বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১০

মাদামের লগে শপিং করলুম

1 টি মন্তব্য :
মাছের বাজারে কালামের কাছ থেকে কে সবচাইতে বড় রুই মাছটা কিনলো বা কে গৌরাঙ্গ বাবুর মুদির দোকান ওরফে গৌরাঙ্গ ভ্যারাইটি স্টোর থেকে ভাতের চাল হিসেবে কালিজিড়া কে কেনে সেটা জানার কৌতুহল কোনো কালেই ছিলো না। তবে জানা ছিলো আশে পাশে অনেকেই কেনে। বেতন যাই হোক না কেনো বাজারের সেরাটা তার চাইই চাই। আসলে ছোট থেকে চার পাশে ঘুষের টাকার এতো ছড়াছড়ি দেখেছি যে তা গা সহা হয়ে গিয়েছিলো। এ মুহুর্তে আন্টিদের গহনা বা শাড়ির প্রতিযোগীতা কথা বাদই দিলাম।

কিছু দিন আগের কথা। হাতে টাকা পয়সা তেমন নেই (এটা কোনোকালেই তেমন একটা থাকে না)। সুপার মার্কেট ঘুরে ঘুরে কোন জিনিস স্বস্তায় দিচ্ছে বা স্পেশালে আছে তা খুঁজে খুঁজে কেনার চেস্টা করছি।

গল্পের খাতিরে এখানে একটু বলা নেয়া দরকার যে, "হোমব্রান্ড" নামে একটা ব্র্যান্ড এখানে পাওয়া যায়। ভালো জিনিসই এরা দেয় কিন্তু বাজারের অন্য সব নাম করা ব্র্যান্ডের চাইতে অনেক কম দামে। যেমন ধরা যাক, হোম ব্র্যান্ডের চিনির ৩ কেজির প্যাকের দাম যদি হয় ২ ডলার তবে 'সিএসআর' এর চিনির দাম হবে ৪ ডলার। চায় চিনি মেশানোর পর সব চিনিই একই, সে মকবুল ব্র্যান্ড হোক আর সিএসআরই হোক। আমি হোম ব্রান্ডের জিনিস কিনি সবসময়ই। হোম ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো কিন্তু শেলফের নিচের দিকে থাকে। ক্রেতারা সেগুলো কিন্তু সেখান থেকেই তুলে নেন। দামি গুলো সেলফের চোখের সমান্তরালা রাখা হয় যাতে সহজেই চোখে পরে।

এখন গল্পে ফেরত আসা যাক। গল্পের প্রধান চরিত্রের সাথে প্রথম মোলাকাত সেখানেই। আমি উবু হয়ে নিচের শেলফ থেকে চিনি নেবার সময় শুনি পাশে বাঙলায় আলাপ চারিতা। গল্পের নায়িকা হোমব্রান্ডের জিনিস কেনেন না, উনি কিনবেন সিএসআর ! তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছে হলো উনার বদন মুবারক। উনি সিএসআর এর চিনি কিনলেন। পেছনে ট্রলি ঠেলা মানুষটির দিকে বুঝে উঠতে পারলাম সে হেল্পিং হ্যান্ড, বাংলায় যাকে কাজের ছেলে বলা যায়। নায়িকার সাথে উনার পুত্রধনও। রাজপুত্রকে চেনা চেনা লাগছিলো, মনে হচ্ছিলো কোথায় যেনো দেখেছি।

কৌতুহল হলো নায়িকার পরিচয় জানবার। মফিজের মতো তো তাকে জিজ্ঞেস করা যায় না যে ' মাদাম আপনার পরিচয় !'। ভাবলাম পেছনে পেছনে হাঁটি উনাদের, দেখি কি কেনেন উনারা। হাতে সময় ছিলো যথেস্ট । তথাস্হ, হাঁটা শুরু করলাম।

উনারা এই আইল থেকে ঐ আইলে যান। আমি নিরাপদ দূরত্ব থেকে লক্ষ্য করি উনাদের ও আর চোখে তাকিয়ে দেখি কি কেনেন উনারা। আস্তে আস্তে পুরো ট্রলি দেখি ভর্তি হয়ে গেলো হড়েক রকম জিনিসে। পুরোটা সময়ই লক্ষ্য করেছি উনি কি কেনেন। সব সে সব ব্রান্ডের জিনিস যা সব সময়ই আমি এড়িয়ে চলি সেটা কেনার সাহসের অভাবেই হোক আর পকেটের সীমাবদ্ধতার কারনেই হোক। উনি কিনছিলেন আর সেটা কোনো জিনিসের কি দাম সেটা পরখ না করেই। তথাকথিত স্বস্তা ব্র্যান্ড গুলো যতন সহকারে এড়িয়েও যাচ্ছিলেন।

