বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০০৮

ক্যানবেরার খেরোখাতা ৩

কোন মন্তব্য নেই :
১.
সেদিন এক দেশী ভাইয়ের সাথে আলাপচারিতা। কথায় কথায় উনি খালি বলেন, সুমন শুনছো " অজি ডলার না আম্রিকান ডলারের সমান হয়ে যাচ্ছে ! "অজি ডলারের এই তেজী ভাব দেখে সেই দেশী ভাইয়ের জিহাদী জোশ জেগে উঠেছে দেখে ভালো লাগবে না মন্দ লাগবে সেটা বুঝতে পারছিলাম না। হয়তো ঢাকায় একটা ফ্লাট কিনতে উনার কম টাকা খরচ হবে ভেবে উনি পুলকিত কিন্তু আমি শংকিত। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা গম থেকে যে আটা হবে সেই আটা কেনার জন্য আমার ডায়বেটিস রোগী বাবাকে ক্রমাগত বেশী টাকা খরচ করতে হচ্ছে, অথচ আয় এক বিন্দু বাড়ছে না আমার অবসরভোগী পিতার।
সেদিন ফোনে মার সাথে কথা বলছিলাম। সব সময় সেই একই কথা। জিনিস পত্রের দাম বাড়ছেই, বিদ্যুত কতক্ষন থাকে সেটাই আলোচনার বিষয়, পানি সাপ্লাই এই আছে তো এই নেই, বাড়ি ভাড়া বারাবার জন্য বাড়িওলার নোটিশ, বৃদ্ধ গাড়িটার সিএনজি খরচও দ্বিগুন হচ্ছে, সামনের মাসে ডাক্তার দেখাতে হবে, ছোট বোনটার টিউশিন ফি দিতে হবে। আমি শুনি, চুপ করে থাকি। মা হয়তো ভাবেন, ছেলে এড়িয়ে যাচ্ছে। এদিকে আমি অসহায়।
এদিকে শুনছি নার্গিস ধেয়ে আসছে ! বিধাতা নার্গিসকে তুমি মেরে ফেলো। বাংলা এই নার্গিসকে চায় না।

২.
অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব এই ক্যাঙারুর দেশেও পড়ছে। বাজার করতে গেলে বাজারে আগুন লাগার উত্তাপ টের পাই। এই কনকনে শীতেও ঘেমে যাই। কপালে ঘামের আভাসে আলতো হেসে কেনাকাটা সারি। ৪ বছর আগে যে জিনিস ১।৫ ডলারে কিনতাম সে একই জিনিস আজ ৩ ডলারে কিনি। কাল হয়তো সেটাই ৪ ডলারে কিনবো। যে ৫০ ডলারের শপিং এ ট্রলি ভর্তি হয়ে যেতো সেই একই জিনিস কিনতে আজ ১০০ ডলার লাগছে, ট্রলির জায়গায় তখন শপিং বাস্কেট ভর্তি হয়। অথচ বাজার ভর্তি জিনিস, কোনো কিছু টের পাবার উপায় নেই। মাঝ খানে সীমিত আয়ের মানুষগুলো অবস্থা করুন। ক্রেডিট কার্ডের ইন্টারেস্ট বাড়ছে, ক্রেডিট কার্ড হতে খরচ করছে, আয় বাড়ছে না, ক্রেডিট কার্ডের লোনও শোধ হচ্ছে না।

ভাগ্যিস বাড়ী কেনার সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য হয়নি এখনো, নইলে মর্টগেজের টাকা শোধ করতে গিয়ে জান কয়লা হয়ে যেতো।
৩.
শীত আসবে আসবে বলে চলেই এসেছে। গত রাতে শুনেছি ০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিলো। আজ শুনছি সেটা -১ এ চলে যাবে। ক্যানবেরার এই শীত আসলেই সেই রকম। খবরে দেখলাম দু ঘন্টার ড্রাইভ দূরত্বে অস্ট্রেলিয়ান আল্পসে বরফ পড়ছে। ৪ বছরের ক্যাঙারু জীবনে সেখানে যাওয়া হয়নি। এবারো হবে না। হয়তো আশে পাশের অনেক বাঙালীর অনেকেই যাবে। ছবি তোলা হবে অনেক তবে যে জন্য যায় সবাই সেই আইস স্কিইং করা হবে না। বাঙালীর জানের মায়া যেরকম কঠিন, হাড়ের ভঙুরতাও সেই রকম।
এবারের শীতটাও সেই যুগপুরাতন কালো জ্যাকেটটা চালিয়ে দেবো, ক্যানবেরার শীতে এই বৃদ্ধ জ্যাকেট পারফেক্তো।
৪.
বউ আজ চটপটি রাঁধলো। চটপটি জিনিসটা আমার প্রিয় খাবারের লিস্ট পরে না। তবু বউ রেঁধেছে বলে কথা। ভেবেছিলাম এক বাটি খাবো ! খাওয়া শেষ হতে দেখি ২ বাটি সাবরে দিয়েছি। চটপটিতে কি টক একটু বেশী হয়েছে? কি জানি বাপু, হলেও হতে পারে।
বেশ অলস দিন কাটছে। আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। মনটাও বিষন্ন অজানা কারনে।
৫.
দুদিন ধরে মনোযোগ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান টিভি নিউজ দেখছি না। আবহাওয়ার খবর অবশ্য দেখছি ( শীত কালে তাপমাত্রা কতটুকু নামলো সেটা আমাকে দেখতেই হয়)। অযথা মন খারাপ করার খবর শুনতে কারোই বা ভালো লাগে!
শুনলাম আরো এক অস্ট্রেলিয়ান সৈনিক মারা গেলো আফগানিস্তানে, একটি ছোট্ট সংবাদ। কিন্তু সেই সৈনিকটির পরিবারের জন্য বিশাল ও অপূরনীয় একটি শোকের সংবাদ, অবশ্য এর খবর কেউ রাখে না। নোংরা রাজনীতির স্বার্থে আর কত মানুষযে বলি হবে এভাবে। কবে যে অস্ট্রেলিয়া পরিপুর্ন স্বাধীন দেশের মতো আচরন করতে পারবে সেটা ভাব্বার বিষয়। হায়রে রাজনীতি। মানুষের চাইতে স্বার্থ বড়।

