অফিসের কাজে ক্যানবেরা আসলে নাফিজকে মাই ক্যাফেতে আসতেই হবে। মাই ক্যাফের বিখ্যাত ক্যাপাচিনোর সাথে চিজ কেক অমৃতের মতো লাগে তার কাছে। তবে আজকেরটা যেনো একটু অন্যরকম। জুলাইয়ের এই কনকনে ঠান্ডার মাঝেও রাস্তার পাশে হিটারের পাশে বসে কফি খেতে খেতে একটা ডানহিল ব্লু ধরাতেই মনটা একটু কেমন করে উঠলো। ঘড়িতে ৬:৩২ বাজে। এতক্ষনেতো নাবিলার চলে আসবার কথা।
নাবিলার সাথে পরিচয় ইন্টারনেটে, ইহাহুতে চ্যাট করতে করতে হঠাতই এক অপরিচিত নিক হতে পিএম, সে থেকে আলাপচারিতা তারপর আগ্রহ। ফোনে এতদিন কথা হলেও আজও প্রথম দেখা হতে যাচ্ছে। নাবিলা- নাফিসা নাম দুটোর মাঝে অন্যরকম এক মিল আছে, একটু ছন্দময়। আনমনেই হাসলো নাফিজ। কি সব বাচ্চা মানুষের মতো ভাবছে।
"হাই, আমি নাবিলা, ইউ মাস্ট বি নাফিজ ? "
"হাই, হাঁ, আমিই নাফিজ।" একটু চমকে উঠলেও সামলে নেয় নাফিজ।
"কেমন আছো ?" বলে একটু তাকালো নাবিলার দিকে। যেরকমটি সে কল্পনা করেছিলো তার সাথে অনেকটুকুই মিল। মাঝারি উচ্চতার, ফর্সা, চোখ গুলো টানা টানা। একটু কি সিরিয়াস ধরনের দেখতে!
"তোমার না নীল শাড়ি পরে আসার কথা ছিলো ? "
"ওমা! এই ঠান্ডায় শাড়ি পরা যায় ? যে ঠান্ডা পড়েছে এখানে। পারলে এস্কিমো সেজে আসি" বলেই মুচকি হাসলো নাবিলা।
"ও তাইতো, পার্থে অবশ্য এতো ঠান্ডা পরে না।"
"কি খাবে?"
"তেমন কিছু নাহ, কফি হলেই হবে।"
"শুধু কফি হলেতো হবে না । কেক বা অন্যকিছু ?"
"কেক !! ওকে, কেক"
"তাহলে আমার পছন্দের চিজ কেকই হয়ে যাক।"
কফি-কেকের অর্ডার দেবার পর ঘড়ি দেখে প্রায় ৭ টা বাজে। লেট ফ্লাইটে আজই নাফিজকে সিডনী যেতে হবে।
"তোমার ফ্লাইট কটায় ? "
"হুমম, ৯ টায়, ৮ টায় চেক ইন করলেই হবে। "
"তাহলেতো সময় খুবই কম।"
"হাঁ তাই, এতো ব্যাস্ত সময় কাটলো সারাটা দিন যে এই সন্ধ্যা ছাড়া সময় বের করতে পারলাম না।"
"আসলেই তাই, আমি ভেবেছিলাম এতোদিন কথা হবার পর দেখা একটু সময় নিয়ে গল্প করবো তাও হলো না।"
"নেক্সট টাইমে যখন আসবো তখন পুরো একটা দিন রেখে দেবো তোমার জন্য। বলে, কথা দিলাম" বলেই হাহাহাহা করে হেসে উঠলো নাফিজ।
"ওকে, সে দেখা যাবে।"
"তোমার পড়াশোনাতো প্রায় শেষ। কি করবে বলে ভাবছো?"
"একটা দারুন অফার পেয়েছি ইউনি থেকে, পিহেইচডিটা এ.এন.ইউ থেকেই করবো বলে ভাবছি।"
"ওহ"
"তোমার কি প্লান ? তোমার না একটা বেটার একটা জব অফার আছে?"
"তা আছে, তবে আর ভালো লাগে না এ দেশ। কমতো হলো না। ১০ বছর। ভাবছি দেশে ব্যাক করবো। ওখানে নিশ্চয়ই জবের অভাব হবে না।"
"তোমার সিটিজেনশীপ হয় নি ?"
একটু বিরক্ত হলেও সেটা চেপে গেলো নাফিজ। বাঙালীরা যে অবস্থানেই থাকুক না কেনো এ ধরনের প্রশ্ন করবেই যা নাফিজ প্রচন্ড অপছন্দ করে।
"নাহ, আমার কখনই অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেনশীপ হবে না"
"ওহ, আচ্ছা" বলে নাবিলা একটু হাসলো।
আচ্ছা নাবিলা কি একটু দমে গেলো ? কেমন যেনো শুস্ক হাসি! নাফিজ ভাবছে।
"তোমারতো যাবার সময় হয়ে গেলো"
"ওহ, তাই তো। দেখেছো সময় কি দ্রুত চলে যায় ! ইচ্ছে হচ্ছে আরো অনেকক্ষন বসে থাকি তোমার সাথে।"
"চল, তোমাকে লিফট দেবো এয়ারপোর্ট পর্যন্ত"
"আরে নাহ, তোমাকে কস্ট করতে হবে না, আমি ট্যাক্সি নিয়েই চলে যেতে পারবো"
প্লেনে বসে ভাবছে নাবিলার কথা। তার অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেন শীপ না থাকাটাই মনে হয় এখন সবচাইতে বড় অযোগ্যতা। নাবিলাতো জানে না কেনো সে নীল পাসপোর্ট পাবে না। সেটাওতো আরেক নীল পাসপোর্টের জন্যই।ওদিকে গ্রাজুয়েট হাউসের ছোট্ট রুমে বসে বসে নাবিলা ভাবছে অন্য এক কথা।
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।