বুধবার, ৪ মে, ২০১১

খুনির চেহারা দেখি

নিজস্ব প্রাতিস্ঠানিক পেশার পাশাপাশি একটা ৪.৫ তারকা হোটেলে রাতের পালা দেখাশোনা করার চাকরি করি। এখানে কাজ করতে ভালো লাগে, হড়েক রকম মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়, হাতে বাড়তি কিছু টাকাও আসে। কাজের সূত্রে মন্ত্রি থেকে শুরু করে রাজমিস্ত্রি সবার সাথেই ডিল করতে হয়। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা জমে নিজ ভান্ডারে। এসব নিয়ে লিখতে গেলে বলা যায় প্রায় প্রতি রাতেই একটা করে ব্লগ লেখা যাবে।

২৫শে এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ায় এনজ্যাক ডে পালন করা হয়। বরাবরের মতো আমার হোটেলেও একদল ভেটার্ন উঠেছিলো। এনজ্যাক ডে প্যারেডে অংশ নিতে আসেন , সাথে পূর্নমিলনী। একদল মধ্যবয়স্ক ও বৃদ্ধ মানুষ। হাসি খুশী ফুর্তিবাজ একদল লোক নিজেদের বয়স ভুলে মেতে উঠেন শিশুসুলভ আচরনে। দেখে মনেই হয় না এরাই একসময় হাতে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পরেছিলো ভিয়েতনামের মতো অন্যায় একটা যুদ্ধে, এদের হাতেই মারা গিয়েছিলো অসংখ্য নিরোপরাধ ভিয়েতনামীজ। হয়তো এদের মাঝেই কেউ হয়তো ঠান্ডা মাথায় কোনো ভিয়েতনামীজ শিশুকে হাসতে হাসতে গুলি করে তার মাকে নিয়ে মেতে উঠেছিলো ধর্ষনে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে এদের প্রশ্ন করা বিপদজনক। অনেকেই স্বাভাবিক ভাবে নেয় না। একজনকে প্রশ্ন করেছিলাম কেনোইবা সে সেই যুদ্ধে গিয়েছিলো, তার উত্তর ছিলো তারা বাধ্য ছিলো যুদ্ধে যেতে। সে যুদ্ধের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন করা আরো বিপদজনক। এরকম এক প্রশ্নের উত্তরে বর্নবাদী বাক্য যেমন শুনতে হয়েছিলো তেমন একজনের কাছ থেকে শুনেছিলাম তার যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের কথা। বৃদ্ধ মানুষটি কাঁপতে কাঁপতে বলেছিলেন ' রাতে তার এখনো ঘুম হয় না'। বিবেকের তাড়নার কথা মনে হয় বলতে চাননি।

২৭ এপ্রিল যখন তারা চলে যায় তখন তাকিয়ে দেখছিলাম একদল মানুষকে যাদের মাঝে লুকিয়ে আছে খুনির প্রেতাত্মা। নিস্পাপ হাসির মাঝে লুকিয়ে হাসছে খুনির হাসি। হ্যান্ড শেক করে বিদায় নেবার পর সিংকে হাত ধুতে ধুতে মনে হচ্ছিলো এরাও কারো পিতা - এরাও কারো প্রিয় জন, আবার এরাই কারো হত্যাকারী। হাত ধোয়া যায় কিন্তু এসব মন থেকে মুছতে পারা যায় না। জীবনে পেশাগত কারনে কত কিছুই যে করতে হয়।

সে দিন একদল খুনিকে দেখেছিলাম।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।