আমি কিন্তু বেশ অবাক হয়েছিলাম। অনেক বাঙালিকেই চিনি যাদের আর্থিক সক্ষমতা সম্পর্কে ভালো ধারনা আছে। উনাকেতো চিনতে পারছি না না ! ক্যানবেরাতে কি কোনো মাল্টি মিলিওনারের আগমন ঘটলো যাকে আমরা চিনি না ! ? চেক আউটের কাছে গিয়ে দেখবার আগ্রহ ছিলো কত হলো সব মিলিয়ে। উপায় ছিলো না বলে দেখা হলো না। আফসুস!

দূর থেকে তাকিয়ে দেখছিলাম গল্পের নায়িকাকে। নায়িকার চেহারার পরতে পরতে ঔধ্যত্ব। পারলে মনে হয় চেকআউটের বালিকাকে কাঁচা খেয়ে ফেলেন উনাকে যথাযথ সম্মান না দেখানোয়। মনে মনে মনে হয় বলছিলেন " বেটি আমারে চিনস আমি কে, সম্মান করে ম্যাডাম ডেকে কথা ক, নইলে তোর চাকরি খায়ালামু কাঁচ্চা "।

কিছু দিন আগে ওয়েবে হারমনিয়াম বাজানো রত গল্পের নায়িকার ছবি দেখার সাথে চিনে ফেল্লাম। আরে এই তো সে ! না উনি কোনো মাল্টি মিলিওনার না বা মাল্টি মিলিওনারের পত্নী নন। বাংলাদেশ সরকারের লে.জে লাগানো প্রতিনিধির সহধর্মিনী। গরিব দেশের বড় লোক প্রতিনিধি। এত দিন অনেক কথা শুনেছি 'মাদামের' সম্পর্কে। সে দিন সুপার মার্কেটে চক্ষু কর্নের বিবাদ মিটেছিলো।

অনেক দিন পর একজনের ঔধ্যত্বপূর্ন অহংকারী চেহারা দেখলাম। দেখলাম বেহেসাবী খরচ। অস্ট্রেলিায়ায় কাজের ছেলেকে নিয়ে কাউন্টেসের সদাই যজ্ঞ দেখলাম। সেই রকম সদাই। চোখ জুড়ানো, মন খারাপ করানো।

মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১০

বাবালা আমার

৫টি মন্তব্য :
পিতা হওয়ার অনুভূতি সবসময়ই অন্যরকম। সেটা পৃথিবীর অন্য কোনো অনুভূতির সাথে তুলনা করা যায় না। এই অনুভূতিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য যতই অলংকার ব্যবহার করা হোক না কেনো মনে হয় কোথায় যেনো ফাঁক রয়ে গেলো, প্রতিনিয়তই মনে হয় এই বুঝি আরেকটু লেখা যেতো।

৪ ডিসেম্বর ২০১০ এর সকাল ৮:১৮ যেনো অন্য রকম একটি সকাল। কোনো রকম প্রস্তুতিই ছিলো না আমাদের মাঝে। আমরা দিন গুনছিলাম সামনের দুটি মাস কিভাবে যাবে তার পরিকল্পনা করে।

নতুন বাসা গোছানোর  ব্যস্ততার মাঝে হঠাৎই হাসপাতালে যাবার তাড়া । ডাক্তার বল্লো রাতটি হাসপাতালে থেকে যেতে। দিব্যকে নিয়ে যখন বাসায় এলাম তখনও জানতাম না কি অপেক্ষা করছে সামনে। ভোরে একজনকে দেশের উদ্দেশ্য বিদেয় দিয়ে যখন বাসা ফেরার পরিকল্পনা করছি তখন হাসপাতালে যাবার তাড়া পেলাম। ছেলেকে এক বাসায় রেখে তড়িঘড়ি করে বাসায় এসে যেই না গরম গরম পরোটায় দু কামড় দিয়েছি সেই মাত্র মিডওয়াইফ এর ফোন, আমাদের দ্বিতীয় সন্তান আসছে পৃথিবীতে। পড়িমড়ি করে ছুটে যাবার আধেক ঘন্টার মাঝেই "শুভ্রের" কান্না, সাথে কি আমিও একটু কেঁদেছিলাম?

