শুক্রবার, ২৫ মে, ২০০৭

সাড়ে সাত হাজারের ভেলরি, আড়াই লাখের শফি সামি, আর দুই পয়সার আমরা..(আরিফ জেবতিক)

৫টি মন্তব্য :
একটি সত্য ছবি:

তারুণ্যে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এই দেশ ঘুরে গিয়েছিলেন ৬৯ সনে।তারপর বোকা মহিলাটি আবার এদেশে ফিরে এসেছিলেন ৭২ সালে।রক্তাক্ত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের ফিজিওথেরাপি দিতে ।কেউ তাকে ডেকে আনেনি।তবু তিনি চলে এসেছিলেন।পাগলী আর ফিরে যাননি।

৭৯ সনে অনেক চেয়ে চিন্তে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিত্যক্ত গুদাম ঘরখানি পেলেন।ঝেড়েমুছে শুরু করলেন একটা ছোট,খুবই ছোট ফিজিওথেরাপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।সি.আর.পি।

তারপর সেই বোকা মেয়েটি তার সীমিত সাধ্যে একখান সাইকেল চেপে ঘুরতে লাগলেন দুয়ারে দুয়ারে।মাথা নিচু করলেন,হাত পাতলেন,অপমানিত হলেন,গঞ্জনা সইলেন,হতাশ হলেন তবু হাল ছাড়লেন না।নিজের জন্য নয়,সেই বোকা মানুষটি সব করলেন আমাদের জন্য।মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ে থাকা কিশোরী,বাবার কাধে ভর করে চলা চলৎ শক্তিহীন তরুন,বাড়ি ফেরার পথে দূর্ঘটনায় পড়ে পঙ্গু হওয়া পরিবারের একমাত্র লোকটা...তাদের জন্য কেঁেদ ফিরতে লাগলেন ...।তারপর এখানে সেখানে ভাড়া বাড়ি খুজে খুজে হয়রান হলেন,তবু তার মানব সেবা শেষ হলো না।

এভাবেই একদিন মহীরুহ হলো তার সংগঠনটি।সি.আর.পি পরিনত হলো দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠানে যেখানে ঠাই হলো মেরুদন্ড ভাঙা অসহায় মানুষের,ক্রাচে ভর করে চলা,বুকে হেটে চলা,উবু হয়ে চলা,গড়িয়ে চলা অজস্র মানুষের।আমার দেশের মানুষের।

চলার পথে পিছু ফিরে একদিন সেই পাগলী দেখলেন পাগলী মেয়ে থেকে তিনি পাগলী প্রৌড়াতে রূপান্তরিত হয়েছেন,কিন্তু জীবনের পথে হয়নি সংসার...।

দুইটি মেয়েকে দত্তক নিলেন তিনি,পঙ্গুমেয়ে,পক্ষাঘাতগ্রস্ত মেয়ে।আর সবার মতোই তাদেরকে কাজ শেখালেন তিনি,তারপর চাকরি দিলেন সি.আর.পিতে।

এদেশে এন.জি.ও বলুন, কনসালটেন্সী ফার্ম বলুন আর যাই বলুন,সংগঠনের বড়ো কর্তার কিন্তু বেতনটা হয় ডলারে।টাকার অংকে সেই বেতন শুনে আমরা সাধারন মানুষ ভিমরি খাই।আমাদের কল্পনাতেও কোনদিন এতোটাকা ধরা দেয় না।এই বিদেশীনি পাগলি কতো বেতন নেন জানেন?সাড়ে সাত হাজার ! না ডলার নয়,টাকা!! মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকায় চলে তার সংসার।বনানী গুলশানের যেকোন সাহেবের ড্রাইভারের বেতন থেকে দেড় হাজার টাকা কম!সেই পাগলী মহিলার নাম ভেলরি এ.টেইলর।

অন্যছবি:

আমাদের এক সাবেক সচিব নামের আমলা আছেন।তিনি তার অভিজ্ঞতা দেবার নাম করে ঢুকে গেলেন সি.আর.পিতে।বিদেশী দাতাদের সাথে তার আলাদা খাতির।হবেই না বা কেন,তিনি আমলা ছিলেন বটে।সেই দাতাদের কাছে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি বিছিয়ে দিলেন তিনি।সি.আর.পিকে তিনি এবার নাকি গুছিয়ে দেবেন। শুধুই সমাজ সেবা,আর কিছু নয়।তাই তিনি নাম কা ওয়াস্তে একটা বেতন নিবেন সাব্যস্ত করলেন।কতো জানেন? মাসে আড়াই লক্ষটাকা!!

প্রতিবাদ করলেন ভেলরি।
মানব সেবার সংগঠনে যদি একজনই আড়াইলক্ষ টাকা বেতন নেন,তাহলে প্রতিষ্ঠান চলবে কেমনে?(আর এখানেই কি তিনি ভুলটা করলেন।)

টাকা রোজগারের ব্যবস্থাও করে ফেললেন মান্যবর আমলা।রোগীরা টাকা দেবে।যে সংগঠনটি ২৫ বছর ধরে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে,সেই সংগঠনে এখন উচ্চ মূল্যে চিকিৎসা বিক্রী হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,এপোলো আর বামরুনগ্রাদের শাখা খুলে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে সবাই,আমলা সাহেব করলে দোষ?দেশের পক্ষাঘাতগ্রস্থ গরীব মানুষের শেষ আশ্রয় স্থল,এশিয়ার সাড়া জাগানো একটি প্রতিষ্ঠান ক্রমেই পরিনত হচ্ছে বড়োলোকের ক্লিনিকে।

সবকিছু বদলাচ্ছে,দ্রুত বদলাচ্ছে:ঘটনা ঘঠছে খুব দ্রুত।ইতিমধ্যেই সমন্বয়কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ভেলরিকে।তিনি এখন আয়ব্যয়ের হিসাব দেখতে পারবেন না।
এক অকস্মাত চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের চেকবুক থেকে স্বাক্ষরের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে ভেলরির।ইয়ার বুকে রাজ্যের যতো হোমড়া চোমড়া আর আমলাদের বাণী ছাপা হয়েছে,ছবি ছাপা হয়েছে,কিন্তু ভেলরির নামগন্ধও নেই সেখানে।

একের পর এক দ্রুত বিভিন্ন সেকশনে বদলি করে হয়রানি করা হচ্ছে ভেলরির পালিতা পক্ষাঘাতগ্রস্থ অসহায় মেয়েটিকে।
ভেলরিকে করা হয়েছে কর্মহীন, ক্ষমতা হীন।নিজের প্রতিষ্ঠানে আজ তিনি নিজেই শোপিস।

তিনি নাকি দূর্ণীতি করেছেন? কিন্তু তন্ন তন্ন করেও একটা দূর্ণীতির প্রমান বের করতে পারছেন না আমলা মহাশয়।তিনি নাকি ম্যনেজমেন্ট বুঝেন না। পরিত্যক্ত গুদাম থেকে ৪০০ বেডের হাসপাতাল একাই গড়ে তুললেন যে নারী,তাকে এখন শিখতে হবে ম্যানেজমেন্ট?হাহ্!

এই আমলা মহোদয়ের নামের আগে আমি শুওরের বাচ্চা শব্দটি যোগ করে শুওরের অপমান করতে চাই না।
আমি শুধু তার নামটি বলে দিতে চাই।তার নাম শফি সামি।

আমরা যারা দুই পয়সার মানুষ:

জনাব শফি সামি,জানি না এই লেখাটি আপনার চোখে পড়বে কি না।তবু আমি আপনাকেই বলছি।

আমি খুব সাধারন একজন মানুষ,খুবই সাধারন।আমার সাধ্যের বড়ো অভাব।তবু আমি আমার সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে আপনাকে প্রতিরোধের চেষ্টা করব।আমার জীবদ্দশায় এতোবড়ো একটা অন্যায় আমি মুখ বুজে মেনে নেব না।

আমি আপাতত:পাগলের মতো ইমেইল করে যাবো সবগুলো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে।আমি তাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব,এতো বড়ো একটা অন্যায়ের প্রতিকারে তারা যেন এগিয়ে আসেন। এই কলংকে বোঝা যেন আমাদের ঘাড়ে না চাপে।

আমি এই মূহুর্তে ইমেইল করব সেনা প্রধানের কাছে,ইমেইল করব তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের কাছে,ইমেইল করব বৃটিশ আর আমেরিকান রাষ্ট্রদূতদের কাছে,ইমেইল করব এমনেস্টির কাছে,টি.আই.বির কাছে,ইমেইল করব সি.আর.পির যে অগনিত দাতা আছেন দেশের বাইরে সেই সব দাতাদের সংগঠন গুলোর কাছে।বিশেষ করে ইংল্যান্ডের মূল দাতা প্রতিষ্ঠান আর জার্মানির দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে।
ইংল্যান্ড আর জার্মানির এই দুইটি প্রতিষ্ঠানকে আমি ফোন করেও অনুরোধ করবো,সত্য জিনিষটা বুঝতে।

আমি এই আবেদন ছড়িয়ে দেব আমার বন্ধুদের মাঝে,তারা ছড়িয়ে দেবে তাদের গ্র“প মেইলে।
এভাবেই চলতে থাকবে।
এক থেকে দুই,শত থেকে সহস্র,লক্ষ থেকে নিযুত ই-মেইল,ফ্যাক্স আর ফোনে আমি কাউকে শান্ত থাকতে দেব না।অগনিত মানুষ ফোন করবে লন্ডনের আর জার্মানির সেই প্রতিষ্ঠান দুটিতে।

ভেলরি আমাদেরকে দিয়েছেন তার জীবনের ৩৬টা বছর।এখন আমাদের দেবার পালা।দিনে আমি কমপক্ষে ৩৬ মিনিট সময় দেব এই কাজে..সেটাই একসময় বিশাল হয়ে উঠবে।

আমি হয়তো আরো অনেক কিছুই করব,অথবা করতে ব্যর্থ হবো।তবু সফি সামি আপনি জেনে নিন,আমার মতো দুই পয়সার মানুষের হয়তো একা কিছু করার ক্ষমতা নেই,কিন্তু দুই পয়সা দুই পয়সা যূথবদ্ধ হয়েই আমি থেকে আমরা হবো,আর আপনার আড়াই লক্ষটাকার ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবো।

আপনি সেটা দেখে যাবেন ইনশাআল্লাহ!

