বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

প্রিয় জুবায়ের ভাই যাবার আগে বলে গেলেন না, কিভাবে প্রিয় মানুষকে বিদায় দিতে হয়

কোন মন্তব্য নেই :
সকালে খবরটি যখন পেলাম হঠাৎ স্তব্দ হয়ে পড়েছিলাম।
"মুহম্মদ জুবায়ের আজ আমাদের মাঝে নেই"  ।
টেক্সাসের হাসপাতালে ঘীরে থাকে প্রিয়জনদের ভালোবাসার সুতা ছিড়ে উনি আর নেই। প্রতিদিন যে মানুষটির জন্য অপেক্ষা করতাম সে মানুষটি আমাদের মায়া কাটিয়ে আজ অন্য পৃথিবীর বাসিন্দা!
বিশ্বাষ করতে পারছি না, অন্য রকম কস্ট লাগছে, অন্যরকম..................
মানুষ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যাবার পর নাকি আকাশের তারা হয়ে মিট মিট করে জ্বলতে থাকেন। মুহম্মদ জুবায়ের আজ সেরকম এক তারা। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবো " জুবায়ের ভাই, আমি দূঃখিত " । আপনি কি আমার কথা শুনতে পারছেন ???

বেঁচে থাকুন শ্রদ্ধেয় মুহম্মদ জুবায়ের (২২ মে ১৯৫৪ - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮)
... আপনার রচনায়, আমাদের ভালোবাসায়!
 

এনওয়াইবাংলা থেকে মুহম্মদ জুবায়ের এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জন্ম ২২ মে ১৯৫৪। বেড়ে ওঠা বগুড়া শহরে। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড়। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে লেখালেখি শুরু হলেও ১৯৮৪-৮৫ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত দীর্ঘ স্বেচ্ছা-অবসর বা শীতঘুমে মগ্ন। গল্প-উপন্যাস এবং সংবাদপত্রের কলাম ও ব্যক্তিগত রচনাসহ বিবিধ গদ্যের রচয়িতা, কিছু অনুবাদকর্মও আছে। প্রকাশিত গ্রন্থ দু’ট – উপন্যাস “অসম্পূর্ণ” (১৯৮৬) ও কিশোর উপন্যাস “আমাদের অমল” (২০০৩)। পরবাসজীবন ১৯৮৬-র মাঝামাঝি থেকে। বসবাস করেছেন আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের ডালাস শহরে। মুহম্মদ জুবায়ের এক কন্যা (বয়স ২০) এবং এক পুত্র (বয়স ১০) সন্তানের জনক।  

মুহম্মদ জুবায়ের এর লেখার লিংক

- বাঁধ ভাঙার আওয়াজ ব্লগ
- সচলায়তন ব্লগ
- ব্লগস্পট
- এনওয়াইবাংলা কলাম
- পিডিএফ-এ উপন্যাস "পৌরুষ" 

ব্লগার অমিত আহমেদের এ লেখাটির কাছে কৃতগ্যতা স্বীকার করছি  কিভাবে প্রিয় মানুষকে বিদায় জানাতে হয় একটু জানাবেন জুবায়ের ভাই

"মুহম্মদ জুবায়ের, শুনতে পাচ্ছেন কি?" আমি আপনার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি.....

কোন মন্তব্য নেই :
মুহম্মদ জুবায়েরের সাথে পরিচয় আমার এক পোস্টে উনার করা এক মন্তব্যের মাধ্যমে। "ফজলার রহমান" নামে এক দরিদ্র বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আমরা দুজনই লিখেছিলাম। একথা জানার পর উনার সে লেখাটি পড়লাম, মুগ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গভীর এক ভালোবাসা আবিস্কার করলাম উনার মাঝে। সামহোয়্যার ইন ব্লগে সে সময় উনি মুলত উপন্যাস লিখতেন। একের পর এক পর্ব লিখতেন, খুব বেশী একটা মন্তব্য পড়তো না সেগুলোতে। প্রায় সময়ই সিরিজ গুলো ঝুলে যেতো, আমিও ঝুলে ঝুলে মুগ্ধ হয়ে উনার প্রতিটি লেখা পড়েছি।

গুগল-টকে কথা বলার মাঝে আবিস্কার করলাম ঘুড়ে-ফীরে উনি আমার আত্মীয় হোন। এক সময় উনি এ ব্লগে লেখা বন্ধ করে অন্য এক ব্লগে চলে গেলেন, ওখানেও লুকিয়ে উনার লেখা পড়েছি।

