শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০০৯

অতিথি দেবতা

কোন মন্তব্য নেই :
চাকুরিগত কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে সব সময়ই কথা বলতে হয়। শরীরের রঙ ও উচ্চারনের ভিন্নতার কারনে কোন দেশ হতে এসেছি সেটা অনেকেই জিজ্ঞেস করে থাকেন। বেশীর ভাগ মানুষের ধারনা আমি হয়তো ভারতে হতে আসা। যখন উত্তর হয় ‘বাংলাদেশ’ তখন বেশীর ভাগই চিনতে পারেন না। এতে প্রথম প্রথম অবাক হলেও সময়ে সেটা স্বাভাবিক ভাবেই নেই। পৃথিবীর গুরুত্বের তালিকায় বাংলাদেশ এতো নগন্য যে না চেনাটাই স্বাভাবিক। বছর বছর বন্যা – ঘুর্নিঝড় বা রাস্তায় রাজনৈতিক হাংগামা ছাড়া ভালো খবর খুব কমই আসে এসব দেশের মিডিয়াগুলোতে। মাঝে মাঝে ড. ইউনুস ও উনার গ্রামীন ব‌্যাংক নিয়ে যা একটু খবর আসে। যাই হোক,অনেকেই জানতে চান বাংলাদেশ সম্পর্কে। মনের মাধুরি মিশিয়ে বলি। বেড়ানোর জায়গা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। বলতে বলতে কক্সবাজারের কথা এসেই যায়।

প্রকৃতির সপ্ত-আশ্চর্যের শর্ট লিস্টে কক্সবাজারের নাম যখন নেই শুনতে পেলাম, তখন খারাপ লাগলেও অবাক হয়নি। হয়তো বড়াই করে আমরা বলি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, কিন্তু বড়াই করে বলতে পারি না সেখানকার সুযোগ সুবিধাগুলোর কথা। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বাদ দিয়েই একজন বিদেশী কক্সবাজারে বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা করলে কি করবেন সেটা চাকুরিগত অভিজ্ঞতা দিয়েই আন্দাজ করতে পারি।

আন্তর্জালে কক্সবাজারকে নিয়ে পুর্নাংগ কোনো অফিসিয়াল ওয়েব সাইট এখনো দেখতে পাইনি যা দ্বারা কোনো পর্যটক প্রাথমিক তথ্য থেকে শুর করে একটা হোম ওয়ার্ক করতে পারবেন। একজন পর্যটক বিদেশে বেড়াতে গেলে অবশ্যই হোমওয়ার্ক করে যান, আমার পর্যবেক্ষন ও অভিজ্ঞতা তাই বলে।

অনলাইনের কোনো ওয়েবসাইটেই হোটেল /মোটেলে রুম বুকিং দেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনলাইনে কক্সবাজারের কোনো হোটেল/মোটেলের সেরকম ওয়েবসাইট দেখতে পাইনি যা দ্বারা কোনো বিদেশী পর্যটক রুম বুকিং দিতে পারেন বা সেই হোটেল/মোটেল/রেস্ট হাউজ সম্পর্কে ধারনা নিতে পারেন। বেশীর ভাগ বিদেশী পর্যটকই বুকিং ছাড়া কোথাও যেতে চান না। ব্যাক প্যাকারদের ক্ষেত্রে অবশ্য সেটা তেমন খাটে না।

পর্যটন তথ্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বিদেশ হতে অনেকেই হয়তো বিমানে এসে ঢাকায় এসে নামলেন। সেখান থেকে কক্সবাজারে যেতে হলে কিভাবে যাবেন সেটা একজন নতুন মানুষের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব একটা ব্যপার। পর্যটন কর্পোরেশনের একটি বুথ থাকলেই অনেক সময়ই সেটা হয় বন্ধ পাওয়া যায় বা দরকারী তথ্য পাওয়া যায় না। যেকোনো ভাবেই হোক সেই পর্যটক কক্সবাজারে এসে পৌঁছুলেন। এর পর ? কোথায় থাকা যাবে, কোথায় ভালো খাবার পাওয়া যাবে , কিভাবে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যাবে ইত্যাদি নানাবিধ তথ্যে পাবার জন্য কক্সবাজারে কোনো ব্যবস্থাই নেই। “তথ্যকেন্দ্র” এটা যেকোনো পর্যটন কেন্দ্রের জন্য ফরজ জিনিস।