(কেউ যদি এই প্রচেষ্ঠায় শরিক হতে চান,তাহলে সি.আর.পির সবথেকে বড়ো দুইটি দাতা প্রতিষ্ঠানের নামঠিকানা নিচে দিলাম।বাকি মেইল ঠিকানাগুলোও আমি জানিয়ে দেব।)

ইংল্যান্ডে :gillian@phillips111.freeserve.co.uk

Gillian Phillips, FCRP Administrator,
gillian@phillips111.freeserve.co.uk
Tel. no. 0118 940 1294
জার্মানিতে:Elke Sandmann
Präsidentin Freundeskreis des CRP, Bangladesch
E-Mail: eksandmann@gmx.de
Tel: 089/6709060

ইট পাথরের শহরে স্বপ্ন বিলাস

কোন মন্তব্য নেই :
স্বপ্ন পূরন না জীবন সংগ্রামের বাজারে টিকে থাকার কঠিন এক সংকল্প নিয়ে ক্যাঙারুর দেশে কোন এক সন্ধ্যায় গিয়ে হাজির হলাম। সেই সংগ্রাম যে শুরু হোলো আর তা শেষ হবার নয়। মাঝে মাঝে খুবই ক্লান্ত লাগে, নিজেকে যান্ত্রিক মনে হয়। একটা লক্ষ্য পূরন হবার পর আরেকটা লক্ষ্য স্থির করি। সাফল্যের মরিচকার পেছনে ছূঁটছি তো ছুঁটছিই।

ঝলমলে শহরের ঘুমন্ত এ মানুষটি প্রতিটি রাতেই সেই একি স্বপ্ন।
গ্রামের ছোট্ট একটা বাড়ী, ছোট্ট একটি পুকুর। নদীতে মাছ ধরছি। খুব সাধারন হাসি খুশি একটা জীবন, ছোট্ট সুখি এক সংসার।

স্বপ্ন ভেংগে যাবার পর সেই ঝলমলে শহরের কৃত্রিমতা। হাসি না আসলেও হাসি মুখে বলে উঠি " হাও আর ইউ ডুইং মাইট ? " , "নট ব্যাড" "এন্ড ইউরসেল্ফ ?"।
শুরু হয় সেই বিরক্তিকর জীবন।

মাঝে মাঝে মনে হয় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়াই পাপ।টাকার জন্য কতো যে কষ্ট। ডলার বাঁচাবার জন্য কনকনে ঠান্ডায় পাহাড়ি পথে মাইলের পর মাইলের হাঁটা। কিছু ডলারের জন্য রেস্টুরেন্টে হাঁড়ি-পাতিল-প্লেট ধোয়া। সুপার মার্কেটে ক্লিনারের কাজ করা। টিউটরশীপ করে বাড়তি কিছু ডলারের জন্য প্রফেসর কে তোষন।

টাকা চাইতে পারি না বাবা কাছে। ১ ডলারের সাথে ৫০ দিয়ে গূন করেই মনে হয় এই টাকাগুলো পাঠালে কয় মাস যে বাসার সবাইকে শুধু ডাল-ভাত খেয়ে থাকতে হবে। আর চাওয়া হয় না টাকা। টেলিফোনে মা জিগ্যেস করে " বাবা তুমি কি দিয়ে খেয়েছো আজ?" নুডলস দিয়ে রাতের খাবার সেরে কষ্ট মাখা মুখে হাসি মাখা বলি " আম্মু, আজ গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছি, সাথে ছিলো সালাদ"।

কনকনে ঠান্ডায় কাজ শেষ করে বাসে জন্য অপেক্ষা। সামনে দিয়ে দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলে যায় স্বদেশী কোনো ছেলে। চেয়ে চেয়ে দেখি। কালো টাকার কতো ক্ষমতা ! মনে মনে বলি ,আব্বু তুমি কেনো ঘুষ খেলে না এদের মতো। তাহলে আজ আমাকে আর কাজ করতে হতো না। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারতাম। আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারতাম।

দেশী লোক এড়িয়ে চলেছে, যদি কিছু ডলার ধার নেই তাদের কাছ থেকে। আজ তারাই বড় মুখ করে বলে , সেদিন কেনো এলে না আমার কাছে। কতোদিন শর্ষে বাটা দিয়ে একটুকরো ঈলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হয়েছে। দাওয়াত দিয়ে কেউ বলে নি, ' খেয়ে যাও ঈলিশ, তোমার ভাবি রান্না করেছে ।' আজ তারাই দাওয়াত দেয়।

তাদের কাছ থেকেতো সাহয্য চাইনি কোনোদিন। টাকার অভাবে না খেয়ে থেকেছি তবুওতো ১টা ডলারও ধার চাইনি। আত্মতৃপ্তি লাগে যখন ভাবি, কারো সাহায্য ছাড়াই এতো দূর এসেছি। উপরে আল্লাহ , নীচে আমি। কঠিন এক সংকল্প।

ব্লু কলার, হোয়াইট কলার বুঝি না।
বুঝি সংগ্রামে টিকে থাকা। পড়াশোনা শেষ করেছি, ভালো কাজ করি, ভালোই উপার্জন করি। আত্মতৃপ্তিতে ভুগি না তবুও, আরো চাই। চাবার যেনো শেষ নেই। আয়নায় বাঁধানো দেয়াল ঘেরা এক জীবন। বাবা-মার স্বপ্ন পূরন, ছোট বোনের আবদার, ব্উয়ের শখ পূরন, ছোট ভাইয়ের চাওয়া পূরন করতেই হবে যে, সাথে নিজের স্বপ্ন।

ছোট্ট গাঁয়ের সেই স্বপ্ন কি পূরন হবে ?
নাকি আর দশটা মানুষের মতো ইট পাথরের জংগলে হারিয়ে যাবো ?
হায়রে জীবন।

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০০৭

ক্ষমা চাই শংকর স্যার, ক্ষমা চাই।

কোন মন্তব্য নেই :
গ্রামের এক স্কুলে পড়ি তখন।ক্লাস ৭ ও ৮ এ স্যারের কাছে অংক শিখতাম। ছোট খাট গরনের শান্ত একজন মানুষ। কিছু কিছু মানুষের কখনো ভোলা যায় না, স্যার তেমনি একজন মানুষ।

স্যার বাসায় আসতেন পড়াতে। প্রথম যেদিন আসেন পড়াতে আম্মু উনার জন্য নাস্তা-চা দিয়েছিলেন। আমি বোকার মতো প্রশ্ন করেছিলাম, "স্যার, মুসলমানের বাসায় খেলে ধর্ম নষ্ট হবে না ?" স্যার হাসতে হাসতে বলেছিলেন "খাবারের আবার ধর্ম কিসের? ধর্ম কি এতোই ঠুনকো যে মুসলমানের খাবার খেলেই ধর্মচূ্ত্য হয়ে যাবো ?"

খুব ধার্মিক মানুষ ছিলেন স্যার। কৈশরের সে সময়টাতে মনুষ্যত্ব ও ধর্ম সম্পর্কে চোখ খুলতে শুরু করেছে মাত্র। স্যারের সেই দুটো কথা চোখের দুয়ার আরো খুলে দিয়েছিলো।

স্যারের এক ভাতিজার বিয়েতে গিয়েছিলাম। মুসলমান বলে তাদের ঘরে খেতে দেয়া হয়নি। স্যার নিজের হাতে তাঁর ঘরে নিয়ে খাইয়েছিলেন আমাকে। আর বলেছিলেন " বাবা, সবাই মানুষ নয়, মনুষত্বের চাইতে ধর্ম বড় অনেকের কাছেই। এটাই সব অধর্মের মূল।"

স্যারের এক ছেলে আমার এক ক্লাসে পড়তো, নাম ছিলো হারাধন। অনেক দিন পর শুনেছি হারাধন কুচবিহারে তার পিসির বাড়ী চলে গিয়েছে। খুব কষ্ট লেগেছিলো সেটা শুনে। স্যারের এক মেয়েও ছিলো। সেও মনে হয় চলে গিয়েছিলো ভারতে একসময়। স্যারকে একবার বলেছিলাম স্যার আপনিও কি যাবেন ভারতে । স্যার শুধু একবার বলেছিলেন " দেশ মাতা ছেড়ে পরবাসী হোবো ?" আর প্রশ্ন করতে সাহস হয়নি।

আজ ভাবি, কেনো এই সব মানুষ হাজার বছরের মাতৃভূমি ছেড়ে পরবাসী হয়। সুখতো সেখানেও নেই। এ প্রশ্নের উততর আমার জানা।অসহায় অনুভব। কিছুই করতে পারি না।

প্রতিবছর কতো যে হাজার বংগ সন্তান যে একটু নিরাপততার আশায় সীমান্ত পারি দিচ্ছে সে খবর কেই বা রাখে।
১৯৯১ এ ভোলা বা ২০০১ এ পূর্নীমার করূন কাহিনী শুনে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না আমার।

