সোমবার, ৭ জুলাই, ২০০৮

জরিনা পাগলীর গল্প

1 টি মন্তব্য :
ঘটনাটা ২ যুগ আগের। বয়স কতোই বা তখন? হাফ প্যান্ট পড়া, সাইকেলে হাফ প‌্যাডেল চালানো বয়স। টিনের চাল দেয়া ছোট্ট যে বাড়ীটায় থাকতাম তার ঠিক পাশেই ছিলো অর্ধ সমাপ্ত একটা বাড়ী। রাতে মাঝে মাঝেই সেখানে এক পাগলীকে দেখতাম। জটলা পাকানো বিশাল চুল। এখান ওখান হতে যোগার করা ন্যাকড়া দিয়ে বানানো কিম্ভুৎ কিমাকার পোষাক। নিজের মনেই একাকী কি সব বলতো সেটা সেই জানতো। হয়তো এখান ওখান হতে ছুড়ে দেয়া খাবারে জীবন বাঁচতো তার। মা বলেছিলো কাছে না যেতে, যেতাম না। ভয় পেতাম খুব, যদি মারতে আসে !

নাহ্ , জরিনা পাগলী কাউকে মারেনি। একদিন সেই নিজেই মারা গিয়েছিলো। ভদ্রলোকেরা যেভাবে নিশ্চিন্তে নিজের বিছানায় মারা যায় সেভাবে নয়, রাস্তার ধারে কুকুর বেড়াল যেভাবে মারা যায় ঠিক সেভাবে। জানাজা হয়েছে কিনা সেটাও জানি না। হয়তো কেউ সদয় হয়ে গোরস্থানে কবর দিয়েছিলো, হয়তো শ্বশানে পুড়িয়েই ফেলেছিলো ! কে জানে; হাজার হলেও মানুষাকৃতির এক প্রাণী যে !

জরিনার আসল নাম জানা হয়নি, জানাও হবেও না কোনোদিন। কি দরকার ?

ছোট বেলা থেকেই টিভিতে-রেডিওতে-মাঠে ময়দানে দু লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা , ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বলে বক্তমা শুনছি। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বংগবন্ধু শেখ মুজিব এ দু লাখ মা-বোনকে বীরাংগনা ঘোষনা করলেন। শব্দটা শুনতে ভালোই লাগে, এতটুকুই। মাঝে সাজেতো বীরাংগনাদের কথা চেপে যেতেই ভালোবাসী আমরা।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখছি, পড়ছি , দু লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা বলে মাঠ গরম করছি, কিন্তু এই মা-বোনদের খবর রাখার প্রয়োজন বোধ করছি না। এদের ভুলে যেতে হয়। কবিতা লেখা যায় এদের নিয়ে কিন্তু সমাজে গ্রহন করা যায় না।
জরিনা ছিলো একজন বীরাংগনা। সেই দুই লাখ মা-বোনের একজন।
--------
এটা কোনো গল্প না। আধা সত্য মেশানো একটি কাহিনী।
শহরের অনেকেই জানতেন জরিনার কথা। সবাই চেপে যেতেন, আবার অনেকে জানতেনই না ওঁর কথা।
স্বাধীনতার এই মানুষগুলো এভাবেই অচেনা, উহ্য রয়ে যায় ইতিহাস হতে।
কিছুই বলার নেই।