একজন বিদেশী পর্যটক শুধু বালি দেখতে আসবে না বা মুখের কথায় সমুড্র সৈকত দেখতে চলে আসবেন না। জেনে শুনে ও পৃথিবীর অন্যান্য ট‌্যুরিস্ট স্পটের সাথে তুলনা করেই আসবেন। যতই বড়াই করি পযটন কেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজার এখনো শিশু।

কক্সবাজারে হয়তো হোটেল /মোটেল নামে কিছু বিল্ডিং তৈরি হয়েছে কিন্তু চরম অপেশাদারীভাবে সেগুলো চলছে। স্থানীয় মানুষের বিরূপ আচরন ও সুযোগসন্ধানী মনোবৃত্তি, বাজে আইন শৃংখালা পরিস্থিতি, সৈকতে সুযোগ সুবিধার অভাব । পর্যটক আকর্ষন করতে হলে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতেই হবে। মাঝে মাঝে ভাবি দেশের পর্যটনের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গাগুলোকে নিয়ে ঠিক মত প্রচারণা, যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, থাকা খাওয়ার সুব্যাবস্থা, সার্বিক নিরাপত্তা, সুন্দর ভাবে উপস্থাপন, দায়িত্ত্বশীল নজরদারী, পর্যটকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা, আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, সর্বোপরি যা যা করা দরকার তা যদি আমরা দ্বায়িত্ত্ব নিয়ে এবং আন্তরিকতার সাথে করি, তবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটক তথা বিশ্ববাসীর নজর কাড়বেই। আর পাশাপাশি আমাদের দেশের সুনাম যেমন বাড়বে তেমনি জাতীয় আয়ে এক বড় ভুমিকা পালন করবে।

একজন বিদেশী পর্যটক যা আশা করেন তা পুরন না করতে পারলে হাজার ভোটাভুটি করেও লাভ হবে না। যেখানে স্থানীয় পর্যটকদেরই কক্সবাজারে এসে হাবুডুবু খেতে হয় সেখানে বাহিরের মানুষদের অবস্থা চিন্তা করলে নিজেরই খারাপ লাগে।

কিছু দিন আগে এখানকার টিভিতে “অতিথি দেবতা” শীরোনামে একটা বিজ্ঞাপন দেখাতো। প্রাইম টাইমে দেখানো সেই কমার্শিয়ালে ভারতের পর্যটনকে তুলে ধরা হতো। দেখা মনে হতো, বাংলাদেশেও অনেক কিছু আছে দেখাবার মতো কিন্তু আমরা অতিথিকে দেবতা না মনে করে মুরগি মনে করছি, যেনো পেলেই জবাই করা হবে।

এ অবস্থা শুধু যে কক্সবাজারে নয়,দেশের অন্য সব আকর্ষনীয় জায়গাতেই। আমরা শুধু যে আমাদের দেশকে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছি তাই নয়, বিশাল এক ব্যবসা হারাচ্ছি।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০০৯

স্থায়ী অভিবাসন নিয়ে যারা আসছেন তাদের জন্য কিছু টিপস

কোন মন্তব্য নেই :
জীবনে প্রথমবারের মতো প্রবাসে এসে অনেকেই নানা সমস্যায় পরেন, এ লেখাটি তাদের জন্য। অন্যান্য প্রবাসীরাও মন্তব্যের মাধ্যমে তাদের কথা যুক্ত করতে পারেন, তাদের স্বাগত জানাই।