ক্যানবেরার খেরোখাতা ২

কোন মন্তব্য নেই :
বাঙালীয় সময়জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করাই মহা ভুল। রেলস্টেশনে বাবা মাকে জিগ্যেস করতে শুনেছি নটার ট্রেন কটায়। ভাবতে পারিনি এই ক্যাঙারুর দেশে এসেও একই প্রশ্ন করতে হবে।
গতকাল ১৩ বৈশাখে আমাদের এখানে বৈশাখী মেলা হলো। ডাউনআন্ডারের অন্যান্য শহরগুলোর তুলনায় আমাদের মেলা নাকি শিশু ! এবারের সিডনী বা মেলবোর্নের মেলার ছবিগুলো দেখে বুঝতে পারলাম শুধু শিশু বল্লে ভুল হবে, বলতে হবে দুগ্ধপোষ্য নবজাত শিশু।
কথা ছিলো সকাল এগারোটায় মেলা শুরু হবে। আমরা টোনা-টুনি যথারীতি হাজির ১১:০৫ টায়। যথারীতি ৫ মিনিট দেরী । ভেবেছিলাম দেরী হয়ে গেলো। ওমা !! অনুস্ঠান শুরুতো দূরের কথা খবরই নাই। হাতে গোনা কিছু মানুষ ভুঁড়ি ঊঁচিয়ে হাঁটা হাঁটি করছে। একজকে জিগ্যেস করলাম " ভাই, অনুস্ঠান না শুরু হইবার কথা ! অনুস্ঠান কি শেষ ? "। ভদ্রলোক এহেন বেকুবীয় প্রশ্নে চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বল্লেন " অনুস্ঠান শুরু হইতে দেরী আছে, দ্যাখেন না ব্যানারই টাঙানো হয় নাই " ।উচ্চারন শুনে মনে হোলো জনাবের আদিবাস বরিশাল।
২. অনুস্ঠান শুরু হলো যথারীতি দেরী করেই। জয়তু বাঙালীর সময়জ্ঞান। উদ্ভোদক উনার বক্তৃতায়, সেদিকে নজর না দিয়ে আমরা ব্যস্ত স্টলে স্টলে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নাচ গানে ব্যস্ত আর আমরা ব্যস্ত খাবারে। বৈশ্য বাঙালী ডাউনআন্ডারেও ব্যস্ত বানিজ্যে। পিএইচডি ডিগ্রীধারী ব্যস্ত ঝালমুড়ি বানাতে, কৃষিবিজ্ঞানী ব্যস্ত চটপটি বানাতে। আর আমরা ব্যস্ত পেট পুজোয়। কি কি খেয়েছিলাম সেটার লিস্ট দিয়ে ফেলি এ যাত্রায়। জিলাপী, চমচম, সন্দেশ, চটপটি, ফুচকা, ঝাল-মুড়ি, ঘুঘনি, হালিম, লুচি-ভাজি, সিঙাড়া। প্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানীকে এক স্টলে দেখে আগ্রহী হয়ে এগুতেই দেখি তা আসলে তেহারী। ব্যাটা কি আমাদের মফিজ পেয়েছে যে কাচ্চি দেখাতে গিয়ে হাইকোর্ট দেখাবে !



৩.

সিডনী, মেলবোর্নের মেলা দেখে অনেক আগ্রহ নিয়ে ছিলাম শাড়ি পড়া বাঙালী ললনা দেখবো ( অবশ্যই বউয়ের চোখ বাঁচিয়ে )। শাড়ি পড়া ললনাদের দেখে মাকসুদ ভাইয়ের মতো চিৎকার করে গান গাইতে ইচ্ছে করছিলো " মেলায় যাইরে "। অতি অতিসংগত কারনে গান গাওয়া হয়নি( মৃত পুরুষের গান গাওয়ার অধিকার নেই)।তবে একটা মজার বিষয় লক্ষ্য করেছি। সিডনীর মেয়েরা ক্যানবেরার মেয়েদের তুলনায় অনেক স্বাস্থ্যবতী। স্বাস্থ্য রহস্যটি বুঝতে পারলাম না।



৪.

