বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০০৯

বছর গড়াতে চল্লো, এখন একটি নতুন সূর্যের অপেক্ষায়

1 টি মন্তব্য :


খুব দ্রুত বছরটি শেষ হয়ে গেলো। আর মাত্র ১ সপ্তাহ পরেই T10। কি দ্রুত বছরটি শেষ হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। বলার মতো কিছুই ঘটলো না এ বছরটিতে। কোনো অর্জন নেই, ব্যর্থতাও অনেক। সব কিছু যেনো ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, এগুতে চাইলেও পারছে না। কাঁচা মিঠা আমের মতো  বছরটি কেটে গেলো।  সালতামামী লেখার মতো কিছুই নেই। দেশে পরিবারের সমস্যা,ব্যক্তিগত ব‌্যর্থতা থেকেই হয়তো নতুন বছরে কিছু করার প্রেরণা পাবো।

বছরের এ সময়টুকু বড্ড অলস কাটে। তেমন কিছু করার থাকে না। চারদিকে সুনসান নিরবতা। শুয়ে বসে খেতে খেতে ওজন বেড়ে যায়।

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৯

মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আসলে কতো ??

কোন মন্তব্য নেই :
খুব সম্ভবত বদরুদ্দিন উমরের একটা লেখা পড়েছিলাম। উনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন " দেশে সৈনিকের সংখ্যা বেরে যাচ্ছে "। হয়তো এ জন্যই পত্রিকার পাতায় আজ কাল হড়েক রকমের সৈনিকের নাম চোখে পরে। ৫২য় ফিডার খাওয়া শিশুও অনেক সময় ভাষা সৈনিক হয়ে যায়, একাত্তরে ঘরের নিরাপদ পরিবেশ আকাশবাণী বা স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র শোনা যুবাও হয়ে যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা। আসলে মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা কতো ? আজকের ( ১৭ ডিসেম্বর ২০০৯ ) দৈনিক প্রথম আলোতে ( http://www.prothom-alo.com/detail/date/2009-12-17/news/25785) মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত? আর্টিকেলটা পড়ে মনে হলো আসলেই প্রকৃত সংখ্যাটুকু কত ? এক লাখ, দুই লাখ না আরো বেশী !!

প্রত্যেক সরকারের সময়েই মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে জড়িপ চালানো হয়েছে, তালিকা করা হয়েছে। এর সবগুলোই দলীয় দৃস্টিভংগি থেকেই। আওয়ামী লিগ করা মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়েছে বিএনপি, একই কাজ করেছে আওয়ামী লিগ; যেনো দলীয় রাজনীতি করলে কারো মুক্তিযোদ্ধাত্ব খারিজ হয়ে যায়। সাধারন নির্দলীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্য তালিকায় নাম উঠা দূরের কথা জড়িপের সময় কেউ খোঁজও নেয় না।

জানা যায়, চারটি খসরা ও একটি চুড়ান্ত তালিকা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যার শুরু সামরিক শাষক এরশাদের সময়ে ১৯৮৬-৮৭ সালে। সে সময়ের খসড়া তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১,০২,৪৫৮ বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে ৬৯,৮৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহম্মদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, " ভারতে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের ছবিসংবলিত নাম-ঠিকানা তাঁরা ভারত সরকারের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন এবং এখনো তা সংরক্ষিত আছে।" তিনি জানান, ’৭৪-৭৫ সালে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রসঙ্গত, সেনা সদর দপ্তর থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে ’৮৬ সালে ওই তালিকা আমিন আহম্মদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে। কল্যাণ ট্রাস্টে এ তালিকার ফটোকপি আছে। আর মূল তালিকা রয়েছে চট্টগ্রামে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে। তবে এ তালিকায় মুজিব বাহিনী ও বিএলএফ সদস্যদের নাম নেই। ওই সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হবে না বলে আমিন আহম্মদ জানান। এছাড়া কাদেরীয়া বাহিনী, হেমেয়েত বাহিনী, আফসার বাহিনীর মতো স্বীকৃত বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা ও তালিকাও পাওয়া যায় না। এ ব্যপারে জেনারেল আমিন বলেন, " স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বারবার এভাবে কাটাছেঁড়া করা আসলেই হাস্যকর। ভারত সরকারের হিসাব বিভাগে খোঁজ নিলেই প্রকৃত তালিকা পাওয়া যাবে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়া সবাই ভারত সরকার থেকে কম-বেশি ভাতা পেতেন।"

১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভোটার তালিকায় ৮৬,০০০ ; ১৯৯৮ - ২০০১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের খসড়া তালিকায় ১৮৬,০০০ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাকে মুক্তিবার্তা তালিকা বলা হয়। আর ওই সময়ে পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে যায় প্রায় এক লাখ।

সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯। তবে জোট সরকারের গঠিত জাতীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জন। অর্থাৎ জোট আমলে সংখ্যাটি আবার বেড়ে যায়। আশা করা যায়, আওয়ামী সরকারের সময় এ সংখ্যা আবারো বেরে যাবে।

এ ব্যাপরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক এ এস এম শামসুল আরেফিন বলেন, "মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা সবার আগে জরুরি। আর সেটি না থাকায় ঢালাওভাবে যে খুশি সে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাচ্ছে তালিকায় নাম লিখিয়ে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। " অস্ত্র হাতে যিনি সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে যুদ্ধে গিয়েছিলেন আর যিনি তাদের সহায়তা করেছিলেন তাদের সম্মান কি সমান হতে পারে ? যদিও একজন শব্দ সৈনিক, একজন কলম সৈনিক, একজন সাহায্য কারী, একজন অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধা-- সবার চেস্টায়ই মুক্তিযুদ্ধ সফল হয়েছিলো।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি ইবিআরসিতে সংরক্ষিত তালিকাকেই একমাত্র ও নির্ভরযোগ্য তালিকা মনে করি। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা একটি নির্দিস্ট প্রকৃয়ার মাঝ দিয়ে যেতেন। যুব ক্যাম্প হয়ে প্রশিক্ষন শিবির। এ সময়ে সবার নাম ছবি সহ তালিকা করা হয়। এ তালিকা সরকারের কাছে আছে। এ ছাড়া ২ নম্বর সেক্টরের বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই আছেন যাদের নাম সরকারী তালিকায় নাও পাওয়া যেতে পারে। অন্যান্য বাহিনীর জন্য একই কথা প্রযোজ্য। এরকম একটি তালিকা করা কি একদমই অসম্ভব ? এ না হলে দেখা যাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বদনা আগিয়ে দেয়া কিশোরও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধা নিতে ব্যস্ত, আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যথারীতি সুবিধাবন্চিত।

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৯

কিওয়ার্ডের কেচ্ছা

৪টি মন্তব্য :

অন্তর্জালে নামে স্বনামে - বেনামে লেখালেখি করার চেস্টা করি। নিজের নামে একটা সাইটও আছে। যেখানেই যা কিছু লিখি তার একটা ব্যাকআপ রেখে দেই। একান্তই ব্যক্তিগত ও সংবেদশীল তথ্য ছাড়া এ সাইটে মুলত সব কিছুই লিখি। নিয়মিত Google Analytics থেকে সার্চ ট্রেন্ড লক্ষ্য করে মজা লাগে, বেশ অবাকও হই। অন্তর্জালে যারা ঘোরাঘুরি করে তারাকি শুধু সেক্সেই আসক্ত !!! কত কিছুইতো নিয়ে লিখি কিন্তু "সেক্স, সেক্সুয়াল,চটি, কিস, চুম্বন,বাসর রাত, ভাবীর সাথে, যৌন, যৌন গল্প, সহবাস, সেক্সি মেয়ে,গাড়ির ভেতর" ইত্যাদি শব্দ গুলোই কেনো এতো হিট বারায় আমার সাইটের ? অনেক দিন ধরেই এটা লক্ষ্য করছি। আজ অলৌকিক হাসানের পোস্ট পড়ে মনে হলো, আমি একা নই। এজন্যই মনে হয় বাংলাদেশে দেবোনএয়ারব্লগ এতো জনপ্রিয়। অলৌকিকের মতো আমারও মনে হচ্ছে  " একটা হাত কী-বোর্ডের নীচে রেখে এরেই বলে আন্তর্জাল পরিভ্রমণ"

শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০০৯

বিজয় দেখেছি - বিজয় পাইনি

কোন মন্তব্য নেই :
বিজয়ের মাস চলছে। ৪ দিন পরই ১৬ ডিসেম্বর।
দেখতে দেখতে ৩৮ টি বছর পার হয়ে গেলো,১৯৭১ -২০০৯। সে দিনের কিশোর ছেলেটি আজ বৃদ্ধ, সেদিনের বৃদ্ধরা সব আকাশের তারা। পত্রিকাতে গৎ বাঁধা লেখা পড়া যাচ্ছে। অনেকেই বিশেষ সংখ্যাও বের করবেন। সেখানে অনেকেই কলমবাজই সেরকম আবেগ নিয়ে লিখবেন, ৭১ এ যাদের অনেকেই ছিলো গর্তের অধিবাসী। কথায় আছে 'মায়ের চাইতে মাসির দরদ বেশী'। অথচ যাদের লেখা উচিৎ তারা লেখেন না, লেখতে চান না , লেখার সুযোগ পানও না। পত্রিকাগুলোর মাঝ পাতায় দয়া করে এখনো মুক্তিযোদ্ধাদের কথা লেখা হয় দয়া করে। কে কোথায় না খেয়ে আছে, কে রিকশা চালাচ্ছেন, কার মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে, কে অর্থ কস্টে আত্মহত্যা করছেন ইত্যাদি ইত্যাদি সব মন খারাপ করা খবর। কিন্তু তাঁদের ভাগ্য বদলে দেবার জন্য, তাঁদের পাশে দাঁড়াবার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে সব আবেগেই দেখানো আবেগ, যেখানে সব কিছুই ফাঁকা আওয়াজ। দেশে এখনো স্বাধীনতা বিরোধী দালাল রাজাকাররা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আওয়ামী সরকার যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার করবার প্রতিশ্রূতি দিয়ে ক্ষমতায় আসলেই বিচার কাজ শুরু করবার জন্য কাজের কাজ কিছুই করছে না। জামাত আমির নিজামীর মতো যুদ্ধাপোরাধীও যুদ্ধাপোরাধকে মিমাংসীত বিষয় বলে এটাকে ইসলাম বিরোধী কাজ বলে সরকারকে হুশিয়ার করে দেয়। সরকার দেখে, সুশীল সমাজ দেখে , আমরাও চেয়ে চেয়ে দেখি। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৩৮ বছর হলো পাকিস্তানীদের জায়গায় বাঙালীরা এসেছে। আগে শাষন-শোষন করতো পরদেশীরা, এখন স্বদেশী। দেশ এগুচ্ছে ধীর লয়ে , যেভাবে এগুবার কথা ছিলো সেভাবে এগুতে পারছে না। গরীব গরীবই রয়ে গিয়েছে, মধ্য বিত্তদের মাঝে যারা সুবিধাবাদী তারা উচ্চ মধ্য বিত্ত বা উচ্চ বিত্তে পরিণত হয়েছে। সারা পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে , আমরা এগুতে পারছি না। আর্থিক ভাবে, পররাস্ট্র নীতিতে সবকিছুতেই আমরা স্বাধীন কিন্তু পরাধীন। হতাশ হতে না চাইলেও হতাশ হতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। ধুর, লিখতেই ইচ্ছে হচ্ছে না। লিখতে লিখতেতো রাত পার হয়ে যাবে, লেখা শেষ হবে না।

সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০০৯

এবতাদুলের তেলেসমাতী

২টি মন্তব্য :
কি জাদু দেখাইলোরে এবতাদুল মিয়া ! ঢাকা - সৈয়দপুরে বিমানের সার্ভিস বন্ধ ৩ বছর হতে চল্লো। বেসরকারী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সও বন্ধ করেছে প্রায় ৭ মাস হলো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোঃ এবতাদুল ইসলাম এখনও বিমানে সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ও রাজশাহী বিমানে যাতায়াতের কাল্পনিক বিল দাখিল করেছেন। তার যুক্তি, "এই রুটে বিমান না চলুক, বিমানে যাতায়াতের জন্য তো তিনি এনটাইটেল্ড।" সমকালের প্রতিবেদনে এসেছে ' বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার জিএম মোঃ এবতাদুল ইসলাম এ বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ৬ বার সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ও রাজশাহী যাতায়াত বাবদ বিমান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক ভ্রমণ ভাতা হিসেবে ৯০ হাজার ১৭৭ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন "। এবতাদুলের মতে সবাই নাকি এটা করে, তাই উনিও করেছেন।

এই জাতীয় মানুষকে নৈতিকতা দেখিয়ে লাভ নেই। হাইকোর্ট দেখিয়েও লাভ নেই। যুগে যুগে এরা এসবই করেই সমাজে সম্মান নিয়ে চলছে। সমাজও এদের সম্মান দেয়,কারন এখনকার সমাজে টাকাও সম্মান লাভের অন্যতম মাপকাঠি। দূর্নীতি কি জিনিস সেটাও এরা জানে না কারন দূর্নীতিই এদের নীতি। এদের এসব বোধই নেই।মাঝ খান থাকে দেশের বারোটা বাজে। হুহ, এক সময় দেখা যাবে এই ব্যাটাই দূর্নীতি দমনের পন্থা নিয়ে টকশোতে মহা ব্যাস্ত। বয়সকালে হজ্বও করে ফেলতে পারে এবতাদুল মিয়া। সফেদ দাঁড়ির আড়ালে কালো টাকা হাসবে। আমরা তাকিয়ে দেখবো। ভালো ভালো। ভাবছি পিতার অসৎ টাকা নিয়ে সন্তানরা কি ভাবে !!

সমকালের খবরটি নিচে যোগ করে দিলাম, পারলে পড়ুন

-------------

বিমানে যাননি তবুবিমান ভ্রমণের বিল লাখ টাকা!

মোহন আখন্দ, বগুড়া ব্যুরো ( ৭ ডিসেম্বর , শেষের পাতা)
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রায় ৩ বছর আগে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর বন্দর থেকে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। লোকসানের মুখে সেখানে বেসরকারি কোম্পানির বিমান সার্ভিসও ৭ মাস আগে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোঃ এবতাদুল ইসলাম এখনও বিমানে সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ও রাজশাহী বিমানে যাতায়াতের কাল্পনিক বিল দাখিল করেছেন। তার যুক্তি, এই রুটে বিমান না চলুক, বিমানে যাতায়াতের জন্য তো তিনি এনটাইটেল্ড।
চলাচল বন্ধ থাকার পরও ওই কর্মকর্তার বিমানে সৈয়দপুর-ঢাকা, সৈয়দপুর-রাজশাহী যাতায়াতের এমন অবাক করা তথ্য ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এবং সরকারের বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের পৃথক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার জিএম
এবতাদুল ইসলাম বিমানে ঢাকা ও রাজশাহীতে যাতায়াতের কাল্পনিক বিল দাখিল করে প্রায় ১ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগের পক্ষ থেকে এ ধরনের বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েও ফল হয়নি কোনো।
সূত্র জানায়, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাংক চত্বরে সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিনের লাগানো মেহগনি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগও উঠেছে। বর্তমান গভর্নর ড. আতিউর রহমান গত ২০ অক্টোবর ব্যাংকের রংপুর শাখা পরিদর্শনে যাওয়ার আগেই গাছটি কেটে ফেলা হয়।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০৬ সালের মাঝামাঝিতে সেখানে তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দেয়। পরে বেসরকারি একটি বিমান কোম্পানি যাত্রী পরিবহন শুরু করে। কিন্তু অব্যাহত লোকসানের মুখে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। ওই বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক শহীদুল আলম চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে সৈয়দপুর থেকে আর কোনো বিমান চলাচল করে না।'
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার জিএম মোঃ এবতাদুল ইসলাম এ বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ৬ বার সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ও রাজশাহী যাতায়াত বাবদ বিমান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক ভ্রমণ ভাতা হিসেবে ৯০ হাজার ১৭৭ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন। এসবের মধ্যে চলতি বছরের ১১ আগস্ট দাখিল করা ভ্রমণ ভাতার একটি বিলে (নং-৫৩) তার সৈয়দপুর থেকে ঢাকা যাওয়া-আসার বিবরণ সমকালের হাতে এসে পড়েছে।
ওই বিলটির বিবরণীতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপকের ৫ আগস্টের আদেশ অনুযায়ী তিনি ৮ আগস্ট রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি প্রথমে রেলপথে রংপুর থেকে পার্বতীপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত ট্রেনে যাওয়া-আসার ভাড়া দেখান ৬০০ টাকা। আর সৈয়দপুর থেকে বিমান পথে যাওয়া-আসার ভাড়া দেখানো হয় ১৩ হাজার ১৮৮ টাকা। ওই বিবরণীতে আনুষঙ্গিক খরচসহ মোট ১৬ হাজার ৫৬৩ টাকার বিল দাখিল করা হয়। একইভাবে ২৭ এপ্রিল ১৭ হাজার ২৪৮ টাকা, ৭ জুন (সৈয়দপুর-রাজশাহী) ৬ হাজার ৩১৫, ১০ নভেম্বর ১৬ হাজার টাকা এবং ওই সময়ের মধ্যে আরও দু'দফায় পৃথকভাবে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, জিএমের দাখিল করা ভ্রমণ বিলে বিমান ভাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে আপত্তি জানানোর কারণে ব্যাংকের সংশিল্গষ্ট অডিট শাখার কর্মকর্তারা তার রোষানলের শিকার হন। পরে উত্তোলন করা ভ্রমণ বিলের সবগুলো বিবরণী সংশিল্গষ্ট শাখা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এর পর ১৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ বিভাগের অডিটকালেও সেগুলো উপস্থাপন করা হয়নি।
বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতর রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ অফিসার বীরেন্দ্র নাথ প্রামাণিক সমকালকে বলেন, অডিটকালে ২১টি বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে, তাতে বিমান সার্ভিস বন্ধ থাকার পরও সৈয়দপুর থেকে ঢাকা যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিমান ভাড়ার বিল নেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।'
সার্ভিস বন্ধ থাকার পরও বিমান ভাড়া উত্তোলন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার জিএম এবতাদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'বিমান কবে বন্ধ হয়েছে সেটা আমি জানি না। আমি শুধু জানি বিমানে যাতায়াতের জন্য আমি এনটাইটেল্ড। তাছাড়া আমাদের আরও অনেকেই এভাবে বিল দাখিল করে থাকেন।'

বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০০৯

ভুলোমনা

২টি মন্তব্য :
ন্ধ্যে ৬ টার দিকে কোলসে গিয়েছিলাম সম্তাহের বাজার সদাই করতে। ঘুড়ে ফীরে অনেক কিছুই কেনা হলো। হঠাৎ মনে পড়লো সিগারেট শেষ। কি আর করা, সিগারেটও কেনা হলো ১ প্যাকেট। টাকা দিলাম, রিসিটও নিলাম, সবশেষে সিগারেট ।

ভাবলাম অনেকদিন বাহিরে কিছু খাওয়া হয় না। কাছে পিঠেই ছিলো একটা ম্যাকডোনাল্ডসের রেস্তোরা। সস্তায় খাবার জন্য ম‌্যাক মামার উপরে জিনিস নাই। মাইটি এংগাস মিল আর বউয়ের জন্য ক্রিসপী চিকেন বার্গার কিনে বাহিরে বসলাম। 'না গরম - না ঠান্ডা 'এরকম এক সুন্দর আবহাওয়া ছোলো আজ। খাবার শেষে সিগারেটের কথা মনে পড়লো। খোঁজার চেস্টা করার সময় বউ বল্লো হয়তো কোনো ব্যাগে ভুল করে ঢুকিয়ে দিয়েছি।
বাসায় এসে বুঝতে পারলাম, সিগারেট হাত থেকে কাউন্টারে রেখে চলে এসেছি। বড্ড ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছি। মাঝ খান থেকে ১২.৪৫ ডলার গচ্চা গেলো।
ধ্যাত।।

সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০০৯

এই ঠান্ডা এই গরম

1 টি মন্তব্য :
ক্যানবেরায় এখন গ্রীস্মকাল। দু সপ্তাহ আগে কাঠ ফাটা প্রচন্ড গরমে মনে হচ্ছিলো শীতকালই ভালো ছিলো। সেই ক্যানবেরায় এখন শীতকুমারের ষড়যন্ত্রে কনকনে ঠান্ডা, সাথে দমকা বাতাস। হালকা বৃস্টিও হয়েছিলো আজ। এ মুহুর্তে তাপমাত্রা ১০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, মধ্যরাতে তা ৬-৭ এ নামবে। দুদিন আগে প্রচন্ড গরমে মনে হচ্ছিলো এসি কাজ করছে না, এখন মনে হচ্ছে হিটার কাজ করছে না। এখানকার আব হাওয়ার মতিগতি নারী মনের মতোই রহস্যময়ী, বোঝা দায়।

ক্যানবেরার মাছিগুলোকে মিস করছি। ধুমসো আকৃতির কালো কালো বিশালাকৃতির সব মাছি। বাতাসে সব মাছি মনে হয় অন্য কোথায় হিজরত করেছে।

বেশ অলস একটি দিন কেটে গেলো। তেমন কিছু করার ছিলো না। বছরের শেষের দিনগুলো কেমন জানি আলসেভাবেই কেটে যায়, সম্ভবত নতুন বছরের ব্যস্ততার প্রস্তুতি নিতে সামান্য অবসর দেন আল্লাহ তায়ালা।


ক্রিসমাস আসছে সেটা বাজারে গেলে বোঝা যায়। বাজারের সেল্ফে সেল্ফে ক্রিসমাস ঝলমল করছে।দেশে থাকতে দেখতাম ঈদ - পূজার সময়গুলোতে জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যায়, এখানে তার উল্টো। সব কিছুর দাম যেনো পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে। মানুষের পকেটের শেষ সেন্ট টুকু রেখে দেবার সেকি আপ্রান চেস্টা দোকানদারদের।

আজ আবারো সাদা পোলাও রেঁধেছি। রাঁধতে রাঁধতে মনে হয় পাকা রাঁধুনিই হয়ে যাবো। কে জানে ! সাথে ছিলো মুরগীর মাংস ও টমাটো সালাদ। কাল সুনিল দার বাসায় দাওয়াত। সন্ধ‌্যে বেলায়। বরাবরের মতোই আকন্ঠ খাওয়া হবে। ওজন নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাচ্ছি। স্টুপিড গ্র্যাভেটি :-)

দিব্যর বয়স দেখতে দেখতে প্রায় দেড় বছর হতে চল্লো। সময় যে কি দ্রুত কেটে যায় বোঝাই যায় না। এইতো সেদিন বিয়ে করলাম, এখন ছেলে বড় হয়ে যাচ্ছে। কদিন বাদে দেখা যাবে ছেলের বিয়ের কথা ভাবতে হচ্ছে !

রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০০৯

ঈদ উল আজহা উর্ফে বকরির ঈদ উর্ফে বকরা ঈদ কেমন কাটিলো !

কোন মন্তব্য নেই :


বৈদেশে ঈদ কেমন হইয়া ‌থাকে তাহা নিয়া সদ্য প্রাচীনকালে শত শত দিস্তা কাগজ খরচ হইয়া থাকিলেও আজকালকার পৃথিবীতে সেই শত শত দিস্তার কাগজের বদলে শত শত আন্তর্জালিক পাতা ভড়িয়া উঠে ঈদ লইয়া। মানুষের কস্ট, সুখ, আনন্দ - হাসি কান্নায় ভড়া ঈদের গল্প পড়িয়া চিত্ত কখনো প্রফুল্ল হইয়া উঠে, কখনোবা কস্ট ভাড়াক্রান্ত হইয়া উঠে। কেউবা ঘুমাইয়া ঈদ পালন করেন, কেউবা ঘুড়িয়া বেড়াইয়া। নাতিদীর্ঘ প্রবাস জীবনে কত ঈদ পার করিয়াছি সেটা নিয়ে অনেক গল্প জমিয়া আছে। সময় করিয়া কোনো একদিন সেটা বলা যাইবে।

কেনো জানি ইশ্বর ঈদের সময় আমাকে অভাবগ্রস্থ করিয়া ফেলেন। বছরের অন্য সময়গুলোতে অর্থ সংকটে না থাকিলেও বিধাতার ক্রীপায় কেনো জানি এবারো অর্থ সংকটে পড়িয়া গেলাম ( শেষ খবরঃ সামলাইয়া উঠিয়াছি)। ঈদের নামাজের সময়টুকু ঘুমাইয়া পার করিয়াছি। মধ্যাহ্ন ভোজন সাড়িয়া স্ত্রী-পুত্র সহকারে একটি দূরদর্শন যন্ত্র কিনিবার উদ্দেশ্যে বাজারে গমন করিলাম। অনেক বাছিয়া - অনেক যাচাই করিয়া একটি বৃহৎ চকচকে এলসিডি দূরদর্শন যন্ত্র কিনিয়া গৃহে প্রত্যাবর্তন করিয়া সদ্য কেনা যন্ত্রের ছবি দেখিয়া মুগ্ধ দৃস্টিতে তাকাইয়া মনে করিলাম ইহাই আমার ঈদ।

ডাউনআন্ডারের রাজধানী ক্যানবেরায় অল্প কিছু বঙ্গদেশীয় সন্তানের বসবাস। সংখ্যায় তাহারা খুব কম না হইলেও অন্যান্য শহরের তুলনায় অল্পই বলা যাইবে। চেস্টা করিলে একে অপরের হেঁসেলের খবরও জানা যায় এরকমটি ক্ষুদ্র সমাজে প্রতি ঈদে খোলা বাড়ী (ওপেন হাউজ) করা হইয়া থাকে। এবারে সেটা হইয়া উঠেনি কিছু অভদ্র বঙ্গসন্তানের ষড়যন্ত্রে। ইহারা দেশ বদল করিয়াছে স্বভাব বদল করিতে পারে নাই। উহারা ইর্ষান্বিত বোধ করিয়া - নিজের নাক কাটিয়া হইলেও অন্যের যাত্রা ভংগ করিবার শিশুসুলভ আচরনে এটা না করিতে দিয়ে নিজেদের মনের ক্ষুদ্রদিকটি আবারো উন্মোচন করিলো। হতাশ হইয়াছি ইহাদের আচরনে।

আজ মধ্যাহ্নভোজনে নিমন্ত্রন ছিলো এক ভদ্র পরিবারে। স্বগৃহ হইতে বাহির হইবার সময় আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখিয়া আতংকিত বোধ করি নাই, ক্যানবেরার আকাশে এরকম শত কালো মেঘ দেখইলেও বৃস্টি দর্শন কদাচিৎ ঘটিয়া থাকে। উদ্দিস্টে যখন পৌঁছিয়াছিলাম তখন প্রায় বৃস্টিতে ভিজিবার উপক্রম। খাদ্য উপাদেয় হয় নাই। ছোট মাছের চচ্চরি, শুটকি, লাউ সহকারে চিঙড়ি, সব্জি ভাজি, গো মাংস, কুক্কুট তরকারী ভক্ষন করিয়া অতৃপ্ত মনে এটাই ভাবিতেছিলাম গৃহস্বামী কথার সাথে সাথে রন্ধনেও পারদর্শী হইলে খাদ্য আরো উপাদেয় হইতো। তবে আন্তরিকতায় ঘাটতি ছিলো না একদমই। ইহা ভালো লাগিয়াছে।
আসিবার পথে স্ত্রীর এক সহপাঠীর গৃহে গমন করিলাম। কিছু সময় কাটাইয়া যখন স্বগৃহে ফেরত আসিলাম তখন সূর্যদেবতা অস্তগামী।

এবারের ঈদে দেশে পিতা মাতার কাছে অর্থ প্রেরণ করিয়াছি, নতুন দূরদর্শন যন্ত্র কিনিয়াছি, স্ত্রী পুত্র সহকারে ঈদ করিয়াছি, স্ব হস্তে বিরিয়ানী রাঁধিয়াছি, দূর হতে স্বজনদের সংক্ষিপ্ত বার্তা পাইয়াছি, নিরাপদে শান্তিতে দিনযাপন করিতে পারিয়াছি -- এইতো আমাদের ঈদ। বাকিসকল তুচ্ছ হইয়া যায় শিশু পুত্রের হাসির কাছে।


কার্টুন সত্বঃ সুজন চৌধুরী

বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০০৯

বিড়ম্বনা

1 টি মন্তব্য :

পকেটে ছিলো $৭৫। বাজার শেষ করে যখন চেক আউটে এসেচি তকনো আন্দাজ করতে পারিনি কি অপেক্ষা করচে ভাগ্যে। জিনিস পত্র স্ক্যান করা হচ্চে, মনিটরে দাম উঠচে, উঠতে উঠতে এক সময় দেখি তা $১০২.০৭ এ ঠেকেচে।
চেক আউটের ছোকড়া কে বল্লুম " বাপু, পকেটেতো একুনে ৭৫ ডলার রয়েচে, ১০২।০৭ তো নেই। কি করা যায় বলতো " । ছোকড়া ফোন তুলে কাকে জানি ডাকলো। তাকিয়ে দেখি সে এক ঝাঁকরা চুলের ছোকড়া। সে বল্লো কিছু জিনিস বাদ দেবার চেস্টা করুন।
যেই কতা, সেই কাজ। আমিও বাচতে শুরু করলুম কি কি বাদ দেয়া যায়। গিন্নিকেও বল্লুম হাত লাগাতে। প্রথমেই মুরগী, তার পর ১ লিটার দুধের বোতল। এভাবে বাদ দিতে দিতে একসময় যখন তা ৭৫ ডলারে নাবলো তখন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম। কি এক বিড়ম্বনা। দুগ্গা দুগ্গা........এজন্যই গুরুজি বলেন 'বাজার একোরডিং টু ইয়োর পকেট'।

বেশ ঠান্ডা পরেচে ক্যানবেরায় (এটা কিন্তু মজা করে বলচি না বাপু, সত্য সত্যই বলচি ) গত কদিন যা বেশ গরমটি ছিলো। ৪০ ছুঁলো বলে ! যে হারে কাপড় খোলা শুরু হয়েছিলো তাতেতো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলুম। ধম্ম কম্ম বাদ দিয়ে বুঝি বিশ্বকর্মার স্মৃস্টির পুজোয় নাবতে হবে।

একানে আগামী ২৭ তারিখ কোরবানী ঈদ। কোরবানী দোবো না, হবোও না। এ দেশে পশু কোরবানী দিয়ে গোশত খাওয়া ছাড়া কাজের কাজ কিচুই হয় না। ভেতরের পশুটাকে কোরবানী না দিয়ে বাহিরে পশুটাকে মেরে কি ছুক?

সবাইকে ঈদ মোবারক

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০০৯

একাত্তরের যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার কাজ শুরু করতে সরকার কতটুকু প্রস্তুত ?

1 টি মন্তব্য :
একাত্তরের যুদ্ধাপোরাধীদের বিচারে আওয়ামী লিগ সরকারের আন্তরিকতা আছে কি না সেইটা নিয়া প্রশ্ন না তুলেই মনে প্রশ্ন জাগছে, "সরকার আসলে কতটুকু প্রস্তুত বিচার কাজ শুরু করতে"।

ব্লগে রুবেলের এক পোস্টে দেখলাম গোল টেবিল বৈঠকে সবাইকে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবারো নজাগরন ও সচেতনতা স্মৃস্টি করতে আহবান জানিয়েছেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ঠিকই আছে, আছে বিচার চাইবার আখুতি, আছে ঐকান্তিক জাগরন। কিন্তু কথা হচ্ছে আর কতটুকু জাগরন স্মৃস্টি হলে হলে সরকারের বাস্তব কিছু করার প্রেরণা জাগবে?

রুবেল - অরন্যরা সব কিছু ফেলে ফুলে পাগলের মতো মানুষের স্বাক্ষর জোগার করবে আর সেই স্বাক্ষরগুলো গুদামঘরে পঁচে মরবে সেটাতো হতে পারে না। সাধারন মানুষের মাঝে জাগরন ঠিকই আছে , সবই ঠিক ; আছে । এখন দরকার সরকারের কাজ শুরু করবার পালা, বিচার কাজ শুরু করবার পালা। এটা না করে হাজারো সুশীল গোল টেবিল করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।

কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছে করে।

১) বিচারে কাজে কারা কারা অভিযুক্ত হবে ?
হাতে গোনা - মুখ পরিচিত কিছু গোআ- নিজামী জাতীয় জামাতি নেতা না একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপোরাধী সকল রাজনৈতিক নেতা- কর্মী ?
মুখ চেনা কিছু পরিচিত পশুর বিচার হলে সেটা মুলত আই ওয়াশই হবে, পরিপূর্ন বিচার হবে না।
২) রাজনৈতিক অভিযুক্ত ছাড়াও যারা শান্তি কমিটিতে ছিলো বা কোলাবেরটর হিসেবে কাজ করেছিলো তারাও কি বিচারের সম্মুখিন হবে ?
৩) পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপোরাধীদেরও কি বিচারের সম্মুখিন করা হবে ?
৪) রাজাকার বাহিনীতে কাজ করা রাজাকার ও ইপকাফ এর সদস্য অবাঙালীরাও কি বিচারের সম্মুখিন হবে ?
এ ব্যাপরে সরকারের কোনো সুনির্দিস্ট ঘোষনা আছে কি ?

যাই হোক, ধরা যাক জাগরন স্মৃস্টি হলো। তার পর সরকারকে কিন্তু অনেক কাজ করতে হবে। আনুস্ঠানিক ভাবে অভিযোগ আনতে হবে, সেটার তদন্ত করতে হবে। তদন্ত শেষে পুলিশের অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পরই বিচার কাজ শুরু হবে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ন মামলা বলে এটায় এমনভাবে তদন্ত করতে হবে ও অভিযোগপত্র দিতে হয় যাতে আদালতে গিয়ে কোনো ফাঁক ফোকরেই যুদ্ধাপোরাধীরা ছাড় না পায়। অনেকে হয়তো বলবেন, তথ্য- উপাত্ত- প্রমান অনেক আছে। মানছি আছে; কিন্তু আবেগের কাছে যা প্রমান সেটা আদালতের কাছে অনেক সময়ই প্রমান হিসেবে গন্য না। আবেগ ও আদালত দু ভাবে চলে।

এসময় আরেকটি আরেকটি প্রশ্ন জাগছে মনে।

৫) বিচারের জন্য স্পেশাল ট্রাইবুনাল করা হবে নাকি সাধারন আদালতেই বিচার কাজ শুরু হবে?

যে আদালতেই করা হোক না কেনো আদালতের বিচারে অনেক সময় লেগে যায়। আদালতে যে রায়ই হোক না কেনো সেটায় উচ্চ আদালতে আপিল করা যায়। সব কিছু মিলে অনেক সময় লেগে যায় বাংলাদেশের বর্তমান বিচার ব্যবস্থায়। এটা একটা বড় আশংকার বিষয় আমার কাছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া এসময় উদাহরন হিসবে আসতে পারে ।

এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ন কাজে সরকারের বলার মতো কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়ছে না। গোল টেবিল বৈঠকে বা সেমিনারে সাদা কালো বাল ফেলানো ছাড়া কোনো কাজের কাজ হয় না।

আরেকটি কথা হলো,
তদন্ত ও তথ্য সংগ্রহের জন্য এমনটি কি কোনো সেল গঠন করা হয়েছে যারা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছে?
আইনজীবিদের নিয়ে কি কোনো বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে যারা আইনগত বিষয় নিয়ে কাজ করছেন ?

