সোমবার, ২৯ জুন, ২০০৯

রবি ঠাকুরের কোলে

কোন মন্তব্য নেই :
অনেক বছর আগের কথা।
দু যুগ হলেও হতে পারে।
রবি ঠাকুরের কোলে উঠেছিলাম সেবার।
লম্বা দাঁড়ি ওলা লম্বাটে আকৃতির রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অনেক কিছু ভুলে গেলেও সেই লম্বা দাঁড়ির কথা ভুলতে পারিনা এখনো।
আজ কবি নির্মেলেন্দু গুনের ছবি দেখে পুরোনো স্মৃতি মনে পরে গেলো হঠাৎই।
মানুষটি ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুন। প্রতিবেশী নির্মলেন্দু গুন তখন উনার প্রাক্তন ডাক্তার স্ত্রীর সাথে ময়মনসিঙে থাকতেন।
অনেককাল একটা ভুলের মাঝে ছিলাম। ভাবতাম রবি ঠাকুর !
এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় রবি ঠাকুরের কোলে উঠেছিলাম।
বিলম্বিত জন্মদিন আপনাকে , প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুন।
আপনি ভালো আছেন তো ?

শনিবার, ২৭ জুন, ২০০৯

সমালোচকের খড়গ তলায় প্রিয় অস্ট্রেলিয়া.কম এর ৫ম জন্মদিন

1 টি মন্তব্য :
"২০ জুন, শনিবার " , ‌ক্যালেন্ডারে অনেকদিন ধরেই লাল রঙে এমন ভাবে চিহ্ন দেয়া ছিলো যাতে প্রথমেই নজর কারে। দিনটি ছিলো প্রিয় অস্ট্রেলিয়া.কম এর ৫ম জন্মবার্ষিকী। মজার ব্যাপার হলো প্রিয় অস্ট্রেলিয়া. কমের ৫ম জন্মদিনের সাথে সাথে অস্ট্রেলিয়ায় আমারও ৫ বছর পূর্তি হয়েছে। ব্যাপারটা একরকম কাকতালীয়ই বলা যায়। দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে প্রিয় বলার মতো অবস্থায় এখনো আসতে না পারলেও সাইট হিসেবে প্রিয় অস্ট্রেলিয়া.কমকে প্রিয় বলতেই পারি, সম্তাহের অন্ত‌ত একদিন হলেও সেখানে ঢুঁ মারা চাই।

মজা করে প্রায়শই 'নটার গাড়ি কটায় ছাড়বে' বলা হলেও অনুস্ঠান শুরু হয়েছিলো কাঁটায় কাঁটায় ১০ টার সময়েই যদিও সে সময় অতিথীর চাইতে আয়োজকদের সংখ্যাই বেশী ছিলো। সময়ের সাথে সাথে অতিথীদের আনাগোনা বাড়তে বাড়তে একসময়ে সেটা মেলায় রুপ নেয়। আমি নিজেও অবশ্য পৌঁছেছিলাম ১০টা বাজার ঠিক ২ মিনিট আগে। CSIRO Discovery অপটাস লেকচার থিয়েটারে সেবারই ছিলো আমার প্রথম পদধূলি। মুল অস্ঠানের বাহিরে বেশ কিছু স্টল ছিলো । অনুস্ঠানের মূল পৃস্ঠপষকদের মাঝে যাদের নাম সবার প্রথমে আনতে হয় সেই MCCA এর স্টলটি ঢুকতেই হাতের বামে, একপাশে আইলা সাইক্লোনের জন্য ডোনেশন কালেকশনের জন্য একটি টেবিল, অন্যপাশে একটি আর্কিটেকচারাল ফার্মের ও ক্রিকেট নিয়ে একটি ওয়েবসাইটের দুটো টেবিল।