মাঝে কোনো এক ব্যপারে উনি আমার উপর চরম বিরক্ত হয়ে বিশাল এক মেইল করলেন, আমিও আমার বদ-স্বভাবসুলভ ভাবে আক্রমনাত্নক প্রতি উত্তর দিলাম। এর পর কোনো যোগাযোগ হয়নি উনার সাথে। তারপরো লেখার মুগ্ধতা কাটেনি, লুকিয়ে লুকিয়ে উনার প্রতিটি লেখা পড়েছি।

বেশ কদিন আগে খবর পেলাম উনি খুবই অসুস্থ্য। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় এসব খবর পেলে। আবার যখন শুনি উনি এখন কিছুটা সুস্থ্য তখন মনটা কিছুক্ষনের জন্যও ভালো হয়ে যায়। অন্য ব্লগে প্রতিদিন একবার হলেও ঢুঁ মেরে দেখি জুবায়ের ভাই কেমন আছেন !

গুগল টকে সাইন ইন করে চোখ বুলিয়ে দেখি নামের সাথে ১৯৭১ যোগ করা মুহম্মদ জুবায়ের লগড ইন কি না, উনাকে যে দ‌ূঃখিত বলা হয় নি আমার এখনো।
মুহম্মদ জুবায়ের সুস্থ্য হয়ে ফীরে আসুন আমাদের মাঝে, আল্লাহর কাছে এই কামনাই করি।

রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

"বাবা", যে মানুষটিকে নিয়ে আমার কখনোই লেখা হয়নি

1 টি মন্তব্য :
জ্যাতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাষ না করলেও 'বৃষ-বৃষ' সংঘাত কথাটি আমি সব সময়ই বলে থাকি। বাবার রাশি ও আমার রাশিতে মিল থাকাতেই নাকি সব সময় দুজনের মাঝে খিটমিট লেগে থাকে, মা মজা করে বলেন শিং-শিং এ যুদ্ধ। রাজনীতি নিয়ে তর্কতো খুবই স্বাভাবিক ব্যপার। আওয়ামী বিরোধী বাবার সাথে কত যে তর্ক হয়েছে সেটা মনে পড়লে মাঝে মাঝে হাসিই পায়। ঘটনা যাই হোক, বাবার সাথে আমার মত ও অন্যান্য অনেক অমিল না থাকলেও আজকাল আবিস্কার করতে পারছি দুজনের মাঝে অনেক অনেক মিল, মা তো বলেন বাপের ফটোকপি।

বাবার জীবনের অনেক কিছুই আমাদের অজানা। হয়তো নিজের কস্ট-সংগ্রামের কথা বলে সন্তানদের কস্ট দিতে চান না বলেই সবকিছু নিজের মাঝে চেপে রাখেন। বাবা-মা হতে শত মাইল দূরে জায়গীর থেকে এসএসসি পাশ করেন। গ্রামের জায়গীর থাকার কস্ট যে থেকেছে সেই শুধু জানে। খুব সকালে উঠে গরু ছাগলকে খাবার দিয়ে- বাজার সদাই করে তবেই নিজের পড়াশোনা, খাবারের বেলায় হয়তো সবার খাবারের পর যা বেঁচে থাকে সেটাই জুটে।

২৩ বছর বয়সেই জীবন সংগ্রাম শুরু। এর মাঝেই মুক্তিযুদ্ধের শুরু। যুদ্ধ শেষে পুলিশে যোগদান। তখনো আমার জন্ম হয়নি। বাবার কাছে সে সময়কার ঘটনা জানতে চাইলে অনেক কিছুই বলতে চান না। সারদার ক্যাডেট জীবন, সর্বহারা পার্টির হামলা থেকে বাঁচার জন্য স্টেনগান নিয়ে ঘুমানো, রক্ষিবাহিনীর অনেক কিছু দেখেও না দেখার অভিনয়, আওয়ামী লিগের চরম অরাজক শাষন, ৭৪' দূর্ভীক্ষ্, ৭৫' বংগবন্ধু হত্যা পরবর্তী অবস্থা , সামরিক শাষনের সময়কার আর্মিদের ধমকা-ধমকি, ৮১' জিয়া হত্যা, ৯ বছরে এরশাদীয় সামরিক- একনায়ক শাষন শেষে ৯০ এর গনঅভ্যুত্থান, ৯১' খালেদার বিএনপির ক্ষমতা, ৯৬' হাসিনার আওয়ামী লীগের ক্ষমতা শেষ করে ০১' খালেদায় দ্বিতীয়বারের সরকার গঠন- দেশের রাজনীতির এই দীর্ঘ পরিক্রমার নিরব সাক্ষি বলা যেতে পারে বাবাকে। বাবার কাছে জানতে চাই মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা, দীর্ঘ চাকুরী জীবনের কথা, উনি হাসেন; বলতে চান না অনেক কিছুই। বাবার মতো আজকাল অনেকেই মনে হয় মুচকি হেসে কিছুই বলতে চান না। ইতিহাস লেখা হয় তাদের হাত দিয়ে ইতিহাসে যাদের কোনো অবদানই নেই।

