝে সাজে নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত রুল (সুয়োমটো) জারি করে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলেন। তবে মজার ব্যপার হলো আদালতের উনারা এমন সব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান যে সব ব্যপারে সরকারের বৃহৎ স্বার্থ জড়িত নেই। মহিউদ্দীন ফারুকের এই রিপোর্ট পড়বার পর মনে হতে পারে ক্রসফায়ার নিয়ে আদালতের সুয়োমটো দেবার পর এর পর কি হলো ! আদালত কি এর ফলোআপ করেছে নাকি সরকারের ধমকে উনারা "চিমশাইয়া" পড়েছেন ! এতো গেলো উচ্চ আদালতের অবস্থা।

আদালতের এ রকম কর্মকান্ডকে সমালোচনা করাও মহা বিপদ। উনারা "বিব্রত" হন বিচারের শুনানী করতে কিন্তু এই বিব্রত হওয়াকে নিয়ে কথা বলতে গেলে উনারা 'অব-মানিত' বোধ করেন। কারন আদালত নাকি স্বার্বভৌম ! সমালোচনার উর্ধে !

আজকের প্রথম আলোর এ সংবাদটা পড়ে ও ছবি দেখে অনেকেই পুলিশকে গালী দিবেন। সেই তিন পুলিশের গালী প্রাপ্যও। তবে আদালতের চেয়ারে বসা ম্যাজিস্ট্রেটের কান্ড দেখলে "আসামী" মানসিক অবস্থা আন্দাজ করা যায়। একজন বিচারক শত প্রমাণ থাকা সত্বেও অভিযুক্তকে জামিন দেবেন, বছরের পর বছর মামলা ঘুড়াবেন কিন্তু বিচার করবেন না ; আর এটার প্রতিবাদ করলেই সেটা আদালত অবমাননা হবে, হাতকড়া লাগিয়ে চ্যাংদোলা করে হাজত খানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিছু দিন আগে এক অভিযুক্ত হাকিমের দিকে স্যান্ডেল ছুড়ে মেরেছিলো বছরের পর বছর বিনা বিচারে জেলে আটকে থাকবার জন্য, শত প্রমাণের পরও জামিন না পাবার জন্য। স্যান্ডেল ছুড়ে মারবার জন্য তাকে শাস্তি হিসেবে জেলে পাঠিয়েও দিয়েছিলো সেই বিচারক, কিন্তু ঠিক কি কারনে সেই মানুষটি এতো ক্ষীপ্ত সেটা দেখার প্রয়োজন সে বোধ করেনি। বাহ বাহ চমেৎকার................

ইত্তেফাকে কিছু দিন আগে একটা সংবাদ বের হয়েছিলো। অন্য সব পত্রিকায় সে খবর খুঁজে পাইনি। হয়তো স্পর্শকাতর আদালতকে ঘাঁটাতে চায়নি বলেই পত্রিকাগুলো সেই সংবাদ ছাপায়নি। হাই কোর্টের একজন বিচারপতি  ট্রফিক কনস্টেবলকে কান ধরান সে কেন সিগন্যালের লালবাতি জ্বলে উঠার পর হাত উঠিয়ে তার গাড়ী থামিয়েছিলো। যে কারণে শত-শত গাড়ির সঙ্গে বিচারপতির গাড়িও আটকা পড়ে স্রেফ এই কারণে। ভাগ্যিস বাংলাদেশ তথাকথিত উন্নত দেশ না, হলে উল্টা এই বিচারপতিরই বিচার হতো। যে বিচারপতিরা নিজেদের ঈশ্বর ভাবেন তাঁদেরকে কি আমি মনে করিয়ে দেব অন্য দেশ হলে কি হতো? [ এ অংশ টুকু নেয়া হয়েছে আলি মাহমেদের ব্লগ থেকে]

আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও নিরুংকুশ মান্যতা আমার আছে। কিন্তু বিচারকের আসনে বসা সেই মানুষটির প্রতি সেই শ্রদ্ধাবোধটা অনেক টুকুই টলে গিয়েছে। নিম্ন আদালতে দলীয় আনুগত্যে নিয়োগ পাওয়া বিচারকের পাল যখন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে রায় বিক্রি করে তখন সেই বিচারকের প্রতি শ্রদ্ধা টলে না যাওয়াটাই স্বাভাবিক। উচ্চ আদালত যখন ভরে যায় দলীয় আদর্শে নিয়োগ পাওয়া অযোগ্য ও ধামা ধরা বিচারকের তখন সেই শ্রদ্ধাবোধ কি আদৌ টলে যায় না ? অনেকেই হয়তো বলতে পারেন " মিয়া কি প্রমাণ আছে তুমার কাছে যে বিচারকরা দূর্নীতি করে না, আর মিয়ে কুন সাহসে তুমি বিচারকদের দুষী সাব্যস্থ করতেছে ?" আমি বলি, যদি বিশ্বাস না হয় তবে ১ দিন আদালত পাড়ায় যান, যদি ৫% এর বেশী সৎ বিচারক পান তবে আমার নাম সুমন বদলে এলিযাবেথ রেখে দেবো। রায় আজ কাল টাকার কাছে বিক্রি হয়, মানুষের বিচারের দাবী দাবীই রয়ে যায়; পূরন আর হয় না।

এ দেশে রাত বারটার সময় জলপাই ধাক্কায়  সুপ্রিম কোর্ট বসে, কিন্তু বছরের পর বছর মামলা নিস্পত্তি হয় না। টাকা থাকে আগাম জামিন নেয়া যায় হাই কোর্ট থেকে, টাকা না থাকলে জামিতো দূরের কথা শুনানীও হয় না, টাকা ক্ষমতা থাকলে সরাসুরী হাইকোর্ট যাওয়া যায়, টাকা থাকলে ধর্ষন মামলার শত প্রমানিত আসামীও খালাস পেয়ে যায় কিন্তু টাকা-ক্ষমতা না থাকলে কিছুই হবার নয় ।

আদালতকে গালী দিতে চাই না। কিন্তু বিচারকদের গালী দিতে চাই। ঠিক কোন গালী দিলে আদালত অবমাননা হবে না ?

একটা গালী দিয়েই দিলাম  " হড্ডিলা ভাঙত কটিৎ পাকত ঢুকায় দিম ", মেজাজ অনেক খারাপ আজকে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে।

সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১১

৬টি মন্তব্য :
আন্ডারগ্র্যাড এ আমার এরকম কোনো আহামরী রেজাল্ট ছিলো না যাতে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেচে এসে আমাকে বৃত্তি দিয়ে বলবে 'এসো বাপু আমাদের এখানে গবেষনা করো বা পড়াশোনা করে পৃথিবীর চেহারা বদলে দাও'। নিজেরও তারা ছিলো অনেক তাড়াতাড়ি বিদেশের একটা ডিগ্রী নিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নেবার। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোর্সওয়ার্কে বৃত্তি খুবই কম বিদেশী ছাত্রদের জন্য। রিসার্চ মাস্টার্সে অনেক বৃত্তি থাকলেও ঐ যে বলেছি কারনটা, সে কারনেই সাহসে কুলোয়নি কিছু চেস্টা করবার। নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সচেতন থাকা উচিৎ সবার, এতে অনেক উটকো ঝামেলা থাকে বাঁচা যায়। 


দেশ থেকে প্রথম সেমিস্টারের টাকা দেয়া থাকলেও মাথার উপরে চাপ ছিলো পরের সেমিস্টারের টাকা জোগার কোথা হতে করবো। ব্যপারটা বেশ কস্টকর যখন টাকার "উৎস" থাকে দূর্বল বা আদৌ থাকে না। দেশ থেকে নিয়ে এসেছিলাম ১৫০০ মার্কিন ডলার। সেটাই ছিলো সম্বল। বাসা ভাড়া - খাবার খরচ - বাসের মাসিক টিকেট ইত্যাদি হড়েক রকম খরচ করবার পর মাস দেড়েক পর আবিস্কার করলুম ব্যাংকের একাউন্টের অবস্থা খুবই করুন। পড়াশোনার ফাঁকে কাজ করতে হবে সেটা জানা ছিলো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সেটা জানা ছিলো না।


কাউকে চিনিও না। যে বন্ধুর কাছে এসেছি সেউ স্বার্থপরতার চরম প্রকাশ দেখিয়ে কেনো জানি এড়িয়ে যায়। বুঝলাম, যা কিছু করতে হবে নিজেকেই করতে হবে। অন্যের ভরসা আমি আমি কখনোই করি না কিন্তু মাঝে সাজে সেটা করতে বাধ্য হতে হয় সেটা জানা ছিলো। একে ওকে কাজের কথা বলি, এখানে ওখানে সিভি পাঠাই কিন্তু কাজ হয় না। বাঙালী যাদের বলেছি তারাও ব্যস্ততার ভানে শুনেও না শোনার ভান করেছিলো , যদিও এদের কারো কারো ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাও ছিলো। তবু এতো বছর পর এসে বুঝতে পারি এদের কেউ কেউ ইচ্ছে করলে সাহায্য করতে পারতো। এভাবেই মানুষ চেনা যায় ।