এ পোস্ট নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষনের সাথে সাথে কিছু বাস্তবতা তুলে ধরবার চেস্টা করেছি। আশা করি যারা নতুন আসছেন তাদের কাজে লাগবে। পোস্টটি যারা স্থায়ী অভিবাসন নিয়ে আসছেন শুধুই তাদের জন্য, পড়াশোনা বা বেড়াতে যারা আসছেন তাদের জন্য নয়।

১.
যারা জীবনে প্রথমবারের মতো আসছেন তারা প্রথমেই যে সমস্যার সম্মুখিন হোন তা হচ্ছে ” কালচারাল শক “। এটা সবারই হয়ে থাকে তবে প্রথমবারের মতো যারা দেশের বাহিরে দীর্ঘসময়ের জন্য থাকতে এসেছেন তাদেরই বেশী হয়। দেশে যা দেখে এসেছেন তার অনেককিছুই এখানে অনুপস্থিত দেখতে পেয়ে তারা শক্ড হয়ে যান, যদিও এ শক সাময়িক এবং কমাস বাদেই কেটে যায়। আস্তে আস্তে তারা স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারেন। একেক দেশের একেক রকম সংস্কৃতি এবং আশার কথা এটায় অভ্যস্ত হতে মানুষ খুব সহজেই পারে।

২.
যারা স্থায়ী অভিবাসী হিসেবে আসেন তারা দেশে কম-বেশী একটি ভালো ও নিশ্চিৎ অবস্থা থেকে এখানে আসেন। এখানে এসে তাদের মুলত শুন্য থেকেই শুরু করতে হয়। এই স্ক্র্যাচ স্ট্রার্টিং অনেকের কাছেই অভিশাপের মতো মনে হয়। মনে রাখতে হয়, যারা মাইগ্রেন্ট তাদের সবারই এটা হয়েছে, নিজেকে একা ভাবার কোনো কারন নেই। অস্ট্রেলিয়ায় চাকুরিদাতাদের একটি প্রবনতা হলো অস্ট্রেলিয়াতে কাজের অভিজ্ঞতা ও অস্ট্রেলিয়ান ডিগ্রী চাওয়া, যা দেশ থেকে আসা কারোই থাকে না; এ কারনে নিজের ফিল্ডে চাকুরি খুঁজতে গিয়ে তারা প্রচন্ড সমস্যা ভোগ করেন। তবে চেস্টা চালাতে থাকলে এটা উৎরানো সম্ভব ও অনেকেই এটা করতে পেরেছেন।
দরকার হলো হাল না ছেড়ে চেস্টা চালিয়ে যাওয়া’; এটাই মুল সুত্র। যোগ্যতা থাকলে নিজের ডোমেইনে চাকুরি পাওয়া খুবই সম্ভব।

৩.
প্রথম অবস্থায় এসে নিজের ফিল্ডে চাকুরি না পেয়ে অনেককেই মনোকস্টে ভুগেন। হয়তো দেশে প্রকৌশলী ছিলেন বা সরকারী আমলা ছিলেন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু এখানে এসে প্রথম অবস্থায় চাকুরি না পেয়ে তাদের হয়তো রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরে কাজ করতে হয়, হয়তো ট্যাক্সি চালাতে হয়, হয়তোবা সুপার মার্কেটে কাজ করতে হয়। দেশে এ ধরনের কাজকে ছোট করে দেখতে দেখতে মন মানসীকতা এরকমই হয়ে যায় যে তারা এখানে এসে এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে হিনমন্যতায় ভুগেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে সব ধরনের কাজকেই সম্মান করা হয়, মানুষ হিসেবে সম্মান করা হয়, এখানে অন্য কিছু বিচার্য না। এজন্যও গার্বেজ কালেক্টরও এম.পি হতে পারেন, এজন্যই মন্ত্রি বা বিশাল আমলার সন্তান প্লাম্বারের কাজ করে নিজের কাজ লুকায় না, গর্ব করে বলে।
দেশ থেকে যারা আসছেন তারা তাদের মধ্যযুগীয় ইগোকে দেশের মাটিতে রেখে আসবেন।