খাবারের জন্য একটি স্টল ছিলো যথারীতি। "গোট তেহারী" , "চিকেন বিরিয়ানী " দুটি হাস্যকর হাইব্রিড নামের ৫ ডলার/প্যাকেট দামের আইটেমের নাম করতেই হয়। কেনো বাপু "খাসীর তেহারী, মোরোগ পোলাও " এ নামে ডাকলে কি জাত চলে যেতো ? দাম কমাতে গিয়ে খাবারের মান এতো খারাপ করতে হয় সেটা জানা ছিলো না। অন্যসবব আইটেম চলনসই তবে স্প্রিং রোলের মাঝে কি ছিলো সেটা খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। দূপুরের খাবারের বিরতিতে ক্যাফের সামনের অংশটুকু পেট পূজোরত অতিথীদের কলকাকলি দেখে ভালোই লাগছিলো। বাঙালী দেশে হয়তো কিউয়ে দাঁড়াতে অভ্যস্থ নয় কিন্তু এখানে ঠিকই লাইন ধরে খাবার কিনেছিলো, খেতে খেতে এখানে সেখানেও খাবার ছড়ায়নি।

খাবারের স্টলের সামনেই ছিলো মুক্তিযু্দ্ধ নিয়ে বইয়ের স্টল। তবে খুব কম মানুষকেই বই নাড়া চাড়া করতে দেখেছি এবং তাদের সবাই ছিলেন মধ্য বয়স্ক। ক্যানবেরার নতুন প্রজন্মের যারা আছে তাদের যেখানে বাঙলা বলতেই সমস্যা হয় সেখানে বাঙলা বই পড়ার কথা চিন্তাই করা যায় না। জিনিসটা হতাশাকর ছিলো আমার কাছে। মুক্তিযুদ্ধকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার এ চেস্টাকে সাধুবাদ জানাতেই হবে আয়োজকদের।

জাকিয়া হোসাইনের দ্বিতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী ছিলো খাবারের স্টল ও বইয়ের স্টলের পাশেই। অপেশাদার আনাড়ি একজন শিল্পীর সাথে পরিচিত হতে পেরে ভালো লেগেছে, তবে উনি যখন ছবিগুলো বোঝাতে চেয়েছেন তখন কিছুই বুঝতে পারিনি যদিও এব্সট্রাক্ট আর্ট বলতে যে উত্তর আধুনিক চিত্রকলা বাজারে প্রচলিত সেগুলোর কোনোটাই সেখানে ছিলো না।

এবারে আসা যাক মুল অনুস্ঠানে।

সকালে বেলায় পাখিদের জন্য লাল টি-শার্টটা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি, যদিও লাল রঙ দেখে রাস্তার লাল বাতির কথা মনে পরে যাচ্ছিলো ও নিজের অজান্তেই গাড়ির ব্রেকের মতো নিজেকে থামাবার মতো পা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। বাচ্চাদের হাতে বেলুন দেবার সাথে সাথে বড় পর্দায় "মনপুরা " ও দিলারা জামান ও শর্মিলী আহমেদের আলাপচারিতা " ও বন্ধু আমার " খুব সম্ভবত অনেকেই মিস করেছেন দেরীতে আসবার কারনে। ক্যানবেরার বাঙলা স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের গান - কবিতার সাথে সাথে নাচ - দলীয় উপস্থাপনা দারুন উপভোগ করেছি। দেশ - দেশের সংস্কৃতি হতে হাজার মাইল দূরে থেকেও ছোট ছোট বাচ্চারা কি অসাধারন কাজ করে চলছে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না। ক্যানবেরা বাঙলা স্কুল ও এর শিক্ষার্থীদের আমি ১০০ মধ্যে ১১০ দিতে চাই। ফ্যাশন শোটিকে দেখে মজা লেগেছে, পশ্চিমা আচারে প্রাচ্যের মসলা। তবে এ প্রসংগে একটি কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, " বাঙলা উচ্চারন " । বাচ্চাদের মুখে ইংরেজী প্রভাবান্বিত বাঙলা কানে বড্ড বাজে লাগে। আশা করি বাবা-মারা এটা নিয়ে সচেতন হবেন। শুদ্ধ উচ্চারনে বাঙলা - শুদ্ধ উচ্চারনে ইংরেজীর বিকল্প নেই।

