বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

পাঠকের কাঠগড়া

1 টি মন্তব্য :


ব্লগিং এ অনেক বছর পার হয়ে গেলো। অনেক কিছুই দেখার সৌভাগ্য/দূর্ভাগ্য হয়েছে। একটা সময় ছিলো যখন কোনো ব্লগ লেখার পর সেটায় কোনো কমেন্ট পরলো কিনা সেটা দেখার জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতাম, সে যে কেনো এলো না - গানটার মতো। কখন কমেন্ট আসবে সেই ভালোলাগা। সুন্দর একটা সময় ছিলো কমিউনিটি ব্লগিং এ। সে নেশা এখনো না থাকলেও পাঠকের ফিডব্যাক পেতে ভালো লাগে। মাঝে সাজেই মেইল পাই। একজন পাঠিকা মেইল করে একবার জিগেস করলেন আমার লেখায় কেনো আমি দূঃখের বেসাতি করি ! তাইতো !! যাপিত জীবনের সুখকর স্মৃতি কি বেশী করে লিখতে পারি না। অনেক সময়ই অনেকেই তথ্যগত ভুল ধরিয়ে দেন, সংশোধিত হই। কেউবা বানান ভুলটা ধরিয়ে দেন, বাংলা বানানের দুর্বলতাটা আবারো টের পাই।

একটা ব্লগ লিখেছিলাম সপ্তা খানেক আগে। ফোন করে একজন ক‌্যানবেরা বাসী তার কিছু আপত্তির কথা জানালেন। এর পর আরেকজন সিনিয়র তার ক্ষুব্ধতার কথা জানালেন, কোন কোন বিষয়ে তার আপত্তি সেটা বললেন। আমি বোঝার চেস্টা করেছি ও এখনো করছি। অনেকে মেইল করেও তাদের খারাপ লাগা বা ভালো লাগার কথা বলেছেন। ২/৩ দিন ধরে রাত বিরেতে প্রাইভেট নাম্বার থেকে ফোন আসা শুরু হয়েছে। প্রাইভেট নাম্বার দেখে ভাবি হয়তো দেশ থেকে বাবা-মা ফোন করেছেন, ফোন রিসিভ করার পরই শুরু হয় চ বর্গীয় গালি। যারা নিজের পরিচয় লুকিয়ে এসব করে তাদের সাহসের দৌড় জানা থাকায় উদ্বিগ্ন না হলেই ব্যপারটা উটকো বিব্রতকর। আজ একজনতো এমন হুমকি দিয়ে জানালো যে সামনে ফেলে সে আমাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে , শাহবাগ আন্দোলন নাকি নাস্তিকতা আর এ আন্দোলনে সমর্থন করায় সে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত সবার সাথে জোড় পূর্বক শারিরীক সম্পর্কে জড়াবে ! একজনতো আমাকে সামাজিক ভাবে বয়কট করার ঘোষনা দিলো চ বর্গীয় গালি সহকারে। প্রচন্ড হাসি আসলেও আতংকে আমার হাত পা ......

জগতের সকল মানুষ সুখি হোক, জয়বাংলা
 

বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

যুদ্ধের শুরুতে অল্পই যোদ্ধা মেলে

১৪টি মন্তব্য :

মি যে শহরে থাকছি সেই ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য বড় শহরগুলোর তুলনায় বাংলাদেশীর সংখ্যা তুলনামুলক অনেক কম। পড়াশোনা করতে আসা ছেলে মেয়ে বাদে বেশির ভাগই পাবলিক সার্ভেন্ট। সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও হয়তো ১৫০০-১৭০০ হবে, বেশীও হতে পারে। প্রশাসনিক রাজধানী হওয়াতে মূলত সরকারী কাজে নিয়োজিত মানুষজনই এখানে বেশি। ৯৯% বাংলাদেশীরই ২ এর অধিক ডিগ্রি আছে, ডিগ্রী হিসেব করলে শিক্ষিতই বলা যায়, মননে শিক্ষিত কিনা সেটা জানি না।