আরেকটি জিনিস, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় চাকুরির বাজারের পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত বছরের তুলনায় চাকুরির বিজ্ঞাপন কমেছে প্রায় ৫৫%। ছাঁটাই তো আছেই। এজন্য চাকুরি পেতে সমস্যা হতে পারে।

৪.
বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশ থেকে যারা মাইগ্রেশন নিয়ে আসছেন তাদের বেশীরভাগেরই ইংরেজী বলতে ও বুঝতে খুব সমস্যা হয়। আই.ই.এল.টি.এস এ ভালো স্কোর পাওয়া আর তার বাস্তব প্রয়োগ ভিন্ন জিনিস। ইংরেজীর সমস্যার কারনে তাদের অনেকেই ভালো চাকুরি পান না। যারা এ সমস্যা কাটাতে পারেন তারা ছাড়া অন্যদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠবার চেস্টা থাকতে হবে।

৫.
আরেকটি সমস্যা যা দেশ হতে আসা স্থায়ী অভিবাসীরা মুখোমুখি হোন তা হচ্ছে ” সিস্টেম” । একেক দেশ একেকভাবে চলে, একেক ভাবে ভাবে। বাংলাদেশে যে সিস্টেমে তারা চলে এসেছেন সেটা এ দেশে আশা করা বোকামী। নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে, এখানকার সিস্টেমের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। মিথ্যে বলা, সময়ের মুল্য না দেয়া, ধান্দাবাজী, দূর্নীতি করার প্রবনতা, ইত্যাদি ইত্যাদি এখানে করলে চলেবে না। এখানের মতো চলবে হবে। তবে অবশ্যই নিজস্ব স্বকীয়তা বিসর্জন দিতে বলছি না।

৬.
যারা এখানে আসছেন বা নতুন এসেছেন তারা অনেক সময়ই রঙিন চশমা পরে রঙিন স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তাদের বাস্তববাদী হতে হবে। দেশে থেকে এখানকার অনেক রঙিন গল্প, অনেক মিথ্যে গল্প তারা শুনতে শুনতে তারা যে স্বপ্নের জগৎ গড়ে তুলেন তা এখানে মিথ্যে হয়ে যায় আসার পর পরই। তবে স্বপ্নকে স্বার্থক করা সম্ভব, অনেক অনেক মানুষ করেছেন, আপনিও পারবেন।

বাস্তববাদী হতে হবে, কঠিন পরিশ্রম করতে হবে সফল হতে। সফল হবার কোনো সহজ ও শর্টকাট রাস্তা নেই। হয়তো চতুরতা করে অল্প সময়ে ৫০০ ডলার উপার্জন করতে পারবেন কিন্তু কোন ফাঁকে ৫০০০ ডলার হাওয়া হয়ে যাবে টেরই পাবেন না।

৭.
ড্রাইভিং শিখে আসবেন অবশ্যই। এতে যেমন নিজের কাজে লাগবে তেমনি ট্যাক্সি চালাতে পারবেন। ট্যাক্সি চালানোর কথা বলাতে ভুঁরু কুচকালে চলবে না। এতে উপার্জন ভালো, স্বাধীনতা আছে। আমাদের দেশের অনেকেই এ কাজ করছে। তবে এটাকে স্থায়ী পেশা হিসেবে গ্রহন করে পস্তাতে হয়, যেটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। পরে মুল পেশায় ফিরে আসা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় উঠেনি।

৮.
রান্না শিখে আসবেন। অন্তত বেসিক টুকু। এখানে আপনি বুয়া পাবেন না যে আপনার জন্য তিন বেলা রান্না করে দেবে। নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে, নিজের রান্না নিজেকেই করতে হবে।