‌ফ্যাশন শো নামক এক আজব চিজ দেখে অবাক হয়েছি। আয়োজকদের মস্তিস্কের উর্বরতা সম্পর্কে নিসন্দেহ হয়েছি। উনাদের মাথায় কাঁঠালবিচি লাগালে আশা করি ২ দিনের মাঝেই গাছ গজাবে। বাংলার বৈশাখী মেলায় ফ্যাশন শো !! আজব।
৫.
ক্যানবেরার বাঙলা স্কুলের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের পারফরমেন্স দেখে আমি মুগ্ধ। রবিঠাকুরের "বীর পুরুষ " কবিতাটি অসাধারনভাবে উপস্থাপন করেছে বাচ্চাগুলো। এরাই আসলে প্রবাসে বাংলার সংস্কৃতি ধরে রাখবে। এদের নাচ, কবিতা আবৃতি, অসাধারন গান শুনে একবারো মনে হয়নি প্রবাসে বসে বৈশাখী মেলায় বসে আছি। সাবাস বাঙালী। বাচ্চাগুলোর বাবা-মাকে অনেক শ্রদ্ধা।



৬. অনুস্ঠানের শেষের দিকে ক্যানবেরার স্থানীয় সংগঠন 'স্পন্দনের' পরিবেশনায় যখন 'এসো হে বৈশাখ এসো এসো...। " গান শুরু হোলো তখন প্রথমবারের মতো মনে হোলো বৈশাখ এসেছে ক্যানবেরায়। সময় হয়ে এসেছিলো চলে আসবার। ইচ্ছে ছিলো আরো অনেক সময় নিয়ে থাকবো, হলো না। নীড়ে ফেরার তাগিদ।



৭.

দারুন একটি দিন গেলো। অন্যরকম। বাসায় আসার পথে একগাদা বাজার, সংসারী মানুষেরা যা করে আর কি। পদ্মার ঈলিশ থেকে শুরু করে মুড়ির মোয়া। যা হয় সব সময় আমার, আমের আচার কিনতে গিয়ে রসুনের আচার কিনে নিয়ে এসেছি। বউ রেগে টঙ। আমার নাকি চশমা অতিজরূরী।

ক্যানবেরার খেরোখাতা ১

কোন মন্তব্য নেই :
ব্লগ জীবনের শুরুতে অনেকের দেখাদেখি আমিও প্রবাস জীবন নিয়ে কিছু লেখার চেস্টা করেছিলাম। ভেবেছিলাম অন্যসব লেখার মাঝে মাঝে নিত্যকার কিছু ঘটনা,অনুভূতি ব্লগের পাতায় লিখে রাখবো। তবে অস্থিরমনা অলস মানুষদের যা হয় আমারও সেই একই দশা। লেখা আর হয়ে উঠেনি। ভাবছি এখন থেকে আবঝাব কিছু লিখবো।



১.


গত ২২ এপ্রিল ছিলো জন্মদিন। সাধারনত বিশেষ কোন দিন তারিখ আমার মনে থাকে না, সেটা আমার জন্মদিন হলেও। বেশ কমাস আগে নিজের বাগদান দিবসের কথা ভুলে গিয়ে বউয়ের ধাতানি খেয়েছিলাম কিনা সেটা পাঠকদের বলে বিরক্ত করতে চাই না। এবারে অবশ্য ভুলতে চাইলেও পারিনি।

সকালে অফিসের গিয়ে কফির মগটা নিয়ে ব্লগের পাতা খুলেই দেখি ইরতেজার পোস্ট! আরে সেটা আবার আমার জন্মদিনকে নিয়ে !! কি লজ্জার কথা। এই বুড়ো বয়সে এই সব কি ? সবাইকে দেখলাম শুভকামনা জানাতে। আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম আর সবার ভালোবাসার প্রকাশ দেখতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হচ্ছিলাম। ধন্যবাদ ইরতেজা।

এর পর আমাগো প্রত্যুর পোস্ট, সেইরকম আবেগছোঁয়া। ধন্যবাদ বস। সত্যিকারের বন্ধু বলতে যা বোঝায় সেটা আপনি।

এরপর আমাকে নিয়ে কৌশিকদার ভোদকা কাহিনী। কৌশিকদা নেক্সট টাইম দেশে গেলে সবচাইতে ভালো ব্রান্ডের ভোদকা আপনার জন্য আনবোই আনবো।ভদ্রলোকের এক জবান।

আমার জন্মদিনকে নিয়ে স্ট্যানলি কুব্রিকের পোস্টখানি সেইরকম ভালো লেগেছে। পছন্দের পরশ ছোঁয়া। আমাকে নিয়ে অচেনা মানুষটির ভালোবাসা অবাক করেছে। ধন্যবাদ। গুড অন ইয়া মাইট।