বর্তমান আওয়ামী সরকারের মেয়াদ থেকে ১ বছর চলে গেলো প্রায়। হাতে আছে ৪ বছর। এই ৪ বছরের শেষ ১ বছর যাবে পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতিতে। থাকলো মোটে ৩ বছর। ৩ বছর কিন্তু খুব অল্প সময় এরকম একটি বিশাল কাজের জন্য।

কথা অনেক হয়েছে, অনেক প্রতিশ্রুতিও অনেক শোনা হয়েছে। এখন কিছু করবার পালা। এবার না হলে এই জীবনে আর হবে না যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার কাজ।


বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০০৯

নিজেকেই সবচাইতে বেশী ভালোবাসী

২টি মন্তব্য :
উত্তর দিয়েই প্রশ্নের শুরু।
বহুকাল আগে কোথায় যেনো একটি ইন্টারভিউ দেখেছিলাম। খুব সম্ভবত জাদুকর জুয়েল আইচের। উনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো " কাকে সবচাইতে বেশী ভালোবাসেন ?" কোনোরকম ভনিতা না করেই উনার উত্তর ছিলো " নিজেকেই সবচাইতে বেশী ভালোবাসী"। কথাটা মাথায় সেই যে গেঁথে গেলো, এখনো মাজে সাজেই সেটা বের হয়ে আসতে চায়। অনেক ভেবেছি এটা নিয়ে। সবশেষে এটাই মনে হয়েছে , 'আমায় আমি সবচাইতে বেশী ভালোবাসী'। এর জন্যই হয়তো বা অন্যের কস্টের চাইতে নিজের কস্টকেই বেশী প্রাধান্য দেই, নিজের ভালোটাকে বেশী করে দেখবার চেস্টা করি। হয়তো অনেকে বলবেন এটা বড্ড বেশী স্বার্থপরের মতো আত্নকেন্দ্রীক আচরন। কিন্তু গল্পের শেষে সবাই নিজেরটাই বেশী করে ভাবে, নিজেকেই বেশী ভালোবাসে।। পৃথিবীর খুব কম মানুষই এটা হতে বের হয়ে আসতে পারে। সেই সাধুপুরুষদের দলভুক্ত হতে রাজি নই, অন্তত এ মুহুর্তে।

নিত্যকার অভ্যেস মতো ল্যাপ্পির মনিটরের পাতায় দেশের সংবাদপত্র গুলোতে চোখ বুলোনো হয়। মন ভালো করবার চাইতে মন খারাপ করা খবরই বেশী থাকে। মন খারাপের রেশ অবশ্য বেশীক্ষন থাকেও না। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। একটা নতুন গাড়ী কেনা , একটা নতুন বাড়ী, একটা হোম থিয়েটার, একটা দ্বীপ ভ্রমনের পরিকল্পনায় হাড়িয়ে যায় দেশের খবর। বোকার মতো দেশে ফোন করে বাবা-মায়ের খোঁজ নেয়াও হয়।
- জিনিস পত্রের দাম যে হারে বারছে সেহারে আয়তো বারে না
- তোমার বাবাকে ডাক্তার দেখাতে হবে
- আগামী মাস থেকে বাড়ী ভাড়া বাড়বে বলেছে বাড়ীওয়ালা

নির্বিকার মুখে সবকিছু শুনে বলা হয় সামনের মাসে ১০০ ডলার বেশী পাঠাবো। দ্বায়িত্ব শেষ করে তৃপ্তির নিশ্বাঃষ ফেলি। মাকে জিগেস করা হয় না অন্যকিছুর কথা, অনেকটা ইচ্ছে করেই। করলেই বাড়তি কটা টাকা বের হয়ে যাবে, নিজের সুখ একটু কমবে।

সবশেষে নিজেকেই ভালোবাসী। নিজের ভালোবাসা রক্ষা করবার জন্য যা দরকার তাই করি। বসকে খুশী রাখা, কলিগকে খুশী রাখা, বউকে খুশী রাখা, সবাইকে খুশী রেখে নিজেকে খুশী রাখা। সব নিজের জন্যই। নিজেকেই আমি সবচাইতে ভালোবাসী।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

গ্যারাজের সেই ল্যান্ড রোভার

1 টি মন্তব্য :
বেশ কবছর আগে কালীগন্জে বেড়াতে গিয়ে থানার কোয়ার্টারে ওসি সাহেবের বাসার সামনের গ্যারাজটি যেমনটি দেখেছি, ২০ বছর আগে সেমনটিই দেখেছিলাম। শান বাঁধানো পাকুর গাছের নিচে সেই গ্যারাজে সে সময় একটি ধুলোয় ঢাকা ল্যান্ড রোভার পার্ক করা ছিলো। সেবার বেড়াতে গিয়ে সেটা দেখতে পাইনি। শুনেছি সেটা নাকি নিলামে বিক্রি করা হয়েছিলো অল্প কিছু টাকায়। হয়তো সেই ল্যান্ড রোভারটি এখন চাঁদের গাড়ি হিসেবে বান্দরবনের পাহাড়ে উঠো নামা করছে। অনেক স্মৃতিমাখা সেই ল্যান্ড রোভার। একসময়ে সারা ঢাকা দাবড়িয়ে বেড়ানো ল্যান্ড রোভারটিতে চড়ে বঙ্গবন্ধু ৭০ এর নির্বাচনের প্রচারনায় ব্যবহার করেছিলেন নিয়মিত। ল্যান্ড রোভারটির মালিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ময়েজউদ্দিন।

আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে, ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জে স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছিলেন ময়েজউদ্দিন। প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে উনাকে হত্যা করেছিলো যে আজম খান, সে এখন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির বড় নেতা। বিচারে আজম খানের যাবজ্জীবন কারাদন্ডও হয়েছিলো। স্বৈরিচারী এরশাদ তখন রাস্ট্রপতি। কালীগন্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে লে.জে হোমো এরশাদ আজম খানকে সবার সামনে নিজের ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। অবশ্য এর আগে আজম খানকে সাধারন ক্ষমায় মুক্তি দিয়েছিলো তার বড়ভাই এরশাদ।

আজকে ২৫ বছর পর মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টিও সরকারের অংশীদার। আজম খানও আজ জাতীয় পার্টির বড় নেতা হিসেবে মহাজোটেরও বড় নেতা।

ময়েজউদ্দিন যখন মারা যান মেয়ে মেহের আফরোজ চুমকি সময় অনেক ছোট। সে সময়কার ছোট্ট চুমকি আজ নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ১৯৯৬-২০০১ সংসদেও উনি সংসদ সদস্য ছিলেন। সরকারী বিভিন্ন অনুস্ঠানে হয়তো আজম খানের সাথে দেখা হয়, হয়তো পাশাপাশি বসে ইফতারও খেয়েছেন। কেমন লাগে বাবার খুনির সাথে বসে ইফতার খেতে ! চুমকি আপা বলবেন কি ?

একসময় এই আমাকেই বলেছিলেন " ক্ষমতায় গেলে বাবার হত্যার বিচার করবো " ।
আজ আপনারা ক্ষমতায়। বিচার কি করা যাবে চুমকি আপা ?
আপনি কি একবারো সেই নিরীহ দরিদ্র কিন্তু অসীম সাহসী সেই ধোপার সামনা সামনি হবার সাহস রাখেন যিনি শত হুমকির মুখেও স্বাক্ষী দিয়েছিলো যখন আর কেউ সাহস রাখেনি ?

আজ শহীদ ময়েজউদ্দিনের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের হাজারো রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিচার না হবার মতো এটিও একটি।

সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

মৃত্যু এসে উনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে

২টি মন্তব্য :


বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের মৃত্যু আমাকে কস্ট দেয়নি, লজ্জা দিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় মৃত্যুই এসে উনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সমস্ত লজ্জার হাত হতে।

পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ছে এক গাদা গৎ বাঁধা শোকবার্তা। কাঁদতে কাঁদতে লুঙি ভেজানোর উপক্রম করছি আমরা। মৃতদেহ দেখতে বা জানাজায় দলে দলে আসা অমুক তমুকের সার্কাস দেখতেও খারাপ লাগছে না। আজ কালকার জামানায় এগুলো স্বাভাবিক। আগামী বছর ধুম ধাম করে উনার মৃত্যবার্ষিকী পালন করা হবে নিয়ম মেনে। পরের বছর আবেগের তোড় একটু কম থাকাতে সেটা একটু কম ধুম ধামের করে পালন করা হবে। আবেগ কমতে কমতে যখন সেটা যখন শুন্যে পরিণত হবে তখন উনার কথা স্মরন করবে শুধুমাত্র উনার পরিবার আর উনার শীষ্যরা। আমরা সুশীল মধ্যবিত্ত মেতে উঠবো অন্য কাউকে নিয়ে। আবেগ হোলো মধ্যবিত্তের ফ্যাশন। ঈদের ফ্যাশনের মতো আবেগও বদলে যায় বছর বছর - আবেগের ব্যক্তি/বস্তুও বদলে যায়।


অনেক সময়ই দেখেছি সিডি বা ক্যসেটের ফ্ল্যাপে গানের সুরকার/গীতিকারের নামের জায়গায় লেখা "সংগৃহিত"। ভেবেছিলাম হয়তো সেই মহান শিল্পী অনেক খেটে খুটে - বন বাদারে ঘুরে ঘুরে গান সংগ্রহ করে বাঙালী জাতির সংগীত সম্ভারকে সমৃদ্ধ করেছেন। পরে শুনেছি, সেটা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের লেখা - সুর করা। চরম অকৃতজ্ঞ এবং চোর সেই শিল্পী বেমালুম চেপে গিয়েছেন। পরে ধরা পরার পর ইয়ে ইয়ে বলে পার পেতে চেয়েছিলেন সেই ভদ্রবেশী চোর। এর পর যা হয় , শাহ আবদুল করিমের ভাগ্যে স্বীকৃতিতো দূরের কথা ; রয়ালটির ক্ষুদ্রাংশ টুকুও জুটেনি।

বেঁচে থাকতে শাহ আবদুল করিম‌ অনেক পদক পেয়েছিলেন, অনেক সম্মাননাও পেয়েছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে উনার পেটে যখন ভাত জুটতো না তখন কোনো সুশীলই তার খবর নেয়নি। এই মানুষটাই একদিন কস্ট নিয়ে বলেছিলেন
"এত সংবর্ধনা, সম্মান দিয়ে আমার কী হবে! সংবর্ধনা বিক্রি করে দিরাই বাজারে এক সের চালও কেনা যায় না"। (প্রথম আলো)

আজকে ফেসবুকের পাতায়, ব্লগের পাতায়, পত্রিকার পাতায় যারা শোকগাঁধা লিখছি ফ্যাশন করে তারাও কোনো খোঁজে নেইনি সেসময়।

এক বোতল ব্লাক লেভেলের দাম দিয়ে কয় সের চাল কেনা যায় সেটা ভাবছি, একটা ডিএসএলআর এর দাম দিয়ে কয় মাস পেট পুরে খাওয়া যায় সেটাও ভাবার চেস্টা করছি। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম যখন ক্ষুদায় কাতর ছিলেন, চিকিৎসার অভাবে ভাঙা কুঁড়ে ঘরে কাতরাচ্ছিলেন তখন অবশ্য এসব হিসেব করার ফুসরত হয়নি আমার বা আমাদের। এখন যা করছি তার সব কিছুই ভন্ডামী। এসব ভন্ডের মাঝে আমিও একজন।

ভাবছি সামনে কার পালা ?

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

হাবিজাবি ৬

কোন মন্তব্য নেই :
অনেক দিন কিছু লেখা হয়। সত্য বলতে কি কিছু লিখতেও ইচ্ছে হয় না আজকাল। জীবনটা মনে হয় একটা ইনফিনিটি লুপের মাঝে আটকা পরা। সেই একই কলের গান এক ঘেয়ে সুরে বেজেই চলছে।

রোজার মাস চলছে। সংযমের মাস !! যদিও সংযমের চাইতে অসংযমই বেশী দেখা যায় এসময়টিতে। যার জীবনে প্রতিটি মাসই সংযমের, তার কাছে একটি বিশেষ মাসে কিই বা এসে যায়। রোজা রাখা হচ্ছে না, বলতে কি সম্ভব হচ্ছে না। এসি ঘরে বসে আরাম কেদারায় বসে রোজার মাহাত্ন -ফজিলত নিয়ে অনেক বড় বড় বাতচিত করা যায় কিন্তু কাঠা ফাটা গরমে পিচ ঢালা রাস্তায় যে মানুষটি রিকশার প্যাডেল ঠেলছে সেই বুঝতে পারে রোজা রাখা কত্ত কঠিন কাজ।

শীত কুমারের বিদায় শেষে বস্ত কুমারের আগমন ঘটেছে ডাউন আন্ডারে। দিনে বেশ গরম পরলেও রাতে ঠিকই কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমুতে হয়। দেশ থেকে বউ কাঁথা নিয়ে এসেছে, এবারে সেটার উদ্ভোধন করা হবে। ঈদে প্রথম বারের মতো ছেলেকে নিয়ে নামাজ পড়তে যাবো, ফ্লরিয়াডে যাওয়া হবে গতবারের মতোই। হয়তো ২/১ প্রি মানুষের ঘরে বেড়ানোও হবে । গতবারে ঠিক এ সময়টিতে ছিলাম ২ জন এবার ৩ জন। জীবনে একটু কি পরিবর্তন আসেনি ? এসেছে এসেছে।
গত সপ্তাহে ছেলের জন্য ঈদের কাপড় কিনেছি, এক জোড়া ছোট্ট জুতোও কেনা হয়েছে। পান্জাবি পড়ে বাপ ব্যাটা নামাজ পড়তে যাবো। ভাবতেই অন্যরকম ভালো লাগছে। এত্ত পিচ্চি একটা ছেলের সাথে কোলাকুলি করতে হলে আমাকে মাটির সমান্তারালে নামতে হবে।

আজকের মতো এত টুকুই। লেখা লেখির ব্লকটা ভাঙতে আজকের হাবিজাবি।



বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০০৯

বন্ধু দিবসে বন্ধু খোঁজার গল্প

1 টি মন্তব্য :
আজকালকার দুনিয়ায় দিবসের অভাব নাই। আজ অমুক দিবসতো কাল তমুক, পরশু আরেক। জীবনের হট্টগোলে অনেক দিবসই কখন যে পার হয়ে যায়, জীবনের স্লেটে তা আঁচরও ফেলতে পারে না। গত রোববার নাকি ছিলো " বিশ্ব বন্ধু দিবস " !! বয়স যখন টিনের বাক্সের মতো ঝনঝনে তখন এ রকম কোনো দিবসে হাঁক ডাক করে সারা দেয়া হতো। আর এখন জীবনের বালাম খাতায় হিসেব মেলানোর মতো চারপাশে বন্ধুদের নিয়েও হিসেবে মেলাই আর দশটা স্বার্থপর মানুষের মতোই। স্বার্থপরতা - হিংসা - দূরত্ব - যোগাযোগের অভাব - জীবন সংগ্রামের ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগীতায় একে একে ঝরে পরছে বন্ধুত্ব। বন্ধু শব্দটির জায়গায় স্থান করে নিচ্ছে 'কৌশলগত বন্ধুত্ব' শব্দটি। আজ যে বন্ধু কাল সে শত্রু, কাজ শেষতো বন্ধুত্বও শেষ। জীবনে এখন বন্ধুর বড্ড অভাব।

প্লে গ্রুপে পড়ার সময় টিফিন ভাগাভাগী করে খেতাম বন্ধুদের সাথে। একটু বড় হয়ে স্কুলে পড়বার সময় ২ টাকায় কেনা ঝাল মুড়ি ৩ জনে ভাগ করে খেয়েছি, কলেজ ১ টা সিগারেট ৫ জনে ভাগ করে টেনেছি। ফার্স্ট বুক - সেকেন্ড বুক শব্দগুলো এখনো কানে বাজে। আর এখন তা হিজ হিজ হুজ হুজ। কিন্তু তারপরো বন্ধু খুঁজি, প্রানের সখা খুঁজি।

বিশ্ব বন্ধু দিবসে বন্ধু খুঁজেছি, এক নিরন্তর খোঁজা।

শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০০৯

অতিথি দেবতা

কোন মন্তব্য নেই :
চাকুরিগত কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে সব সময়ই কথা বলতে হয়। শরীরের রঙ ও উচ্চারনের ভিন্নতার কারনে কোন দেশ হতে এসেছি সেটা অনেকেই জিজ্ঞেস করে থাকেন। বেশীর ভাগ মানুষের ধারনা আমি হয়তো ভারতে হতে আসা। যখন উত্তর হয় ‘বাংলাদেশ’ তখন বেশীর ভাগই চিনতে পারেন না। এতে প্রথম প্রথম অবাক হলেও সময়ে সেটা স্বাভাবিক ভাবেই নেই। পৃথিবীর গুরুত্বের তালিকায় বাংলাদেশ এতো নগন্য যে না চেনাটাই স্বাভাবিক। বছর বছর বন্যা – ঘুর্নিঝড় বা রাস্তায় রাজনৈতিক হাংগামা ছাড়া ভালো খবর খুব কমই আসে এসব দেশের মিডিয়াগুলোতে। মাঝে মাঝে ড. ইউনুস ও উনার গ্রামীন ব‌্যাংক নিয়ে যা একটু খবর আসে। যাই হোক,অনেকেই জানতে চান বাংলাদেশ সম্পর্কে। মনের মাধুরি মিশিয়ে বলি। বেড়ানোর জায়গা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। বলতে বলতে কক্সবাজারের কথা এসেই যায়।

প্রকৃতির সপ্ত-আশ্চর্যের শর্ট লিস্টে কক্সবাজারের নাম যখন নেই শুনতে পেলাম, তখন খারাপ লাগলেও অবাক হয়নি। হয়তো বড়াই করে আমরা বলি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, কিন্তু বড়াই করে বলতে পারি না সেখানকার সুযোগ সুবিধাগুলোর কথা। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বাদ দিয়েই একজন বিদেশী কক্সবাজারে বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা করলে কি করবেন সেটা চাকুরিগত অভিজ্ঞতা দিয়েই আন্দাজ করতে পারি।