৯.
বেশ ক মাস চলার মতো টাকা নিয়ে আসবেন। এটা মনে যেমন সাহস দেবে তেমনি কোনো রকম কাজ না পেলে জীবন বাঁচাবে। এটা একটি গুরুত্বপূর্ন টিপস।

১০.
অন্য কারো উপর ভরসা করে বা আশা করে এখানে আসা চলবে না। এই ভুল অনেকেই করে থাকেন। হয়তো প্রথম অবস্থায় কারো সাথে থাকা যেতে পারে কিন্তু এটা যাতে স্থায়ী ব্যবস্থা না হয় সেটা মাথায় থাকা দরকার। যারা বিবাহীত তাদের কারে সাথে শেয়ার না করে থাকা উচিৎ। শেয়ার করে থাকলে টাকা বাঁচলেও অন্যকারো সাথে বউ/স্বামী ভেগে যাওয়া সহ আরো নানাবিধ অবান্জিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রবাসে আসার আগে কিছু "হোম ওয়ার্ক" করে আসা অবশ্যই দরকার। প্রবাসে থাকা অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজনের সাথে আলোচনা করা ও পরামর্শ এতে বেশ কাজে আসে।

১১.
মানুষ তার স্বপ্নের সীমা ছুতে পারে, আপনিও পারবেন। শুধু দরকার ” লাইনে থাকা, লাইনচ্যুত হওয়া যাবে না।” ধীরে ধীরে সব কিছুই আপনি নিজেই শিখে নেবেন, বুঝে নিবেন। আশাহত হওয়া যাবে না। সফল আপনি হবেনই।
------------------
শুভকামনা সকলের জন্য।

আপাতত এই টিপস গুলোই দিচ্ছি।
অন্যরাও যোগ করে পারেন নিজেদের টিপস গুলো।

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০০৯

দূখিত হাসান, চাকুরিটা এন্ড্রুই পাচ্ছে

কোন মন্তব্য নেই :
বৈষম্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এ যাবৎকালের অন্যতম বড় পর্যবেক্ষনে দেখা গিয়েছে হাসান, ঝিউ এবং লুইজের চেয়ে জেনিফার, এন্ড্রু এবং সারাহ নামের লোকেরা চাকুরিতে বেশী সুবিধা পাচ্ছে।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদরা তাদের ২ বছরের পর্যবেক্ষনের ফলাফল প্রকাশ করেছেন যেখানে তারা ৫০০০ এরও বেশী আ্যংলো, মধ্যপ্র্যচীয়, আদিবাসী, চায়নিজ এবং ইটালিয়ান বনাম ব্যবহার করা মিথ্যে জীবন তথ্য পাঠিয়েছিলেন। সিডনী, মেলবোর্ন এবং ব্রিসবেনের বিভিন্ন অনলাইন চাকুরির বিগ্যপ্তির প্রেক্ষিতে তারা এ সিভিগুলো পাঠিয়েছিলেন।

এই প্রতিবেদন দেখে গিয়েছে যে চায়নিজ ও মধ্যপ্রাচ্যীয় চাকুরি সন্ধান প্রার্থীরা সবচাইতে বেশী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অধ্যাপক এলিসন বুথ, অধ্যাপক এন্ড্রু লেই এবং গবেষক এলেনা ভারগানোভা লিখিত প্রতিবেদন "ক্ষুদ্রতর গোস্ঠীর মধ্যে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য আছে কি ? " অনুসারে একজন চায়নিজ চাকুরীপ্রার্থীকে শতকরা ৬৮ ভাগ বেশী আবেদন করতে হয় একজন আ্যংলো -স্যাক্সনের চেয়ে শুধুমাত্র সাক্ষাতকার পাবার জন্য।
মধ্যপ্রাচ্যীয়দের ক্ষেত্রে তা শতকরা ৬৪ ভাগ বেশী, আদিবাসীদের তা শতকরা ৩৫ এবং ইটালিয়ান চাকুরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শতকরা ১২ ভাগ বেশী আবেদন করতে হয়।