অনুস্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে যাত্রার ঢঙে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস ও মুক্তিযু্দ্ধকে বর্তমান প্রজন্মের সাথে সাথে ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেবার অসাধারন প্রচেস্টাকে আমি প্রচন্ডভাবে উপভোগ করেছি, এটিকেও আমি ১০০ এর মাঝে ১১৫ দিতে চাই। অনুস্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই যাত্রা পালার মাধ্যমে পলাশী থেকে ৭১ পর্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধার সম্ভব হয়েছে যদিও মাঝে মাঝেই শব্দ প্রক্ষেপনের জন্য শুনতে সমস্যা হয়েছে। এটি এ অনুস্ঠানের একটি ব্যতিক্রমি কিন্তু অনুসরনীয় দিক।‌

অনুস্ঠানের এক পর্যায়ে ছিলো সম্মাননা প্রদান। ২০০৯ এর প্রিয় বাঙালীর সম্মাননা পেয়েছেন এডেলেইডের ড. রফিকুল ইসলাম , প্রিয় লেখক ২০০৯ পেয়েছেন সিডনীর জন মার্টিন, প্রিয় লেখক ২০০৬ পেয়েছেন ক্যনবেরার আফজাল হোসেন, প্রবাসী বাঙালী ও বাংলাদেশকে সবার মাঝে তুলে ধরবার জন্য আজীবন সম্মাননা ২০০৯ পেয়েছেন শ্রদ্ধেয় জনাব হাসমত আলী, প্রিয় ব্যক্তিত্ব ২০০৯ জনাব সিরাজুল সালেকীন, প্রিয় বন্ধু ২০০৯ পেয়েছেন সর্বপ্রিয় মিন্টু ভাই। প্রিয় লেখক ২০০৭ ও ২০০৮ কে পেলেন সেটা অবশ্য জানা হলো না।

যারা গান গেয়েছেন তাদের মাঝে মিন্টু ভাইয়ের গান ভালো লেগেছে সেরম। ইচ্ছে হচ্ছিলো উনাকে আমি অতীতকালের রাজা জমিদারদের মতো একটা মেডেল দেই। অভিজিতের গান ভালো লাগেনি, এটাকে নিয়ে বলার মতো কিছু পাচ্ছি না যদিও উনি অনেকগুলো জনপ্রিয় গান গেয়ে দর্শক মাতিয়েছেন।

এসব কিছুর মাঝেই এক পর্যায়ে ছিলো জ্ন্মদিনের কেক কাটা। বুড়োদের বাদ দিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের দ্বারা কেক কাটানোটা ভালো লেগেছে। কেক ছিলো টকটককে লাল রঙের। যদিও এটা দেখে লাল ক্যাপসিকামের কথা মনে পড়ছিলো, তবে কেকের ডিজাইনটা ভালো লেগেছে।

অনুস্ঠানের মাঝে মাঝে বেশ কিছু পারফরমেন্স আমি মিস করেছি বাহিরে আড্ডা দেয়ায়। যেমন বাঙালী বিজনেস ডিরেক্টরী, প্রিয় অস্ট্রেলিয়ার ফটো লাইব্রেরী। এগুলোর সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না বলে দুঃখিত। অনুস্ঠানের শেষের দিকটায় ব্যক্তিগত ব্যস্ততার তাড়নায় চলে আসায় শেষের আকর্ষন গুলো মিস করেছি।