আন্তর্জালে কক্সবাজারকে নিয়ে পুর্নাংগ কোনো অফিসিয়াল ওয়েব সাইট এখনো দেখতে পাইনি যা দ্বারা কোনো পর্যটক প্রাথমিক তথ্য থেকে শুর করে একটা হোম ওয়ার্ক করতে পারবেন। একজন পর্যটক বিদেশে বেড়াতে গেলে অবশ্যই হোমওয়ার্ক করে যান, আমার পর্যবেক্ষন ও অভিজ্ঞতা তাই বলে।

অনলাইনের কোনো ওয়েবসাইটেই হোটেল /মোটেলে রুম বুকিং দেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনলাইনে কক্সবাজারের কোনো হোটেল/মোটেলের সেরকম ওয়েবসাইট দেখতে পাইনি যা দ্বারা কোনো বিদেশী পর্যটক রুম বুকিং দিতে পারেন বা সেই হোটেল/মোটেল/রেস্ট হাউজ সম্পর্কে ধারনা নিতে পারেন। বেশীর ভাগ বিদেশী পর্যটকই বুকিং ছাড়া কোথাও যেতে চান না। ব্যাক প্যাকারদের ক্ষেত্রে অবশ্য সেটা তেমন খাটে না।

পর্যটন তথ্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বিদেশ হতে অনেকেই হয়তো বিমানে এসে ঢাকায় এসে নামলেন। সেখান থেকে কক্সবাজারে যেতে হলে কিভাবে যাবেন সেটা একজন নতুন মানুষের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব একটা ব্যপার। পর্যটন কর্পোরেশনের একটি বুথ থাকলেই অনেক সময়ই সেটা হয় বন্ধ পাওয়া যায় বা দরকারী তথ্য পাওয়া যায় না। যেকোনো ভাবেই হোক সেই পর্যটক কক্সবাজারে এসে পৌঁছুলেন। এর পর ? কোথায় থাকা যাবে, কোথায় ভালো খাবার পাওয়া যাবে , কিভাবে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যাবে ইত্যাদি নানাবিধ তথ্যে পাবার জন্য কক্সবাজারে কোনো ব্যবস্থাই নেই। “তথ্যকেন্দ্র” এটা যেকোনো পর্যটন কেন্দ্রের জন্য ফরজ জিনিস।

একজন বিদেশী পর্যটক শুধু বালি দেখতে আসবে না বা মুখের কথায় সমুড্র সৈকত দেখতে চলে আসবেন না। জেনে শুনে ও পৃথিবীর অন্যান্য ট‌্যুরিস্ট স্পটের সাথে তুলনা করেই আসবেন। যতই বড়াই করি পযটন কেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজার এখনো শিশু।

কক্সবাজারে হয়তো হোটেল /মোটেল নামে কিছু বিল্ডিং তৈরি হয়েছে কিন্তু চরম অপেশাদারীভাবে সেগুলো চলছে। স্থানীয় মানুষের বিরূপ আচরন ও সুযোগসন্ধানী মনোবৃত্তি, বাজে আইন শৃংখালা পরিস্থিতি, সৈকতে সুযোগ সুবিধার অভাব । পর্যটক আকর্ষন করতে হলে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতেই হবে। মাঝে মাঝে ভাবি দেশের পর্যটনের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গাগুলোকে নিয়ে ঠিক মত প্রচারণা, যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, থাকা খাওয়ার সুব্যাবস্থা, সার্বিক নিরাপত্তা, সুন্দর ভাবে উপস্থাপন, দায়িত্ত্বশীল নজরদারী, পর্যটকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা, আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, সর্বোপরি যা যা করা দরকার তা যদি আমরা দ্বায়িত্ত্ব নিয়ে এবং আন্তরিকতার সাথে করি, তবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটক তথা বিশ্ববাসীর নজর কাড়বেই। আর পাশাপাশি আমাদের দেশের সুনাম যেমন বাড়বে তেমনি জাতীয় আয়ে এক বড় ভুমিকা পালন করবে।

একজন বিদেশী পর্যটক যা আশা করেন তা পুরন না করতে পারলে হাজার ভোটাভুটি করেও লাভ হবে না। যেখানে স্থানীয় পর্যটকদেরই কক্সবাজারে এসে হাবুডুবু খেতে হয় সেখানে বাহিরের মানুষদের অবস্থা চিন্তা করলে নিজেরই খারাপ লাগে।

কিছু দিন আগে এখানকার টিভিতে “অতিথি দেবতা” শীরোনামে একটা বিজ্ঞাপন দেখাতো। প্রাইম টাইমে দেখানো সেই কমার্শিয়ালে ভারতের পর্যটনকে তুলে ধরা হতো। দেখা মনে হতো, বাংলাদেশেও অনেক কিছু আছে দেখাবার মতো কিন্তু আমরা অতিথিকে দেবতা না মনে করে মুরগি মনে করছি, যেনো পেলেই জবাই করা হবে।

এ অবস্থা শুধু যে কক্সবাজারে নয়,দেশের অন্য সব আকর্ষনীয় জায়গাতেই। আমরা শুধু যে আমাদের দেশকে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছি তাই নয়, বিশাল এক ব্যবসা হারাচ্ছি।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০০৯

স্থায়ী অভিবাসন নিয়ে যারা আসছেন তাদের জন্য কিছু টিপস

কোন মন্তব্য নেই :
জীবনে প্রথমবারের মতো প্রবাসে এসে অনেকেই নানা সমস্যায় পরেন, এ লেখাটি তাদের জন্য। অন্যান্য প্রবাসীরাও মন্তব্যের মাধ্যমে তাদের কথা যুক্ত করতে পারেন, তাদের স্বাগত জানাই।

এ পোস্ট নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষনের সাথে সাথে কিছু বাস্তবতা তুলে ধরবার চেস্টা করেছি। আশা করি যারা নতুন আসছেন তাদের কাজে লাগবে। পোস্টটি যারা স্থায়ী অভিবাসন নিয়ে আসছেন শুধুই তাদের জন্য, পড়াশোনা বা বেড়াতে যারা আসছেন তাদের জন্য নয়।

১.
যারা জীবনে প্রথমবারের মতো আসছেন তারা প্রথমেই যে সমস্যার সম্মুখিন হোন তা হচ্ছে ” কালচারাল শক “। এটা সবারই হয়ে থাকে তবে প্রথমবারের মতো যারা দেশের বাহিরে দীর্ঘসময়ের জন্য থাকতে এসেছেন তাদেরই বেশী হয়। দেশে যা দেখে এসেছেন তার অনেককিছুই এখানে অনুপস্থিত দেখতে পেয়ে তারা শক্ড হয়ে যান, যদিও এ শক সাময়িক এবং কমাস বাদেই কেটে যায়। আস্তে আস্তে তারা স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারেন। একেক দেশের একেক রকম সংস্কৃতি এবং আশার কথা এটায় অভ্যস্ত হতে মানুষ খুব সহজেই পারে।

২.
যারা স্থায়ী অভিবাসী হিসেবে আসেন তারা দেশে কম-বেশী একটি ভালো ও নিশ্চিৎ অবস্থা থেকে এখানে আসেন। এখানে এসে তাদের মুলত শুন্য থেকেই শুরু করতে হয়। এই স্ক্র্যাচ স্ট্রার্টিং অনেকের কাছেই অভিশাপের মতো মনে হয়। মনে রাখতে হয়, যারা মাইগ্রেন্ট তাদের সবারই এটা হয়েছে, নিজেকে একা ভাবার কোনো কারন নেই। অস্ট্রেলিয়ায় চাকুরিদাতাদের একটি প্রবনতা হলো অস্ট্রেলিয়াতে কাজের অভিজ্ঞতা ও অস্ট্রেলিয়ান ডিগ্রী চাওয়া, যা দেশ থেকে আসা কারোই থাকে না; এ কারনে নিজের ফিল্ডে চাকুরি খুঁজতে গিয়ে তারা প্রচন্ড সমস্যা ভোগ করেন। তবে চেস্টা চালাতে থাকলে এটা উৎরানো সম্ভব ও অনেকেই এটা করতে পেরেছেন।
দরকার হলো হাল না ছেড়ে চেস্টা চালিয়ে যাওয়া’; এটাই মুল সুত্র। যোগ্যতা থাকলে নিজের ডোমেইনে চাকুরি পাওয়া খুবই সম্ভব।

৩.
প্রথম অবস্থায় এসে নিজের ফিল্ডে চাকুরি না পেয়ে অনেককেই মনোকস্টে ভুগেন। হয়তো দেশে প্রকৌশলী ছিলেন বা সরকারী আমলা ছিলেন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু এখানে এসে প্রথম অবস্থায় চাকুরি না পেয়ে তাদের হয়তো রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরে কাজ করতে হয়, হয়তো ট্যাক্সি চালাতে হয়, হয়তোবা সুপার মার্কেটে কাজ করতে হয়। দেশে এ ধরনের কাজকে ছোট করে দেখতে দেখতে মন মানসীকতা এরকমই হয়ে যায় যে তারা এখানে এসে এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে হিনমন্যতায় ভুগেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে সব ধরনের কাজকেই সম্মান করা হয়, মানুষ হিসেবে সম্মান করা হয়, এখানে অন্য কিছু বিচার্য না। এজন্যও গার্বেজ কালেক্টরও এম.পি হতে পারেন, এজন্যই মন্ত্রি বা বিশাল আমলার সন্তান প্লাম্বারের কাজ করে নিজের কাজ লুকায় না, গর্ব করে বলে।
দেশ থেকে যারা আসছেন তারা তাদের মধ্যযুগীয় ইগোকে দেশের মাটিতে রেখে আসবেন।

আরেকটি জিনিস, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় চাকুরির বাজারের পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত বছরের তুলনায় চাকুরির বিজ্ঞাপন কমেছে প্রায় ৫৫%। ছাঁটাই তো আছেই। এজন্য চাকুরি পেতে সমস্যা হতে পারে।

৪.
বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশ থেকে যারা মাইগ্রেশন নিয়ে আসছেন তাদের বেশীরভাগেরই ইংরেজী বলতে ও বুঝতে খুব সমস্যা হয়। আই.ই.এল.টি.এস এ ভালো স্কোর পাওয়া আর তার বাস্তব প্রয়োগ ভিন্ন জিনিস। ইংরেজীর সমস্যার কারনে তাদের অনেকেই ভালো চাকুরি পান না। যারা এ সমস্যা কাটাতে পারেন তারা ছাড়া অন্যদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠবার চেস্টা থাকতে হবে।

৫.
আরেকটি সমস্যা যা দেশ হতে আসা স্থায়ী অভিবাসীরা মুখোমুখি হোন তা হচ্ছে ” সিস্টেম” । একেক দেশ একেকভাবে চলে, একেক ভাবে ভাবে। বাংলাদেশে যে সিস্টেমে তারা চলে এসেছেন সেটা এ দেশে আশা করা বোকামী। নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে, এখানকার সিস্টেমের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। মিথ্যে বলা, সময়ের মুল্য না দেয়া, ধান্দাবাজী, দূর্নীতি করার প্রবনতা, ইত্যাদি ইত্যাদি এখানে করলে চলেবে না। এখানের মতো চলবে হবে। তবে অবশ্যই নিজস্ব স্বকীয়তা বিসর্জন দিতে বলছি না।

৬.
যারা এখানে আসছেন বা নতুন এসেছেন তারা অনেক সময়ই রঙিন চশমা পরে রঙিন স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তাদের বাস্তববাদী হতে হবে। দেশে থেকে এখানকার অনেক রঙিন গল্প, অনেক মিথ্যে গল্প তারা শুনতে শুনতে তারা যে স্বপ্নের জগৎ গড়ে তুলেন তা এখানে মিথ্যে হয়ে যায় আসার পর পরই। তবে স্বপ্নকে স্বার্থক করা সম্ভব, অনেক অনেক মানুষ করেছেন, আপনিও পারবেন।

বাস্তববাদী হতে হবে, কঠিন পরিশ্রম করতে হবে সফল হতে। সফল হবার কোনো সহজ ও শর্টকাট রাস্তা নেই। হয়তো চতুরতা করে অল্প সময়ে ৫০০ ডলার উপার্জন করতে পারবেন কিন্তু কোন ফাঁকে ৫০০০ ডলার হাওয়া হয়ে যাবে টেরই পাবেন না।

৭.
ড্রাইভিং শিখে আসবেন অবশ্যই। এতে যেমন নিজের কাজে লাগবে তেমনি ট্যাক্সি চালাতে পারবেন। ট্যাক্সি চালানোর কথা বলাতে ভুঁরু কুচকালে চলবে না। এতে উপার্জন ভালো, স্বাধীনতা আছে। আমাদের দেশের অনেকেই এ কাজ করছে। তবে এটাকে স্থায়ী পেশা হিসেবে গ্রহন করে পস্তাতে হয়, যেটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। পরে মুল পেশায় ফিরে আসা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় উঠেনি।

৮.
রান্না শিখে আসবেন। অন্তত বেসিক টুকু। এখানে আপনি বুয়া পাবেন না যে আপনার জন্য তিন বেলা রান্না করে দেবে। নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে, নিজের রান্না নিজেকেই করতে হবে।

৯.
বেশ ক মাস চলার মতো টাকা নিয়ে আসবেন। এটা মনে যেমন সাহস দেবে তেমনি কোনো রকম কাজ না পেলে জীবন বাঁচাবে। এটা একটি গুরুত্বপূর্ন টিপস।

১০.
অন্য কারো উপর ভরসা করে বা আশা করে এখানে আসা চলবে না। এই ভুল অনেকেই করে থাকেন। হয়তো প্রথম অবস্থায় কারো সাথে থাকা যেতে পারে কিন্তু এটা যাতে স্থায়ী ব্যবস্থা না হয় সেটা মাথায় থাকা দরকার। যারা বিবাহীত তাদের কারে সাথে শেয়ার না করে থাকা উচিৎ। শেয়ার করে থাকলে টাকা বাঁচলেও অন্যকারো সাথে বউ/স্বামী ভেগে যাওয়া সহ আরো নানাবিধ অবান্জিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রবাসে আসার আগে কিছু "হোম ওয়ার্ক" করে আসা অবশ্যই দরকার। প্রবাসে থাকা অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজনের সাথে আলোচনা করা ও পরামর্শ এতে বেশ কাজে আসে।

১১.
মানুষ তার স্বপ্নের সীমা ছুতে পারে, আপনিও পারবেন। শুধু দরকার ” লাইনে থাকা, লাইনচ্যুত হওয়া যাবে না।” ধীরে ধীরে সব কিছুই আপনি নিজেই শিখে নেবেন, বুঝে নিবেন। আশাহত হওয়া যাবে না। সফল আপনি হবেনই।
------------------
শুভকামনা সকলের জন্য।

আপাতত এই টিপস গুলোই দিচ্ছি।
অন্যরাও যোগ করে পারেন নিজেদের টিপস গুলো।

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০০৯

দূখিত হাসান, চাকুরিটা এন্ড্রুই পাচ্ছে

কোন মন্তব্য নেই :
বৈষম্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এ যাবৎকালের অন্যতম বড় পর্যবেক্ষনে দেখা গিয়েছে হাসান, ঝিউ এবং লুইজের চেয়ে জেনিফার, এন্ড্রু এবং সারাহ নামের লোকেরা চাকুরিতে বেশী সুবিধা পাচ্ছে।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদরা তাদের ২ বছরের পর্যবেক্ষনের ফলাফল প্রকাশ করেছেন যেখানে তারা ৫০০০ এরও বেশী আ্যংলো, মধ্যপ্র্যচীয়, আদিবাসী, চায়নিজ এবং ইটালিয়ান বনাম ব্যবহার করা মিথ্যে জীবন তথ্য পাঠিয়েছিলেন। সিডনী, মেলবোর্ন এবং ব্রিসবেনের বিভিন্ন অনলাইন চাকুরির বিগ্যপ্তির প্রেক্ষিতে তারা এ সিভিগুলো পাঠিয়েছিলেন।

এই প্রতিবেদন দেখে গিয়েছে যে চায়নিজ ও মধ্যপ্রাচ্যীয় চাকুরি সন্ধান প্রার্থীরা সবচাইতে বেশী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অধ্যাপক এলিসন বুথ, অধ্যাপক এন্ড্রু লেই এবং গবেষক এলেনা ভারগানোভা লিখিত প্রতিবেদন "ক্ষুদ্রতর গোস্ঠীর মধ্যে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য আছে কি ? " অনুসারে একজন চায়নিজ চাকুরীপ্রার্থীকে শতকরা ৬৮ ভাগ বেশী আবেদন করতে হয় একজন আ্যংলো -স্যাক্সনের চেয়ে শুধুমাত্র সাক্ষাতকার পাবার জন্য।
মধ্যপ্রাচ্যীয়দের ক্ষেত্রে তা শতকরা ৬৪ ভাগ বেশী, আদিবাসীদের তা শতকরা ৩৫ এবং ইটালিয়ান চাকুরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শতকরা ১২ ভাগ বেশী আবেদন করতে হয়।

গতমাসে ছাপা ক্যানেবরা টাইমস এর খবরটি অপটু হাতে অনুবাদ করে দিলাম। বিস্তারিত পরে জানাবার চেস্টা করবো।


মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০০৯

হাবিজাবি ৫

1 টি মন্তব্য :
আজ ভরা পূর্নিমা। মধ্য আকাশে চকচকে সিরামিকের থালার মতো একটি বিশাল চাঁদ উঠেছে। সন্ধ্যে বেলা ওটা ছিল দিগন্ত রেখা বরাবর। তখন ওটা আকারে বেশ বড়ও ছিল।

গত কালও ঠিক এমন বড় আকারের চাঁদ ছিল। সপ্তাহের বাজার শেষে বাসায় ফীরে আসার সময় ভেবেছিলাম আজ বুঝি ভরা পূর্নিমা। পূর্নিমায় মানুষ বলে কবি হয়ে উঠে। আমার অবশ্য তা হচ্ছে না। কবিতা আমার উপরে পরেছে। বাহিরে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, চাঁদকে ধরে রাখি ক্যামেরায়। বেশ কয়েকটি স্ন্যাপও নিলাম। হাত অবশ্য কয়েকবার কেঁপেও গিয়েছিলো। অপুটু হাতে পয়েন্ট এন্ড শুটের সস্তা ক্যামেরায় তোলা ছবি আর কতটুকুই ভালো হতে পারে ! তারপরেও চাঁদ বলে কথা।  আমরা যারা এইমুহুর্তে এই চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি, তারা কি বিনি সুতার মালা গাঁথা ?