প্রতিটি পোস্টেই অসংখ্য মানুষের শুভকামনা পেয়েছি। ব্লগে এত এত মানুষ আমাকে পছন্দ করে সেটা আগে জানতাম না। সবাইকেই অন্তর থেকে ধন্যবাদ।

ফেসবুকে অনেকের মেইল/ওয়ালে শুভকামনা দেখছিলাম আর মনে মনে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো। মানুষের ভালোবাসা কি জিনিস সেটা যে পেয়েছে সে ছাড়া অন্যকেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। আমি অভিভূত।

সেলফোনে সংক্ষিপ্ত বার্তাগুলো আসছিলো আর মনটা ভালোলাগায় ভরে যাচ্ছিলো।

জন্মদিনের পুরোটাই অফিসে বসে ঝিমিয়াছি, কাজে কাজ কিছুই করি নাই। বিকেলে বাসা এসেই রান্নার সেইরকম আয়োজন। টোনা-টুনি মিলেই জন্মদিন উদযাপন। তেমন বিশাল কিছু আমি কখনোই করি না নিজের জন্য।
২.


ক্যানবেরায় আজ অলিম্পক টর্চ র‌্যালি হয়ে গেলো। অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র ক্যানবেরাতেই টর্চ ‌র‌্যালি হয়েছে, টর্চ এর পর যাবে জাপান। বেশ কদিন ধরেই সাজ সাজ রব। মুলত নিরাপত্তা নিয়েই যত মাথা ব্যাথা। তবে সমস্যা হয়নি যতটা হয়েছে অন্যসব দেশে। অস্ট্রেলিয়ার অন্যসব শহর হতে আসা বাসের পর বাস ভরা চায়নিজদের কাছে তিব্বতি ও তাদের সমর্থকরা সংখ্যায় ছিলো নগন্য, সাথে যুক্ত হয়েছিলো পুলিশের প্রচন্ড কড়াকড়ি। তারপরোও সামন্য কিছু আন্দোলন এবং ৮ জন গ্রেপ্তার। ভাবছি তিব্বতিদের এই সব প্রতিবাদ কি চায়নার প্রতি পশ্চিমাদের আতংক থেকে উদ্ভুত যেখানে তিব্বতিরা খেলার পুতুল।

আমার বাসার খুব কাছেই টর্চ র‌্যালি শুরু ও শেষ হবার জায়গা। এলার্ম সেট করেছিলাম খুব সকালেই। কিন্তু যাওয়া হলো না। টর্চ লাতটিং সেরেমনি, ফ্রি কম‌্যুনিটি ব্রেকফাস্ট, চায়নিজ ড্যান্স ট্রুপের নাচগান, বিশাল সব রঙ চঙে বেলুন, ওপেন এয়ার কনসার্ট, ফেস পেইন্টিং। কাজ হতে ছুটি নেয়া ছিলো , কিন্তু যাওয়া হলো না।গত রাত থেকেই শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছিলো। রাতে জ্বর। সকালে আর ঘুম থেকে উঠতেই ইচ্ছে হলো না। শালা এটাকেই বলে দূঃভাগ্য।

শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০০৮

আফাজ মিয়ার ধানী ক্ষেত

কোন মন্তব্য নেই :
'বোরোর ফসল এইবার ভালোই হইছে, দরও ভালো হবে, কি কন ব্যাপারি সাব?'
'সফিয়ার মিলার আরেকটা চাতাল দিছে চৌধুরিহাটে, ১ টা ট্রাকও নাকি কিনছে।'
'কোল্ড স্টোরেজে বলে ২০ বস্তা আলু রাখছি। জিতেন বাবু ভালো মানুষ। ১২০০ টাকা দিতেই বস্তা কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখলো। ১২০০ টাকা জিতেন বাবুর চা-পানের টাকা।'

আশে পাশের কথাগুলো যেনো কানেই ঢুকছে না আফাজ মিয়ার। রুহিয়া হাটের মহেশ রায়ের মোবাইলের দোকানে বসে আছে ২ ঘন্টা। ছেলে মালয়েশিয়া থেকে মোবাইল করবে।

- আফাজ মিয়া, তোমারে না কইছি তোমার ছেলে মোবাইল করবে না। ক্যান যে প্রতি দিন আইসা একটা চেয়ার দখল করে রাখো। অন্য কাস্টমাররা বসার জায়গা পায় না।
আফাজ মিয়া হাসে। মহেশ রায় তার ছোট বেলার বন্ধু।
-এক কাপ চা খাওয়াও মহেশ, আল্লাহ তোমার ব্যবসা ভালো করবে।
-আর ব্যাবসা, মাইনশের হাতে হাতে মোবাইল, কয়জনই বা আর মোবাইল করতে আসে।
সামনের দোকান থেকে ৪ টাকার চা নিয়ে এসে দুই কাপে ভাগ করে এক কাপ আফাজের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
-নেও চা খাও বলে নিজেও সুরুৎ করে এক টান মারে মহেশ।
-তোমার ছেলেতো ২ বছর হইলো মালয়েশিয়া গেলো, টাকা টুকা পাঠাইছে কিছু ?
-পাঠাইছে কিছু, সেই টাকা দিয়াই ভাবতাছি কিছু করুম।
আফাজের এই মিথ্যা কথাটা অনেকবারই শুনেছে মহেশ।
-তুমি আর করবা !
-এইবারতো বোরো ভালোই হইছে, ও মহেশ তুমি এইবার কি লাগাইছিলা?
- ২ বিঘা জমিতে স্বর্না ধান আর ১ বিঘায় আলু করছিলাম। ভগবানের কৃপায় দুইটাই ফলন ভালো হইছে।
কথাগুলো শুনে আফাজ মিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
- যাই গা আইজ, কাইল আবার আসুমনে।

