রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১২

ঠাকুরগাঁও-এ মুক্তিযুদ্ধ

কোন মন্তব্য নেই :
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। স্বাধীনতার পক্ষে ৯ মার্চ পল্টন ময়দানে ভাষণ দেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষও ঢাকার সংবাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলো। তখন ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র এখানে পৌঁছতো পরের দিন। প্রাপ্ত তথ্য ও সংবাদের ভিত্তিতে ঠাকুরগাঁও শহরের জনসমাবেশ, মিছিল-মিটিং তথা সার্বিক আন্দোলন আস্তে আস্তে দানা বেঁধে উঠছিলো। আওয়ামীলীগ, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি এবং তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোর ডাকে আহুত কর্মসূচীতেসাড়া দিয়ে পথে নেমেছিলো ছাত্র-জনতা-কৃষক-শ্রমিক। কাড়িবাড়ি হাটের দক্ষিনে ওয়াপদা আবাসিক এলাকা থেকে উত্তরে টাঙ্গনের পাড়ের রিভারভিউ হাইস্কুল, পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও কলেজ থেকে পূর্বে বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট সাজানো গোছানো শহরটা টগবগিয়ে ফুটছিলো জনতার উত্তাল শ্লোগান আর মিছিলে। সকালের নাস্তা খেয়েই মানুষ এসে জড়ো হতো চৌরাস্তায়। নেতৃস্থানীয়রা বসতেন পেল্টু বাবুর চায়ের দোকানে।
৩ মার্চ বিকেলে স্থানীয় ফুটবল মাঠে তৎকালীন মহকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ মোক্তারের সভাপতিত্বে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মহকুমার তৎকালীন ১০ টি থানার বিভিন্ন পেশা ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ শহরের বেশিরভাগ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। রাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ফজলুল করিম এমপিএ সাহেবের বাসায় মিলিত হন। এখানে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘‘সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’’ গঠন করা হয়। সংগ্রাম পরিষদের কার্যাবলী সমন্বয় ও গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩টি উপ কমিটি গঠন করা হয় যার একটি ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যেন সহায়তা পাওয়া যায়। এই উপ কমিটির দায়িত্বে ছিলেন এ্যাডভোকেট বলরামগুহ ঠাকুরতা এবং আব্দুর রশীদ মোক্তার।
৪ মার্চ তারিখের মিছিলে স্থানীয় মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল বেশ স্বত:স্ফুর্ত যা পরবর্তী সময়ের আন্দোলনকে তরান্বিত করেছিলো। এদিন ফুটবল মাঠে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রতি থানা থেকে ৩০০ জন নেতাকর্মীকে ৭ মার্চের রেসকোর্সের জনসভায় যোগদানের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৫ মার্চ চৌরাস্তা ও পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে গণমজায়েতের পর রেলপথে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের প্রায় ৫০০ নেতাকর্মী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
৭ মার্চ তারিখের বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণের পরিপূর্ণ  বিবরণ সেদিন শহরবাসী না জানলেও ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ কথাটি শুনে উজ্জীবিত হয়েছিলো। ৮ মার্চ রেডিওতে প্রচারিত ভাষণ শোনার পর শহর উত্তাল বিক্ষোভে গর্জে উঠেছিলো। যারা ৭ মার্চ তারিখের জনসভায় যোগ দিতে ঢাকা গিয়েছিলেন তারা ফিরে আসেন
৯ মার্চ। যে কোন একজন নিয়ে এসেছিলেন ঐতিহাসিক ভাষণের ক্যাসেট। এমপিএ ফজলুল করিম সাহেবের বৈঠকখানা থেকে মাইকে শুরু হয় ক্যাসেট বাজানো। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এ ছিল যেন এক যাদুর বাঁশী। মানুষ ছুটে আসছিলো আর শুনছিলো সেই ভাষণ। অবিরাম এই গতিধারা চলছিলো তারপর থেকে।

রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১২

জীবনটা ম্যারাথন দৌড়ের মতো

কোন মন্তব্য নেই :

উপলব্ধি ১
কাজের ফাঁকে ইউটিউবে লন্ডন অলিম্পকের ম্যারাথনের হাইলাইট দেখছি। হঠাৎ মনে হলো, আরে জীবনের সাথেতো ম্যারাথন দৌড়ের অনেক মিল আছে ! দৌড় শুরু হতেই দেখা গেলো  অনেকেই এমনভাবে দৌড় শুরু করছে যেনো যে এক দৌড়েই ফিনিশিং লাইনে পৌঁছে যাবে। আবার কেউ কেউ দম ধরে রেখে ধীর স্থির ভাবে দৌড়ুচ্ছে যেনো শেষে পৌছুনোর কোনো তাড়নাই তাদের মাঝে নেই। দৌড়ের মাঝ পর্যায়ে এসে দেখা যাচ্ছে যারা প্রথমে যারা জোড় কদমে শুরু করেছিলো তারা আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়ছে আর দম রেখে দৌড়ুনোরা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের পেছনে রেখে।  এক সময় সবাইকে পেছনে রেখে উগান্ডার স্টেফান কিপরোটিচ লন্ডন অলিম্পিকের শিরোপা জিতে নিলো।