একদিন এক ক্লাস মেট আমার অবস্থা দেখে বল্লো আপনার সিভিটা বদলাতে হবে। বলে, "মিয়া কাজতো করবেন কিচেন হ্যান্ড বা চেক আউট অপারেটরের কিন্তু সিভিতে কি প্রোগ্রামিং ভাষা জানেন সেইটা দ্যান ক্যান ? সাদা মাটা সিভি বানান যেইখানে খালি নাম ঠিকানা , মোবাইল ফোন নাম্বার আর ইউনির নাম লেখা থাকপে। অন্য সব বাদ" । তথাস্থা, তাই করলাম। সে এটাও বলেছিলো শনিবারের পত্রিকায় কাজের খবর থাকে। পত্রিকা কিনে শনিবার সকাল ৯ টার পর ফোন লাগাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। তাই করা শুরু করলাম। এখানে ওখানে ফোন করি, সবাই নাম ও নাম্বার রেখে দেয়, কাজের জন্য ডাকা দূরকা বাত, ইন্টারভিউ এর জন্যও ডাকে না। এর পর শুরু করলাম হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন রেস্তোরায় সিভি ড্রপ করা। মনে হয় এহেন কোনো রেস্তোরা নাই যেখানে সিভি ড্রপ করি নাই। শহরের কিছুই চিনি না, ম্যাপ হাতে হাঁতি আর রেস্তোরা বা অন্য জায়গা পেলেই সিভি ফেলাই।


এভাবে হাঁটতে হাঁটতে "চারমার্স " নামে এক ছোট্ট এক রেস্তোরায় সিভি ফেলতে গিয়ে মনে হলো কাজ মনে হয় পাবো ! ওয়েট্টেস মেয়েটি সুন্দর হেসে বল্ল বসতে, সে গেলো শেফকে ডেকে আনতে। বয়স্কা মহিলা " সু " ছিলো সেখানকার হেড শেফ। সে বল্লো কোন কোন দিন কাজ শুরু করতে পারবো। আমি বল্লাম অমুক অমুক দিন তমুক তমুক সময়ে। সে নল্লো সেই সন্ধ্যা থেকেই কাজ শুরু করতে।
সন্ধ্যা ৫ - রাত ১০ টা, ঘন্টা ১০ ডলার। দিনের টাকা দিনে। শুর হলো আমার ডিশ ওয়াশার ওরফে কিচেন হ্যান্ড ক্যারিয়ার।
--------------------------------------------------------------------------------------

বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১০

কোন মন্তব্য নেই :
থা ছিলো ডার্লিং হার্বার থেকে ফেরীতে ম্যানলি বিচে যাওয়া হবে কিন্তু পরে হঠাৎ সবাই ঠিক করলো গাড়ীতে যাবে। ঘন্টাখানেক গাড়ী চালানোর পর ম্যানলি বিচে পৌঁছানোর পর সমস্যা দেখা দিলো পার্কিং নিয়ে। প্রচন্ড ব্যস্ত সময়ে পার্কিং পাওয়া একটা বড় সমস্যা। এটাতো ঢাকা নয় যে, যেখানে ইচ্ছে পার্কিং করে ফেল্লাম।

সমুদ্র অবগাহনের কোনো প্রস্তুতি না থাকলেও সমুদ্রের আহবান অর্গ্রাহ্য করা বড্ড কঠিন। বিচে পৌঁছুবার পর সবার তাড়া দেখা গেলো সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বার। কক্সবাজারের সমুদ্রের ঘোলা পানি দেখে অভ্যস্থ চোখ প্রশান্ত মহাসগারের তাসমান সাগরের নীল পানি দেখে যে মুগ্ধতার আবেশ পেয়েছিলো সেটা এখনো চোখে লেগে আছে। পরিস্কার নীল আকাশ আর সাগরের নীল পানি যেনো মিতালী পেতেছে দিগন্তে।



পানিতে দাপাদাপি করবার সময় হঠাৎ কি যেনো এসে পিঠে চাবুকের মতো আছরে পড়লো হঠাৎই। হঠাৎ তীব্র এক জ্বালা। পিঠ বেয়ে কোমরের কাছাকাছি লালচে ফুটকি দেয়া লম্বাটে একটা দাগ। তীব্র যাতানায় অন্য সবাইকে বল্লাম, কেউ গা লাগালোনা এতে। আমিও উদ্যাম দাপাদাপির মাঝে ভুলে গিয়েছিলাম সব কিছু। পরে শুনেছি এটা নাকি 'সি লাইস'। মাঝে মাঝে এটা নাকি ভয়ংকরও হয়ে উঠে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য !