গত ২ ফেব্রুয়ারীতে এখানে চাঁটগাইয়া মানুষরা মেজবান করেছিলো।  গরুর মাংস -  ছাগু মাংস সাথে পোলাও/ভাত। প্রায় ৭০০ লোক হয়েছিলো, খাবার দাবারের আয়োজনে লোক একটু বেশীই হয়।আমি যাই নাই। ফান্ড রেইজিং এর ব্যবস্থা ছিলো। শুনেছি সেটায় নাকি মেরে কেটে ৫০০ ডলারও উঠেনি। বলা দরকার , ক্যানবেরায় মেইডেন হাউজহোল্ড ইনকাম $২৮১৫/সপ্তাহ যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে $১২৩৪/সপ্তাহ। বাঙালি কিপটা না হলেও এখানকার  অনেক (সংশোধিত ও সংযোজিত ) স্বচ্ছল বাঙালিরাই কিপটা, অবশ্যই সবাই না (সংশোধিত ও সংযোজিত)।



বাংলাদেশের যে সব ছেলে মেয়েরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছে তাদের উদ্যোগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে একটি মানব বন্ধন করা হয়েছিলো। দাবি ছিলো একটাই " যুদ্ধোপরাদীদের ফাঁসি চাই"। প্রায় ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রি প্রচন্ড গরমের মাঝেও হাতে হাত লাগিয়ে দাবি তুলেছিলো " রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই"।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারী বিকেলে আরো কিছু সাধারন মানুষ বাংলাদেশ হাইকমিশনে মিলিত হয়েছিলো শাহবাগ আন্দোলনের সাথে একাত্ন হতে। ক্যানবেরার সবাইকেই মেইলে জানানো হয়েছিলো, ফেসবুকে গ্রুপ করে ও ওয়েব সাইটগুলোতে 'পিন্ড' পোস্টের মাধ্যমে সবাইকে আহবান করা হয়েছিলো যাতে সবাই আসেন। তবে একটা জিনিস ইচ্ছে করেই করা হয়েছিলো, কাউকে "জোর" করা হয়নি। মনের তাগিদে - বিবেকের ডাকে যারা সারা দিবে তারাই যাতে আসেন সে জন্যই এটা করা হয়েছিলো। এখানেও প্রায় ৫০ জন মানুষ এসেছিলো।


লক্ষ্য করলে খুব সহজেই দেখা যায়, প্রায় ১৫০০ মানুষের মাঝে মাত্র ৫০ জন ! ক্যানবেরায় জামাতী ছাগুদের সংখ্যা অনেক। মানুষ যাতে বেশী না হয় সে জন্য তারা বেশ কিছু কৌশল নিয়েছিলো। প্রথমটি হলো ১৫ ফেব্রুয়ারীতে শাহবাগের আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে মোমবাতি জ্বালাবে। সব কিছু ঠিক করার পর তারা ঠিক আগের দিন ঘোষনা করলো যে উদ্যোগটি বাতিল করা হলো, এতে বেশ কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হলো। তারা ভাবলো যে ১৬ তারিখের অনুস্ঠান ও বাতিল।আবার অনেকেই ভেবেছিলো ১৫ ও ১৬ তারিখের দুটো অনুস্ঠানই আদতে এক। এর পরের কৌশলটি হলো, তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে মানুষকে বাসায় দাওয়াত দেয়া শুরু করলো। এতে দাওয়াত খাবারের জন্য লোভী কিছু মানুষ অনুস্ঠানে আসলো না। ফোনে করে - টেক্সট করে অনেককেই বলা হয়েছিলো যাতে তারা এই দু উদ্যোগেই না আসে। আরেকদল ছিলো, যারা স্রেফ নিরেপক্ষতার ভান করে বসেছিলো, এদের সংখ্যাই ছিলো বেশী। এরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করলেও সুবিধাভোগীর মতো বসে ছিলো ঠিক ড. ইউনুস জাতীয় সুশীল মানুষের মতো। সময়ে এরাই বড় গলায় কৃতিত্ব নিবে। যথারীতি জামাতিদের সাথে ছিলো এখান কার বিএনপি করা কিছু লোক।


