রবিবার, ২ মে, ২০১০

মে দিবসে আর কি বলতে পারি !

ফেসবুকে কবি মুজিব মেহদী ভাইয়ের স্ট্যাটাস
"গৃহবধূদের কথা ভাবছি, যাঁদের কোনো শুক্র-শনি নেই। দিনরাত নেই। আরাম-বিরাম নেই। মে দিবস নেই। কোন মুখে মে দিনের শুভেচ্ছা বলি তাঁদের?"
এর পর আর কি কিছু বলার থাকে ?


অস্ট্রেলিয়ায় একেক স্টেটে একেকদিনে লেবার ডে পালন করা হয়। যেমন অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরিতে ৮ই অক্টোবর লেবার ডে পালন করা হয়। এখানে মে দিবস হয়তো শ্রমিক সংগঠন গুলো পালন করে, তবে সরকারী ভাবে সেই ৮ ই অক্টোবর লেবার ডে।


দেশে মে দিবস আসলেই হ্যান করুংগা ত্যান করুংগা বলে অনেক গলাবাজী শোনা যায়। বোঝার বয়স হবার পর থেকেই এসব শুনে আসছি। বস্তুত যারা খেটে খায় তারা যেখানে ছিলো সেখানেই রয়ে যায়। নুন্যতম বেতন নিয়ে যতো কথা হয় তত কথা হয়না শ্রেনীভেদ ভাঙার জন্য। মালিক শ্রমিকের মাঝে আকাশ পাতাল ফারাক ঘুচবার কোনো লক্ষনই দেখা যায় না।

মাঝে মাঝেই দেখা যায় বেতন না দিয়ে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কোনো মালিক বা বেতন ভাতা নিয়ে ভাঙচুর - মারামারি। তৈড়ি পোষাক বিক্রি করে কোটি টাকা উপার্জন করা মালিক উৎপাদনে ষোলো আনা কিন্তু বেতন দেবার সময় হাজারো অজুহাত, আঙুল গলে কানা কড়িও গড়াতে চায় না। হাদিসে ঘাম শুকিয়ে যাবার আগেই মজুরি দেবার কথা বলা হয়েছে। আমরা ধর্ম চর্চায় যত টুকু মনোযোগী আমরা ঠিক ততটুকু পালনে রত হলে দেশতো স্বর্গ হয়ে যেতো। দেশে কাজ করবার সময় মাসের বেতন পেতে যতবার মালিকপক্ষকে অনুরোধ করতে হয়েছিলো ঠিক ততটুকু অনুরোধ খোদাকে করলে খোদাও মনে হয় বিরক্ত হয়ে উপর থেকে কিছু পাঠিয়ে দিতেন। বুদ্ধি বেচে খেতে গিয়েও কত বিড়ম্বনা, সেখানে মাথায় ঘাম পায়ে ফেলা শ্রমিকদের কথা ভাবতেই অন্যরকম কস্ট লাগে। বিদেশে এসে যখন দিনমজুরী করতাম তখন অনুভব করতে পেরেছি দেশে যারা দিনমজুরী করছে তাদের কস্টকে। কাজ আছেতো খাওয়া আছে, কাজ নেইতো খাওয়া নেই।

বিদেশে আসবার পর অনেক জায়গাতেই কাজ করেছি। সেটা ভারতীয় রেস্তোরায় তান্দুরী চিকেন বানানো থেকে শুরু করে সফটওয়্যার ফার্মে বুদ্ধি বেঁচা। রাতের পর রাত সুপার মার্কেট ধোয়া মোছাও বাদ যায়নি। তবে যেখানেই কাজ করেছি সেখানেই টাকা ছাড়াও "সম্মান" বলে পেয়েছি, সে সম্মান একজন মানুষ হিসেবে, কোনো কর্মচারী হিসেবে নয়। হয়তো টাকার বিচারে তার কাছে আমি একজন কর্মচারী কিন্তু দিনের শেষে একজন মানুষ। সেখানে আমার বর্ণ, ধর্ম , অর্থ কোনো কিছুই মুখ্য হিসেবে দাঁড়াই নি। এজন্যই হয়তো মাল্টি মাল্টি মিলিওনার বসের সাথে বসে একসাথে বিড়ি ফুঁকতে পারি বা শরীর এলিয়ে কফির মগ হাতে উচ্চ স্বরে হেসে নাম ধরে ঢেকে কথা বলতে পারি।

এক বিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসেও যত ভদ্র আচরনই করি না কেনো, যতো সুশীল কথাই বলি না কেনো দিনের শেষে আমাদের মননটাই আসল।

মে দিবসে একটাই কামনা, অন্তত সম্মান যাতে করে সবাই তাদের শ্রমিকদের। একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষকে যেই সম্মান করে সেই সম্মানটকুই। এত টুকই চাওয়া আমার এই দিনটায়।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।