মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১০

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ৭

কোন মন্তব্য নেই :
বিদেশের বিমানবন্দরে সবুজ মোড়কের পাসপোর্ট ধারীদের  হড়েক রকম ঝামেলা পোহানো নিত্য স্বাভাবিক ব্যপার। কথায় আছে না , 'গরিবের বউ সবার ভাবি !' এ ক্ষেত্রে মনে হয় ভাবির প্রতি ভালোবাসা একটু বেশীই উপচে পরে। আমাদের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়। ভালোবাসা এতো বেড়ে যায় যে  প্রায়শই সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় আর আমরা সেটা মুখ বুঝে সহ্য করি, বা একটু বেশী সুশীল ভদ্র হলেতো ওদের পক্ষেই সাফাই গাইতে শুরু করি এই বলে যে " টুকটাক এরকম হতেই পারে !! " ওদের দোষ না খুঁজে নিজেদের দোষ খুঁজে বেড়ানোর আপ্রান চেস্টা করি।

যাই হোক, নীল পোষাকের কাস্টমস মামু আমাকে নিয়ে কিছু একটা চেয়ারে বসিয়ে বুট জুতো জোড়া খুলতে বললেন। আমি সুবোধ বালকের মতো খুল্লাম। যেই না শার্ট খুলতে শুরু করেছি ( এটা ইচ্ছে করেই ) , মামা বলে , আরে না না শার্ট খুলতে হবে না, ভাগ্যিস প্যান্ট খুলতে শুরু করি নাই ! বুট জুতোয় কাদা মাটি মাখা ছিলো বলে তাতে নাকি জীবানু চলে আসতে পারে। সেটা উনারা পরিস্কার করে আনবেন। এর পর আবার কুকুর এনে পরীক্ষা করালেন , যদি আর কিছু বের করতে পারেন। তখন ভেবেছিলাম শুধু মাত্র আমাকেই এটা করা হচ্ছে। পাশে তাকিয়ে দেখি জনা দশেক সাদাকেও এটা করা হচ্ছে। উনারা সদ্য ভিয়েতনাম ঘুড়ে এসেছেন, সাথে নিয়ে এসেছেন এক গাদা ইন্দো চায়না জুতো- কাদা।

নীল মামা জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় পড়তে যাচ্ছি। আমি চিঁচিঁ করে বললাম। উনি হেসে বললেন, "যাও মিয়া ছাইড়া দিলাম, এখন কোয়ারেনটাইনের চাচাগো লগে মিল মহব্বত করো"। বিমানে দেয়া ফর্মে ডিক্লেয়ার করেছিলাম যে সাথে খাবার আছে। সব কিছু চেক করে যখন চাচা মিয়ে খাবারটি হাতে নিয়ে জিজ্ঞের করলেন "বৎস ইহা কি বস্তু?" আমি বল্লাম " মোরোব্বা , চালকুমড়োর মোরোব্বা" । মোরোব্বার ইংরেজী কি হতে পারে তখন সেটা জানা ছিলো না, এখনো জানা নেই। যাই হোক যতি বলি চাচামিয়া সেটা বুঝতে পারে না। এর পর পাশের এক বিশাল বপু সর্দারজীকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন এটা কি। এবার সেই সর্দারজী বুঝতে পারলেন " মোরোব্বা কি বস্তু"। ছেড়ে দিলেন।

বিমান থেকে নামার পর কখন যে দেড় ঘন্টা কেটে গিয়েছিলো টেরই পাইনি। ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ক্লান্ত শান্ত মানুষটি যখন গেট ' সি ' দিয়ে বের হয়ে আসলো তখন দেখি খুব অল্প কজন মানুষ দাঁড়িয়ে। সোহেলকে দেখলাম হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে।

গাড়ি থেকে বাসায় ফোন দিলাম। তাকিয়ে দেখি চারদিকে অন্ধকার। সময় কতোই বা হবে ! মাঝে মাঝে মনে হয় সন্ধ্যে ৭ টা, মাঝে মাঝে মনে হয় ৮ টা ! নাকি আরো বেশী; কনফিউজড হয়ে যাই।

জীবনের নতুন আরেকটি অধ্যায় শুরু হলে, নতুন দেশে নতুন জীবন। 


-----------------------

 

মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১০

আহ কেভিন

1 টি মন্তব্য :
সকালে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। রাস্তায় বেজায় ভীড়। পিঁপড়ের সারির মতো গাড়িগুলো ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। হঠাৎ একটি কারের  সামনের সিটে বসা মানুষটিকে দেখে আমিতো অবাক । সিটে বসা  কেভিন রাড , অস্ট্রেলিয়ার সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রি। এখানকার সরকারী গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেখলেই বোঝা যায় । একা বসে আছেন। আনমনে কি যেনো করছেন। সামনে হুইসেল বাজানো পুলিশের গাড়ি নেই, পেছনে গাড়ির বহর নেই। মন্ত্রি আসছেন বলে সিগনালে সব গাড়ি বন্ধ করে মন্ত্রিকে এগুতেও দিচ্ছে না ট্রাফিক পুলিশ। আর দশটা সাধারন মানুষের মতোই চলছেন কেভিন রাড।

মাঝে মাঝেই বোকার মতোই বাংলাদেশের সাথে অস্ট্রেলিয়ার তুলনা করি। দুটো দেশের রাজধানীকে হাতের তালুর মতো চেনা বলে তুলনা করা অনেক সময় সহজ হয়। পেশাগত ও বাসস্থানের  ভৌগলিক অবস্থানের কারনে বেশ কিছু রাজনীতিবিদকে চেনাও আছে দু দেশেই। হয়তো ভেতরে দুদেশের সবাই একরকম হলেও অন্তত বাহ্যিক দিক থেকে ফারাকটা বেশ চোখে পরে, সেটা চেহারা বা চামরার রঙে নয়। সিনেটে ন্যাশনাল পার্টি লিডার বারনাবি হয়তো সংসদে অনেক উল্টা পাল্টা কথা বলেন কিন্তু সামনা সামনি কথা বলার সময় লোকটিকে অন্যরকম মনে হয় অথবা জুলিয়া বিশপ যখন বলেছিলো "মাইট তুমি কোন দেশ থেকে আসিয়াছো ?" বলার সময় অন্তত তাকে মন্ত্রি বলে মনে হয়নি কখনোই। যাই হোক, তুলনা করতে গেলে অনেক কিছু আনা যেতে পারে। ইচ্ছে করছে না এখন সেটার।

কেডিন রাডের ভক্ত হিসেবে কেভিন রাডকে চর্মচক্ষুতে দেখতে পেয়ে বেশ পুলকিত। বলা যায় না, কোনো একদিন তার সাথে দেখা করবার জন্য চলেও যেতে পারি তার অস্থায়ী ঢেরায়। আমার বাসার আশে পাশেই তো উনারা থাকেন। শখ করে সন্ধ্যায় যেই ক্যাফেতে কফি খেতে যাওয়া হয় সেখানে প্রায়শই হয়তো দু একজনকে চোখেও পরে। এরা সাধারন মানুষের কাতারে নেমে আসতে পছন্দ করেন, হয়তো অনেকটুকুই দেখানোর জন্য। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের অনেক কিছুই শেখার আছে, যদিও তারা কোনো দিনই শেখবেন না।

কেভিন রাডকে দেখতে পেয়ে সারাটা দিন ভালোই গেলো আমার।