ধান ভানতে শিবের গীত বেশি গাওয়া হয়ে যাচ্ছে। সব সময়ই দেখা যায় বিপ্লব বা যুদ্ধের শুরুতে বিপ্লবী বা যোদ্ধার সংখ্যা কম থাকে। সময়ের সাথে সংখ্যা বাড়তে থাকে। শুরুতে যারা সামানে থাকে তারা ঝরে যায় বা পেছনে চলে যায়, পেছনের জন সামনে চলে আসে। কৃতিত্ব নেবার জন্য কাড়াকাড়ি লেগে যায়। ক্যানবেরায়ও একই জিনিস দেখলাম। একদল মানুষ যারা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সদা সোচ্চার কিন্তু মাঠে নামতে চায় না বা নামে না। আরো দেখলাম একদল সুবিধাবাদী মানুষ যারা দু কুলই রক্ষা করে ভালোভাবেই বেঁচে বর্তে থাকে। মাঠে না নেমেও কৃতিত্ব নেবার লোক কমও নয়। খারাপ লেগেছিলো ক্যানবেরার বয়স্ক মানুষগুলোকে দেখতে না পেয়ে। ৫৫ উর্ধ একজন সিনিয়র বাংলাদেশীও আসেনি, হয়তো ইচ্ছে থাকা সত্বেও নানা কারনে আসতে পারেনি অনেকেই (অবশ‌্যই সবাই না,সংশোধিত ও সংযোজিত)। এই হলো অবস্থা এখানকার। লেখা পড়া শিখে ডিগ্রি নিলেই যে মানুষ "মানুষ" হয়না সেটা আবারো জানলাম তবে আশার কথা হলো, অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। তরুনরা এগিয়ে আসছে। আমি যে শহরে থাকি সে শহরের কথা বল্লাম, অন্য শহরে যারা থাকেন তারা তাদের কথা বলবেন।

বাঙালীকে সরলিকরন/জেনালাইজড করে ফেলেছি। আমি সব সময়ই বিশ্বাষ করি এই পৃথিবীতে ভালো মানুষের সংখ‌্যাই বেশী, হয়তো খারাপ মানুষগুলোকে চোখে বেশি করে পড়ে বলেই মাঝে সাজে আমরা সবাইকেই এক কাতারে ফেলে দেই যা অবশ্যই যুক্তিসংগত নয়। এ ভুলটা আমারো হয়েছে। পাঠকের অনুভূতিকে সম্মান করে লেখায় সামান্য কিছু সংশোধনী আনলাম, কিছু সংযুক্তিও। লেখার মাধ্যমে কাউকে আঘাত করে থাকলে আন্তরিক ভাবে দূঃখিত

আমি একজন খুবই সাধারন মানুষ। একান্তই নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ব্লগিং করি। সমাজ বদলাবার মতো যোগ্যতা না থাকায় নিজেই নিজের সাথে কথা বলা নিজেকে স্বান্তনা দেবার চেস্টা চলে সব সময়।

শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

আন্দোলনটা নিজের চারপাশ থেকেই শুরু করুন না কেনো ?