ভোট ব্যাংক হিসেবে দাবী করি কিন্তু বিপদে পাশে এসে দাঁড়াই না।
ধর্ষনে গর্ভবতী হয়ে পড়লে মজা করে বলি " বাহ ! বেশ ফার্টাইল, এ রকম হলেতো দেশের জনসংখা দিগূন হয়ে যেতো "
দেশ ছেড়ে যাবার আগে পানির দামে ভিটে মাটি কিনে রাখি, পারলে জোর করেই। সেই ভিটে মাটির তুলসি গাছে উপড়ে ফেলে গড়ে তুলি বাগান বাড়ী।
রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার নামে দুর্গা পুজোয় বাধা দেই, ভুলে যাই ইসলামের সেই বানীর কথা, ' যার যার ধর্ম তার তার কাছে'। ইসলামের নামে কতল করি আরেক জন আদম সন্তান।
গনতান্ত্রিক দেশ বলে দাবী করলেও সরকারী চাকরিতে দাবিয়ে রাখি। তৈরি করি বৈষম্য পদে পদে।

স্যার,
অনেক দিন আপনার সাথে দেখা হয় না। জানি না এ জীবনে দেখা হবে কি না। এটাও জানি না আপনি বেঁচে আছেন কি না। এটাও জানি না আপনি দেশমাতা ছেড়ে পরবাসী হতে বাধ্য হয়েছেন কি না। তবে আপনার এই ছাত্র আজ পড়াশুনা শিখেছে কিন্তু পরিপূর্ন মানুষ হয়নি। ব্লগের পাতায় বড় বড় কথা বল্লেও সাহস হয়নি তার এসবের প্রতিবাদ করার, প্রতিকার করার।
ক্ষমা করবেন আমাকে।

টুটিফ্রুটি.রেসিপি @ সুমন.উজি

1 টি মন্তব্য :
বাজার থেইকা ৩ ফ্লেবারের আইসক্রিম কিনেন।
ভ্যানিলা, চকোলেট, স্ট্রবেরি।

আপেল, কলা, আম, আঙুর, স্ট্রবেরী কিন্না সেইগুলানরে কিউব আকারে কাইটেন।
(মাগার কলা চাক চাক কইরা, খিয়াল কইরা)

আইসক্রিম রাখনের কাপ পাইলে ভালো নাইলে কফি খাওনের মগ হইলেও চলবো।

কাপের নিচে স্ট্রবেরী ফ্লেবারের আইসক্রিম দিয়া এর উপরে আম ও আঙুর দ্যান।
এর উপরে দ্যান চকোলেট ফ্লেবারের আইসক্রিম দিয়া হের উপরে বাকী সব ফল ডাইলা দ্যান।
সবার উপরে এক স্কুপ ভ্যানিলা আইসক্রিম।
গার্নিসের জন্যে ভ্যানিলা স্কুপের উপরে ক্যারামেল সিরাপ সুন্দর কইরা দ্যান, ভালোবাসার শেপে। (তয় সাবধানে, নইলে ক্যারা বেরা হয়া যাইবো)

এবার একটা ফ্রেন্চ মুভি ছাইরা খাইতে বইসা যান।

----
সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরনঃ ডায়েটিং করা পাবলিকের খাওন নিষেধ।

বুধবার, ২৩ মে, ২০০৭

আবু হোসেন বাদশাহ

কোন মন্তব্য নেই :
কদিন থেকেই ব্লগিংবাজি আর কলমবাজির পার্থক্য খুঁজছিলাম। ফারাকটা তেমন পাই না। একটা পত্রিকার পাতায়, আরেকটা মনিটরের পর্দায়। দুইটাই নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ঢিল ছুঁড়ার মতো। লাগলে লাগবে, না লাগলে কি যায় আসে।

মধ্যবিততের ভার্চুয়াল রাজনৈতিক মন্চ ব্লগের পাতা। মাঠে সুযোগ পায়নাই তো কি হয়েছে! ফাটাচ্ছে ব্লগের ফ্রন্ট পেজ। সমাজ পরিবর্তনের বিশাল ডাক দিচ্ছে স্টাডি রুমের চেয়ারে বসে। ড্রয়িং রুমে বসে আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের ঢাক দেয় কফির মগ হাতে।

একজন আম্রিকা থেকে বসে লিখেন গনতন্ত্র মুক্তি পাক, লিখে মুক্তিযু্দ্ধের চেতনার বড় বড় সব বুলি। আর সেই বান্দাই ৯০ এর গনআন্দোলনে ঘরে বসে মুড়ি-চানাচুর খেয়েছে আর টিভিতে বাংলা সিনেমা দেখেছে। আনন্দোলনের সুফল ভোগ করেছে আর খুশিতে বগল বাজিয়েছে।

আরে মিয়া, পুলিশের গুলির সামনেতো মিয়া আপনে দাঁরান নাই, গুলি খাইতে তো আপনারে হয় নাই, মরতে তো হয় নাই আপনার কোনো স্বজনকে।

কে মরেছে? মরেছে গরীবের সন্তান। সেই গরীব গরীবই রয়ে গিয়েছে।
ফাঁকে তালে আপনে হোন হিরো, টিনের সেপাই।

শহিদ জননী জাহানারা ইমাম যখন গনআদালত তৈরি করেন সেই আদালত দেখতে গিয়ে নিজেই সেই গনআদালতের অংশিদার মনে করেন, আর শহীদ জননী জখন নাইটেংগেলের মোড়ে পুলিশের লাঠির বাড়ি খায় তখন আপনারে পাওয়া গিয়েছে নাইটেংগেল বারে।

যততসব ভন্ডামী।
বাঘের ছাল লাগাইলেই ভেড়া বাঘ হয়ে যায় না।
--------

মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০০৭

জামায়াতে ইসলামীর সুবিধাবাদী ভূমিকা, "অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত" ও শংকা

কোন মন্তব্য নেই :
এক.
দস্তরি তাজাজি বইয়ে জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্বিক নেতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদি লিখেছেন, " আইন পরিষদ গুলোতে মহিলাদের সদস্য হওয়ার অনুমতি দেওয়া হোলো পাশ্চাত্য জাতিসমুহের অন্ধ অনুকরন। ইসলামের নীতিমালা এর অনুমতি দেয় না। ইসলামের রাজনীতি ও দেশের প্রশাসনিক দায়িত্ব কেবল পূরুষের ওপরই ন্যস্ত"

১৯৫৪ এর নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহ রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন কি না এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উততরে তিনি বলেছিলেন ," মহিলাদের কর্মক্ষেত্র আলাদা। সুতরাং মিস ফাতেমা জিন্নাহর রাষ্ট্রপ্রধান পদ গ্রহনের প্রশ্ন আসেই না। এটা হোলো পূরুষের কাজ।"

কিন্তু যখন সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে যখন মনোয়ন দেয়া হয় তখন তিনি সুর পাল্টে ফেলে বলেন , " মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যপারে কোনঐ বাধ্যবাধকতা নেই। মহিলাদের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা বা হজ্ব করা অবৈধ বলাও অন্যায়।"

ঠিক একই জিনিস বর্তমান সময়েও আমরা দেখছি। বিএনপির সাথে জোট বেঁধে ক্ষমতার লড়াইয়ে নামতে বা বেগম খালেদা জিয়ার পদতলে বসে রাজনীতি করতে তাদের সুবিধাবাদী চরিত্রে বাঁধে না। অথবা শেখ হাসিনার সাথে এক টেবিলে বসে রাজনীতির আলোচনায় বসতে তাদের বাঁধে না।

দুই.
জামায়াতের কথা ও প্রচারনা শুনে বা পড়ে অনেকরই মনে হতে পারে, ঠিকইতো আল্লাহর বিধানেইতো মানুষ চলবে, মানুষের আবার বিধান কিসের।
কোথায় আছে সে বিধান ?
সেটা আছে কোরানে, আল্লাহর কালামে।
আর কোথায় আছে সে বিধান?
সেটা আছে হাদিসে, নবীর (সা.) কথায়।
আর কোথায় আছে সে বিধান ?সেটা আছে ইজমায়। সাহাবাদের কথায় ও নির্দেশনামায় ও বানীতে।
আর কোথায় আছে সে বিধান ?সেটা আছে কিয়াসে।

কিন্তু সেই কালাম, কথা ও জীবনযাপনের ব্যখ্যা করে আমাদের সমকালে গ্রহনযোগ্য বিধান কে দেবে?জামায়াত বলছে, এটা দেবে তারা। কোরান সম্পর্কে তাদের ব্যখ্যাই বিধান। ... ওদের ব্যখ্যাই হচ্ছে বিধান ...

এটাই হচ্ছে জামায়াতের সব চাইতে বিপদজ্জনক দিক।

তিন.
জামায়াত গনতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে গনতন্ত্র হোলো মানুষের তৈরি আইন। আর এই আইন দ্বারা মানুষের কল্যান সম্ভব নয়। গভর্নমেন্ট বাই দি পিপল, ফর দি পিপল , অব দি পিপলের বদলে তারা বিশ্বাস করে গভর্নমেন্ট বাই আল্লাহ,ফর আল্লাহ, অব আল্লাহ।
আর মহান আল্লাহতায়ালা দ্বারা নির্বাচিত কারা ? জামায়াতে ইসলামী।
কাজেই গনতন্ত্র নামে 'ইহুদি-নাসারাদের মতবাদ' তারা কিছুতেই মানে না।

কিন্তু তারা নির্বাচনে অংশগ্রহন করে কেনো ?

চার.
জমায়াত চায় গনতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করতে এবং তারা একি সাথে বিশ্বাস করে এই গনতান্ত্রিক পন্থায় তারা বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে গনতান্ত্রিক পন্থা, নিয়ম, প্রক্রিয়া বা সংবিধান মানুষের তৈরি। তারা বিশ্বাস করে মানুষের তৈরি বিধান দ্বারা রাষ্ট্র ও সমাজ চলতে পারে না। তারা বিশ্বাস করে রাষ্ট্র ও সমাজকে চালাতে হবে আল্লাহর তৈরি আইন/বিধান দ্বারা, কোরআন-সুন্নাহর ভিততিতে।ক্ষমতায় গিয়ে তার প্রথমেই যে কাজ টা করবে তা হোলো গনতান্ত্রিক প্রকৃয়াকে ধ্বংস করে তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা।
তা হলে কি হবে ?গনতান্ত্রিক নিয়ম বা প্রক্রিয়ার সুযোগ গ্রহন করে সেই নিয়ম বা প্রক্রিয়াকের ধ্বংস করার জন্য যে অপশক্তি ততপর সেই অপশক্তিকে কি আমরা সুযোগ করে দিবো?