সুর্য ঢুবু ঢুবু।বাড়ীর দিকে হাঁটা দেয় আফাজ মিয়া।
-ও বাজান কি করো?আফাজ মিয়া বুঝতেই পারে নাই সে বাড়ীর পাশে চলে এসেছে। মেয়ের ডাকে একটু চমকে উঠে।
- দ্যাখছোস কি সুন্দর ধান হইছে আমার জমিত। শীষগুলান থেইকা যেন ধান ফাইটা বাড়াইবো।
- ধান ভালো হইলে আমরার কি ? জমি আমাগো কিন্তু ধানতো আমাগো না।

ছেলে মালয়েশীয়া যাবার সময় শেষ সম্বল ৫ বিঘা জমি বন্ধক দিয়া আদম ব্যাপারিকে টাকা দিয়েছিলো রমিজ মিয়া।ছেলে মালয়েশীয়া গেলো ২ বছর হলো। একবারো টাকা পাঠায়নি, জমির বন্ধকও ছাড়ানো হয়নি। মাইয়াটার বিয়ার বয়স হইছে। বিয়ায় অনেক খরচ। কাইল সফিয়ার মিলারের বাড়ী যাইতে হইবো। সফিয়ার মিলার ভিটার জন্য ১ লাখ টাকা দিবে কইছে। সফিয়ার মিলারের খুব শখ একটা কাঁঠাল বাগান করবো।

অন্ধকারে হাঁটছে আফাজ মিয়া। রাস্তা ছেড়ে ধানী জমির মাঝ দিয়ে। যাচ্ছেতো যাচ্ছেই। এবার আসলেই বোরো ভালো হয়েছে, শুধু তার জন্যই ধান নাই।
-ও বাপজান কই যাও ?
আফাজ মিয়া শুনতে পাচ্ছে না। অন্ধকারে আস্তে আস্তে হাড়িয়ে যেতে থাকে আফাজের ছোট্ট শরীরটা। ধান ক্ষেতের মাঝ খান দিয়ে হাঁটতেই থাকে আফাজ মিয়া।

"বিহারী"একটি অভাগা বীষবৃক্ষের নাম

কোন মন্তব্য নেই :
সেই ১৯৮৫ সাল। বাবার চাকরি সুত্রে সৈয়দপুরে অস্থায়ী নিবাস। যথারীতি সেবারও বছরের মাঝে খানে নতুন স্কুলে ভর্তি ও এক গাদা পিচ্চিপাচ্চার সাথে নতুন করে দোস্তালী পাতানো। তো সেবার ভর্তি হলাম সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুলের ক্লাস ২ ডালিয়া সেকশনে। প্রথম দিন যে ছেলেটির সাথে পরিচয় হলো সেই ছেলেটির নাম মনে নেই। তবে এটা মনে আছে ছেলেটি ছিল বিহারী ও বিহারীদের সেই বিখ্যাত নেতা নাসিম খানের নাতি। পরে শুনেছি ছেলেটি পাকিস্তানে চলে গিয়েছে।

সৈয়দপুর থাকার সময়ই প্রথম বিহারীদের কথা শুনেছিলাম। সেসময় শহরের বেশীর ভাগই ছিলো বিহারী। আসলে অনেক কারনেই সৈয়দপুরের কথা বেশী মনে পরে আমার। সেখানেই সর্বপ্রথম কোরআন পড়া শুরু করেছিলাম, ওস্তাদ ছিলেন একজন বিহারী। উনার কাছে আমি উর্দু পড়তে ও বলতে শেখাও শুরু করেছিলাম। ভাঙা ভাঙা উর্দুও বলতে পারতাম সেসময়।

বাবার পেশার সুবাদে অনেক বিহারীর সাথে পরিচয়ও হয়েছিলো। বেশীর ভাগই অনেক ধনী ছিলো। দেখেছি স্বাধীনতার ১৩ বছর পরও ওই সব বিহারীদের আর্থিক বা সামাজিক অবস্থা ছিলো অটুট। তবে সেটা ছিলো পয়সার অপর পিঠ। শহরের এক কোনায় জেনেভা ক্যাম্পে গেলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যেতো। গাদাগাদি করে হাজার হাজার মানুষ থাকছে। একবারতো আগুনে সারা ক্যাম্প পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। সে সময় শহরের সেই ধনী বিহারীরা এগিয়ে না এলেও বাঙালীরাই এগিয়ে এসেছিলো তাদের পাশে।