অনেক ঠান্ডা পরেছে। এ মুহুর্তে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাতে আরো কমবে। -৩ ডিগ্রীতে নামবে বলে আবহাওয়ার আধিকারীকরা বলছেন। ভাগ্যিস ঘরে হিটার চলছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত ধনী দেশে যখন লাখো মানুষ ঘর হারা, মাথার উপরে ছাদ নেই - এ শীতে তাদের অবস্থা কল্পনা করে যেমন খারাপ লাগছে তেমনি নিজেকে ভাগ্যবানও মনে হচ্ছে। অন্তত এ শীতে কস্ট করতে হচ্ছে না।

বাসায় কোনো ওভেন ছিলো না। কোনো কিছু বেক বা রোস্ট করে খেতে হলে সেই ইচ্ছেকে শিকেয় তুলে রাখতে হতো। সস্তা একটা পোর্টেবল ওভেন কিনে ফেল্লাম। প্রথম দিনেই বানানো হয়েছিলো প্লেইন কেক, গতকাল ও আজ পিৎজা। পিৎজা বানানো যে এতো সহজ জানা ছিলো না।  লুঙি পরে এক বাঙাল ইটালিয়ান পিৎজা বানাচ্ছে এ দৃশ্য যদি কেউ দেখে তবে নিশ্চয়ই তার পক্ষে হাসী চেপে রাখা কস্ট হবে।

দিনকাল আগের মতোই চলছে। ৫ দিন - ৫ রাতের কামলাময় জীবন। পরিশ্রম করি কিন্তু কস্ট মনে হয় না। একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই তো এত সব কিছু। ব্যস্ততার জন্য অনেকের সাথেই দেখা করা হয় না, ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেকের বাসায় যাওয়া হয় না, যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। অনেকেই মনে হয় এজন্য আমার উপর খাপ্পা। কিছুই করার নেই, দূঃখিত বলা ছাড়া।

চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে, গানটি শুনতে ইচ্ছে করছে ?


চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে.....

সোমবার, ২৯ জুন, ২০০৯

রবি ঠাকুরের কোলে

কোন মন্তব্য নেই :
অনেক বছর আগের কথা।
দু যুগ হলেও হতে পারে।
রবি ঠাকুরের কোলে উঠেছিলাম সেবার।
লম্বা দাঁড়ি ওলা লম্বাটে আকৃতির রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অনেক কিছু ভুলে গেলেও সেই লম্বা দাঁড়ির কথা ভুলতে পারিনা এখনো।
আজ কবি নির্মেলেন্দু গুনের ছবি দেখে পুরোনো স্মৃতি মনে পরে গেলো হঠাৎই।
মানুষটি ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুন। প্রতিবেশী নির্মলেন্দু গুন তখন উনার প্রাক্তন ডাক্তার স্ত্রীর সাথে ময়মনসিঙে থাকতেন।
অনেককাল একটা ভুলের মাঝে ছিলাম। ভাবতাম রবি ঠাকুর !
এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় রবি ঠাকুরের কোলে উঠেছিলাম।
বিলম্বিত জন্মদিন আপনাকে , প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুন।
আপনি ভালো আছেন তো ?

শনিবার, ২৭ জুন, ২০০৯

সমালোচকের খড়গ তলায় প্রিয় অস্ট্রেলিয়া.কম এর ৫ম জন্মদিন

1 টি মন্তব্য :
"২০ জুন, শনিবার " , ‌ক্যালেন্ডারে অনেকদিন ধরেই লাল রঙে এমন ভাবে চিহ্ন দেয়া ছিলো যাতে প্রথমেই নজর কারে। দিনটি ছিলো প্রিয় অস্ট্রেলিয়া.কম এর ৫ম জন্মবার্ষিকী। মজার ব্যাপার হলো প্রিয় অস্ট্রেলিয়া. কমের ৫ম জন্মদিনের সাথে সাথে অস্ট্রেলিয়ায় আমারও ৫ বছর পূর্তি হয়েছে। ব্যাপারটা একরকম কাকতালীয়ই বলা যায়। দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে প্রিয় বলার মতো অবস্থায় এখনো আসতে না পারলেও সাইট হিসেবে প্রিয় অস্ট্রেলিয়া.কমকে প্রিয় বলতেই পারি, সম্তাহের অন্ত‌ত একদিন হলেও সেখানে ঢুঁ মারা চাই।

মজা করে প্রায়শই 'নটার গাড়ি কটায় ছাড়বে' বলা হলেও অনুস্ঠান শুরু হয়েছিলো কাঁটায় কাঁটায় ১০ টার সময়েই যদিও সে সময় অতিথীর চাইতে আয়োজকদের সংখ্যাই বেশী ছিলো। সময়ের সাথে সাথে অতিথীদের আনাগোনা বাড়তে বাড়তে একসময়ে সেটা মেলায় রুপ নেয়। আমি নিজেও অবশ্য পৌঁছেছিলাম ১০টা বাজার ঠিক ২ মিনিট আগে। CSIRO Discovery অপটাস লেকচার থিয়েটারে সেবারই ছিলো আমার প্রথম পদধূলি। মুল অস্ঠানের বাহিরে বেশ কিছু স্টল ছিলো । অনুস্ঠানের মূল পৃস্ঠপষকদের মাঝে যাদের নাম সবার প্রথমে আনতে হয় সেই MCCA এর স্টলটি ঢুকতেই হাতের বামে, একপাশে আইলা সাইক্লোনের জন্য ডোনেশন কালেকশনের জন্য একটি টেবিল, অন্যপাশে একটি আর্কিটেকচারাল ফার্মের ও ক্রিকেট নিয়ে একটি ওয়েবসাইটের দুটো টেবিল।

খাবারের জন্য একটি স্টল ছিলো যথারীতি। "গোট তেহারী" , "চিকেন বিরিয়ানী " দুটি হাস্যকর হাইব্রিড নামের ৫ ডলার/প্যাকেট দামের আইটেমের নাম করতেই হয়। কেনো বাপু "খাসীর তেহারী, মোরোগ পোলাও " এ নামে ডাকলে কি জাত চলে যেতো ? দাম কমাতে গিয়ে খাবারের মান এতো খারাপ করতে হয় সেটা জানা ছিলো না। অন্যসবব আইটেম চলনসই তবে স্প্রিং রোলের মাঝে কি ছিলো সেটা খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। দূপুরের খাবারের বিরতিতে ক্যাফের সামনের অংশটুকু পেট পূজোরত অতিথীদের কলকাকলি দেখে ভালোই লাগছিলো। বাঙালী দেশে হয়তো কিউয়ে দাঁড়াতে অভ্যস্থ নয় কিন্তু এখানে ঠিকই লাইন ধরে খাবার কিনেছিলো, খেতে খেতে এখানে সেখানেও খাবার ছড়ায়নি।

খাবারের স্টলের সামনেই ছিলো মুক্তিযু্দ্ধ নিয়ে বইয়ের স্টল। তবে খুব কম মানুষকেই বই নাড়া চাড়া করতে দেখেছি এবং তাদের সবাই ছিলেন মধ্য বয়স্ক। ক্যানবেরার নতুন প্রজন্মের যারা আছে তাদের যেখানে বাঙলা বলতেই সমস্যা হয় সেখানে বাঙলা বই পড়ার কথা চিন্তাই করা যায় না। জিনিসটা হতাশাকর ছিলো আমার কাছে। মুক্তিযুদ্ধকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার এ চেস্টাকে সাধুবাদ জানাতেই হবে আয়োজকদের।

জাকিয়া হোসাইনের দ্বিতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী ছিলো খাবারের স্টল ও বইয়ের স্টলের পাশেই। অপেশাদার আনাড়ি একজন শিল্পীর সাথে পরিচিত হতে পেরে ভালো লেগেছে, তবে উনি যখন ছবিগুলো বোঝাতে চেয়েছেন তখন কিছুই বুঝতে পারিনি যদিও এব্সট্রাক্ট আর্ট বলতে যে উত্তর আধুনিক চিত্রকলা বাজারে প্রচলিত সেগুলোর কোনোটাই সেখানে ছিলো না।

এবারে আসা যাক মুল অনুস্ঠানে।

সকালে বেলায় পাখিদের জন্য লাল টি-শার্টটা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি, যদিও লাল রঙ দেখে রাস্তার লাল বাতির কথা মনে পরে যাচ্ছিলো ও নিজের অজান্তেই গাড়ির ব্রেকের মতো নিজেকে থামাবার মতো পা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। বাচ্চাদের হাতে বেলুন দেবার সাথে সাথে বড় পর্দায় "মনপুরা " ও দিলারা জামান ও শর্মিলী আহমেদের আলাপচারিতা " ও বন্ধু আমার " খুব সম্ভবত অনেকেই মিস করেছেন দেরীতে আসবার কারনে। ক্যানবেরার বাঙলা স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের গান - কবিতার সাথে সাথে নাচ - দলীয় উপস্থাপনা দারুন উপভোগ করেছি। দেশ - দেশের সংস্কৃতি হতে হাজার মাইল দূরে থেকেও ছোট ছোট বাচ্চারা কি অসাধারন কাজ করে চলছে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না। ক্যানবেরা বাঙলা স্কুল ও এর শিক্ষার্থীদের আমি ১০০ মধ্যে ১১০ দিতে চাই। ফ্যাশন শোটিকে দেখে মজা লেগেছে, পশ্চিমা আচারে প্রাচ্যের মসলা। তবে এ প্রসংগে একটি কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, " বাঙলা উচ্চারন " । বাচ্চাদের মুখে ইংরেজী প্রভাবান্বিত বাঙলা কানে বড্ড বাজে লাগে। আশা করি বাবা-মারা এটা নিয়ে সচেতন হবেন। শুদ্ধ উচ্চারনে বাঙলা - শুদ্ধ উচ্চারনে ইংরেজীর বিকল্প নেই।

অনুস্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে যাত্রার ঢঙে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস ও মুক্তিযু্দ্ধকে বর্তমান প্রজন্মের সাথে সাথে ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেবার অসাধারন প্রচেস্টাকে আমি প্রচন্ডভাবে উপভোগ করেছি, এটিকেও আমি ১০০ এর মাঝে ১১৫ দিতে চাই। অনুস্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই যাত্রা পালার মাধ্যমে পলাশী থেকে ৭১ পর্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধার সম্ভব হয়েছে যদিও মাঝে মাঝেই শব্দ প্রক্ষেপনের জন্য শুনতে সমস্যা হয়েছে। এটি এ অনুস্ঠানের একটি ব্যতিক্রমি কিন্তু অনুসরনীয় দিক।‌

অনুস্ঠানের এক পর্যায়ে ছিলো সম্মাননা প্রদান। ২০০৯ এর প্রিয় বাঙালীর সম্মাননা পেয়েছেন এডেলেইডের ড. রফিকুল ইসলাম , প্রিয় লেখক ২০০৯ পেয়েছেন সিডনীর জন মার্টিন, প্রিয় লেখক ২০০৬ পেয়েছেন ক্যনবেরার আফজাল হোসেন, প্রবাসী বাঙালী ও বাংলাদেশকে সবার মাঝে তুলে ধরবার জন্য আজীবন সম্মাননা ২০০৯ পেয়েছেন শ্রদ্ধেয় জনাব হাসমত আলী, প্রিয় ব্যক্তিত্ব ২০০৯ জনাব সিরাজুল সালেকীন, প্রিয় বন্ধু ২০০৯ পেয়েছেন সর্বপ্রিয় মিন্টু ভাই। প্রিয় লেখক ২০০৭ ও ২০০৮ কে পেলেন সেটা অবশ্য জানা হলো না।

যারা গান গেয়েছেন তাদের মাঝে মিন্টু ভাইয়ের গান ভালো লেগেছে সেরম। ইচ্ছে হচ্ছিলো উনাকে আমি অতীতকালের রাজা জমিদারদের মতো একটা মেডেল দেই। অভিজিতের গান ভালো লাগেনি, এটাকে নিয়ে বলার মতো কিছু পাচ্ছি না যদিও উনি অনেকগুলো জনপ্রিয় গান গেয়ে দর্শক মাতিয়েছেন।

এসব কিছুর মাঝেই এক পর্যায়ে ছিলো জ্ন্মদিনের কেক কাটা। বুড়োদের বাদ দিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের দ্বারা কেক কাটানোটা ভালো লেগেছে। কেক ছিলো টকটককে লাল রঙের। যদিও এটা দেখে লাল ক্যাপসিকামের কথা মনে পড়ছিলো, তবে কেকের ডিজাইনটা ভালো লেগেছে।

অনুস্ঠানের মাঝে মাঝে বেশ কিছু পারফরমেন্স আমি মিস করেছি বাহিরে আড্ডা দেয়ায়। যেমন বাঙালী বিজনেস ডিরেক্টরী, প্রিয় অস্ট্রেলিয়ার ফটো লাইব্রেরী। এগুলোর সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না বলে দুঃখিত। অনুস্ঠানের শেষের দিকটায় ব্যক্তিগত ব্যস্ততার তাড়নায় চলে আসায় শেষের আকর্ষন গুলো মিস করেছি।

পুরো অনুস্ঠানটি অনলাইনে স্টিমিং করা হয়েছিলো প্রিয় অস্ট্রেলিয়া.কম সাইটে যাতে যারা আসতে পারেনি তারাও আন্তর্জালিক অংশগ্রহন করতে পারেন। গ্যালারীর মাঝে কোনোরকম ধন্যবাদের আশা না করে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া মানুষটিকে ধন্যবাদ না জানালে সব কিছুই বৃথা হবে।

অনুস্ঠানে পরিচিত অনেককেই দেখতে পাইনি। হয়তো ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেননি অনেকেই, হয়তো প্রিয় অস্ট্রলিয়ার জন্মদিনে কেনো যাবো এরকম হিংসার জ্বালায় ভুগে আসেনননি , হয়তো অনুস্ঠানে মুক্তিযুদ্ধকে প্রমোট করা হবে এটা ভেবে ভয়ে আসেননি। নিজেকে বড় করলে- উদার করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না, সেটা অনেকেই জানেন না।

জন্মদিনের পুরো অনুস্ঠানটি পেছনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতেই হবে। সুনির্দিস্ট ভাবে কারো নাম উল্লেখ না করে আমি সবাইকেই ধন্যবাদ জানাই আমাদের সুন্দর একটি দিন উপহার দেবার জন্য ও অনুস্ঠানকে স্বার্থক করবার জন্য। অনুস্ঠানের উপস্থাপক যদি উনার স্বভাব সুলভ চটুলতাকে একটু পাশে সরিয়ে একটু গম্ভীর হতে পারতেন তবে মন্দ হতো না।

সবশেষে থ্রি চিয়ার্স ..............সব কামলাকে ।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০০৯

একদা ক্ষমতাশালী একজন ক্ষমতাহীন মানুষের পদাবলী

কোন মন্তব্য নেই :
১৫ নাম্বার মিন্টু রোডের লাল দালানে যদি কখনো দেখা যায় পুলিশের টিকটিকি অফিসাররা হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে কাজ করছেন তখন বোঝা যাবে উনারা ফায়ারিং করে এসেছেন। বছরের কোনো এক সময় বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক কোনে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রান্চের অফিসারদের বার্ষিক ফারারিং প্রাকটিস হয়ে থাকে। প্রাকটিসে কতগুলো গুলি ফোটানো হয় বা কি অস্ত্র ব্যবহার করা হয় সেটা লেখায় অবশ্য আসছে না।

আজকের গল্পের একটি চরিত্র আমারই বাবা। কোনো এক সময় পুলিশে ছোটখাটো একজন অফিসার ছিলেন। এখন অফুরন্ত অবসরে রাজা উজির মারেন, বিশাল বিশাল ফাইল তৈড়ি করে সারা জীবনের সন্চয়ের হিসেব নিকেশ করেন। অবশ্য ফাইল তৈড়ি করা ছাড়া কাজের কাজ তেমন কিছুই হয় না।

বেশ ক বছর আগের কথা । যথারীতি ব্যান্ডেজ বেঁধে উনি অফিস করছেন, দূপুরে ফায়ারিং প্রাকটিসও করছেন। গুলি টার্গেটে পৌঁছুচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে অবশ্য তেমন মাথা ব্যাথা দেখা যায়নি উনার মাঝে। গুলি ছোঁড়া হচ্ছে এটাইতো অনেক কিছু ! প্রাকটিস শেষে গতদিনের দেয়া ফখরুদ্দিনের কাচ্চি না আজকের হাজির বিরিয়ানী খেতে ভালো সেটা নিয়েই মনে হয় বেশী মাথা ব্যাথা ছিলো উনার। এটা নিয়েও গল্প বলছি না আজ।

যাই হোক; আবেগীয় মানুষদের মাঝে যেটা হয় । বাসায় এসে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিবেশ কত সুন্দর, কত নিরাপদ সেটা নিয়ে মোটামুটি একটা বড় বক্তমা ঝেড়ে ফেল্লেন। ঢাকার মানুষ কেনো বোটানিক্যাল গার্ডেনে সকাল বিকাল বেড়াতে যায় না সেটা নিয়ে কস্ট প্রকাশ করার সাথে সাথে সাংবাদিকরা সেখানকার ছিনতাই নিয়ে গল্প ফাঁদে , কেনোই বা হকারদের হয়রানী নিয়ে নিউজ করে মানুষের মাঝে আতংক স্মৃস্টি করে সেটা নিয়ে সাংবাদিকদের একরকম ঝেড়েই ফেলেছিলেন। পুলিশদের সাংবাদিক বিদ্বেষ অবশ্য সেটায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিলো। বোটানিক্যাল গার্ডেনের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে ধারনা না থাকাতেই উনি এসব বলেছিলেন। একগাদা ডি.বি. অফিসার গাড়ি হাঁকিয়ে সকাল বিকেল সেখানে যাচ্ছেন , গুলি ফোটাচ্ছেন ! আর কোন ছিনতাইকারীর বাপের সাধ্য আছে সেখানে যাবার ? আর সেটা দেখেই উনার ধারনা হয়েছিলো ওখানকার পরিবেশ কতো সুন্দর !!