পুরো অনুস্ঠানটি অনলাইনে স্টিমিং করা হয়েছিলো প্রিয় অস্ট্রেলিয়া.কম সাইটে যাতে যারা আসতে পারেনি তারাও আন্তর্জালিক অংশগ্রহন করতে পারেন। গ্যালারীর মাঝে কোনোরকম ধন্যবাদের আশা না করে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া মানুষটিকে ধন্যবাদ না জানালে সব কিছুই বৃথা হবে।

অনুস্ঠানে পরিচিত অনেককেই দেখতে পাইনি। হয়তো ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেননি অনেকেই, হয়তো প্রিয় অস্ট্রলিয়ার জন্মদিনে কেনো যাবো এরকম হিংসার জ্বালায় ভুগে আসেনননি , হয়তো অনুস্ঠানে মুক্তিযুদ্ধকে প্রমোট করা হবে এটা ভেবে ভয়ে আসেননি। নিজেকে বড় করলে- উদার করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না, সেটা অনেকেই জানেন না।

জন্মদিনের পুরো অনুস্ঠানটি পেছনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতেই হবে। সুনির্দিস্ট ভাবে কারো নাম উল্লেখ না করে আমি সবাইকেই ধন্যবাদ জানাই আমাদের সুন্দর একটি দিন উপহার দেবার জন্য ও অনুস্ঠানকে স্বার্থক করবার জন্য। অনুস্ঠানের উপস্থাপক যদি উনার স্বভাব সুলভ চটুলতাকে একটু পাশে সরিয়ে একটু গম্ভীর হতে পারতেন তবে মন্দ হতো না।

সবশেষে থ্রি চিয়ার্স ..............সব কামলাকে ।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০০৯

একদা ক্ষমতাশালী একজন ক্ষমতাহীন মানুষের পদাবলী

কোন মন্তব্য নেই :
১৫ নাম্বার মিন্টু রোডের লাল দালানে যদি কখনো দেখা যায় পুলিশের টিকটিকি অফিসাররা হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে কাজ করছেন তখন বোঝা যাবে উনারা ফায়ারিং করে এসেছেন। বছরের কোনো এক সময় বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক কোনে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রান্চের অফিসারদের বার্ষিক ফারারিং প্রাকটিস হয়ে থাকে। প্রাকটিসে কতগুলো গুলি ফোটানো হয় বা কি অস্ত্র ব্যবহার করা হয় সেটা লেখায় অবশ্য আসছে না।

আজকের গল্পের একটি চরিত্র আমারই বাবা। কোনো এক সময় পুলিশে ছোটখাটো একজন অফিসার ছিলেন। এখন অফুরন্ত অবসরে রাজা উজির মারেন, বিশাল বিশাল ফাইল তৈড়ি করে সারা জীবনের সন্চয়ের হিসেব নিকেশ করেন। অবশ্য ফাইল তৈড়ি করা ছাড়া কাজের কাজ তেমন কিছুই হয় না।

বেশ ক বছর আগের কথা । যথারীতি ব্যান্ডেজ বেঁধে উনি অফিস করছেন, দূপুরে ফায়ারিং প্রাকটিসও করছেন। গুলি টার্গেটে পৌঁছুচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে অবশ্য তেমন মাথা ব্যাথা দেখা যায়নি উনার মাঝে। গুলি ছোঁড়া হচ্ছে এটাইতো অনেক কিছু ! প্রাকটিস শেষে গতদিনের দেয়া ফখরুদ্দিনের কাচ্চি না আজকের হাজির বিরিয়ানী খেতে ভালো সেটা নিয়েই মনে হয় বেশী মাথা ব্যাথা ছিলো উনার। এটা নিয়েও গল্প বলছি না আজ।