জীবনের সাথে মিল খোঁজ পাওয়ার ম্যারাথন দৌড়ের অনেক টুকুই মিল পাচ্ছি। এই দৌড়ে কেউ বা প্রথম হবার জন্য হন্যে হয়ে দৌড় শুরু করলো, আরেক দল পিছিয়ে পড়তেই থাকলো, আরেকদল দম রেখে ধীরে সুস্থ্যে দৌড়ুচ্ছে। প্রথম দল দম হাড়িয়ে এক সময় শেষ সীমানায়  কোনো মতে পৌঁছুতে পারলেও বা আদৌ না পারলেও শেষদল যারা দল রেখে বুঝে শুনে দৌড়িয়েছে জয় তাদেরই হয়।  প্রত্যেকটা মানুষেরই সীমাবদ্ধতা আছে। সেটা মাথায় রেখে কাজ চালিয়ে গেলে জয় তাদের আসবেই, দরকার অসীম ধৈর্য ও দম ধরে রাখা। 

উপলব্ধি ২
বিলাত প্রবাসী বন্ধুর সাথে বেশ কদিন আগে ফেসবুক টুকটাক কথা বলছি। কথায় কথায় ও বলে  'তোরাই ভালো আছিস'। ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া শেষ করে ব্রিটিশ টেলিকমে কাজ করা বন্ধুর কথায় তেমন একটা অবাক হইনি অবশ্য, এমনি অনেকের কাছ থেকেই সব সময়ই শুনি। আমি বলি ' ক‌্যামনে?'। তারপর শুরু হলো ওর সেই চিরায়ত হা হুতাশ। ও ওটা করেছে , সেটা ওটা কিনেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।


মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১২

ক্যামেরা বাজী

কোন মন্তব্য নেই :
বেশি দিন আগের কথা না। তখন মানুষের হাতে হাতে ক্যামেরা লাগানো মোবাইলতো দূরের কথা বাসায় টেলিফোন থাকাটাই গল্প করার মতো ব্যপার ছিলো। ডায়াল ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে ফোন করে ক্রস কানেকশনে প্রেম নিয়ে গানও গাওয়া হতো তখন। পুরো শহর ঘুড়ে এক আধজন মানুষের কাছে ক্যামেরা মিলতো। বাসার সবাই সেজে গুজে মুখে পাউডার লাগিয়ে স্টুডিওতে যেতো ছবি তুলতে। বাসার পুরোনো এলবাম ঘাঁটলে সবার বাসাতেই এমন অনেক ছবি পাওয়া যাবে। সেটা সেই এনালগ যুগের কথা। শেখ হাসিনার হাস্যকর ডিজিটাল বাংলাদেশ হবারও অনেক আগের কথা।

যুগ বদলেছে। মানুষের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন, সেই ফোনে গান শোনা থেকে শুরু করে মায় ছবি পর্যন্ত তোলা যায়। সস্তা ডিজিটাল স্টিল ক্যামেরাও হাতের নাগালে। আগে ছবি তুলবার সময় যদি দেখা যেতো হিসেব থেকে একটি ছবি তোলা গিয়েছে বেশী তবে মনটা ভরে যেতো খুশিতে। প্রিন্ট করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবার তর সইতো না। ১৯৮৪ কি ৮৫ এর দিকে একটা ইয়াসিকা ক্যামেরা কেনা হয়েছিলো। পরিবারতো দূরের কথা পুরো বংশেই প্রথম ক্যামেরা। পাড়া দোকান থেকে ফিল্ম ভরে ছবি তুলে সেই ছবি ঢাকায় পাঠাতে হতো প্রিন্ট করবার জন্য। রংপুর শহরে তখন কোনো কালার ল্যাব ছিলো না। এক সপ্তাহ পর যখন ছবি হাতে পাওয়া যেতো তখন সবার মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যেতো দেখতে। এর মাথা কাটা গিয়েছেতো ওর হাতা এমন ছবিও মুগ্ধতার দৃস্টিতে দেখে এলবামে রেখে দেয়া হতো সযতনে। অতিথি আসলে সে এলবাম বেড় করা হতো আলমিরা থেকে। ১ যুগ পরে আমেরিকা থেকে একটা ডাউস সাইজের হ্যান্ডি ক্যাম কেনার পর ধুম পড়লো ভিডিও করতে। সারা রাত ব্যাটারি চার্জ করে ছোট্ট ক্যাসেটে ৪০ মিনিটের ভিডিওগুলো করবার পর সেটা ভিসিআর এ দেখবার আমেজটা ছিলো অন্য রকম।