পাঁচ.
সমাধান কি ?

জামায়াত কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা ?
নিষিদ্ধ করা হলেই কি পরিপূর্ন সমাধান চলে আসবে। তাও নয়, বরং নিষিদ্ধ করলে এই ভয়ংকর দানবটা ভয়ানক সব কান্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
আর নিষিদ্ধ না করলে কি হবে ?
জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করলে গনতন্ত্রকে খেয়ে ফেলার জন্য গনতন্ত্রকে ব্যবহার করতে থাকবে। জামায়াতকে গনতন্ত্রে অংশগ্রহন করতে দেবার মানে হোলো সাপের লেজ খাবার মতো ঘটনা, নিজের মুখ দিয়েই নিজের লেজ খাওয়া শুরু করা। এর শেষ হবে নিজের মুখ দিয়ে নিজের মুখ খাওয়া।

ছয়.
জামায়াতের মতো আরো অনেক ছোট কিন্তু আরো ভয়ংকর উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল আছে বাংলাদেশে। জামায়াতের কর্মকান্ডের ফাঁক তাকে এসব অপশক্তি শক্তি সন্চয় করছে ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে। এদের দিকেও সমান ভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নইলে একদিন এরা জামায়াতকেও ছাড়িয়ে যাবে। 'বাংলা হবে আফগান আমরা হবো তালেবান' এই শ্লোগানের বদলে আমদের শুনতে হবে " বাংলা হোলো আফগান আমরা আজ তালেবান"।

-----------------
লেখাটি মৌলিক রচনা না।
দৈনিক প্রথম আলোর ২২মে ২০০৭ এ প্রকাশিত আনিসুল হকের অরণ্যে রোদন কলামের "দলে গনতন্ত্রচর্চাঃ জামায়াতের কি হবে?' হতে সংগৃহিত ও নিজের মতো করে সংক্ষিপ্তাকারে লেখা ও পরিমার্জিত।
পোস্টের ৬ নম্বর প্যারা নিজস্ব ভাবনা।

তেঁতুলের আচার র‌্যাবে খায় ( ১০০% ভেজাল রম্য লেখার প্রয়াস)

কোন মন্তব্য নেই :
শুভ ভাইয়ের সাথে দেখা হইলো আইজ। শুভ ভাই কইলো চলেন 'দুদক' অফিসে যাই।মুখে কিছু না কইলেও মনে মনে ডরাইসি হেবি। ভাবতাসিলাম শুভ ভাইয়ের মনে কি আছে ! আমারে আবার ধরায় দিবো নাতো দূর্নীতির মামলায় ?

পুলিশ /আর্মি থেইকা ৩০৩ হাত দূরে থাকন বুদ্ধিমানের কাম, আর দুদক থেইকা ১০০ হাত।

যাউগ্গা, কমলাপুর থেইকা সোজা সেগুনবাগিচা। শুভ ভাই দেখি আমারে লইয়া পুলিশ অফিসে হাটন শুরু করছে। সেইটা দেইখা আমার হ্রদকম্পন শুরু হইলো। নিগঘাত করসফায়ারে দেওনের প্লান।

পুলিশ অফিসে নিয়ে দেখা করলো এক র‌্যাবের লগে। ফিস ফিস কইরা কি জানি কয় দুইজনে আর একটু পর পর আমার দিকে তাকায়। আমি আল্লাহ আল্লাহ শুরু করছি আর মনে মনে সবার কাছে মাপ চাওন শুরু করছি। আমারে আর বাঁচাইতে পারবো না কেঠাও। ব্লগে রাজনীতি নিয়ে লেখনের খেসারত দিতে হইবো করসফায়ারে! এর চাইতে রিকশারতলে গলা পাতনো ভালো আছিলো।

শুভ ভাই দেখি ব্যাগ থেইকা কালা একখান ডিব্বা বাহির করে। আমি আয়াতুল করসি পড়ি আর চামা চোখে দেখি কি বাহির করে।
ভাবতাসিলাম উহা কি ?
আমারে ফাঁসানোর আলামত?
নাকি অন্য কিছু ?
শুভ ভাই কি ব্লগ ছাইড়া দিয়া র‌্যাবের সোর্স হইছে ?

দেখি সেইটা তেঁতুলের আচার। র‌্যাবের জন্য আনছে। মনে লয় র‌্যাব আইজ কাইল তেঁতুলের আচার ঘুষ লওন শুরু করছে।

র‌্যাবের মুখে সে কি হাসি।
শুভ ভাইরে কয়, "আইজ মাটন বিরিয়ানী দিয়া খামু সাথে তেঁতুলের আচার।"
ছাগলের মাংসের হেবি ডিমান্ড আজ কাল !!

কেজি কতো ছাগলের ( থুক্কু খাসী) মাংসের?

-------
ভাবী আমার জন্য তেঁতুলের আচার পাঠাইসিলেন, পাগলু শুভ ভাই সেইটা র‌্যাবরে দিয়ে দিসে। ( আম্মাআ )

ব্লগীয় ঝড় ও আমার কিছু কথা

কোন মন্তব্য নেই :
গত কাল সকালে ব্লগে ঢুকতেই ব্লগার যুক্তিগ্যের পবিত্র আল কোরআন নিয়ে একজন ব্লগারের লেখা পড়লাম। পুরোটা ভালো করে পড়ার আগেই লগআউট করতে হয়েছিলো। সন্ধ্যায় ভাস্করদার বাসায় গিয়ে শুনি বিশাল এক ঘটনা নাকি ঘটে গিয়েছে ব্লগে।

যুক্তিগ্য(বানানটা খুব কঠিন, টাইপ করতে পারছি না বলে দূঃখিত) নামে একজন ব্লগারের পোস্টা নাকি মুছে ফেলা হয়েছে। সবার আন্দোলনের মুখে সেটা নাকি আবার ফিরিয়ে আনাও হয়েছে।

ব্লগে আগেও বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে। অনেকেই আপততি জানিয়েছেন, কেউ বা সমর্থন। এটাই স্বাভাবিক। সবার যে ভালো লাগবে এটার কোনো মানে নেই।

কিছুদিন আগেই দেখলাম কোনো এক "ঝুমকা" সোজা কাট পেস্ট চটি মেরে দিলো ব্লগে। হোসেইন ছাড়া কেউ তেমন জোড়ালো প্রতিবাদ করলো না, পোস্ট মুছে ফেলাতো দূরের কথা। পরে সেটা মুছে ফেলা ও ঝুমকাকে ব্যান করা হলেও এবারে যেমন কাউকে না জানিয়েই করা হয়েছিলো সেবার তা করা হয়নি।

অতীতেও বিভিন্ন অবসিন ও ব্যক্তি আক্রমন করে পোস্ট এসেছিলো। মনে আছে আস্তমেয়েকে নিয়ে বাজে কিছু পোস্ট করেছিলো বোকারাম নামে এক পারভার্ট ব্লগার। সুমন চৌধুরিকে ধন্যবাদ জানাই ফ্লাডিং দিয়ে তা প্রতিবাদ করার জন্য। আরিফ জেবতিক প্রতিবাদ পোস্ট লিখেছিলেন আস্তমেয়ের জন্য। প্রচন্ড অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলাম কিছু ব্লগার এরজন্য আস্তমেয়েকেই দায়ী করেছিলো। ডটেড রাসেল পারভেজ এমন ভাবে লিখেছিলো যেনো আস্তমেয়ে এসবের প্রাপ্য। তখনও নোটিশবোর্ড সেই পোস্ট মুছতে অনেক অনেক দেরী করেছিলো, যা এবারে হয়নি। হয়তো নোটিশবোর্ডের মনে হয়েছিলো সেটা অনুভূতীকে আঘাত করেনি।

এবার কাউকে কাউকে কিছু না জানিয়েই নোটিশবোর্ড পোস্ট মুছে ফেল্লো, সেটা ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করছে বলে। যুক্তির খাতিরে মেনে নিলাম সেটা ধর্মীয় অনূভূতীকে আঘাত করেছে, কিন্তু কোন যুক্তিতে বোঝা গেলো যে সেটা ধর্মীয় অনূভূতীকে আঘাত করেছে? সামহোয়্যারইনের কেউ একজনের মনে হোলো সেটা ধর্মীয় অনূভূতীতে আঘাত করেছে আর সেটা মুছে ফেলা হোলো সংগে সংগে!! আজব। লেখকের স্বাধীনতা কোথায় থাকল?