মাঝে মাঝে বাবাকে জিগ্যেস করতে ইচ্ছে হয় পুলিশে চাকুরি করে কি পেলে ! ৯০ দশকের কোনো এক বছরে শিবিরের গুলিতে ঝাঁঝরা-আহত বাবাকে রাজশাহীতে যখন দেখতে গিয়েছিলাম তখনো প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে হয়েছিলাম। দীর্ঘ চাকুরী জীবন শেষে অবসর যাবার পর প্রশ্নটা আবার করতে চেয়েছিলাম। করা হয়নি কখনোই। প্রশ্ন করতে পারি না যেখানে উত্তরটা আগে থেকেই জানা; পেনশনের কিছু টাকা-ধাতব কিছু পদক - হাসিনার দেয়া কচুর লতি, খালেদার দেয়া লটকন - বিদায় সংবর্ধনায় পাওয়া একটা ক্রেস্ট - অনেক অপরাধীর ঘৃনা- অনেক অনেক মানুষের ভালোবাসা, আর আমরা -- উনার সন্তানেরা। আমার বাবা-মা অনেক কস্ট করে আমাদের মানুষ করেছেন। পুলিশের লাখো দূর্নীতির মাঝেও আমরা অনেক কস্ট করে মানুষ হয়েছি, সৎ টাকায় সৎ জীবন যাপনের আপ্রান চেস্টা করেছি। আমরা মানুষ হয়েছি এটাই উনার সবচাইতে বড় প্রাপ্তি।

বেশ কদিন আগে বাবার সাথে কথা বলছিলাম। কথার শুরুতেই দুস্টুমি করে ৩ ওয়ে কনফারেন্সিং চালু করে চমকে দিলাম বাবাকে। আমেরিকা-বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া একই সাথে কথা বলছি আমরা ভাই-বোন-বাবা/মা। বাবাকে বল্লাম ভালো করে 'আম্রিকা' দেখতে, এর পর অস্ট্রেলিয়া ঘুড়ে যেতে। বাবাকে শিশুর মতো আনন্দিত হতে দেখে আমার চোখে কি একটু পানি এসেছিলো ?

আমাদের বাবা-মারা আমাদের জন্য তাদের জীবনটাকে শেষ করে ফেলেন, নিজেদের জন্য কিছুই রাখেন না। সন্তানদের মানুষ করবার জন্য নিজেদের অবসর সময়টুকুও ব্যয় করে ফেলেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন সন্তানরা বড় হয়ে যায় তখন বড্ড একাকী হয়ে পরেন আমাদের বাবা-মারা। বাবা দিবস- মা দিবস পালন করে হয়তো আমাদের অনেকেই একদিনের জন্য হলেও তাদের শুভকামনা জানাই। ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের দিবস পালন না করলেও আজ বলছি " আব্বু, হ্যাপি ফাদার্স ডে " ।

বাবাকে নিয়ে অনেকে কিছুই লেখার ছিলো, অনেক কিছুই লেখা হলো না।

অস্ট্রেলিয়ায় সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবার " বাবা দিবস " পালন করা হয়। দিবসটির ভুলে থাকতে চাইলেও টিভি এডের কল্যানে ভুলে থাকা সম্ভব হয় না। বাবার জন্য এটা-সেটা কতো কিছু যে কেনার আছে সেটা মনে করিয়ে দেবার জন্য আপ্রান চেস্টা। গাড়ি থেকে শুরু করে স্ক্রু ড্রাইভার - দারুন ব্যবসা।