এতো গেলো শখের ক্যামেরাবাজীর কথা। যারা ক্যামেরা ও ছবির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো তারা আরো দু ধাপ এগিয়ে এসএলআর ক্যমেরা ব্যবহার করতেন। সাথে থাকতো লম্বা ডাউস সাইজের সব লেন্স। দেখলেই কেমন জানি লাগতো। ক্যামেরার কারিগরী ব্যপারগুলোও জানতে হতো নিজেদেরকেই। ছোট খাটো সারাই থেকে শুর করে ছবি প্রিন্ট করাটাও নিজেকেই করতে হতো। এরকম অনেকের বাসাতেই ডার্ক রুম নামক একটা রুম থাকতো যেখানে কাপড় শুকানোর দড়িতে কাপড়ের বদলে ছবি শুকানো হতো। রাতে প্রসেস করে সকালের চা হাতে ছবিগুলো দেখা হতো।

সময় বদলেছে এখন। সেই এসএলআর ক্যামেরার বদলে এসেছে ডিএসএলআর ক্যামেরা। হার্ডকোর ক্যামেরাবাজ দের পাশাপাশি শখের ক্যামেরাবাজরাও ছবি তোলার জন্য ডিএসএলআর কিনছেন। দামও কমে আসছে। ক্যামেরা চালাবার জন্য যে কঠিন ও গভীর কারিগরি জ্ঞন দরকার ছিলো তার বদলে কিছু ম্যানুয়াল আর টিপস পড়েই দারুন সব ছবি তুলছেন অনেকেই। আগে যেখানে অনেক সময় ও ধৈর্য নিয়ে যে ছবি তোলা হতো সেখানে ইচ্ছে মতো ক্যামেরা খিঁচে যাওয়া যায়। ভালো না লাগলে আরেকটা তুলো, তুলতেই থাকো - ঝড়ে বক মারো রে টাইপের আর কি। আগে যত্ন করে ছবি তোলার পর আর কোনো কারসাজী করা যেতো না,  ‌এখন ছবি তোলার পর ফটোশপে ছবিতে কারসাজী করা যায়। হাজার হাজার ছবিতে টেরাবাইটের হার্ড ডিস্ক ভরে ফেল যায়।

কোথাও গেলেই দেখা যায় এক দল লোক গম্ভীর মুখে গলা লম্বা লেন্স ওলা ডিএসএলআর লাগিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন আর হেঁটে বেড়ানো পিঁপড়ে থেকে শুরু করে সাজুনে ললনাদের ছবি তুলতে ব্যস্ত। কাঁধে ব্যাগ , শরীরে কয়েক হালি পকেট ওলা জ্যাকেট পড়া সদা ব্যস্ত শুয়ে - বসে - বেঁকে - বকের মতো এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছবিতোলায় ব্যস্ত মানুষগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে " আম্মো ক্যাম্রা কিনুম একডা, ফাডায়ামু সব "।
   

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১২

স্বার্থপর জীবন

1 টি মন্তব্য :

দূরালপনীতে - ফেসবুকে - তড়িৎ বার্তায় নিয়মিতই খবর পেয়ে যাই কোথায় কে কেমন আছে। কেউ হয়তো নতুন চাকুরি পেলেন, কেউ বা চাকুরি হারা। কেউ অর্থের অভাবে কিছুই করতে পারছে না , আবার কেউ বা লাখ টাকা দিয়ে শাড়ি কিনছে। দেশে কি হচ্ছে , পৃথিবীতে কি হচ্ছে - সব খবরই রাখা হয়। এক সময় সব কিছু ভুলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সব কথার শেষে এটাই বলতে পারি, নিজেকেই বড্ড ভালোবাসি। নিজ সন্তান - নিজ পরিবারের ভালোটাই সব কিছুর উপর প্রাধান্য পায়। হয়তো বড্ড স্বার্থপর শোনাচ্ছে তবুও কস্ট হলেও বলতে হয় ' স্বার্থপর জীবন ' কাটাচ্ছি।  দিনের শেষে নিজে কিছু করতে না পারলে, সেই ব্যর্থতার জন্য সবার করুনা পাবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। অভিজ্ঞতা বদলিয়ে দিচ্ছে নিজেকে প্রতিনিয়ত। এ পরিবর্তন টুকু টের পাই।