প্রত্যেক লেখকেরই রয়েছে লেখার স্বাধীনতা, রয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা।তবে সেই স্বাধীনতা মানে এই নয় যে , যা ইচ্ছে লিখে ফেলবো বা বলে ফেলবো। স্বাধীনতারও একটা সীমারেখা আছে। সেটা অতিক্রম করলেই সেটার প্রতিবাদ করা যায়, যায় প্রতিরোধ। নইলে সারা পৃথিবী মগের মুল্লক হয়ে যাবে, যার যা ইচ্ছে করা শুরু করবে।

প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনতা আছে যার যার ধর্ম পালনের ও তার প্রচার করার। ব্লগেও যখন কেউ ইসলাম নিয়ে লিখে তখন আমি কোনোরকম আপততিকর কিছু খুঁজে পাই না। একজন হিন্দু বা ক্রিসচিয়ানও তার ধর্ম নিয়ে লিখতে পারেন। একজন নাস্তিকও তার মত প্রকাশ করতে পারবেন। সেটার স্বাধীনতাও তার রয়েছে। তবে কোনোক্রমেই তা যেনো আস্তিকের ধর্মানুভূতীকে আঘাত না করে। সেটা আঘাত করলেই সেই স্বাধীনতাকে খর্ব করার অধিকার অবশ্যই একজন আস্তিকের রয়েছে। তবে একজন আস্তিক বা নাস্তিককে যুক্তি দিয়ে প্রমান করতে হবে যে সেটা তার বা তাদের ধর্মানুভূতীকে আঘাত করেছে, বলপ্রয়োগ বা গলাবাজী করে না।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ধর্ম এমন কিছু বিষয় না যে এটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে না বা প্রশ্ন করা যাবে না। আমি আমার অতীতের লেখায় সেটা বলেছিও। তবে সে আলোচনা অবশ্যই হতে হবে সুন্দর, যুক্তিনির্ভর ও অন্যের অনূভূতীকে আঘাত না করেই। একজন মুসলমানের কাছে আল কোরআন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহিত, যেমন একজন হিন্দুর কাছে পবিত্র গীতা। কেউ একজন বলে বসে " তোমাদের কোরানে আমি মুতি" তবে অবশ্যই তা ধর্মীয় অনূভূতিকে আঘাত হানবে। সে ক্ষেত্রেই এর প্রতিকার করতে হবে। একজন মুসলমানের পবিত্র দ্বায়িত্ব আল কোরআনের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষা করা, এটাও মনে রাখা উচিত সবার।

ব্লগে প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করে পোস্ট দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে পোস্ট দেয়া হচ্ছে। ব্লগ কতৃপক্ষকে তখন কোনো একশন নিতে দেখা যায় না, যদিও তা আমাদের দেশ ও ইতিহাসের পুরোপুরি পরিপন্থি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে এটা নয় যে আমার পিতা-মাতার হ্ত্যাকারীর সাথে কোলাকুলি করতে হবে।

স্বাধীনতা বিরোধীদের ছবি দিয়ে তাদের গুন গান গাওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে একজন শহীদ সন্তানের মনে কি অনূভূতি হতে পারে সেটা কি আমরা বা সামহোয়্যারইন কতৃপক্ষ লক্ষ্য করেছি। সে সময় তো কোনো সময় সেই পোস্ট মুছে দেয়া হয় না !

কাদীয়ানীদের অমুসলিম ঘোষনা করে তাদের কতল করার পবিত্র (!?) আহবান জানিয়ে যখন মানবতা বিরোধী পোস্ট দেয়া হয় তখনতো সে পোস্ট মুছে দেয়া হয় না? আশরাফ হোসেন নামক একজন ব্লগার একবার হোলোকাস্ট মিথ্যা বলে এক পোস্ট লিখেছিলো। মানবতাবিরোধী ও ইতিহাসের চরম এক কলংকজনক এক অধ্যায়কে জায়েজ করার সেই মহান (?!) পোস্ট তো মুছে ফেলা হয়নি। একটা সভ্য সমাজে আর যাই হোক মিথ্যা ও হত্যাকে সমর্থন জানিয়ে কোনো লেখাকে মেনে নেয়া হয় না।

ব্লগে আজকাল জামাতের গুন গান করে পোস্ট লেখা হচ্ছে। আমি এতে আপততিকর খুঁজে পাই না। একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতাদর্শ যদি প্রচার করা যায় তবে জামাতের টাও করা যাবে। যেদিন দেশ থেকে জামাতকে দূর করা যাবে সেই দিন ব্লগ থেকেও জামাতকেও দূর করা যাবে। রাজনীতিতে আমরা মেনে নি্তে পারবো আর ব্লগে কেনো সেটা মেনে নিতে পারবো না? ব্যক্তিগত ভাবে জামাতের অতীত ও বর্তমানকে আমি প্রচন্দভাবে ঘৃনা করলেও এটাই নোংরা বাস্তবতা যে তারা একটা ফ্যাক্টর। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এর প্রতিরোধ করতে হবে, দরকার হলে অস্ত্র দিয়ে। ব্লগ থেকে বের করে দিয়ে বা মুছে দিয়ে না।

বেশ কিছুদিন আগে আলীর একটা পোস্ট মুছে দেয়া হয়েছিলো জরূরী আইনের পরিপন্থি বলে। আমি সেটা পড়তে পারি নাই। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে তখন ব্লগে কোনোরকম প্রতিবাদ আসেনি।

ব্লগে মাঝে মাঝেই অশ্লীল কিছু পোস্ট আসে , আসে গালীতে ভরপুর পোস্ট। সেটা কি অনুভূতীকে বা রুচিতে আঘাত হানে না। তখন ব্লগ কতৃপক্ষ চোখে ঠুলি লাগিয়ে বসে থাকে। আজব সব চিজ!

ব্লগ কতৃপক্ষের ভাব সাব দেখে মনে হয় সব কিছু বোঝার ক্ষমতা শুধু তাদেরই আছে। মাঝে মাঝে মনে হয় মাথা আছে তবে ঘিলুর বদলে রয়েছে গোবর। ফ্রি দিচ্ছে বলে যা খুশি ইচ্ছে করে যাবে ও সেটা আমাদের মেনে নি্তে হয়। মনে হয় বিবেকটাও কিনে নিতে যায় তারা।

যুক্তিগ্যের পোস্ট মুছে দেয়া হয়েছিলো।
কাল আমার বা অন্যকারো লেখা মুছে দেয়া যে হবে না সেটার নিশ্চয়তা কোথায়?
ফ্রি লিখতে দিয়েছেন বলে যা খুশি একটা করে ফেলবে সেটাতো হতে পারে না।
মোদ্দা কথা, ব্লগ হতে হবে মত প্রকাশের স্বাধীন একটা প্লাটফরম। তবে তা অপরের মতকে সম্মান প্রদর্শন করেই।

(লেখাটি সামহোয়্যারইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে একিসাথে)

শনিবার, ১৯ মে, ২০০৭

ধর্মীয়, রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভেদাভেদ এবং আমার অনুভব

কোন মন্তব্য নেই :
পৃথিবীর সুবিশাল পরিমন্ডলে যাবার কথা বাদ দিয়ে ব্লগ বা ফোরামের মধ্যকার ক্ষুদ্র পরিসরের অভিগ্যতা নিয়েই আমার যা কিছু এলেবেলে আলাপন।
ব্লগে ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে প্রচুর লেখা পড়ার সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য হয় প্রায়শই। কেউ বা আস্তিক, কেউ বা নাস্তিক। কেউ বা আওয়ামী লীগ কেউ বা বিএনপি কেউবা জামতী, কেউ বা ভেগ ধরা।
কেউ বা ইসলামের জন্য জান কোরবান করতে গিয়ে আরেকজন কে কতল করতে সদা ততপর। ইসলামের কথা বলতে গিয়ে ইসলামের শিক্ষাই ভুলে যায় তারা।আবার কেউ বা ইসলামের বিরু্দ্ধে কথা বলতে গিয়ে ইসলামকেই তুলা ধুনা করতে মহা উতসাহী, নোংরা ও বাজে কথা বলতেও বিবেকে বাঁধে না তাদের।
ধর্ম নিয়ে আলোচনায় কোনোরকম আপততি নাই আমার। এটা এমন কিছু না যে এটা নিয়ে কথা বা আলোচনা করা যাবে না। বরন্চ আলোচনা ও বিতর্কের মধ্য দিয়েই সুন্দর কোনো সমাধান বের হয়ে আসে যা বিশ্বাসকে সুদৃড় করে বা ভুল সংশোধন করতে সাহায্য করে।
কিন্তু এ আলোচনায় গিয়ে তালগাছটা আমার এ নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে চোখে ঠুলি পড়লে কোনো সমাধানতো আসেই না, অন্ধকার থেকে আরো অন্ধকার এ পতিত হয়। এ ধরনের মানুষদের জন্য করুনাই হয় মাঝে মাঝে। নিজের বিশ্বাষে আত্মবিশ্বাষী হওয়া ভালো তবে সেটা যেনো এরকম না হয় যে " আমি যা জানি সেটাই ঠিক, অন্যরা সব ভুল" !
আবার এ ধরনের আলোচনায় কিছু কিছু মানুষকে নোংরা ও বাজে কমেন্ট করতে দেখি। আলোচনায় না গিয়ে অহেতুক নোংরা কমেন্ট করতে গিয়ে তারা তাদের মনের ভেতরকার অন্ধকার দিকটাই বার বার তুলে ধরেন। নিজের নাম ব্যবহার না করে ছায়া নিক ব্যবহার করাদের মাঝেই এটা বেশী দেখা যায়, যা তাদের কাপুরষতাই প্রকাশ করে।
যারা নাস্তিক তারাও এমন ভাবে আলোচনার সুচনা করেন যে মাঝেই মাঝেই ধর্ম বিশ্বাষীদের মনে আঘাত হানে। নিজের মতবাদ প্রকাশ করার স্বাধীনতা সবারই আছে তবে তা যেনো অন্যের বিশ্বাস ও অনুভূতিকে আঘাত না হানে সেটাই লক্ষ করতে হয় সব সময়।
যারা ধর্ম নিয়ে লেখেন তাদের কিছু কিছু জনের মাঝেও একি রকম প্রবৃততি কাজ করে। যার পরিসমাপ্তো ঘটে নোংরা কাদা ছোঁড়া ছুঁড়িতে।কাজের কাজে কিছুই হয় না।
ধর্মকে রাজনীতিরে সাথে গুলিয়ে ফেলতে কিছু নরপশু সব সমস্য়ই ততপর। তারা তাদের পাপ ঢাকার জন্য ইসলামকে সব সম্যই ব্যবহার করে আসছে যা তাদের পাপতো ঢাকেই না বরন্চ ইসলামকে হেয়, বিকৃত ও বিতর্কিত করা হয় । যার জন্য ইসলামকে দায়ী করা যায় না কোনো ক্রমেই।
ধর্ম নিয়ে অনেকের মাঝেই পড়াশুনা না করেই বিশাল কিছু লেখার চেষ্টা দেখা যায়। দেখা যায় সামান্য গ্যান নিয়েই এমন কিছু লিখতে যার জন্য প্রচুর পড়াশুনা ও গবেষনার। এতে আলোচনার নামে অনেক সময়ই ফালতু কিছু কলহের স্মৃষ্টো হয়। এতে যারা জানতে চায় তার জানতে বা শিখতে চায় না।
রাজনীতি বা ধর্ম আমার কাছে ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে হয় অনেক সমসয়ই। তবে অনেক সময় তা সামষ্ঠিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, ব্যক্তিগত নয়। আমার কাছে আমার বিশ্বাষ যেমন মূল্যবান একটা বিষয় তেমনি মুল্যবান হোলো অন্যের বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করে। আমি যেমন চাই না অন্য কেউ আমার অনুভূতিকে আঘাত করুক তেমনি চাই না আমি অন্য কারো অনুভূতিকে আঘাত করি।
একজন মানুষকে মানুষ হিসবে বিচার করতে কোনো বাধা নাই। ধর্ম বা রাজনীতি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। একজন আস্তিক একজন নাস্তিকের সাথে এক টেবিলে বসে চা খাবার মাঝে কোনো সমস্যা নাই যদি তারা তাদের বিশ্বাষকে সম্মান করতে জানে। ভিন্ন মতাবল্বী হলেই তার সাথে কথা বা সম্পর্ক রাখা যাবে না সেটাও ঠিক না।
যার যার বিশ্বাষ তার তার কাছে।যার যার ধর্ম তার তার কাছে।পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন করাই মুল বিষয়।
এর মাঝেই কথা থেকে যায়। একজন বর্নবাদী কি আরেক জন সভ্য ও সুশিল মানুষের সাথে বসার যোগ্য? বা একজন উগ্রবাদী ধর্মালম্বী যে ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করতে সদা ততপর তার সাথে সপ্পর্ক রক্ষা? সোজা উততর.... না। একজন মানুষ একজন মানুষের সাথেই দাঁড়াবার যোগ্য, মানুষ নামের পশু কখনই না।-------------এতো সবের মাঝেও ব্লগের কিছু লেখকের লেখা পড়তে ভালো লাগে, চিন্তা করতে সাহায্য করে। তাদের প্রতি সম্মান প্রকাশ। নাম প্রকাশ করতে চাই না, করবোও না।
রাজনীতির কথা বল্লেও ধর্মটাকেই বেশী এনেছি।লেখাটা একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।