শহরের ঠিক মাঝ দিয়েই ডাঃ জিকরুল হক সড়ক। ৭১ এ ডাঃ জিকরুল ছিলেন আওয়ামী লিগ হতে নির্বাচিত এমপি। ২৫শে মার্চের কালো রাতে অনেকে পালিয়ে যেতে পারলেও ডাঃ জিকরুক হক পারেন নি এবং উনি পালিয়েও যানও নি। উনাকে বিহারীরা ৭ টুকরো করে শহরে চার রাস্তার মোড়ে দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রেখেছিলো। সৈয়দপুরের রেলওয়ের কারখানার ফার্নেসে শত শত বাঙালী কর্মচারীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো সে সময়, অথচ খুনীরা ছিলো এই বাঙালীদেরই প্রিয় সহকর্মি। সে সময় শহরে অনেক হিন্দিভাষী মারওয়ারী ব্যবসায়ী ছিলো। একবার তাদের ভারতে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রেনে ভরে শহরের পাশে নিয়ে কচুকাটা করে ট্রেন লাইনের পাশে ফেলে দেয়া হয়, লুট করে নেয়া হয় তাদের সব কিছু। প্রায় ৪০০ মারওয়ারীকে সেবার ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়, খুনিরা ছিলো তাদেরই বিহারী কর্মচারী।

মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় সৈয়দপুর ছিলো একটি মৃত্যুকুপ। শত শত বাঙালীকে হত‌্যা করা হতো স্রেফ জবাই করে। ৮৫ সালে যখন সৈয়দপুরে ছিলাম তখনও মাঝে মাঝেই মাটি খুরে মানুষের হাড় গোড় পাওয়া যেতো।

১৬ ডিসেম্বরের প্রায় প্রারম্ভে যখন সৈয়দপুর মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে সে সময় কার চিত্র ছিলো পুরোপুরি উল্টো। আশে পাশের শহর যেমন দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁ থেকে সব বিহারীরা এসে জোরো হয়েছিলো সৈয়দপুরে। পাকিস্তানী সেনারা এক রাতে এই সব বিহারীদের ফেলে রংপুর ক‌্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেয়। ভারতীয় সেনাদের জন্য বড় কোন ম্যাসাকার হতে পারেনি , সৌভাগ্য সেই সব বিহারীদের। শান্তাহারের বিহারীদের অবশ্য সেই সৌভাগ্য হয়নি। শোনা যায় প্রায় ২০ হাজার বিহারী মারা হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের শুরু ও শেষ সময়টুকুতে। আমার নিজের শহড় ঠাকুরগাঁতেই অসংখ্য বিহারীকে মারা হয়েছিলো। আমার চাচার এক বন্ধু, নাম জুয়েল। উনার পরিবারে উনি ছাড়া আর কেউ বাঁচতে পারেনি। এটাই নোংরা সত্য।

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর যেসব বিহারী ধনী ছিলো তারা তাদের সম্পত্তি পুরোপুরি ফেরত না পেলেও অনেকটুকুই পেয়েছিলো এবং সেটা ছিলো সে সময়কার রাজনৈতিক দলগুলোর সাহায্যেই। ডাঃ জিকরুল হককে হত্যা করার জন্য যে বিহারীকে দায়ী করা হয় ১৯৮৫ তে সেও ছিলো শহরের একজন সম্মানিত ব্যাক্তি। ধনী বিহারীদের তেমন সমস্যা না হলেও বড় সমস্যা হয়েছিলো মুলত গরীব বিহারীদের। এরা না পেরেছিলো পাকিস্তানে ফেরত যেতে , না পেরেছিলো ভারতে ফেরত যেতে। সহায় সম্বল হাড়িয়ে এদের জায়গা হয়েছিলো ক্যাম্পে ক্যাম্পে। ম্যাসাকারের সম্মুখিনও হতে হয়েছিলো অনেক সময়। ইতিহাসে অবশ্য এসবের জায়গা হয়নি। সময়টিই ছিলো বদলা নেবার।

স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর এই ৩/৪ লাখ বিহারীদের অবস্থা আসলেই করুন। গাদা গাদি করে ক্যাম্পে থাকছে এরা। ইউএনইচসিআর বা রাবিতার টাকায় এদের জীবন চলে। এরা না পায় সরকারী চাকরি না পায় ভোটাধিকার। ছোটো খাটো কাজ করে এদের জীবন চালাতে হয় বেশিভাগকেই। নিজেদের পাকিস্তানী পরিচয় ভুলে বর্তমান প্রজন্ম বাংলাদেশী হতে চায়, সেটাও এরা পায় না। পাকিস্তানি শাসকরা আশার মুলো ঝুলিয়ে রাখছে কিন্তু পাকিস্তানে যাবার স্বপ্ন আর তাদের পূরন হয় না।