গোসল সেরে বিচের পাশের শাওয়ারের মিস্টি পানিতে সাগরের নোনা পানি ধুয়ে ফেলবার পর বিচের পাশ ঘীরে তৈড়ি করা দেয়ালে পা ছড়িয়ে সাগর দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিলো জীবনটা কত সুন্দর। বিচে শুয়ে থাকা সুর্য স্থানরত অর্ধ নগ্ন মেয়েদের দিকে যে চোখ যায়নি সেটা অস্বীকার করছি না। অনভস্থ চোখে সেটা অন্য রকম লাগলেও কেনো জানি মনের মাঝের "কু"টা ডেকে উঠেনি। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। কেউ বা বিচ তোয়ালেতে শুয়ে চামড়া ট্যান করতে ব্যস্ত, কেউ বা বিচ ফুটবল খেখছে, কেউ বা দূরে সার্ফিং । উচ্ছল প্রানবন্ত এক জীবন।

পেটে চামচিকে বুক ডন দিচ্ছিলো। পকেটে ডলারও ছিলো না যে কিছু কিনে খাবো। অন্যদেরও মনে হয় ক্ষুদা লাগেনি। কি আর করা। গাড়ী নিয়ে সোজা পেনরিথে সোহেলের বাসা গিয়ে খুব ক্লান্ত লাগছিলো। জেট ল্যাগের ধাক্কাটা তখনো সামলে উঠতে পারিনি। ওখানে গিয়ে দিলাম এক লম্বা ঘুম। ঘুম যণ ভাঙলো তখন ক্যানবেরা যাবার প্রস্তুতি নিতে নিতে কখন যে মধ্যরাত হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। পেনরিথ থেকে এমফাইভ ধরে ক্যানবেরার উদ্দেশ্য যখন যাত্রা শুরু হলো তখন সকাল ১টা কি ২ টা বাজে। ওরা বল্লো যেতে নাকি ৩ কি সাড়ে ৩ ঘন্টা লাগবে।



গাড়ী চলছেইতো চলছেই। মনে হচ্ছিলো কখন ক্যানবেরা পৌঁছুবো। রাস্তায় গোল্ডবার্নের কাছে এসে কফি খাওয়া হলো। আমার চোখে ঘুম কিন্তু ঘুমুতে পারছি না। ছোট্ট গাড়ীর পেছনের সিটে গুটিশুটি মেরে বসে বাহিরে তাকিয়ে দেখছি কোথাও কোনো আলো নেই। নেই কোনো জনপদের চিহ্ন। দেশে ঢাকা ছেড়ে দূরে কোথাও যাবার সময় আশে পাশের বাড়ীগুলো দেখে মনে হতো আমি বা আমরা একলা নই। এখানে মনে হচ্ছিলো আমরা বুঝি অন্ধকার কোনো অনিশ্চিৎ গন্তব্যের দিকে ছুটে ছলছি।


ক্যানবেরার কাছাকাছি যাবার পর পাহারের উপর থেকে প্রথমবারের মতো শহরটিকে যখন দেখলাম তখন মনে হলো দূরে মনে হয় কেউ যেনো লাখ লাখ পিদিম জ্বালিয়ে রেখেছে। শুনেছিলাম শহরটি নাকি খুবই ছোট্ট, আলো দেখে মনে হচ্ছিলো যতটুকু ছোট ভেবেছিলাম ততটুকু ছোট আসলে নয়। ও'কোনোরের বাসায় যখন পৌছুলাম তখন প্রায় ভোর। ঘরে জিনিস পত্র রেখে ম্যাট্রেসে শুয়ে মন হচ্ছিলো ঘুমিয়ে পরি এখনই। ঘরে একটা পুরোনো ম্যাট্রেস, পড়ার টেবিল আর একটা কাবার্ড। এ বাসাটিতে ছিলাম ২ কি ৩ মাস। এক অকথ্য অভিজ্ঞতা।