পৃথিবীর অনেক কিছুই হিসেব মতো হয় না। "শুভ্রের" আসার কথা ছিলো সেই ফেব্রুয়ারীতে, সে চলে এলো ডিসেম্বরে। 'থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে , দেখবো এবার জগৎ টাকে' গান গাইতে গাইতে ছেলে আমার আর তর সইতে পারলো না। চলে এলো আমাদের মাঝে।

কোনো রকম প্রস্তুতিই নেই তখন আমাদের মাঝে। অর্ধযুগ পর পরিপূর্ন বেকার আমি। ছেলের নামও ঠিক করা হয়নি। হাতে টাকাও নেই বাড়তি কিছু খরচ করবার মতো। পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই যে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে মমতায়। সব কিছুই নিজের উপরে। তারপরো কোনো কিছু থেমে থাকেনি। আল্লাহর রহমতে সব কিছু এতো সুন্দর ভাবে সব কিছু হয়েছিলো যে মনেই হয়নি আত্মীয় স্বজন হীন এই দেশে একলা মানুষটি একবারের জন্যও বিচলিত হবো।

জন্ম মুহুর্তগুলো ছিলো কেমন যেনো অন্যরকম। দু মাসের প্রি ম্যাচিউরড ছেলে আমার কাঁদছে, বউ বলছে কাঁদছে না কেনো ! মিডওয়াইফ ম্যাগি অভয় দিয়ে বলছিলো ঐ যে তোমার লিটল ওয়ান কাঁদছে। নার্সরা তখন ব্যস্ত ছোট্ট পুতুলের মতো ছেলেটিকে পরম মমতা ও দক্ষ হাতে ইনকিউবেটরে ঢোকাতে ও সব রকম লাইফ সাপোর্ট এর ব্যবস্থা করতে। ছোট্ট পুতুলটিকে ওরা নিয়ে গেলো ইন্টেনসিভ কেয়ারে। ডেলিভারী স্যুটে শুধু আমরা তিন জন।

প্রতিটি জন্ম মুহুর্তই স্বর্গীয়। তা সে বাগানে সদ্য ফোটা বুনো ফুল হোক আর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়া কিচির মিচির করা এক দল শিশু হাঁসের ছানাই হোক।

আমার ছোট্ট বাবাটি ভালো আছে। কোনো রকম সমস্যা নেই। দেখতে দেখতে কিভাবে যেনো ২৪ টা  দিন পার হয়ে গেলো টেরই পাচ্ছি না। প্রতিদিন সময় করে যাই বাবাকে খাওয়াতে। ডাক্তার বলেছে আর দু হপ্তা থাকতে হতে পারে। বাবালাকে যখন বুকে জড়িয়ে ধরি তখন কি যে ভালো লাগে। বাবালার কানে কানে আজ বলেছি, ' বাবা তোমার কত ভাগ্য তুমি এ দেশে জন্মিয়েছো, তোমার জায়গায় আমি হলেতো মরেই যেতাম"।

ছেলে আমার ভালো আছে। ছেলের মা ভালো আছে। হয়তো জন্মে মিস্টি খাওয়ানো হয়নি কাউকে, হয়তো বলার মতো তেমন কিছু কেনাও সম্ভব হয়নি ছোট বাবালার জন্য তারপরো বাবা মার ভালো বাসা পরতে পরতে জড়িয়ে আছে, দাদা - দাদু - নানা - নানুর দোয়া ঘীরে আছে তোমাকে। মানুষের মতো মানুষ হও বাবালা আমার।

সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১০

কত কিছু যে ঘটে গেলো এই কটা দিনে

২টি মন্তব্য :
দ্বিতীয় বারের মতো পিতা হলাম।
৪ ডিসেম্বর সকাল ৮:১৮ টা যেনো অন্যরকম ভাবে লেখা হলো মনের মাঝে।

প্রায় অর্ধযুগ পর নতুন  ঠিকানা লিখতে শুরু করেছি॥॥
নতুন চাকুরি , নতুন আবাস, নতুন টেলিফোন নাম্বার, নতুন বস, নিত্য নতুন সব অভিজ্ঞতা।

নিদারুন ব্যস্ততা, পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই।
কুচ পরোয়া নেহি, ওয়ান ম্যান আর্মি ।

কত কিছু যে লিখতে ইচ্ছে করছে। আজ না হয় তো আরেকদিন লেখা হবে।

আল বিদা ইয়া হাবিবী।