গতমাসে ছাপা ক্যানেবরা টাইমস এর খবরটি অপটু হাতে অনুবাদ করে দিলাম। বিস্তারিত পরে জানাবার চেস্টা করবো।


মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০০৯

হাবিজাবি ৫

1 টি মন্তব্য :
আজ ভরা পূর্নিমা। মধ্য আকাশে চকচকে সিরামিকের থালার মতো একটি বিশাল চাঁদ উঠেছে। সন্ধ্যে বেলা ওটা ছিল দিগন্ত রেখা বরাবর। তখন ওটা আকারে বেশ বড়ও ছিল।

গত কালও ঠিক এমন বড় আকারের চাঁদ ছিল। সপ্তাহের বাজার শেষে বাসায় ফীরে আসার সময় ভেবেছিলাম আজ বুঝি ভরা পূর্নিমা। পূর্নিমায় মানুষ বলে কবি হয়ে উঠে। আমার অবশ্য তা হচ্ছে না। কবিতা আমার উপরে পরেছে। বাহিরে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, চাঁদকে ধরে রাখি ক্যামেরায়। বেশ কয়েকটি স্ন্যাপও নিলাম। হাত অবশ্য কয়েকবার কেঁপেও গিয়েছিলো। অপুটু হাতে পয়েন্ট এন্ড শুটের সস্তা ক্যামেরায় তোলা ছবি আর কতটুকুই ভালো হতে পারে ! তারপরেও চাঁদ বলে কথা।  আমরা যারা এইমুহুর্তে এই চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি, তারা কি বিনি সুতার মালা গাঁথা ?


অনেক ঠান্ডা পরেছে। এ মুহুর্তে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাতে আরো কমবে। -৩ ডিগ্রীতে নামবে বলে আবহাওয়ার আধিকারীকরা বলছেন। ভাগ্যিস ঘরে হিটার চলছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত ধনী দেশে যখন লাখো মানুষ ঘর হারা, মাথার উপরে ছাদ নেই - এ শীতে তাদের অবস্থা কল্পনা করে যেমন খারাপ লাগছে তেমনি নিজেকে ভাগ্যবানও মনে হচ্ছে। অন্তত এ শীতে কস্ট করতে হচ্ছে না।

বাসায় কোনো ওভেন ছিলো না। কোনো কিছু বেক বা রোস্ট করে খেতে হলে সেই ইচ্ছেকে শিকেয় তুলে রাখতে হতো। সস্তা একটা পোর্টেবল ওভেন কিনে ফেল্লাম। প্রথম দিনেই বানানো হয়েছিলো প্লেইন কেক, গতকাল ও আজ পিৎজা। পিৎজা বানানো যে এতো সহজ জানা ছিলো না।  লুঙি পরে এক বাঙাল ইটালিয়ান পিৎজা বানাচ্ছে এ দৃশ্য যদি কেউ দেখে তবে নিশ্চয়ই তার পক্ষে হাসী চেপে রাখা কস্ট হবে।

দিনকাল আগের মতোই চলছে। ৫ দিন - ৫ রাতের কামলাময় জীবন। পরিশ্রম করি কিন্তু কস্ট মনে হয় না। একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই তো এত সব কিছু। ব্যস্ততার জন্য অনেকের সাথেই দেখা করা হয় না, ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেকের বাসায় যাওয়া হয় না, যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। অনেকেই মনে হয় এজন্য আমার উপর খাপ্পা। কিছুই করার নেই, দূঃখিত বলা ছাড়া।

চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে, গানটি শুনতে ইচ্ছে করছে ?


চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে.....