গুরু সংবর্ধনা

কোন মন্তব্য নেই :
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে থেকে পাস করে বের হয়েছি ১২ বছর হোলো।
মনে হয় এইতো সে দিন।
২০০২ এ রি-ইউনিয়নে গিয়েছিলাম। ৫ বছর পর আজ আবার গেলাম ।
আজ ছিলো " গুরু সংবর্ধনা "
কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সব সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাঁদের আশির্বাদগ্রহনের জন্য 'ওল্ড রেমিয়েন্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েসনের' পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিলো এই গুরু স্বংবর্ধনা।
বিদ্যূত না থাকায় ৩ টার অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিলো ৫:৩০ টায়। এর ফাঁকে কলেজের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে পুরোনো সব বন্ধুদের আড্ডা ও শিক্ষকদের সাথে কথা। ১২ বছর পেরিয়ে গিয়েছে তার পরো অনেক স্যার-টিচাররাই আমাদের চিনতে পেরেছেন।মনজুরুল হক স্যারের সাথে দেখা হোলো। স্যারতো এতো বছর পরো আমার কলেজ নাম্বার ও নাম মনে রেখেছেন। আমিতো অবাক!
যে সিগারেট খাবার জন্য পানিশমেন্ট খেতে হয়েছিলো, যে সিগারেট লুকিয়ে খেতাম, সেই সিগারেট খেলাম স্কুল বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়িয়ে। আমরা সবাই নিজেকে বড় বড় ভাবছিলাম।
পুরোনো অনেকের সাথেই দেখা হোলো। কষ্টের ব্যাপার হোলো আমার ব্যাচের খুব কম ছেলেই এসেছিলো। ১০৪ জনের মধ্যে ৬ জন । অনেককেইতো চিনতেই পারি নাই। নামতো ভুলে গিয়েছি, সাথে চেহারাও। আমার রুমমেট শরিফের ডারলিং তাহমিনা আপাকেও দেখলাম ( যদিও উনি আমাদের এক সিনিয়র কে বিয়ে করেছেন )। উনাকে দেখে পুরোনো মজার কিছু স্মৃতি চলে এসেছিলো।
অনুষ্ঠান শুরু করলেন রেমিয়েন্স মিজান ভাই। আমাদের এলামনি এসোসিয়েসনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট।ডঃ মিজান, বুয়েটের প্রফেসর, এক সময়ের ডিন। বাহিরে অন্য সময়ে স্যার বল্লেও কলেজে সোজা " ভাই " বলে ঢাকি আমরা। ভাবতে ভালোই লাগে।
তার পর একে একে শ্রদ্ধ্যেয় সব স্যার-টিচার দের মানপত্র প্রদান করা হোলো। কলেজের এক সময়ের প্রিন্সিপাল শহীদ কর্নেল রহমান( যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হোন) এর পক্ষ থেকে মানপত্র গ্রহন করলেন উনার স্ত্রী। সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করলেন। সারা মিলানায়তনে তখন অন্য রকম এক পরিবেশ।
সন্ধ্যা ৬:১৫ এ অনুষ্ঠান শেষ হবার আগেই চলে আসতে হোলো অন্য এক জায়গায় যাবার তাড়া থাকায়।
ইচ্ছে ছিলো আমি যে রুমে থাকতাম সেই রুমটা বউকে দেখাবো। সেটা আজ আর হোলো না। বেটার নেক্সট টাইম।

বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০০৭

সামজিক শ্রেনীকরন, পড়াশুনা ও বিতর্ক

কোন মন্তব্য নেই :
আমাদের সামজিক ব্যবস্থার কারনেই নানা রকম শ্রেনীভেদ দেখা যায়। কিছুটা লেখা পড়া শিখলেই নিজের মাঝে ফালতু অহমিকা জেগে উঠে।

প্যান্ট-শার্ট পড়ে রিকশায় বসে পিতৃতুল্য বয়সের রিকসা চালককে তুই তুকারি করতেও বিবেকে বাঁধে না আমাদের।

সরকারী চাকরি করতে গিয়ে প্রথম দ্বিতীয়-তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনী ভেদাভেদটা ভুলতে পারি না।

বিসিএস দিয়ে প্রথম শ্রেনীর চাকুরি পেয়ে ধরাকে সরা মনে করতে শুরু করি, বাকি সবাইকে নিজের অধস্থন মনে করতে শুরু করি। স্যার সম্ভাষন না শুনলে দাঁত মুখ খেঁচিয়ে উঠি।

সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে গিয়ে জনগনকে ব্লাডি সিভিলিয়ান বলে গালি দিতে শুরু করি, ভুলেই যাই যে আমার পিতাই একজন 'ব্লাডি সিভিলিয়ান'। নিজেকে দেশের রক্ষাকর্তা মনে করে সবাইকে দেশের শত্রু বলে ভাবতে শুরু করি। নিজেকে দূর্নীতি মুক্ত দাবী করে অন্য সকলে দূর্নীতিবাজ ঢাকতে শুরু করি। নিজেদের সবচাইতে সত ও সভ্য বলতে থাকি।

গ্রামের সাধারন কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসে শহরে এসেই লেখা পড়া শিখেই নিজেকে সাহেব ভাবতে শুরু করি, পিতার কৃষক পরিচয় ঢাকার জন্য পিতাকে আড়াল করতে শুরু করি। ভুলে যেতে চাই নিজের অতীতকে। তথাকতিত এলিট ক্লাসের সাথে নিজেকে মেলাবার জন্য শুরু করি নোংরা অভিনয়।

শুরু টা আসলে শুরু হয় শৈশব থেকেই। বাবা-মা বলেন " তুমি এর সাথে মিশতে পারবে না, ওমুকের সাথে কথা বলতে পারবে না ; কারন সে একজন কৃষকের ছেলে, কারন সে একজন কেরানীর ছেলে, রিকসা চালকের ছেলে "। অফিসারের ছেলে-মেয়ে মিশতে পারে না কর্মচারির ছেলে-মেয়েদের। এভাবে মনের মাঝে গেঁথে যায় এক ধরনের শ্রেনীকরন।

ছোটবেলায় পড়াশুনা শুরু করবার সময় চলে আসে আরেক শ্রেনীকরন। জেলার স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েদের মাঝে ঢুঁকে যায় অন্য একরকম অহমিকা। অন্যান্য স্কুলের ছেলে-মেয়েদের হেলার চোখে দেখা হয়।

এটা চলতে থাকে কলেজ-বিশ্বদ্যালয়ের পর্যন্ত।
বুয়েটে পড়লে অন্যান্য দের হেয় করতে থাকে। বুয়েটের ইন্জিনিয়াররা হেলে ফেলা করতে থাকে বিআইটি থেকে পাস করা ইনজিনিয়ারদের। সরকারী মেডিক্যাল থেকে পাস করে ডাক্তাররা বেসরকারী মেডিক্যাল থেকে পাস করে দের সফদর ডাগদর বলে ঢাকতে শুরু করে।
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের কম মেধার মনে করা হয়। কলু বলে ঢাকতে থাকে কলেজ থেকে মাস্টার্স করা ছাত্রদের।
এভাবেই নানা ধরনের ব্রান্ডিং চলতেই থাকে।
চলতে থাকে অহেতুক শ্রেনীকরন ও ফালতু বিতর্ক।
-------------------
ব্লগে আজকের বিতর্ক থেকেই এলেবেলা লেখা।