এত সব কিছুর বলার উদ্দেশ্য, পুলিশের অফিসাররা নিরাপদ পরিবেশ বসে ও ক্ষমতার বলয়ে বাস করে আশে পাশের কতকিছুই যে দেখতে পান না-- কতকিছুই যে বোঝার ক্ষমতা হারান সেটাই বোঝানো। এটা যে শুধু আমার বাবার ক্ষেত্রেই হয়েছে সেটা নয়, এটা আমি অনেক পুলিশ অফিসারদের মাঝেই দেখেছি। উপরের ছোট্ট একটি উদাহরন দিয়ে জিনিসটা বোঝাতে চেয়েছি। চাইলে আরো অনেক উদাহরন দেয়া যাবে। অবশ্য এ বোঝার ক্ষমতাহীনতা বা বোধহীনতা অনেক অনেক সময়ই ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে সেটাও অস্বীকার করছি না।

এসব পুলিশ অফিসার বা ক্ষমতায় থাকা মানুষগুলোর সমস্যা শুরু হয় যখন তারা ক্ষমতা হাড়িয়ে সাধারন মানুষের কাতারে এসে দাঁড়ান। সেসময় পরনে তারকা লাগানো ইউনিফর্ম থাকে না, নীল রঙের পুলিশের গাড়ি থাকে না, বডি গার্ড থাকে না, স্যালুট করবার কেউ থাকে না। সম্মান করে স্যার বল্লেও যখন আদেশ শোনবার কেউ থাকে না তখন জীবনটাকে খুব কাছ থেকে দেখে উনাদের অনেকেই অসহায় হয়ে পড়েন। অবশ্য যে সমস্ত পুলিশ অফিসার অজস্র টাকার মালিক ও রাজনীতির ছায়ার নৃত্যরত তাদের ক্ষমতার হেরফের হয় না, নাটক তখন টিলিফিল্মে রূপ নেয়।

এবারের সিকোয়েন্সে ব্যক্তিগত কিছু ঘটনা। গত দু মাস ধরে আমাদের পরিবার একটি দূঃসময় পার করছে যার আপাত সমাধান গতকাল আমরা করতে পেরেছি । যে সমাধান আমরা করতে চেয়েছি আইনের মাধ্যমে, যে সমাধান আমরা করতে চেয়েছি প্রশাসনের মাধ্যমে, যে সমাধান আমরা করতে চেয়েছি শান্তিপূর্ন ভাবে সেই সমাধান আমাদের করতে হয়েছে আইন না ভেঙে - আইনের ফাঁক গলে শক্তি দিয়ে। আদালত যখন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়, পুলিশ যখন টাকার কাছে বিবেক বিক্রি করে, রাজনীতির নামে তথাকথিত দেশ সেবকরা যখন টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না, স্বজনও যখন পিঠে দেখায় তখন কিইবা করা থাকে আয়ের একমাত্র সংস্থানকে নিজের দখলে ফীরে পেতে ? হয়তো লিখে লিখে অনেক কিছুই বলা যায় - গলাবাজী করা যায় কিন্তু বাস্তবতা সবসময়ই অন্য কিছু বলে।

এর সব কিছুই হয়েছে আমার বাবার চোখের সামনে। দিন দূপুরে আয়ের একমাত্র সংস্থানের বেআইনী ভাবে দখল হয়ে যাওয়া , সাহায্যের জন্য এক সময়ের সহকর্মী পুলিশদের কাছে ধর্না দেয়া , আদালত ঘুরে ঘুরে টাকার মোচ্ছবে সামিল হওয়া , দেশ সেবকদের দরজায় দরজায় ঘুরে ক্লান্ত হওয়া, অনেক কিছুই হয়েছে- কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

অথচ উনার ধারনা ছিলো এর সবগুলোই অসম্ভব ! সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে যে সম্ভব সেটা উনাকে দেখতে হয়েছে। আমার বলেছি শক্তির বদলা শক্তি দিয়েই দিতে হয়। উনি শুনতে চান নাই। এখনো বিশ্বাস করেন এভাবে কোনো কিছু দখল হতে পারে না , পুলিশে এখনো ভালো মানুষ আছে, পুলিশ পুলিশের মাংস খায় না, আদালতে এখনো সুবিচার পাওয়া যায় , ইত্যাদি ইত্যাদি। হয়তো আজ উনি উনার এতকালের বিশ্বাস- এতকালের ধারনা ভেঙে যাওয়াতে কস্ট পাচ্ছেন, অবাক হচ্ছেন। আমরা উনাকে বলছি ব্যাকডেটেড - ভুল চিন্তার মানুষ - ভুল সময়ের মানুষ - হয়তো অবাকও হচ্ছি কি ভাবে এতটা বছর পুলিশে কাজ করলেন।

হয়তো আজ হতে ৩০ বছর পরে আমার সন্তানও আমার অনেক কিছুতে অবাক হবে, যেমনটি হচ্ছি আমি আমার পিতাতে। হয়তো আমার মতো আমার সন্তানও আমাকে বলবে ভুল চিন্তার মানুষ - ভুল সময়ের ভুল মানুষ, যেমনটি বলছি আমি আমার পিতাকে। হয়তো আমার সন্তানো আমার মতো আমার পিতার কস্টকে যেভাবে বুঝতে পারছি , সেভাবেই বুঝতে পারবে।

দোষ দেবার এ চক্রটা চলতেই থাকবে। মাঝ খান থাকে মানুষ পরিবর্তিত হতে বাধ্য হবে যেভাবে আমার পিতা হচ্ছেন, আমি হচ্ছি। মাঝ খান থেকে হারিয়ে যাবে বিশ্বাস নামের অমুল্য বস্তু।

অনেক কাল আগে থানার সদর দরজার বাহিরে কিছু মানুষকে অসহায়ের মতো বসে থাকতে দেখতাম। সময়ে মানুষের মুখগুলো বদলে গেলেও ঘটনার রকমফের হতো না। বিচারের আশায় - একটু নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় একদল অসহায় মানুষের পুলিশের কাছে ছূটে আসা। নিরাপদ দূরত্বে সেসব মানুষগুলোর আকুতি হয়তো পিতার হৃদয়ে স্পর্শ করতো না কিন্তু সময়ের নিষ্ঠুর পরিহাসে একদা ক্ষমতাশালী সেই মানুষদটিই যখন সেই অসহায় মানুষগুলোর কাতরে নেমে এসেছিলেন তখন কি একবারের জন্যও সেই মানুষগুলোর চেহারে ভেসে উঠেছিলো উনার চোখে মাঝে ? কে জানে ! হয়তো - হয়তোবা না।

বুধবার, ২০ মে, ২০০৯

তামিলরাও একটি স্বাধীন দেশ চেয়েছিলো

২টি মন্তব্য :
এলটিটিইর পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে একটি স্বপ্নের মৃত্য ঘটলো, স্বাধীনতার স্বপ্ন। স্বাধীন তামিল ইলম, এলটিটিই, প্রভাকরন - আজ সবটাই ইতিহাস । সব স্বাধীনতার প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখে না হয়তো, যেমনটি সফল হয়নি আশির দশকের শিখদের স্বাধীন খালিস্তান-রাস্ট্রের স্বপ্ন ।

"প্রভাকরন " একদলের কাছে সুর্যদেবতা - অন্য দলের কাছে হিংস্র দানব। একজন স্বাধীনতাকামী নেতা - একজন খুনী- একজন পিতা - একটি ইতিহাস।

তামিলরাও একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলো। সে স্বপ্ন নিয়ে হয়তো কোনো তামিল তরুন বুকে বোমা বেঁধে আত্মঘাতী হবে, কিছু নিস্পাপ মানুষ মেরে স্বাধীনতার স্বপ্ন আরেক তরুনের কাছে হস্তান্তর করে যাবে।  তবুও বেঁচে থাকবে স্বপ্ন ,একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন - সিংহলী বিষম্য থেকে মুক্ত একটি দেশ।

ইতিহাসে হয়তো অনেক কিছু লেখা হবে; কিছু সত্য- - কিছু মিথ্যা। হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন সেটা কিন্তু মিথ্যে ছিলো না।
স্বপ্মের মৃত্য নেই।

বড্ড মাথা ব্যাথা

কোন মন্তব্য নেই :

বড্ড মাথা ব্যাথা। মাইগ্রেনের সমস্যাটা কি ফীরে আসছে? ওষুধ খেয়ে, ঘর আঁধার করে সারাটি দিন অচেতনের মতো শুয়েছিলাম। কখন যে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছি টেরই পাইনি। ঘুম যখন ভাঙলো তখন ঘড়িতে সন্ধ্যে ৭ টা বাজবে বাজবে করছে।


কিচ্ছুই করা হলোটা সারা টি দিন, অথচ কতো কিছুই করার কথা ছিলো।

কবি মুজিব মেহেদী ভাইয়ের ফেসবুকে ঢুকেই উনার স্ট্যাটাস দেখে অবাক ! কি সুন্দর দুটো কবিতার লাইন তুলে রেখেছেন।

দেয়াল তুললেই ঘর ভেঙে ফেললেই পৃথিবী-- সুজিত সরকার
এইসব সারেগামা পেরিয়ে তোমার কাছে দু-ঘণ্টা বসতে ইচ্ছে করে : ভাস্কর চক্রবর্তী

নেটে কবিতাগুলো খুঁজে পাবার চেস্টা  করলাম। গুগুলে এতো কিছু পাওয়া যায় কিন্তু যা চাই তা পাই না কেনো ! কবিতা পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।

উহ্‌ বিরক্তিকর।
মধ্যরাত।
চারদিকে অসহনীয়  নিস্তবদতা।
ঘড়ির টিক টিক শব্দ জানিয়ে দিচ্ছে জীবন থেকে একটি সেকেন্ড হারিয়ে গেলো।

রবিবার, ১৭ মে, ২০০৯

সপ্তাহ শেষের কড়চা

কোন মন্তব্য নেই :
সপ্তাহটি বেশ ঢিমে তালে কাটলো। কোনো কিছুতেই তেমন ব্যস্ততা ছিলো না। তবে অফুরন্ত অবসর বলতে যা বোঝায় সেটাও অবশ্য বলা যাবে না। ঝড় শুরু হবার আগে যেমনটি সবকিছু কেমন যেনো থম মেরে থাকে তেমনি, সামনের সপ্তাহগুলো দারুন ব্যস্ততায় যাবে।

আগামী শুক্রবার সিডনী যেতে হবে, বউ - ছেলে দেশ হতে আসছে। সন্ধ্যায় যাবো রাতের শেষ বিমানে ফেরত আসবো। গত ৫ সম্তাহের নিঃসংতা কাটবে। ছেলেটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে কত দিন দেখিনা। এখানে থাকতে হামাগুড়ি দিতো না এখন হামাগুড়ি দিচ্ছে। দাঁড়াতে পারতো না, এখন ধরে ধরে দাঁড়াতে পারছে। দাঁত উঠি উঠি করতে করতে এখন আমার দিব্যসোনার ৩ টা দাঁত।

সপ্তাহে খবরের কাগজ ছাড়া কিছুই পড়া হলো না। কোনো মুভিও দেখা হলো না। ইউরোভিশন ২০০৯ দেখা হলো। সেটাও মনোযোগ দিয়ে দেখা হলো না। নর‌ওয়ের Alexander Rybak এবারের বিজয়ী যদিও আমার ফেভারিট ছিলো আজারবাইজান।

ফেসবুকে বেশ গুঁতোগুঁতি করেছি। মানুষ তার প্রাইভেসী সম্পর্কে কতো উদাসীন সেটা ফেসবুক না দেখলে বোঝা হতো না। অনেক পুরোনো প্রিয় বন্ধুকে ফেসবুকে পাচ্ছি। এ কারনেই মনে হয় ফেসবুকে ঝুলে আছি। মন্দ লাগে না এই অপরবাস্তব পৃথিবী।

সিগারেট ছেড়ে দেবার স্বীদ্ধান্ত নিয়েছি তবে ছাড়তে পারছি না। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির অভাব।


শুক্রবার, ১৫ মে, ২০০৯

অনেক খারাপ খবরের মাঝে "একটি খবর" যা আশাবাদী করেছে

কোন মন্তব্য নেই :
বাংলাদশের হাইকোর্টকে মাঝে মাঝে একদল বৃদ্ধ মেরুদন্ডহীন চাটুকারদের আড্ডাখানার কথা মনে হয়। আজকের খবরটি পড়ে মনে হচ্ছে হাইকোর্ট এখনো তার দ্বায়িত্ব পালন করতে ভুলে যায়নি। আজকের রায়টি সেটার কথাই মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছে।

সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের দেওয়া দিকনির্দেশনামূলক রায় পালন করা বাধ্যতামূলক তবে এ দিকনির্দেশনাকে আইনে পরিনত না করতে পারলে এ দিকনির্দেশনা কাগুজেই রয়ে যাবে। সংসদে এটাকে শুধু আইনে পরিনত করলেই হবে না এটার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক, নিপীড়নবাদী মানসিককতার পরিবর্তন কে করবে ? মুল সমস্যাটা কিন্তু এখানেই। দরকার মননে পরিবর্তন - দরকার আচরনে পরিবর্তন - দরকার মানুষের মতো আচরন। মনটাকে ফর্সা করতে হবে।

এ মুহুর্তে মাজদার হোসেন রায়ের কথা মনে পরে যাচ্ছে " নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরন"। কিন্তু এ রায় মানতেও সরকার ও নির্বাহী বিভাগের কত খোঁড়া অজুহাত, পদে পদে রায় অমান্য করে হাইকোর্টের রায়ের প্রতি মধ্যমাংগুলি প্রদর্শন। ঘড় পোড়া গরু সিঁদুর দেখেও ডরায়, আমি ডরাই। সরকার কি নারীর পক্ষে হাইকোর্টের দেয়া এ রায়কে আইনে পরিনত করে সেটার যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবে ! ?

অনেকেই দেখছি এ রায়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে রংগ রসিকতা করছেন কিন্তু তাদের প্রতি অনুরোধ দয়া করে রায়টি ভালো ভাবে পড়ে দেখুন।

রায় টি নিয়ে প্রথম আলোর রিপোর্টটি নিচে যোগ করে দিলাম।

"যৌন হয়রানি বন্ধে নীতিমালা ঘোষণা হাইকোর্টের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না"
নিজস্ব প্রতিবেদক ( দৈনিক প্রথম আলো ১৫/০৫/২০০৯ )
যৌন হয়রানি রোধে কয়েকটি দিকনির্দেশনা উল্লেখ করে একটি নীতিমালা করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের এক রায়ে যৌন হয়রানির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে এ বিষয়ে অভিযোগকেন্দ্র গঠন এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতিত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ না করার কথা বলা হয়।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনাগুলো পালনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের দেওয়া দিকনির্দেশনামূলক রায় পালন করা বাধ্যতামূলক।
২০০৮ সালের ৭ আগস্ট কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে রিট করা হয়। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। আদালত ওই দিন শুনানি শেষে কেন নতুন আইন বা বিধিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন।
রুলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে জবাব দিতে বলা হয়।
রায়ে বলা হয়, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে অভিযোগকেন্দ্র থাকবে। এই অভিযোগকেন্দ্র পরিচালনার জন্য ন্যুনতম পাঁচ সদস্যের কমিটি থাকবে। কমিটির প্রধান হবেন একজন নারী। এ ছাড়া কমিটিতে একাধিক নারী সদস্যও থাকবেন। কমিটি কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে পুলিশের কাছে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠাবেন। এরপর দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী বিচার বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। নির্যাতন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া এবং পুলিশের কাছে অভিযুক্তকে সোপর্দ করার আগে নির্যাতিত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনো পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না।
যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় আদালত বলেন, শারীরিক ও মানসিক যেকোনো ধরনের নির্যাতন যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, পর্নোগ্রাফি যেকোনো ধরনের চিত্র, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। শুধু কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই হয়রানির ঘটনা ঘটে না। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অশালীন উক্তি, কটুক্তি করা, কারও দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো প্রভৃতি যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য হবে।
আদালত চার দিন শুনানি করেন। শুনানিতে যৌন হয়রানির ওপর ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রায় তুলে ধরা হয়। ভারতের রাজস্থান বনাম বিশাখা মামলায় আদালতের দেওয়া রায় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, যৌন হয়রানির ওপর ভারতে এখনো কোনো আইন করা হয়নি। তার পরও বিশাখা মামলায় আদালতের দেওয়া রায়ের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ভারতে যৌন নিপীড়ন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রায়ে আরও বলা হয়, কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, যেকোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করা, অশালীন চিত্র, দেয়াললিখন ও আপত্তিকর কোনো ধরনের কিছু করা যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া রায় ইতিবাচক। সংসদকেই আইন প্রণয়নের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যত দিন এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা না হয়, তত দিন দিকনির্দেশনাগুলো কার্যকর থাকবে। এর ফলে আইন প্রণয়নের সময় হাইকোর্টের রায়ে কোনো ধরনের দুর্বলতা থাকলে তা বেরিয়ে আসবে, যা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করবে।
রিট আবেদনকারী সালমা আলী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এর ফলে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত হবে। নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নে এই রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ফৌজিয়া করিম বলেন, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে পালন করতে হবে।
রায়ে যৌন নিপীড়ন ও শাস্তি সম্পর্কে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করা এবং কার্যকর শাস্তির বিধান করে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নে তাগিদ দেওয়া হয়।
মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে ফৌজিয়া করিম রিটের শুনানিতে অংশ নেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন ফাহিমা নাসরীন, রেবেকা সুলতানা, রেহানা সুলতানা প্রমুখ।
সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাজিক আল জলিল জানান, আইনগত কোনো সমস্যা তৈরি না হলে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে না।
এদিকে ব্যারিস্টার সারা হোসেন জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানির ঘটনায় দায়ের করা পৃথক রিট মামলার শুনানিও শুরু হয়েছে।