বেশ ক বছর আগে সৈয়দপুর গিয়েছিলাম। দেখলাম ২৩ বছর আগের সেই ধনী বিহারীদের অনেকেই পাকিস্তানে চলে গিয়েছে বা তাদের সন্তান সন্ততিদের পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মোড়ের সেই বৃদ্ধ বিহারী মুচি এখনো জুতো সেলাই করে যাচ্ছে ও প্রতিটি রাতে ক্যাম্পের ছোট্ট ঘরে শুয়ে পাকিস্তানে যাবার স্বপ্ন দেখছে।

বিহারী যাদের আরেক নাম "আটকে পড়া পাকিস্তানী" প্রতি আমার অনুভূতি অনেকটুকুই করুনা ও ঘৃনা মেশানো। একজন বাঙালী হিসেবে আমি তাদের পাপ ও অপরাধের জন্য ঘৃনা করলেও একজন মানুষ হিসেবে সেটা করতে পারি না। করুনা করলে হয়তো সেটা হয়তো অন্যরকম একটা ব্যাপার হয়ে যায়। তবে আসলেই কি সেটা করুনা ? নাকি অন‌্য কিছু ?
--------
লেখাটি একজন ব্লগারকে উৎসর্গ করে। তার নাম উল্লেখ করছি না সংগত কারনেই। ভালোলাগা-মন্দলাগা সেই মানুষটির বেদনা বোঝার চেস্টা থেকেই কিছু লেখার চেস্টা করেছি।
লেখাটি পুরোপুরি নিজের অনুভূতিকে কেন্দ্র করে লেখা, ইতিহাসের চুলচেড়া বিচার করতে যাইনি ইচ্ছে করেই।

নীল নীল বইয়ের মলাট

কোন মন্তব্য নেই :
অফিসের কাজে ক্যানবেরা আসলে নাফিজকে মাই ক্যাফেতে আসতেই হবে। মাই ক্যাফের বিখ্যাত ক্যাপাচিনোর সাথে চিজ কেক অমৃতের মতো লাগে তার কাছে। তবে আজকেরটা যেনো একটু অন্যরকম। জুলাইয়ের এই কনকনে ঠান্ডার মাঝেও রাস্তার পাশে হিটারের পাশে বসে কফি খেতে খেতে একটা ডানহিল ব্লু ধরাতেই মনটা একটু কেমন করে উঠলো। ঘড়িতে ৬:৩২ বাজে। এতক্ষনেতো নাবিলার চলে আসবার কথা।

নাবিলার সাথে পরিচয় ইন্টারনেটে, ইহাহুতে চ্যাট করতে করতে হঠাতই এক অপরিচিত নিক হতে পিএম, সে থেকে আলাপচারিতা তারপর আগ্রহ। ফোনে এতদিন কথা হলেও আজও প্রথম দেখা হতে যাচ্ছে। নাবিলা- নাফিসা নাম দুটোর মাঝে অন্যরকম এক মিল আছে, একটু ছন্দময়। আনমনেই হাসলো নাফিজ। কি সব বাচ্চা মানুষের মতো ভাবছে।

"হাই, আমি নাবিলা, ইউ মাস্ট বি নাফিজ ? "
"হাই, হাঁ, আমিই নাফিজ।" একটু চমকে উঠলেও সামলে নেয় নাফিজ।
"কেমন আছো ?" বলে একটু তাকালো নাবিলার দিকে। যেরকমটি সে কল্পনা করেছিলো তার সাথে অনেকটুকুই মিল। মাঝারি উচ্চতার, ফর্সা, চোখ গুলো টানা টানা। একটু কি সিরিয়াস ধরনের দেখতে!
"তোমার না নীল শাড়ি পরে আসার কথা ছিলো ? "
"ওমা! এই ঠান্ডায় শাড়ি পরা যায় ? যে ঠান্ডা পড়েছে এখানে। পারলে এস্কিমো সেজে আসি" বলেই মুচকি হাসলো নাবিলা।
"ও তাইতো, পার্থে অবশ্য এতো ঠান্ডা পরে না।"
"কি খাবে?"
"তেমন কিছু নাহ, কফি হলেই হবে।"
"শুধু কফি হলেতো হবে না । কেক বা অন্যকিছু ?"
"কেক !! ওকে, কেক"
"তাহলে আমার পছন্দের চিজ কেকই হয়ে যাক।"
কফি-কেকের অর্ডার দেবার পর ঘড়ি দেখে প্রায় ৭ টা বাজে। লেট ফ্লাইটে আজই নাফিজকে সিডনী যেতে হবে।
"তোমার ফ্লাইট কটায় ? "
"হুমম, ৯ টায়, ৮ টায় চেক ইন করলেই হবে। "
"তাহলেতো সময় খুবই কম।"
"হাঁ তাই, এতো ব্যাস্ত সময় কাটলো সারাটা দিন যে এই সন্ধ্যা ছাড়া সময় বের করতে পারলাম না।"
"আসলেই তাই, আমি ভেবেছিলাম এতোদিন কথা হবার পর দেখা একটু সময় নিয়ে গল্প করবো তাও হলো না।"
"নেক্সট টাইমে যখন আসবো তখন পুরো একটা দিন রেখে দেবো তোমার জন্য। বলে, কথা দিলাম" বলেই হাহাহাহা করে হেসে উঠলো নাফিজ।
"ওকে, সে দেখা যাবে।"
"তোমার পড়াশোনাতো প্রায় শেষ। কি করবে বলে ভাবছো?"
"একটা দারুন অফার পেয়েছি ইউনি থেকে, পিহেইচডিটা এ.এন.ইউ থেকেই করবো বলে ভাবছি।"
"ওহ"
"তোমার কি প্লান ? তোমার না একটা বেটার একটা জব অফার আছে?"
"তা আছে, তবে আর ভালো লাগে না এ দেশ। কমতো হলো না। ১০ বছর। ভাবছি দেশে ব্যাক করবো। ওখানে নিশ্চয়ই জবের অভাব হবে না।"
"তোমার সিটিজেনশীপ হয় নি ?"
একটু বিরক্ত হলেও সেটা চেপে গেলো নাফিজ। বাঙালীরা যে অবস্থানেই থাকুক না কেনো এ ধরনের প্রশ্ন করবেই যা নাফিজ প্রচন্ড অপছন্দ করে।
"নাহ, আমার কখনই অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেনশীপ হবে না"
"ওহ, আচ্ছা" বলে নাবিলা একটু হাসলো।
আচ্ছা নাবিলা কি একটু দমে গেলো ? কেমন যেনো শুস্ক হাসি! নাফিজ ভাবছে।
"তোমারতো যাবার সময় হয়ে গেলো"
"ওহ, তাই তো। দেখেছো সময় কি দ্রুত চলে যায় ! ইচ্ছে হচ্ছে আরো অনেকক্ষন বসে থাকি তোমার সাথে।"
"চল, তোমাকে লিফট দেবো এয়ারপোর্ট পর্যন্ত"
"আরে নাহ, তোমাকে কস্ট করতে হবে না, আমি ট‌্যাক্সি নিয়েই চলে যেতে পারবো"