সোমবার, ১৪ মে, ২০০৭

তাসনীম খলিল,আহমেদ নূর,সুশীল সমাজ ও জলপাইয়ের আচার

কোন মন্তব্য নেই :
তাসনীম খলিলের মুক্তি আন্দোলনের সফলতা হিসেবে গন্য করতে পারছি না আমি। আমার পোস্টে এটা নিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করেছি। ডেইলী স্টার , হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও সিএনএন এর ব্যানার থাকাতে ও অন্যান্য সুশীল সমাজের প্রেসার ও লবিং কাজ করাতেই এতো স হজে তার মুক্তি। এর জন্য আণ্মতৃপ্তিতে ভুগতে আমি রাজী নই।

দূঃভাগ্য নূর ভাই, আপনার পেছনে এই সব সুশীল সমাজের লবিং ও নাই, নাই বিশাল সব ব্যানার। এর জন্য জেলে বসে পঁচতে হয় আপনাকে। খেতে হয় বেদম পিটুনী। পেতে হয় চাঁদাবাজ খেতাব। আপানারই ভূল, সিলেটে না বসে থেকে ঢাকায় এসে বড় পত্রিকার লেজুর বৃততি চালায় যেতেন। তাহলে এরকম দূঃভাগ্য আপনাকে হতো না। সুশীল সমাজের অংশ না হয়ে ভুলই করেছেন। আপনারা মার কাবেন আর সেই মারের সুফল নেবে সুশীল সমাজ। আপনারা রক্ত দেবেন আর সে রক্তের সাগরে নৌকা বেয়ে সাফল্যের ভাগ বসাবে কিছু ড্রয়িংরুম বাসী রাজনৈতিক কলাম লেখক।
আসলেই ভুলল করেছেন।
না হলে........জালপাইয়ের আচার টক না মিষ্টি সেটা বুঝতেও হতো না।

চরম প্রতিবাদ জলপাই নির্যাতনের ( উতসর্গ :শহিদ চলেশ রিশিল )

কোন মন্তব্য নেই :
First they came for the jews,
I was silent,
I was not a jew.

Then they came for the communists,
I was silent,
I was not a communist.

Then they came for the trade unionists,
I was silent,
I was not a trade unionist.

Then they came for me.
There was no one left to speak for me.
----Martin Neimoller
খুব প্রিয় কিছু লেখা দিয়েই আজকের প্রতিবাদ পোস্ট।

সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মি ও ব্লগার তাসনিম খলিল তথাকথিত যৌথ বাহিনী, প্রকারন্তরে আর্মির হাতে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের পর ২৪ ঘন্টা পর মুক্তি পেলেন। হয়তোবা সি.এন.এন , হি্উমেন রাইটস ওয়াচ ও ডেইলি স্টারের ব্যানার থাকাতে তাসনিমের মুক্তি সহজতর হয়েছে।

কিন্তু তাসনিমের মতো আরো হাজার হাজার মানুষকে যে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা হচ্ছে ও তাদের আইনগত অধিকার এবং মানবাধিকারকে মধ্যাংগুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন আটকে রাখা হচ্ছে ও অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে , তাদের দেখছে কে?

বিনা বিচারে ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারের নামে মানুষকে বিনা বিচারে মারার অধিকার কে দিয়েছে সরকার কে?

দেশে কি আদৌ কোনো মানবাধিকার রয়েছে?
দেশে কি আদৌ কোনো আইনের শাসন রয়েছে?
দেশে কি আদৌ কোনো স্বাধীন আদালত রয়েছে?
দেশে কি আদৌ কোনো সংবিধান রয়েছে?
নাকি সংবিধান নামে যা রয়েছে তাকে নিয়ে কচকচানি করছে আমাদের সর্ব সরকারের সময় সুবিধাভোগী সুশিল সমাজ?

সিলেটে আহমেদ নূরকে চাঁদাবাজ বলে বেদম পিটিয়ে জেলে পোড়া হোলো। কোন আইনে বলা আছে গ্রেফতার করা হলে পেটানো যাবে?
আজ তাসনীম খলিল কে ধরা হোলো।
কাল যে আমাকে ধরা বনে না তার গ্যারান্টি কে দেবে ?
আমাকে যে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করা মারা হবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে?

হায়রে মুক্ত বুদ্ধি,
হায়রে পরিবর্তকামনা ,
হায়রে সুশিল সমাজ ।

সেদিন চলেশ রিশিল কে পিটিয়ে মেরে ফেলা হোলো ,কেউ কথা বল্ল না। মুক্ত বুদ্ধির কথা বলে সংবাদপত্রগুলো চুপ করে থেকে ব্লাডি জলপাইদের পদলেহন করে গেলো।
হায়রে বিবেক,
হায়রে মুক্ত চিন্তা।
--------
মানি না এ সব আর,
দেশ আমার একটাই।
আর কতো সহ্য করবো।
রক্তের বদলে রক্ত, গুলির বদলে গুলি।

বুধবার, ৯ মে, ২০০৭

মুখোশ

কোন মন্তব্য নেই :
রিকশায় একা @ টি.এস.সি।
পাশের রিকসায় হুড তোলা রিকসায় ঘনিষ্ঠভাবে বসা দুটো ছেলে-মেয়ে,
প্রানখোলা হাসি দুজনার,
ভাবছি তারা কি মুখোশ পরা ?

রিকসায় একা @ মতিঝিল।
পাশের গাড়িতে হালকা মোচওলা ছিম ছাম এক ভদ্রলোক,
মোবাইলে কার সাথে যেনো হেসে হেসে কথা বলছে,
সে কি সুখি ! কি বলছে সে ?
ভাবছি সে কি মুখোশ পরা ?

শপিং মলে হাঁটছি, সাথে বড়ভাই সম বন্ধু।
দোকানের কাউন্টারে বসা দোকানি,
কি যেনো ভাবছে,
ব্যবসা ? নাকি অন্য কিছু !
ভাবছি সেও কি মুখোশ পরা ?

বাসের সিটে একা, যাচ্ছি উততরা।
সামনের সিটে বসা একটা সুন্দর মেয়ে সাথে একটা ছেলে। সম্ভবত ছোট ভাই।
বাস স্টপেজে দেখলাম মেয়েটার সাথে আরেকটা ছেলের চোখের ভাষা বিনিময়।
বাসে উঠে সেই চেনা ছেলেই অচেনা।
ভাবছি সেও কি মুখোশ পরা ?

রাস্তার পাশে বসে ইটালী হোটেল।
দূপুরের খাবার সারছে ১ জন বিকসাচালক, পাশেই তার রিকসা।
চোখে মুখে পরম তৃপ্তি।
দাঁড়িয়ে দেখছি আর ভাবি...
ভাবছি সেও কি মুখোশ পরা ?

আজাকল কেনো জানি মনে হয় সবাই মুখোশ পড়া। খোলসের ভেতরের মানুষটাকে ছিড়ে ফুড়ে দেখতে ইচ্ছে হয় তার ভেতর টাকে। জানতে ইচ্ছে হয় কি ভাবছে সে।মনের চোখ দিয়ে দেখতে ইচ্ছে হয় তার মন টাকে। অনুভব করতে ইচ্ছে হয় তার অনুভবকে।
আমিও কি সেই মুখোশ পরার দলে?

বুধবার, ২ মে, ২০০৭

ফজলার রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

কোন মন্তব্য নেই :
রংপুরের গংগাচড়ার হতদরিদ্্র মুক্তিযোদ্ধা ফজলার রহমান ,স্বাধীন দেশে থাকতে কেমন লাগে জানতে প্রথম আলোকে বলেন " খিদা নাগে বাহে , খুব খিদা "

স্বাধীনতার 35 বছর পর যখন একজন স্বাধীনতার সুফল ভোগী হয়ে যখন এ লেখা পড়ি তখন কি আমাদের একটুও খারাপ লাগে না ?
কোথায় যায় আমার বা আমাদের বিবেক , চেতনা??

সোনারগাঁ বা প্রেসস ক্লাবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বড় লেকচার দিয়ে দামি বি.এম.ডবি্ল গাড়ি চালিয়ে বাসায় গিয়ে পেট ভরে ভাত খাই বা কে.এফ.সি তে মুরগির রান চিবুই তখন কি একবারো আমাদের সেই সাহসি মানুষগুলোর কথা মনে পড়ে ?

আজ যখন সেই সাহসী মানুষটার মেয়ে ফতোয়ার শিকার হয় , সেই মানুষটাকে জুতার মালা পড়িয়ে ঘোরানো হয় তখন কোথায় যায় আমাদের চেতনা ?
যখন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ভিক্ষার ঝুলি হাতে হাত পাততে হয় তখন কোথায় থাকে আমাদের চেতনা ?

হায়রে আমাদের চেতনা , হায়রে আমাদের কৃতগ্যতাবোধ !! যখন সেই সর্ব কালের সেরা সাহসী সন্তানকে অভাবের লজ্জায় গলায় দড়ি দিতে হয় তখন কোথায় থাকে আমার বা আমাদের মানবতা ?

যখন সেই সাহসী মানুষটা যে একদিন সব কিছুর মায়া ছেড়ে দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তযুদ্ধে , অস হায় অবস্তা য় রাজাকারের গুলিতে মরতে হয় , তখন তার সে খবর আমরা খবরের 13 নাম্বার পাতায় ছেপেই খালাস !
হায়রে আমাদের চেতনা , মানবতা !