সোমবার, ১১ মে, ২০০৯

ক্যানবেরার খেরোখাতা ১১

কোন মন্তব্য নেই :
ব্লগের পাতা উল্টোতে উল্টোতে আবিস্কার করলাম গত বছরের নভেম্বরে শেষ খেরোখাতা লিখেছি। এর মাঝে বুড়িগংগা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে, গ্রীষ্ম শেষে শীত এসেছে, নিজেও জীবনের নড়বড়ে সাঁকোতে দুলতে দুলতে আরেক কদম এগিয়েছি । এক মুঠো ঝাল মুড়ির মতো মুচমুচে জীবন। তাকিয়ে দেখি- পৃথিবীতে সেই আগের মতোই সুর্য উঠছে, পুর্নিমার রাতে পদ্য রচনা হচ্ছে, ৬০০ কোটি মানুষের ৬০০ কোটি গল্পের সাথে প্রতি মুহুর্তে একেকটি নতুন গল্প লেখা হচ্ছে।

মা দিবস যে আসছে সেটা টিভিতে এড দেখলেই বোঝা যায়। একটা এড দেখে মজা লাগলো, কেউ কি কোনোদিন দেখেছে মা চেইন সো দিয়ে গাছ কাটছে ? এডে বলছে তারা এবারের মাদার্স ডে স্পেশাল হিসেবে চেইন সো সেল দিয়েছে যাতে মা আরাম করে গাছ কাঠতে পারে। সবকিছুতেই বানিজ্য, বানিজ্যেই সুখের বসতি। বছরের প্রতিটা দিনই আমার কাছে মা দিবস। তবে আজকের দিনে আমি আমার সন্তানের মা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছি, আমার মাকে মা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছি, আমার জীবনসংগীনির মাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। মার কাছ হতে হাজারো মাইল দূরে থেকে মার কথা মনে পরছে খুব। যদি পাখি হতাম তবে উড়াল দিয়ে মার কাছে চলে যেতাম।

বেশ শীত পরেছে। আজকের দিনটা কেমন যেনো বিষন্নভরা। আকাশে মেঘ - কনকনে ঠান্ডা, গুমোট এক মন খারাপ করা দিন। অলস একটি দিন কাটলো।ছুটির দিনে কম্বল মুড়ি দিয়ে দুটি মুভি দেখা হলো। পোলিশ ফিল্ম "Katyń" , বাংলা ভাষায় জার্মান মুভি "Shadows of Time" ।

"Katyń" দেখে খুব একটি ভালো লাগলো না, বিশেষ করে এটার নির্মানশৈলী। কেমন যেনো খাপছাড়া , গল্পের গভীরে না গিয়ে তাড়াহুড়ো করে সবকিছু শেষ করে দেবার চেস্টা। উইকিতে গিয়ে গুঁতো মেরে দেখা যেতে পারে এটার সম্পর্কে জানতে।   পোলান্ডের Katyn ম্যাসাকার নিয়ে মুভি।

"Shadows of Time" গতানুগুতিক ভালোবাসা - বিচ্ছেদের গল্প তবে একটু ভিন্নভাবে দেখবার চেস্টা। পরিচালকের পরিচালনা চোখে লাগার মতো। অভিনেতা -অভিনেত্রীদের অভিনয়ও ভালো লেগেছে। মুল চরিত্র ' রবির' ভুমিকায় প্রশান্তের সাবলিল অভিনয়ের সাথে সাথে 'মাশার' ভুমিকায় তন্নিস্ঠার অভিনয় ভালো লেগেছে তবে মাঝে মাঝে অতি নাটকীয়তা চোখে লেগেছে। কিছু কিছু মুভি মনের মাঝে আঁচর রেখে যায়। এটাও সেরকম একটি। আর ইরফান খানের অভিনয় সব সময়ই ভালো লাগে। উইকিতে এর বিস্তারিত পাওয়া যাবে।  
দারিদ্র- ভালোবাসা- প্রেম- বাস্তবতা- পিছুটান- ত্যাগ - স্বপ্ন - প্রতিশ্রুতী ; সব কিছু নিয়েই জীব। আর জীবন নিয়েই মানুষ তৈড়ি করে এসব সিনেমা। shadows of time দেখতে পারেন । ভালো লাগবে অবশ্যই।

মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০০৯

হাবিজাবি ৪

২টি মন্তব্য :
তুমুল ব্যস্ত একটি সপ্তাহ পার করে আরেকটি ব্যস্ত সপ্তাহ শুরু করছি। ঘটা করে বলার মতো আহামরি কিছু ঘটেনি। পুরনো সেই গানটিই এক ঘেয়ে সুরে বেজে চলছে।

প্রচন্ড ঠান্ডা পরেছে, যদিও শীতকুমারের হাঁক ডাক সেভাবে শুরুই হয়নি। রাতে গাড়ির উপরে জমে থাকা শিশির দেখে ঠান্ডার আমেজটুকু আন্দাজ করা যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না। ঘরে হিটার থাকাতে ঠান্ডা বোঝা না গেলেও বাহিরে গেলে বোঝা যায় ঠান্ডা কাকে বলে।

রাঁধতে করা মনে হয় ভুলেই গিয়েছি। গত ৩ সপ্তাহ ১ দিন রেঁধে ২ দিন খাবারের সেই পুরোনো অভ্যাসে ফিরে গিয়েছি। গতকাল রাঁধলাম মুরগি, ভেবেছিলাম খেতে খুব একটা সুবিধের হবে না। কিন্তু রান্না ভালোই হয়েছিলো, ঝাল একটু বেশী এই যা। কাজ শেষে বাসায় এসে দূপুরের খাবার বিকেলে খাই, তরকারী শেষ হয়ে গেলে রাঁধি সন্ধে বেলা, সাদাদের মতো ৮ টার মধ্যেই রাতে খাবার শেষ করে ফেলি। সমস্যা হয় মধ্য রাতে, ক্ষিদে পেয়ে যায়। ওজন বেশ কমেছে বোঝা যাচ্ছে। নিজেকে বেশ ঝরঝরে লাগে। আজ কাল ঘাস - লতা - পাতা খাবার অভ্যাস করছি, ভদ্রলোকেরা যাকে সালাদ বলে। ভালোই লাগে খেতে।

হাতের ব্যথাটা আবার একটু দেখা দিয়েছে। তেমন সমস্যা করছে না, সেরে যাবে। ব্যান্ডেজ বেঁধে রেখেছি।

গত শনিবার ক্যানবেরায় বৈশাখী মেলা হয়ে গেলো যদিও বৈশাখ শেষ হতে হতে জৈষ্ঠ মাস আসছে আসছে। যাওয়া হলো না, যদিও ইচ্ছে ছিলো অনেক। কাজ পরে গিয়েছিলো। একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে যদি 'ফুল নেবে না খাদ্য নেবে' বলে গান শোনানো হয় তবে সে খাবারকেই বেছে নেবে। পেটে ভাত থাকলে গান গেতে ইচ্ছে করে, ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে, আকাশে ঘুড়ি উড়াতে ইচ্ছে করে। পেটে ভাত না থাকলে সব কিছুই দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়, থালা ভরা গরম ভাতের সাথে ধোঁয়া উড়ানো সোনা মুগের ডালই তার কাছে পরম আরাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। সামনে অনেক খরচ, ওসব বিলাসীতা আমাকে মানায় না। সময় হলে সবই করা যাবে। এখন যুদ্ধের সময়, বাঁশি বাজাবার নয়।

সন্ধ্যায় অল্প স্বল্প পড়াশোনা করি, মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে পড়াশোনা করতে। মনে হয় আর কতো! কিন্তু পড়াশোনা যে আমাকে ছাড়বে না, আমৃত্যু তাড়া করে যাবে। বিরক্তিকর একটা জিনিস।

ব্লগে লেখা লেখি বন্ধ। টুকটাক কমেন্ট করি পছন্দের মানুষগুলোর ব্লগে। ব্লগের কুরুক্ষেত্র হতে ৩০৩ হাতে দূরে থাকতে ভালো লাগে। মানুষ কেনো যে পর্দার আড়ালে থেকে রাজা উজির মেরে সেপাইয়ের শান্তি নস্ট করে বুঝতে পারি না।

প্রথম আলোর জন্য একটা লেখার জন্য বড় ভাই কতবার বলছেন, উনার ভয়ে উনার মেইল পড়তেই ভয় হয়, মেসেন্জারে অদৃশ্য হয়ে থাকি। ভাবছি লিখেই ফেলবো - আজকালের মাঝে। টপিক ঠিক করে ফেলেছি, এখন শুধু শব্দগুলোকে ইটের মতো একটির পর আরেকটি করে সাজিয়ে নেবার পালা।

শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০০৯

হাবিজাবি ৩

1 টি মন্তব্য :
মনের মাঝে উথাল পাতাল। আইন আদালতও আজ কাল টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়। দূর্নীতিবাজ বিচারক। ঘুষখোর পুলিশ। সের দরে কেনা বেচা হয় মানুষের বিবেক - চেতনা। দিন দুপুরে বেদখল হয়ে যায় একমাত্র আয়ের সংস্থান । চেয়ে চেয়ে দেখি। স্বজনও সেখানে পর হয়ে যায় । হয়তো একসময় সব কিছু ঠিক হয়ে যায় সবকিছু; কিন্তু জনকের বিনিদ্র রজনি যাপনের কস্টটুকু ফিরিয়ে দেবে কে ? আছে কি কোনো দাওয়াই অর্থকস্টের যাতনাকে উপশম করবার ? দূর প্রবাসে অসহায় পুত্র -কন্যার দূরালোপনী হয়তো জনক- জননীর মাঝে কিছুটা হলেও স্বান্তনা দেয়, কিন্তু সমস্যার কতটুকুই বা দূর করতে পারে ? প্রশ্নগুলোর উত্তর বড্ড গোলমেলে।

টাকা পয়সার খুবই দরকার। টাকা হলে পেটে গরম ভাত জুটে, মাথার উপর ছাদ মেলে। টাকা হলে মানুষের সম্মান মেলে, সেলাম জুটে। প্রেয়সীকে গিফট দেয়া যায় টাকা হলে, হবু শশুড়কে খুশী করা যায়। টাকা হলে গাড়ী হাঁকানো যায়, বাড়ি কিনে ফুটানী করা যায়। টাকা হলে পৃথিবীর সব সুখ হাতের মুঠোয় এসে যায়। টাকা হলে মনের শান্তি সাহারা মরুভূমিতে নির্বাসিত হয়। টাকাই সব, টাকা কিছুই নয়।

এখন বাহিরে বেশ বৃস্টি। টিনের চালে বৃস্টির ঝমঝম শুনতে মন চায়, কিন্তু টিনের চালের ঝমঝম শব্দ কোথায় পাবো বলতো ? ঘরে ফায়ার প্লেসের উম বড্ড আরাম, কিন্তু কাঁথা মুরি দিয়ে ঘুমানোর আয়েশ করার সুযোগ নেই। বারবিকিউতে ভাজা মাংসের গন্ধ পাচ্ছি কিন্তু বর্ষার প্রথম বৃস্টির পরে মাটির সোঁদা গন্ধ এই ইট পাথরের শহরে পাচ্ছি না।

মানের মাঝে উথাল পাতাল। নিজে ভালো না থাকলে , জনক জননী ভালো না থাকলে পৃথিবী সাগরের তলিয়ে গেলেইবা কি এসে যায়। সব কিছু নিয়েই ভালো নেই। মনটা ভালো নেই। হয়তো সময় সব কিছু ঠিক করে দেবে কিন্তু রেখে যাবে কস্টের চিহ্ন। এ চিহ্ন মুছবে কে ?

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০০৯

জন্মদিনের কড়চা

২টি মন্তব্য :
জন্মদিনে ঘটা করে কিছু করবার বয়স সম্ভবত পার হয়ে এসেছি। এখন ইচ্ছেও হয় না তেমন একটা কিছু করতে। এটা কিন্তু মিথ্যে বলছি; এখনো ইচ্ছে হয় কেকে মোমবাতি সাজিয়ে এক নিঃশ্বাষে সবগুলো মোমবাতি নিভিয়ে দিতে, ফানুস দিয়ে ঘর সাজাতে - রঙ বেরঙের কাগজ দিয়ে ঘর সাজাতে। কিন্তু করা আর হয়ে উঠে না। এখন যা কিছু করি তার সবটুকুই একান্তই নিজের মাঝে।

গত বছর জন্মদিনের দিনটি কেটেছিলো অফিসের ডেস্কে সামনে বসে ভুঁরু কুঁচকিয়ে বিরক্তিকর এক সিস্টেমের এনালাইসিস করে , আর সন্ধ্যায় বউকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের আলো আঁধারিতে পেটপুঁজো। এবারে যে তেমনটি হবে না সেটা আগেই জানা ছিলো। বউ- ছেলে দেশে বেরাতে যাওয়াতে এবারের জন্মদিনটি একাকীই কেটেছে। আগে থেকেই ডে অফ নেয়া থাকাতে বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠে দেশে ফোন করেছি। মাঝ রাত থেকেই অবশ্য অনেকগুলো মুঠোফোনের সংক্ষিপ্ত বার্তাও পেয়েছি বন্ধু - ভাই- বোন - আত্মীয়দের কাছ থেকে, জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ভালোই লাগে শুভেচ্ছা পেতে। তারপরো কেনো জানি ছোট বেলা - কৈশোর বেলার জন্মদিন গুলোর কথা মনে পরে। সে সময় কার্ড দেয়ার চল ছিলো, এখনতো অনেকেই ই-মেইলে ই-কার্ড পাঠিয়েই দায় সেরে ফেলেন। কাগুজে কার্ডগুলোতে যে মায়ার স্পর্শ লেগে থাকতো তা আর পাওয়া হয় না। বড্ড মিস করি সেই ভালোবাসার স্পর্শটুকু।

বিকেলে টুকটাক শপিং করে ফুডকোর্টে ফ্রায়েড চিকেনকে যখন সাইজ করতে ব্যস্ত তখন পাশেই এক দঙল ছেলে-মেয়ের হইচই জন্মদিনের পার্টি নিজের সেই বয়সের সময়গুলোর কথা মনে পরে যাচ্ছিলো। মডেল স্কুলের হোস্টেলে থাকতে এমনি এক জন্মদিনে নজরুল হাউসের পেছনের দেয়াল টপকিয়ে জেনেভা ক্যাম্পের পারাটা- টিকিয়া -চাপ খেয়েছিলাম সবাই এদের মতোই হইচই করে। কি সুন্দরই না ছিলো সেই সব দিনগুলো ! আহ, আবার যদি ফেরত যাওয়া যেতো সে বয়সে , সে দিন গুলোতে !!

গত বছর ডিনারে ছিলো পশ মরোক্কান রেস্টুরেন্টে , আজ রাতে ডিম ভাজি ও গত রাতে রান্না করা মোটা চালের ভাত। ম্যারিড ব্যাচেলর হলে যায় হয় আর কি। রাতে বাসায় ফীরে নেটে গুতোগুঁতি করেই সময় কাটালাম। বাসার সবার সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং করে মনটা একটু ভালোও হয়েছে। এভাবেই কাটলো আমার ৩২ তম জন্মদিন।

হেপ্পি বাড্ডে মাইট।

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০০৯

I Dreamed a Dream

কোন মন্তব্য নেই :
There was a time when men were kind
When their voices were soft
And their words inviting
There was a time when love was blind
And the world was a song
And the song was exciting
There was a time
Then it all went wrong

I dreamed a dream in time gone by
When hope was high
And life worth living
I dreamed that love would never die
I dreamed that God would be forgiving
Then I was young and unafraid
And dreams were made and used and wasted
There was no ransom to be paid
No song unsung, no wine untasted


But the tigers come at night
With their voices soft as thunder
As they tear your hope apart
And they turn your dream to shame


He slept a summer by my side
He filled my days with endless wonder
He took my childhood in his stride
But he was gone when autumn came


And still I dream he'll come to me
That we will live the years together
But there are dreams that cannot be
And there are storms we cannot weather


I had a dream my life would be
So different from this hell I'm living
So different now from what it seemed
Now life has killed the dream I dreamed

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০০৯

আজি এ হেমন্তের সকালে বৈশাখের গান গাই

কোন মন্তব্য নেই :
বিমানবন্দরে বউ-ছেলেকে বিদায় দিয়ে ফীরে আসার সময় মনের মাঝে শ্রাবনধারা কিন্তু বাহিরে চৈত্র মাসের খা খা কাঠিন্য। প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছিলো চলে যাই ওদের সাথে, কি আছে ভাগ্যে ! কিন্তু চাকরির এই মন্দা বাজারে চাকরি হারানোর ভয়ে আবেগ কোথায় যে যায় সেটা আমার মতো এই অগাবগাই জানে। দেশে যখন সবাই নববর্ষের আনন্দে মত্ত, তখন আমরা ব্যস্ত উদয় অস্ত কামলায় ।

রাতে একাকী বিছানায় শুয়ে শুয়ে সবাইকে মুঠোফোন বার্তায় সবাইকে নববর্ষের পাঠিয়ে ঘুমোনোর চেস্টা করার সময় একের পর এক ফিরতী বার্তা। আনন্দের দিনগুলোতে পছন্দ - অপছন্দ নির্বিশেষে সবাইকে শুভকামনা জানাই যদিও অনেকেই এর প্রতিউত্তর দিতে কার্পন্য করেন। যার যা ইচ্ছে, আমি বলার বা ভাবার কে ? ব্লগের সবার পরিচিত এক বড় ভাই এর সাথে তার হারানো প্রেয়সী সেজে কিছু রোমান্টিক বার্তা পাঠাতেই উনার প্রতিউত্তর, “এই বান্দা কে ?”। তারপর উনার একের পর এক বার্তা, থামতেই চায় না। ভাবীর সামনে এ ধরনের বার্তা পেয়ে উনার কি অবস্থা হয়েছিলো সেটা ভেবে কস্টের মধ্যেও হাসি পাচ্ছিলো।ভোর বেলায় দেশ হতে ফোনে জানতে পারলাম মা-ছেলে ভালো ভাবেই দেশে পৌছেছে। ঘুমের ঘোরে কথা বলে আবারো ঘুমের রাজ্যে।

মাঝ দূপুরে সিডনীর মাঝে এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম কত্ত মানুষ ! সবাই যেনো পাগলের মতো ছুঁটছে। সবাই যেনো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। হাজারো মানুষের মাঝে আমি বড্ড একা। এ শহর আমার নয়, পথ হারানো এক অচেনা পথিক আমি। রাতে বুশ ক্যাপিটালের আপন নীরে ফেরা।

বিছানায় আমার বাবালার ছোট্ট বালিশটা খালি। ঘরে ওর কান্নার শব্দ নেই, খিল খিল হাসীর শব্দ নেই। বউয়ের আদরমাখা রাগ নেই, ভালোবাসার ভুরু কুঁচকানী নেই। এক কস্টের নিঃশব্দতা। অসহ্য কস্ট লাগছে। এভাবেই কাটবে সামনের পাঁচটি সপ্তাহ।

সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।

শনিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

"শহীদ" কিভাবে হওয়া যায় সেটা নিয়া ভাবছি

1 টি মন্তব্য :
যে রিকশাচালক গুলিতে মারা গেলো সে শহীদ না,
যে বিডিআর সুবেদার গুলিতে মারা গেলো সে শহীদ না,
যে ছাত্রটি ওষুধ কিনতে গিয়ে গুলিতে মারা গেলো সেও শহীদ না।

এদের "রাস্ট্রীয়" মর্যাদায় দাফন হবে না,
জাতীয় পাতাকায় মুড়িয়েও দেয়া হবে না কফিনটি।

এদের ছেলেমেয়েরা আজীবন সরকারী খরচে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে না,
৫ লাখ টাকা করে টাকাও জুটবে না তাদের ভাগ্যে,
বাকিদের কথা উহ্যই থাকুক।

নমঃশুদ্রদের ভাগ্যে এরকমটিই হয়,
এদের নিয়ে কোনো শোক গাঁথাও লেখা হবে না,
হবে না কোনো কলাম লেখা।

এরা আমজনতা; "শহীদ" হবার যোগ্যতা এদের নেই।

মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

এটাই নাকি সুবিচার ?