যাই হোক; আবেগীয় মানুষদের মাঝে যেটা হয় । বাসায় এসে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিবেশ কত সুন্দর, কত নিরাপদ সেটা নিয়ে মোটামুটি একটা বড় বক্তমা ঝেড়ে ফেল্লেন। ঢাকার মানুষ কেনো বোটানিক্যাল গার্ডেনে সকাল বিকাল বেড়াতে যায় না সেটা নিয়ে কস্ট প্রকাশ করার সাথে সাথে সাংবাদিকরা সেখানকার ছিনতাই নিয়ে গল্প ফাঁদে , কেনোই বা হকারদের হয়রানী নিয়ে নিউজ করে মানুষের মাঝে আতংক স্মৃস্টি করে সেটা নিয়ে সাংবাদিকদের একরকম ঝেড়েই ফেলেছিলেন। পুলিশদের সাংবাদিক বিদ্বেষ অবশ্য সেটায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিলো। বোটানিক্যাল গার্ডেনের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে ধারনা না থাকাতেই উনি এসব বলেছিলেন। একগাদা ডি.বি. অফিসার গাড়ি হাঁকিয়ে সকাল বিকেল সেখানে যাচ্ছেন , গুলি ফোটাচ্ছেন ! আর কোন ছিনতাইকারীর বাপের সাধ্য আছে সেখানে যাবার ? আর সেটা দেখেই উনার ধারনা হয়েছিলো ওখানকার পরিবেশ কতো সুন্দর !!

এত সব কিছুর বলার উদ্দেশ্য, পুলিশের অফিসাররা নিরাপদ পরিবেশ বসে ও ক্ষমতার বলয়ে বাস করে আশে পাশের কতকিছুই যে দেখতে পান না-- কতকিছুই যে বোঝার ক্ষমতা হারান সেটাই বোঝানো। এটা যে শুধু আমার বাবার ক্ষেত্রেই হয়েছে সেটা নয়, এটা আমি অনেক পুলিশ অফিসারদের মাঝেই দেখেছি। উপরের ছোট্ট একটি উদাহরন দিয়ে জিনিসটা বোঝাতে চেয়েছি। চাইলে আরো অনেক উদাহরন দেয়া যাবে। অবশ্য এ বোঝার ক্ষমতাহীনতা বা বোধহীনতা অনেক অনেক সময়ই ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে সেটাও অস্বীকার করছি না।

এসব পুলিশ অফিসার বা ক্ষমতায় থাকা মানুষগুলোর সমস্যা শুরু হয় যখন তারা ক্ষমতা হাড়িয়ে সাধারন মানুষের কাতারে এসে দাঁড়ান। সেসময় পরনে তারকা লাগানো ইউনিফর্ম থাকে না, নীল রঙের পুলিশের গাড়ি থাকে না, বডি গার্ড থাকে না, স্যালুট করবার কেউ থাকে না। সম্মান করে স্যার বল্লেও যখন আদেশ শোনবার কেউ থাকে না তখন জীবনটাকে খুব কাছ থেকে দেখে উনাদের অনেকেই অসহায় হয়ে পড়েন। অবশ্য যে সমস্ত পুলিশ অফিসার অজস্র টাকার মালিক ও রাজনীতির ছায়ার নৃত্যরত তাদের ক্ষমতার হেরফের হয় না, নাটক তখন টিলিফিল্মে রূপ নেয়।

এবারের সিকোয়েন্সে ব্যক্তিগত কিছু ঘটনা। গত দু মাস ধরে আমাদের পরিবার একটি দূঃসময় পার করছে যার আপাত সমাধান গতকাল আমরা করতে পেরেছি । যে সমাধান আমরা করতে চেয়েছি আইনের মাধ্যমে, যে সমাধান আমরা করতে চেয়েছি প্রশাসনের মাধ্যমে, যে সমাধান আমরা করতে চেয়েছি শান্তিপূর্ন ভাবে সেই সমাধান আমাদের করতে হয়েছে আইন না ভেঙে - আইনের ফাঁক গলে শক্তি দিয়ে। আদালত যখন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়, পুলিশ যখন টাকার কাছে বিবেক বিক্রি করে, রাজনীতির নামে তথাকথিত দেশ সেবকরা যখন টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না, স্বজনও যখন পিঠে দেখায় তখন কিইবা করা থাকে আয়ের একমাত্র সংস্থানকে নিজের দখলে ফীরে পেতে ? হয়তো লিখে লিখে অনেক কিছুই বলা যায় - গলাবাজী করা যায় কিন্তু বাস্তবতা সবসময়ই অন্য কিছু বলে।