প্লেনে বসে ভাবছে নাবিলার কথা। তার অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেন শীপ না থাকাটাই মনে হয় এখন সবচাইতে বড় অযোগ্যতা। নাবিলাতো জানে না কেনো সে নীল পাসপোর্ট পাবে না। সেটাওতো আরেক নীল পাসপোর্টের জন্যই।ওদিকে গ্রাজুয়েট হাউসের ছোট্ট রুমে বসে বসে নাবিলা ভাবছে অন্য এক কথা।

আলু আমার আলু.......................আলুয় জীবনে ভরা

কোন মন্তব্য নেই :
আমরার কিশুরগন্জের মানুষ 'আলো' বলতে গিয়ে আলু বলি, তার মানে এই না যে আমাদের আলুর দোষ আছে। কিন্চিৎ থাকিলেও থাকিতেও পারে, কে জানে! কিশোরগন্জ শহরে 'আলোর মেলা' বলে একটি পাড়ার আছে, রিকসাও‌য়ালেকে আলোর মেলায় যেতে বল্লে সে অবশ্যই বলিতে হইবে "আলুর মেলায় যাইবাইন ?"

যাই হোক, লেখার বিষয় কিশুরগন্জের আলুর মেলা নয়।

আশির দশকে গ্রামে গ্রামে ঘুড়তে হতো বাবার চাকরির সুবাদে। তখন এরশাদ আমল। বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে লেখা " বেশী করা আলু খান, ভাতের উপর চাপ কমান"। সে সময় উপজেলা সদরে কৃষি মেলা, কখনোবা মিনাবাজার হতো। সেখানে আলুর তৈড়ি হরেক রকমের খাবার নিয়ে উপজেলার অফিসারদের বউদের সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশের প্রতিযোগীতা দেখাতে হতো। মনে পরে, কোন এক আন্টির আলুর পায়েস ও খেয়েছিলাম! ওয়াক....মানুষের খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করার জন্য সে কি চেস্টা !!

দেশে এবার নাকি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে, মানুষ কোল্ড স্টোরেজে রাখার জায়গা পাচ্ছে না। সেনাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য জেনারেল সাহেব সবাইকে বেশী করে আলু খাবার পরামর্শ দিয়েছেন। উনার অমৃত সম বাণী মাটিতে ফেলার দুঃসাহস আমাদের নেই। আমরা বেশী করে আলু খাচ্ছি। আলুর কেক- আলুর রেজালা- আলুর পোলাও- আর কত কি !

চালের দাম আকাশছোঁয়া। বছর আগের ২৫ টাকার চাল এখন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এজন্য আসুন আমরা বেশী করে আলু খাই, ভুট্টার আটার রুটি খাই, খাদ্যাভ্যাস বদলাই, ভাতের উপর চাপ কমাই।

জেনারেল সাহেব বলেছেন আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করছেন। আসুন চোখে সুরমা লাগিয়ে হেলে দুলে জেনারেল সাহেবের জন্য জলপাই দুরুদ পড়ি, দোজাহানের অশেষ ছোয়াব হাসিল করি।
আম্মাআ বাদ.......