সুবিধাবাদি মধ্যবিত্ত সমাজের অংশ হয়ে লজ্জা হয় আমার,
আমি তো তাদেরই অংশ যারা মুক্তিযোদ্ধার গল্লকবিতা লিখে বাহাবা নেই ,
একুশে বা বাংলা একাডেমি পদক নেই ,
সেই আমিই 71 এ দৈনিক পাকিসতানে কাজ করি বা পার্ক স্ট্রিটের বারে রংগিন পানিয় হাতে জয় বাংলা বলি !
আজ আমিই ও মুক্তিযোদ্ধা !!

হাহ ... কি রসিকতা ??
16 ডিসেম্বরে বড় বড় কথা বলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিজয় সংখায় বেশ রসিয়ে একটা নিবন্ধ ও লিখে ফেলি .
একটা কবিতা লিখে ফেলি আবেগ দিয়ে ...একটা চেক তো পাওয়া যাবে !!!!
পলটনে বড় বড় কথা বলি রাজাকার জামাতের বিরুদ্ধে ,14 ডিসেম্বরে রায়ের বাজার সৌধে যাই ফুল দিতে ক্ষমতা যাবার যুদ্ধ করি , আবার একি সাথে বসে ইফতার খাই , চা খাই , পান করি ..ছেলে মেয়ের বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে আলাপ করি , রাজাকার জারজকে হালাল বানাই ..
হায়রে চেতনা ?

আজ মুক্তিযুদ্ধ বাজারের পন্য ... যে যেভাবে পারছি ব্যব হার করছি ।

লজ্জা হয় , কষ্ট হয় , আমিওতো আমি এদের একজন দেশ থেকে পালিয়ে আরামে বসে বড় বড় কথা লিখছি ।
দাউদ হায়দারের সেই কথা টা মনে পড়ে যায় তখন " জন্মই আমার আজন্ম পাপ "

মাহবুব সুমন
ক্যানবেরা
22 ডিসেম্বর 2006
খবর সূত্র: প্রথম আলো 21 ডিসেম্বর 2006 সংখা ( প্রথম পাতা )

কে.এফ.সির মুরগি, সিনেপ্লেক্সের সিনেমা ও মর্জিনার সুখ

কোন মন্তব্য নেই :
বিদেশে থাকায় আর্থিক স্বামর্থ সামান্য বাড়াতে কে.এফ.সির মুসগীর ঠ্যাং চিবানোর ক্ষমতা বেড়েছে । দেশে থাকলে হয়তো সেটা কিছুটা কম হতো । ঢাকাকে ফরেন ফরেন লাগে।

সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখে ভাবছি দেশ ভালোই এগিয়েছে। এ/সি রুমে বসে পপ কর্ন ও পেপসি খেতে খেতে ভাবছি " দেশ এগিয়ে যাচ্ছে , ভাবতে ভালোই লাগে।"

বসুন্ধরা সিটি....বিশাল শপিং মল... সারি সারি দোকান , ফুড কোর্টে বিচিত্র রকম খাবারের সমারোহ...মোটা সোটা বালিকা বন্ধুর সাথে চিকন আলী বালক বন্ধুর কলাকলি, রাস্তায় দামী গাড়ি ...ভাবতে ভালোই লাগে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

বিলবোর্ডে মোবাইল কোম্পানীর ১ সেকেন্ড পালসের ওফার, কে বলবে আমাদের জিডিপি পৃথিবীর আর অনেক সব গরীব দেশের চাইতেই অনেক কম। খেতে না পারি মোবাইল থাকতে হবে। প্রযুক্তির ইঁদুর দৌড়ে পিছনে পড়তে চাই না আমরা।

রাস্তায় দামী গাড়ি , এমন অনেক দামি কিছু গাড়ী দেখতে বিদেশেও দেখা যায় কম। কে বলবে বাংলাদেশে ট্যাক্স দেবার লোক কম!

দামি গাড়ীর শো রুম , দামি গাড়ির সেক্সি চালানো ,একি সাথে বাদুর ঝোলা হয়ে ৬ নাম্বার বাসে ঠেসাঠেসি। চলছে ঠেলাগাড়ি , ঝড়ছে ঘাম । ভাবতে ভালোই লাগে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

রাস্তায় চেক পোস্ট , সামরিক শান্তিতে আমরা সুখেই আছি।

বস্তি ভাঙা হচ্ছে, ঢাকাকে তিলোততমা করে গড়ে তোলা হচ্ছে।

পিজা হাটে ঢোকার সিরিয়াল দেখে কে বলবে দেশের বেশির ভাগ মানুষই চরম দারিদ্রসীমার নিচে। ১৫০ টাকা দামের ছোট পিজ্জা টাকা দিয়ে মর্জিনার কদিনের খোরাক হবে সেটার ভাব্বার আমি কে!

সোডিয়াম বাতির নিচে বসা মর্জিনার মার সুখ দূঃখ দেখার টাইম নাই আমার। সারাদিন কটা পিঠা বেচে ১০০ টাকা দিয়ে তেঁজগাঁর বস্তিতে ফীরে যাবে মর্জিনার মা ও মর্জিনা। আমিতো ব্যস্ত ১৫২০ টাকা দিয়ে কেনা ফ্রাইড চিকেন চিবুতে।

কাল কি মর্জিনা পিঠা বিক্রি করতে পারবে ? সে কি সুখে আছে? ধাত্ কি সব আবোল তাবল বলছি আমি। আমিতো ব্যস্ত কাল কোথায় কত টাকা খরচ করে খাওয়া যাবে সেটার চিন্তায়। ব্লগে লেখার একটা প্লট পেয়েছি। এটাই অনেক কিছু। কিছু হিট জমবে। কিছু আহ্‌ উহ্‌ শুনবো। আবার ভুলে যাবো সব।

ভাবতে ভালোই লাগে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
আলোর নীচে রাজ্যের অন্ধকার।
উপরে ফিটফাট নীচে সদরঘাট।
আহ কি শান্তি।
(৩ দিন ধরে খুব খারাপ লাগছে, এ সব দেখে)

মঙ্গলবার, ১ মে, ২০০৭

বোরো ধানে চিটা ও গ্রামীন অর্থনীতি

কোন মন্তব্য নেই :
অন্যান্য ফসল থেকে অর্থ আশা করা হলেও গ্রামে বোরো ধানটাকে সারা বছরের খোরাক হিসেবে রাখা হয়। সামরিক শান্তিতে খবরের কাগজে অনেক খবরের মাঝে এই বোরো ধানে চিটার (ধানের শীষে ধানের অস্তীত্বহীনতা) খবরটাও কিছুটা ম্লান।
আসলে গ্রামের খবর আজকাল খবরের কাগজের ভেতরের পাতায় শোভাবর্ধন করা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। সুশিল নাগরিক সমাজে গ্রামের স্থান অনেকটাই আনস্মার্ট হিসেবেই গন্য।
ধানে চিটা হবার কারনে গ্রামীন অর্থনীতিতে কি প্রভাব পড়বে সেটা কিছু দিন পরই বোঝা যাবে। ৮০% লোকের খাদ্যের সংস্থান না করেই দেশের অর্থনীতিতে কি ভাবে গতিশীলতা আনয়ন করা যাবে সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আমাদের বর্তমান শাসকদের থাকলেও সেটা ভাবার সময় তাদের আছে কি না সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
বোরো ধান রোপনের সময় চাষীদের সারের জন্য হন্যে হয়ে ছোটার খবর খবরের কাগজে আমরা পড়েছি। ধানের চারা লাগানোর একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবশ্যই সার দিতে হয় আর সেই সময়ে সার দিতে না পারলে ধানের ফলন তো আশা করাই যায় না বরন্চ ধানের আশা ছেড়েই দিতে হয়।
এর সাথে ছিলো তেলের দাম। গ্রামে সেচের জন্য মূলত ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রের উপর নির্ভর করে। ডিজেলের সংকট ও সাথে দামের ক্রমাগত বৃদ্ধি সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো। খবরের কাগজে ডিজেল সংকট সাথে সার সংকট, কৃষকের কি সর্বনাশ করেছিলো সেটা শুধুমাত্র কৃষকই উপলব্ধি করতে পারবেন। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ধানে চিটা।
১ বিঘা জমিতে আশা করা হয় ২০ -২৫ মন ধান । চিটা হবার কারনে সেই জমি থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ১০-১২ মন ধান। এতে বিঘা প্রতি লোকসান হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা। যেখানে খোরাকী উঠছে না সেখানে যুক্ত হয়েছে আর্থিক লোকসান। কৃষক যাবেই বা কোথায়?
হাইব্রিড নামক উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধানের বীজেই মূলত এ সমস্যা বেশী দেখা দিয়েছে। যুগ যুগ ধরে গোলায় বীজ ধান সংরক্ষনের ধারা থেকে সরে এসে কৃষক এখন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে হাইব্রিড নামক উচ্চফলনশীল বীজ ধানের উপর।
এর জন্য সরকারের বি.এ.ডি.সি এবং অন্যান্য বীজ বাজারজাত করন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরাসুরি দায়ী। তবে দায় স্বীকার করতে তাদের দেখা যাচ্ছে না ও অতীতেও দেখা যায় নি।
খবরের কাগজে হয়তো কিছুটা আমরা পড়েছি তবে জরূরী অবস্থায় সামরিক তত্বাবধানে চালিত প্রশাসনে সব কিছু স্বাভাবিক দেখানোর নোংরা ও চিরায়ত পন্থায় অনেক খবর আমরা পাই নাই এবং পত্রিকাগুলো অনেকটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই খবর গুলোকে প্রায়শই এড়িয়ে গিয়েছে।
এই সংকটের উপায় আমাদের বের করতেই হবে। আমরা যা কিছুই বলি না কেনো দেশের অর্থনীতি এখনো বহুল ভাবে গ্রামের উপর নির্ভরশীল। গ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে।