বেশ কবছর আগে কালীগন্জে বেড়াতে গিয়ে থানার কোয়ার্টারে ওসি সাহেবের বাসার সামনের গ্যারাজটি যেমনটি দেখেছি, ২০ বছর আগে সেমনটিই দেখেছিলাম। শান বাঁধানো পাকুর গাছের নিচে সেই গ্যারাজে সে সময় একটি ধুলোয় ঢাকা ল্যান্ড রোভার পার্ক করা ছিলো। সেবার বেড়াতে গিয়ে সেটা দেখতে পাইনি। শুনেছি সেটা নাকি নিলামে বিক্রি করা হয়েছিলো অল্প কিছু টাকায়। হয়তো সেই ল্যান্ড রোভারটি এখন চাঁদের গাড়ি হিসেবে বান্দরবনের পাহাড়ে উঠো নামা করছে। অনেক স্মৃতিমাখা সেই ল্যান্ড রোভার। একসময়ে সারা ঢাকা দাবড়িয়ে বেড়ানো ল্যান্ড রোভারটিতে চড়ে বঙ্গবন্ধু ৭০ এর নির্বাচনের প্রচারনায় ব্যবহার করেছিলেন নিয়মিত। ল্যান্ড রোভারটির মালিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ময়েজউদ্দিন।
আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে, ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জে স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছিলেন ময়েজউদ্দিন। প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে উনাকে হত্যা করেছিলো যে আজম খান, সে এখন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির বড় নেতা। বিচারে আজম খানের যাবজ্জীবন কারাদন্ডও হয়েছিলো। স্বৈরিচারী এরশাদ তখন রাস্ট্রপতি। কালীগন্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে লে.জে হোমো এরশাদ আজম খানকে সবার সামনে নিজের ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। অবশ্য এর আগে আজম খানকে সাধারন ক্ষমায় মুক্তি দিয়েছিলো তার বড়ভাই এরশাদ।
আজকে ২৫ বছর পর মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টিও সরকারের অংশীদার। আজম খানও আজ জাতীয় পার্টির বড় নেতা হিসেবে মহাজোটেরও বড় নেতা।
ময়েজউদ্দিন যখন মারা যান মেয়ে মেহের আফরোজ চুমকি সময় অনেক ছোট। সে সময়কার ছোট্ট চুমকি আজ নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ১৯৯৬-২০০১ সংসদেও উনি সংসদ সদস্য ছিলেন। সরকারী বিভিন্ন অনুস্ঠানে হয়তো আজম খানের সাথে দেখা হয়, হয়তো পাশাপাশি বসে ইফতারও খেয়েছেন। কেমন লাগে বাবার খুনির সাথে বসে ইফতার খেতে ! চুমকি আপা বলবেন কি ?
একসময় এই আমাকেই বলেছিলেন " ক্ষমতায় গেলে বাবার হত্যার বিচার করবো " ।
আজ আপনারা ক্ষমতায়। বিচার কি করা যাবে চুমকি আপা ?
আপনি কি একবারো সেই নিরীহ দরিদ্র কিন্তু অসীম সাহসী সেই ধোপার সামনা সামনি হবার সাহস রাখেন যিনি শত হুমকির মুখেও স্বাক্ষী দিয়েছিলো যখন আর কেউ সাহস রাখেনি ?
আজ শহীদ ময়েজউদ্দিনের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের হাজারো রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিচার না হবার মতো এটিও একটি।
রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
মৃত্যু এসে উনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg5RN493Sz6wurLF6COD2Qj4KMaX9jolBIDFuGcCIXQjoWyYTvzMJ1sK-5XFmBFysv8f1v8s0TSaUvyPvvXyh1-WMt60VGKVfgk7IxXgpdt0hix3I3Bu4o9ORF6d0WuqWVlAynT/s200/benqt60_1234634549_1-karimshaiji.jpg)
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের মৃত্যু আমাকে কস্ট দেয়নি, লজ্জা দিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় মৃত্যুই এসে উনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সমস্ত লজ্জার হাত হতে।
পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ছে এক গাদা গৎ বাঁধা শোকবার্তা। কাঁদতে কাঁদতে লুঙি ভেজানোর উপক্রম করছি আমরা। মৃতদেহ দেখতে বা জানাজায় দলে দলে আসা অমুক তমুকের সার্কাস দেখতেও খারাপ লাগছে না। আজ কালকার জামানায় এগুলো স্বাভাবিক। আগামী বছর ধুম ধাম করে উনার মৃত্যবার্ষিকী পালন করা হবে নিয়ম মেনে। পরের বছর আবেগের তোড় একটু কম থাকাতে সেটা একটু কম ধুম ধামের করে পালন করা হবে। আবেগ কমতে কমতে যখন সেটা যখন শুন্যে পরিণত হবে তখন উনার কথা স্মরন করবে শুধুমাত্র উনার পরিবার আর উনার শীষ্যরা। আমরা সুশীল মধ্যবিত্ত মেতে উঠবো অন্য কাউকে নিয়ে। আবেগ হোলো মধ্যবিত্তের ফ্যাশন। ঈদের ফ্যাশনের মতো আবেগও বদলে যায় বছর বছর - আবেগের ব্যক্তি/বস্তুও বদলে যায়।
অনেক সময়ই দেখেছি সিডি বা ক্যসেটের ফ্ল্যাপে গানের সুরকার/গীতিকারের নামের জায়গায় লেখা "সংগৃহিত"। ভেবেছিলাম হয়তো সেই মহান শিল্পী অনেক খেটে খুটে - বন বাদারে ঘুরে ঘুরে গান সংগ্রহ করে বাঙালী জাতির সংগীত সম্ভারকে সমৃদ্ধ করেছেন। পরে শুনেছি, সেটা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের লেখা - সুর করা। চরম অকৃতজ্ঞ এবং চোর সেই শিল্পী বেমালুম চেপে গিয়েছেন। পরে ধরা পরার পর ইয়ে ইয়ে বলে পার পেতে চেয়েছিলেন সেই ভদ্রবেশী চোর। এর পর যা হয় , শাহ আবদুল করিমের ভাগ্যে স্বীকৃতিতো দূরের কথা ; রয়ালটির ক্ষুদ্রাংশ টুকুও জুটেনি।
বেঁচে থাকতে শাহ আবদুল করিম অনেক পদক পেয়েছিলেন, অনেক সম্মাননাও পেয়েছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে উনার পেটে যখন ভাত জুটতো না তখন কোনো সুশীলই তার খবর নেয়নি। এই মানুষটাই একদিন কস্ট নিয়ে বলেছিলেন
"এত সংবর্ধনা, সম্মান দিয়ে আমার কী হবে! সংবর্ধনা বিক্রি করে দিরাই বাজারে এক সের চালও কেনা যায় না"। (প্রথম আলো)
আজকে ফেসবুকের পাতায়, ব্লগের পাতায়, পত্রিকার পাতায় যারা শোকগাঁধা লিখছি ফ্যাশন করে তারাও কোনো খোঁজে নেইনি সেসময়।
এক বোতল ব্লাক লেভেলের দাম দিয়ে কয় সের চাল কেনা যায় সেটা ভাবছি, একটা ডিএসএলআর এর দাম দিয়ে কয় মাস পেট পুরে খাওয়া যায় সেটাও ভাবার চেস্টা করছি। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম যখন ক্ষুদায় কাতর ছিলেন, চিকিৎসার অভাবে ভাঙা কুঁড়ে ঘরে কাতরাচ্ছিলেন তখন অবশ্য এসব হিসেব করার ফুসরত হয়নি আমার বা আমাদের। এখন যা করছি তার সব কিছুই ভন্ডামী। এসব ভন্ডের মাঝে আমিও একজন।
ভাবছি সামনে কার পালা ?
রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
হাবিজাবি ৬
অনেক দিন কিছু লেখা হয়। সত্য বলতে কি কিছু লিখতেও ইচ্ছে হয় না আজকাল। জীবনটা মনে হয় একটা ইনফিনিটি লুপের মাঝে আটকা পরা। সেই একই কলের গান এক ঘেয়ে সুরে বেজেই চলছে।
রোজার মাস চলছে। সংযমের মাস !! যদিও সংযমের চাইতে অসংযমই বেশী দেখা যায় এসময়টিতে। যার জীবনে প্রতিটি মাসই সংযমের, তার কাছে একটি বিশেষ মাসে কিই বা এসে যায়। রোজা রাখা হচ্ছে না, বলতে কি সম্ভব হচ্ছে না। এসি ঘরে বসে আরাম কেদারায় বসে রোজার মাহাত্ন -ফজিলত নিয়ে অনেক বড় বড় বাতচিত করা যায় কিন্তু কাঠা ফাটা গরমে পিচ ঢালা রাস্তায় যে মানুষটি রিকশার প্যাডেল ঠেলছে সেই বুঝতে পারে রোজা রাখা কত্ত কঠিন কাজ।
শীত কুমারের বিদায় শেষে বস্ত কুমারের আগমন ঘটেছে ডাউন আন্ডারে। দিনে বেশ গরম পরলেও রাতে ঠিকই কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমুতে হয়। দেশ থেকে বউ কাঁথা নিয়ে এসেছে, এবারে সেটার উদ্ভোধন করা হবে। ঈদে প্রথম বারের মতো ছেলেকে নিয়ে নামাজ পড়তে যাবো, ফ্লরিয়াডে যাওয়া হবে গতবারের মতোই। হয়তো ২/১ প্রি মানুষের ঘরে বেড়ানোও হবে । গতবারে ঠিক এ সময়টিতে ছিলাম ২ জন এবার ৩ জন। জীবনে একটু কি পরিবর্তন আসেনি ? এসেছে এসেছে।
গত সপ্তাহে ছেলের জন্য ঈদের কাপড় কিনেছি, এক জোড়া ছোট্ট জুতোও কেনা হয়েছে। পান্জাবি পড়ে বাপ ব্যাটা নামাজ পড়তে যাবো। ভাবতেই অন্যরকম ভালো লাগছে। এত্ত পিচ্চি একটা ছেলের সাথে কোলাকুলি করতে হলে আমাকে মাটির সমান্তারালে নামতে হবে।
আজকের মতো এত টুকুই। লেখা লেখির ব্লকটা ভাঙতে আজকের হাবিজাবি।
রোজার মাস চলছে। সংযমের মাস !! যদিও সংযমের চাইতে অসংযমই বেশী দেখা যায় এসময়টিতে। যার জীবনে প্রতিটি মাসই সংযমের, তার কাছে একটি বিশেষ মাসে কিই বা এসে যায়। রোজা রাখা হচ্ছে না, বলতে কি সম্ভব হচ্ছে না। এসি ঘরে বসে আরাম কেদারায় বসে রোজার মাহাত্ন -ফজিলত নিয়ে অনেক বড় বড় বাতচিত করা যায় কিন্তু কাঠা ফাটা গরমে পিচ ঢালা রাস্তায় যে মানুষটি রিকশার প্যাডেল ঠেলছে সেই বুঝতে পারে রোজা রাখা কত্ত কঠিন কাজ।
শীত কুমারের বিদায় শেষে বস্ত কুমারের আগমন ঘটেছে ডাউন আন্ডারে। দিনে বেশ গরম পরলেও রাতে ঠিকই কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমুতে হয়। দেশ থেকে বউ কাঁথা নিয়ে এসেছে, এবারে সেটার উদ্ভোধন করা হবে। ঈদে প্রথম বারের মতো ছেলেকে নিয়ে নামাজ পড়তে যাবো, ফ্লরিয়াডে যাওয়া হবে গতবারের মতোই। হয়তো ২/১ প্রি মানুষের ঘরে বেড়ানোও হবে । গতবারে ঠিক এ সময়টিতে ছিলাম ২ জন এবার ৩ জন। জীবনে একটু কি পরিবর্তন আসেনি ? এসেছে এসেছে।
গত সপ্তাহে ছেলের জন্য ঈদের কাপড় কিনেছি, এক জোড়া ছোট্ট জুতোও কেনা হয়েছে। পান্জাবি পড়ে বাপ ব্যাটা নামাজ পড়তে যাবো। ভাবতেই অন্যরকম ভালো লাগছে। এত্ত পিচ্চি একটা ছেলের সাথে কোলাকুলি করতে হলে আমাকে মাটির সমান্তারালে নামতে হবে।
আজকের মতো এত টুকুই। লেখা লেখির ব্লকটা ভাঙতে আজকের হাবিজাবি।