৩টি মন্তব্য :
কদল পশু তাদের অপরাধের জন্য কখনোই অনুতপ্ত হয় না, ভি সাইন দেখিয়ে আপনাকে - আমাকে আমাদের সবাইকে কটুক্তি করে - দম্ভ ভরে বলে ৭১ এ যা করেছিলো তা যতার্থই ছিলো ! বলুনতো , এই সব শুকররা কি করেনি বা কি করার বাকি রেখেছিলো ? এরা আমার আপনার পিতাকে মেরেছে - মা বোনকে ধর্ষন করছে - ধর্মের নামে এরা বাড়ীর পর বাড়ী পুড়িয়েছে - পাকিস্তানী সেনাদের সহচর হয়ে আমার আপনার স্বজন - পড়শিদের লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে মেরেছে। আমাদের স্মৃতি শক্তি কি এতো দূর্বল যে সব কিছু ভুলে গিয়েছি ? অনেক দিনতো চুপ করেছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর ভন্ডামী আর আপোষকামীতায় এরা পরিপুস্ঠ হয়েছে - গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে বৈধতা পাবার চেস্টা করেছে। আমরা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। আর কতো মেনে নিবো ?   এতো সব কিছুর পরও চুপ করে থাকবেন ? সময় হয়েছে জাগবার , বিবেককে জাগাবার - সাহসী হবার।

যুদ্ধে সামিল হতে না পারেন কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়েতো দিতে পারেন। তাই না ? যুদ্ধটা নিজের চারপাশ থেকেই শুরু করুন না কেনো। একটু তাকিয়ে দেখলেই দেখতে পাবেন আপনার আমার আশে পাশেই এরা ঘাপটি মেরে আছে , মাঝে সাজেই এদের ধারাল দাঁত বের হয়ে আসে লালচে জ্বিহবার আড়াল থেকে। এদের বর্জন করুন। হয়তো কিছু পশুর বাসায় দাওয়াত খাওয়া থেকে বন্চিত হবেন। হয়তো ১ ডলার বেশী খরচ করে পাকডায়াল ফোন কার্ড কেনার বদলে আরেকটি কার্ড কিনবেন, হয়তো ১ ডলার বেশী খরচ করে ইসলামী ব্যংকে টাকা না পাঠিয়ে অন্য কোনো মাধ্যমে পাঠাবেন । ২/১ ডলারে কি এসে যায় ? ১ কাপ কফিতেই আমরা ৪ ডলার করি হরমেশা। শুধু বর্জন করেই কি সব শেষ হয়ে যাবে ? না - অবশ্যই না। এদের কথার প্রতিবাদ করি। যুক্তি প্রমাণ হাতের নাগালেই আছে। মনে রাখবেন এরা কথায় কথায় ধর্মকে ব্যবহার করে , মিস্টি মিস্টি কথায় মনের হিংস্রতা লুকিয়ে রাখে।

এরা যখন বলে এতো বছর পর বিচার কিসে ! তখন কি একবারের জন্যও মনে হয় না আপনার সেই চাচার কথা যাকে এই জামাতিরা বেয়নেটে খুঁচিয়ে মেরেছিলো বা একবারের জন্যও কি মনে হয় না যে এরা আপনার স্বজনকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধর্ষিত হবার জন্য? এর পরও কি "এতো বছর পর বিচার কিত্তে?" জাতীয় কথায় আপনার রক্ত গরম হয় না না?

আমরা আমাদের সন্তানদের কাছে কি জবাব দেবো যখন তারা জিগেস করবে বাবা/মা তুমি করেছিলে ? সন্তানের কাছে ভীরু - কাপুরুষ হিসেবে দাঁড় করাতে কেমন লাগবে ? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবার ভাবুনতো। কে বাম পন্হী - কে আওয়ামী লিগার - কে বিএনপি করা , সব ভুলে যান। দলমতের উর্ধে বলুন বিচার চাই - যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার চাই - এই সব জামাতিদের ফাঁসি চাই- ধর্মকে ব্যবহার করা রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই। মনে রাখা উচিৎদলের আগে দেশ আগে।

একদল সাহসী মানুষ নিরাপদে ঘরে বসে বড় বড় কথা বলতে পারতো। তা না করে এরা রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষগুলো যখন শাহবাগে নেমে বিচার দাবি করছে তখন আমি আমার বিবেকের কাছে দগ্ধ হচ্ছি কিছু না করতে পেরে। অনেক কিছুই করার আছে। আসুন হাতে হাত মিলিয়ে আমরাও সেই যুদ্ধে শামিল হই। জয়বাংলা  জয় মানুষ ॥