1 টি মন্তব্য :

আদালতের বিরুদ্ধে কথা বল্লে নাকি আদালতের অবমাননা হয় ! হায়রে আদালত, যার চোখ বন্ধ, বিবেকও আজ বন্ধ।
"Justice delayed is justice denied " হুহ । যাও বিচার হলো তারও এই পরিনাম ! এটাও নাকি বিচার !!
সরকারি উকিলের উদাসিনতা ! তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়সারা তদন্ত ! স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য দিতে গরিমসি !
শালা সব শুওরের পাল।

এ দুনিয়ায় গরিবের বিচার চাওয়াটাই আজ পাপ। গরিবের আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই। আল্লাহও আজ চোখ ফিরিয়ে অন্য কিছুতে ব্যস্ত।

-------------------------
রাহেলা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি লিটনের মৃত্যুদন্ড( প্রথম আলো , ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৯)
সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক
তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক রাহেলা আক্তার লিমাকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে একজনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোস্তফা দেওয়ান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদন্ড পাওয়া আসামি হচ্ছে সাভার থানার রেডিও কলোনির আবদুল ওয়াদুদের ছেলে মো. লিটন। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। লিটন পলাতক। সে গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আদালতে আত্মসমর্পণের পর এ রায় কার্যকর হবে।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলো মো. কবির, দেলোয়ার ও ফজলুল হক ওরফে ফজর আলী ওরফে ফজা। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জঙ্গল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাহেলাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের ২৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। মৃত্যুর আগে সে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেয়।
জবানবন্দিতে রাহেলা বলে, ২০০৪ সালের ২৯ আগস্ট হরতালের দিন রাহেলা তার এক বান্ধবীকে নিয়ে সাভার সেনানিবাসের চিড়িয়াখানা দেখতে যায়। দুপুরে চিড়িয়াখানা দেখা শেষে তার বান্ধবী নিজের বাড়িতে চলে যায়। রাহেলাও হেঁটে নিজের বাড়িতে ফিরছিল। পথে পূর্বপরিচিত লিটনের সঙ্গে দেখা হলে লিটনও সঙ্গে সঙ্গে যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের কাছে এলে লিটন জোর করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে লিটন রাহেলাকে ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার গলায় কোপ মেরে ফেলে রেখে চলে যায়। লিটন পরে আবার এসে রাহেলার গলার স্বর্ণের চেইন ও নাকফুল নিয়ে যায়। তিন দিন রাহেলা পড়ে থাকে সেখানে। তার চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। ১ সেপ্টেম্বর সকালে লিটন ও তার সহযোগীরা এসে রাহেলার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে রাহেলার চিৎকার শুনতে পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৩ দিন পর রাহেলা মারা যায়।
বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (স্পেশাল পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুল কাইয়ুম রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে লিটনের সহযোগী যারা রাহেলার মৃত্যু নিশ্চিত করতে গাঁয়ে আগুন দিয়েছিল, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

যুদ্ধে যারা গর্তের অধিবাসী, যুদ্ধের শেষে তাহারাই সোচ্চার

কোন মন্তব্য নেই :

জীবনের একটা সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অন্যরকম এক ধারনা কাজ করতো। হয়তো ছবিতে রাইফেল হাতে দীপ্ত যোদ্ধাদের দেখেই এমনটি হয়েছিলো। প্রথম যখন সামনা সামনি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছিলাম তখন প্রচন্ড অবাক হয়েছিলাম। জীর্ন শীর্ন এক লোক, নোংরা মলিন লুঙি পড়া এক মধ্যবয়সী এক মানুষ। সামনে বসে যখন খাচ্ছিলেন তখন মনে হচ্ছিলো কত দিন যেনো না খেয়ে আছেন। সহায় সম্বলহীন সেই মানুষটি ছিলেন একজন বীর প্রতিক। শেষ সম্বল ভিটা মাটি বাঁচাতে বাবার কাছে এসেছিলেন। পুলিশ দিয়ে তাঁর ভিটে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হলেও পরে কি হয়েছিলো সেটা জানা হয়নি আর। তবে তার চেহারা এখনো চোখে ভাসে ' চোখগুলো যেনো জ্বল জ্বল করছে'।

এটিও অনেক বছর আগের কথা। ১৬ই ডিসেম্বরে ১৯৯*। ঢাকার আশে পাশে কোনো এক থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। অনুস্ঠানটি দেখার দূর্ভাগ্য হয়েছিলো। সাজানো মন্চের মাঝ খানে বিশাল চেয়ারে প্রধান অতিথি হিসেবে ডি.সি, তার আশে পাশে মেঝো-সেজো আমলা। সবার বামে থানা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার। সামনের সাড়িতে নরম সোফায় স্বস্ত্রীক আমলারা। আর যাদের জন্য অনুস্ঠান তাঁরা বসেছে পেছনের সারিতে, গাদা গাদি করে, কাঠের ফোল্ডিং চেয়ারে। বেশীর ভাগের পড়নেই লুঙি, হয়তো সবচাইতে ভালো লুঙি-জামা পড়েই তাঁরা এসেছিলেন। অনুস্ঠান শেষে অনেককেই ভ্যানে করে গাদাগাদি করে চলে যেতে দেখা যায়, পাশেই ধুলো উড়িয়ে ডিসির পাজেরো।

উপরের দুটো ঘটনা বলার মাজেজা হলো মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান অবস্থা বোঝানো। যাদের সামনে থাকার কথা ছিলো তারা আজ পেছনে, যাদের সব কিছু পাবার কথা ছিলো তারাই আজ অবহেলিত। আজকের দিনে অনেককেই মুক্তিযু্দ্ধের স্মৃতিচারন করতে দেখি, যাদের বেশির ভাগকেই ৭১ এ অস্ত্রহাতে দেখা যায় নি। যুদ্ধের অভিগ্যতা বন্চিত এই মানুষগুলো বড় গলায় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধা ক্যটাগরিতে প্লট নেবার জন্য তোষামুদিও করেন। ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধাদের বদনা এগিয়ে দেয়া লোকও আজ মুক্তিযোদ্ধা। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যখন খবর নেবার সময়ও পাওয়া যায় না।


পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝেই গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পড়ার দূর্ভাগ্য হয়, যথারীতি সে সব খবরের স্থান হয় মাঝের পাতায় কোনো এক কোনে। মফস্বল সংবাদদাতার পাঠানো সংবাদগুলো যে আজো পত্রিকার নিউজ এডিটরের নেক নজর পায় সেটাই অবাক করার মতো ঘটনা। অবশ্য এসব খবরের আনাগোনা চোখে পড়ে ডিসেম্বর বা মার্চ মাসেই। বছরের অন্যান্য সময়ে ব্যস্ত থাকা হয় অন্য সব কিছু নিয়ে।

আমরা এমনই এক অকৃতগ্য জাতি যারা তাদের বীর সন্তানদের প্রকৃত সম্মানটুকুই দিতে পারিনি, দেইনি। চেতনার কথা বলি কিন্তু চেতনার সৈনিকদের সযতনে পাশে সরিয়ে যুদ্ধের ইতিহাস লিখি। মাসে ৫০০ টাকা ভাতা দিয়ে বাহাব নেই, মারা যাবার পর রাস্ট্রীয় সম্মান দেই কিন্তু জীবদ্দশায় খবর নেই না।

জীবনের একটা সময় বোকার মতো আগ্রহ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরে থাকা হতো। এখন অবশ্য সে সময় নেই। আর দশটা স্বার্থপর মানুষের মতই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। মাজে সাজে মুক্তিযুদ্ধ- মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ঊঁ-আহ্‌ করে আত্নতুস্টিতে ভুগি আর কি। এটাও আজকালকার এক ধরনের ফ্যাশন। ফাক দিজ ফ্যাশন।

১৯৭১ - ২০০৯; ৩৮ টি বছর। ৭১ এর সদ্য গোঁফ ওঠা কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আজ পক্ক কেশের এক মধ্যবয়সী পৌড়। হয়তো পরপারেও অনেকে। সম্মান দেয়া হলো না, তাদের প্রাপ্যটাও দেয়া হলো না। শালার বাঙালী জাতি।

"যুদ্ধে যারা গর্তের অধিবাসী, যুদ্ধের শেষে তাহারাই সোচ্চার" - আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর লেখা কোনো এক কবিতার দুটো লাইন অনেক কিছুই বলে দেয়। আর কিছু কি বলার আছে ?

মঙ্গলবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০০৯

ভারত মহাসাগরে হারিয়ে যাওয়া ( থাই নৌবাহিনী কতৃক ঠান্ডা মাথায় হত্যা ) হতভাগ্য মানুষগুলো নিয়ে নিউজ ক্লিপ

২টি মন্তব্য :



ভারত মহাসাগরে হারিয়ে যওয়া হতভাগ্য মানুষগুলো নিয়ে নিউজ ক্লিপ। অস্ট্রেলিয়া এসবিএস ওয়ার্লড নিউজে আজকের নিউজটি দেখলাম।
কি মর্মান্তিক !
এর বিচার কি আদৌ হবে ?


বুধবার, ৭ জানুয়ারী, ২০০৯

যেমনটি গেলো ২০০৮

২টি মন্তব্য :
বছরের শুরুতে অনেকেই অনেক রকম রেজুলেইশন করে থাকেন। কেউবা বাড়ী কেনার স্বপ্ন দেখেন, কেউবা বছর শেষে ব্যাংকের হিসেবের ওজন বাড়ানো, কেউবা বা নিজের শরীরের ওজন কমানো- বাড়ানো। একেকজন একেক রকম। হয়তো বছর শেষে হিসেব করতেও বসেন কি পেলাম আর কি পেলাম না। ডেবিট - ক্রেডিটের হিসেব হয়তো কখনো মেলানো যায় , কখনো না।

আমি ঠিক করি একজন পরিপূর্ন মানুষ হবার জন্য যে বিশাল ঘাটতি আছে নিজের মাঝে সেটা কিছুটা হলেও পূরন করবার। বিশাল কোনো টার্গেট বা গোল কখনোই সেট করি না, যেটা আমি ছুঁতে পারবো না। আর দশটা গড়পরতা মানুষের মতো বাঁধা ধরা কোনো কিছুতে নিজেকে বাঁধার ইচ্ছে হয় না। তবে ইচ্ছে হয় জীবনটাকে আরেকটু শান্তিময় করতে। সুখ-শান্তির মাঝে ফারাকটুকু কমিয়ে আনবার।

বছরের শুরুটা অন্যরকম ছিলো। প্রথমবারের মতো জীবনসংগিনীকে নিয়ে বর্ষবরন, হাজারো মানুষের মাঝে। বছরের শুরুতে দিনগুলো গদাই লস্করি চালে চলতে থাকলেই মাস গড়াতে থাকতেই ব্যস্ততা বেড়ে যায়। একঘেয়ে এক ব্যস্ততা। নতুনত্ব কিছু নেই।

ব্লগিং চালিয়ে গেলেও লেখার হার কমে এসেছে। কমিউনিটি ব্লগগুলোতে ঘোরাঘুরি বেড়েছে। তবে ক্লান্ত - স্রান্ত দেহে কোনো কিছুই লিখতে ইচ্ছে হয় না। নানান ঝামেলাও লিখতে দেয় না। তবে সবার লেখা পড়তে ভালো লাগে। বই পড়ার নেশাটা জাগিয়ে তুলবার চেস্টা করেছি, হয়নি। টিভি দেখার পরিমান বেড়েছে। চলতি ধারা মুভি দেখার আগ্রহ কমে এসেছে, নানান ধরনের - নানান স্বাদের মুভি দেখেছি। বাংলা গান, বিশেষ করে পুরোনো বাংলা সিনেমার গানের প্রেমে পড়েছি।

মার্চের কোনো এক মধ্যরাতে দেশ থেকে ফোনে দাদুর মৃত্যু সংবাদ শুনতে পেয়েছি। মন খারাপ করে পরের দিন অফিসে কিবোর্ডও গুঁতিয়েছি। কাউকে বুঝতে দেইনি। কেনো জানি আজ কাল সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করতে পারি। হয়তো মন প্রচন্ড খারাপ হয় কিন্তু কি অস্বাভাবিক ভাবে সবকিছুই স্বাভাবিক ভাবে সবকিছু মেনে নেই। আজ কাল মধ্যরাতের ফোন গুলোকে বড্ড ভয় পাই। এই বুঝি কোনো খারাপ সংবাদ এলো দেশ থেকে। ইচ্ছে হবে ছুটে যেতে কিন্তু যেতে পারবো না। কি ভয়ংকর স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন ! বছরের সবচাইতে বড় হাড়ানো আমার দাদুর মৃত্যু।

নিজের মাঝে পরিবর্তনটুকু টের পাচ্ছি। নিজেকে নিজের বিচারের দাড়িপাল্লায় উঠাবার সাহস করতে পারছি। আজকের সুমন আর ৬ বছর আগেরকার সুমনের মাঝে ফারাকটুকু টের পাই। মাঝে মাঝে এটা নিয়ে ভালো লাগে, মাঝে মাঝে নিজেকে নিয়েই ভয় হয়। ৬ বছর আগের সুমনের মাঝে যে কোমলতা ছিলো তার অনেকটুকুই আজ নেই। মানুষকে সে আজ সহজেই বিশ্বেষ করতে পারে না, কথার মার-প্যাঁচের মাঝে আসল অর্থ বের করতে চায়, কঠোরতে চলে আসছে তার মাঝে।

বেশ সামাজিক হয়েছি বলা যায়। একটা সময় ছিলো যখন শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। সব কস্ট বেদনা ভুলে থাকার জন্য সবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে শুধুই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা। বউ আসার পর এটা আর করা সম্ভব হচ্ছে না। আস্তে আস্তে সবার সাথে মিশতে চেস্টা করছি, চেস্টা করছি ঈদের নামাজ পড়তে, চেস্টা করছি বাঙালী কমিউনিটির অনুস্ঠানে যোগ দিতে। এখানে মানিক ভাইয়ের কথা না বল্লেই নয়। প্রিয় এই মানুষটির বাসায় দাওয়াত খেয়ে, উনাদের সাথে মিশবার সৌভাগ্য হয়েছে , যা ভুলবার নয়।

অক্টোবরের ৮ তারিখে আমার প্রথম সন্তান জম্ন হলো। সে এক অন্যরকম অনুভূতী, এ এমন এক অনুভূতী যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারা যায় না। সবকিছু কেমন যেনো বদলে যাচ্ছে। নতুন স্বপ্ন - নতুন কিছু করার তাগিদ - নতুন কিছু করার প্রেরনা। বছরের পাওয়া- না পাওয়া হিসেবের যতটুকু ঘাটতি ছিলো সন্তানের জন্ম তার সবটুকুই যেনো পূরন করে দিয়েছে। শত কস্টের মাঝেও ছেলের মুখের হাসি সব কিছু ভুলিয়ে দেয়। এটাই বছরের সবচাইতে বড় পাওয়া।

ক্রেডিট কার্ডের লোন শোধ করা সম্ভব হয়নি পুরোটা। ওজন কমানোর চেস্টা করেছি তবে কমছে না আবার বাড়ছেও না। মাথার চুল কমছে , হাহাহহাহা। চেহারা ভারিক্কি হয়েছে একটু, কথার স্টাইল পরিবর্তন ঘটেছে একটু। চাকুরীর উন্নতি হয়নি তেমন একটা, আয় বেড়েছে কিন্তু সেই হারে খরচও বেরেছে। অল্পতেই সন্তুস্ট থাকার চেস্টা করেছি।

কেউ যদি বলে হিসেব কি মেলাতে পারলে ?
আমি বলি, সব হিসেব কি মেলানো যায় বৎস ?

তবে সুখে আছি- শান্তিতে আছি। সবকিছু নিয়েই শান্তিতে আছি।