শুক্রবার, ১৫ মে, ২০০৯

অনেক খারাপ খবরের মাঝে "একটি খবর" যা আশাবাদী করেছে

বাংলাদশের হাইকোর্টকে মাঝে মাঝে একদল বৃদ্ধ মেরুদন্ডহীন চাটুকারদের আড্ডাখানার কথা মনে হয়। আজকের খবরটি পড়ে মনে হচ্ছে হাইকোর্ট এখনো তার দ্বায়িত্ব পালন করতে ভুলে যায়নি। আজকের রায়টি সেটার কথাই মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছে।

সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের দেওয়া দিকনির্দেশনামূলক রায় পালন করা বাধ্যতামূলক তবে এ দিকনির্দেশনাকে আইনে পরিনত না করতে পারলে এ দিকনির্দেশনা কাগুজেই রয়ে যাবে। সংসদে এটাকে শুধু আইনে পরিনত করলেই হবে না এটার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক, নিপীড়নবাদী মানসিককতার পরিবর্তন কে করবে ? মুল সমস্যাটা কিন্তু এখানেই। দরকার মননে পরিবর্তন - দরকার আচরনে পরিবর্তন - দরকার মানুষের মতো আচরন। মনটাকে ফর্সা করতে হবে।

এ মুহুর্তে মাজদার হোসেন রায়ের কথা মনে পরে যাচ্ছে " নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরন"। কিন্তু এ রায় মানতেও সরকার ও নির্বাহী বিভাগের কত খোঁড়া অজুহাত, পদে পদে রায় অমান্য করে হাইকোর্টের রায়ের প্রতি মধ্যমাংগুলি প্রদর্শন। ঘড় পোড়া গরু সিঁদুর দেখেও ডরায়, আমি ডরাই। সরকার কি নারীর পক্ষে হাইকোর্টের দেয়া এ রায়কে আইনে পরিনত করে সেটার যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবে ! ?

অনেকেই দেখছি এ রায়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে রংগ রসিকতা করছেন কিন্তু তাদের প্রতি অনুরোধ দয়া করে রায়টি ভালো ভাবে পড়ে দেখুন।

রায় টি নিয়ে প্রথম আলোর রিপোর্টটি নিচে যোগ করে দিলাম।

"যৌন হয়রানি বন্ধে নীতিমালা ঘোষণা হাইকোর্টের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না"
নিজস্ব প্রতিবেদক ( দৈনিক প্রথম আলো ১৫/০৫/২০০৯ )
যৌন হয়রানি রোধে কয়েকটি দিকনির্দেশনা উল্লেখ করে একটি নীতিমালা করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের এক রায়ে যৌন হয়রানির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে এ বিষয়ে অভিযোগকেন্দ্র গঠন এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতিত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ না করার কথা বলা হয়।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনাগুলো পালনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের দেওয়া দিকনির্দেশনামূলক রায় পালন করা বাধ্যতামূলক।
২০০৮ সালের ৭ আগস্ট কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে রিট করা হয়। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। আদালত ওই দিন শুনানি শেষে কেন নতুন আইন বা বিধিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন।
রুলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে জবাব দিতে বলা হয়।
রায়ে বলা হয়, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে অভিযোগকেন্দ্র থাকবে। এই অভিযোগকেন্দ্র পরিচালনার জন্য ন্যুনতম পাঁচ সদস্যের কমিটি থাকবে। কমিটির প্রধান হবেন একজন নারী। এ ছাড়া কমিটিতে একাধিক নারী সদস্যও থাকবেন। কমিটি কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে পুলিশের কাছে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠাবেন। এরপর দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী বিচার বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। নির্যাতন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া এবং পুলিশের কাছে অভিযুক্তকে সোপর্দ করার আগে নির্যাতিত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনো পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না।
যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় আদালত বলেন, শারীরিক ও মানসিক যেকোনো ধরনের নির্যাতন যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, পর্নোগ্রাফি যেকোনো ধরনের চিত্র, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। শুধু কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই হয়রানির ঘটনা ঘটে না। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অশালীন উক্তি, কটুক্তি করা, কারও দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো প্রভৃতি যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য হবে।
আদালত চার দিন শুনানি করেন। শুনানিতে যৌন হয়রানির ওপর ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রায় তুলে ধরা হয়। ভারতের রাজস্থান বনাম বিশাখা মামলায় আদালতের দেওয়া রায় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, যৌন হয়রানির ওপর ভারতে এখনো কোনো আইন করা হয়নি। তার পরও বিশাখা মামলায় আদালতের দেওয়া রায়ের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ভারতে যৌন নিপীড়ন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রায়ে আরও বলা হয়, কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, যেকোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করা, অশালীন চিত্র, দেয়াললিখন ও আপত্তিকর কোনো ধরনের কিছু করা যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া রায় ইতিবাচক। সংসদকেই আইন প্রণয়নের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যত দিন এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা না হয়, তত দিন দিকনির্দেশনাগুলো কার্যকর থাকবে। এর ফলে আইন প্রণয়নের সময় হাইকোর্টের রায়ে কোনো ধরনের দুর্বলতা থাকলে তা বেরিয়ে আসবে, যা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করবে।
রিট আবেদনকারী সালমা আলী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এর ফলে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত হবে। নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নে এই রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ফৌজিয়া করিম বলেন, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে পালন করতে হবে।
রায়ে যৌন নিপীড়ন ও শাস্তি সম্পর্কে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করা এবং কার্যকর শাস্তির বিধান করে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নে তাগিদ দেওয়া হয়।
মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে ফৌজিয়া করিম রিটের শুনানিতে অংশ নেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন ফাহিমা নাসরীন, রেবেকা সুলতানা, রেহানা সুলতানা প্রমুখ।
সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাজিক আল জলিল জানান, আইনগত কোনো সমস্যা তৈরি না হলে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে না।
এদিকে ব্যারিস্টার সারা হোসেন জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানির ঘটনায় দায়ের করা পৃথক রিট মামলার শুনানিও শুরু হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।