এর সব কিছুই হয়েছে আমার বাবার চোখের সামনে। দিন দূপুরে আয়ের একমাত্র সংস্থানের বেআইনী ভাবে দখল হয়ে যাওয়া , সাহায্যের জন্য এক সময়ের সহকর্মী পুলিশদের কাছে ধর্না দেয়া , আদালত ঘুরে ঘুরে টাকার মোচ্ছবে সামিল হওয়া , দেশ সেবকদের দরজায় দরজায় ঘুরে ক্লান্ত হওয়া, অনেক কিছুই হয়েছে- কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

অথচ উনার ধারনা ছিলো এর সবগুলোই অসম্ভব ! সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে যে সম্ভব সেটা উনাকে দেখতে হয়েছে। আমার বলেছি শক্তির বদলা শক্তি দিয়েই দিতে হয়। উনি শুনতে চান নাই। এখনো বিশ্বাস করেন এভাবে কোনো কিছু দখল হতে পারে না , পুলিশে এখনো ভালো মানুষ আছে, পুলিশ পুলিশের মাংস খায় না, আদালতে এখনো সুবিচার পাওয়া যায় , ইত্যাদি ইত্যাদি। হয়তো আজ উনি উনার এতকালের বিশ্বাস- এতকালের ধারনা ভেঙে যাওয়াতে কস্ট পাচ্ছেন, অবাক হচ্ছেন। আমরা উনাকে বলছি ব্যাকডেটেড - ভুল চিন্তার মানুষ - ভুল সময়ের মানুষ - হয়তো অবাকও হচ্ছি কি ভাবে এতটা বছর পুলিশে কাজ করলেন।

হয়তো আজ হতে ৩০ বছর পরে আমার সন্তানও আমার অনেক কিছুতে অবাক হবে, যেমনটি হচ্ছি আমি আমার পিতাতে। হয়তো আমার মতো আমার সন্তানও আমাকে বলবে ভুল চিন্তার মানুষ - ভুল সময়ের ভুল মানুষ, যেমনটি বলছি আমি আমার পিতাকে। হয়তো আমার সন্তানো আমার মতো আমার পিতার কস্টকে যেভাবে বুঝতে পারছি , সেভাবেই বুঝতে পারবে।

দোষ দেবার এ চক্রটা চলতেই থাকবে। মাঝ খান থাকে মানুষ পরিবর্তিত হতে বাধ্য হবে যেভাবে আমার পিতা হচ্ছেন, আমি হচ্ছি। মাঝ খান থেকে হারিয়ে যাবে বিশ্বাস নামের অমুল্য বস্তু।

অনেক কাল আগে থানার সদর দরজার বাহিরে কিছু মানুষকে অসহায়ের মতো বসে থাকতে দেখতাম। সময়ে মানুষের মুখগুলো বদলে গেলেও ঘটনার রকমফের হতো না। বিচারের আশায় - একটু নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় একদল অসহায় মানুষের পুলিশের কাছে ছূটে আসা। নিরাপদ দূরত্বে সেসব মানুষগুলোর আকুতি হয়তো পিতার হৃদয়ে স্পর্শ করতো না কিন্তু সময়ের নিষ্ঠুর পরিহাসে একদা ক্ষমতাশালী সেই মানুষদটিই যখন সেই অসহায় মানুষগুলোর কাতরে নেমে এসেছিলেন তখন কি একবারের জন্যও সেই মানুষগুলোর চেহারে ভেসে উঠেছিলো উনার চোখে মাঝে ? কে জানে ! হয়তো - হয়তোবা না।