সোমবার, ৩০ জুন, ২০০৮

গল্পঃ অহিদর ডাকাতের দীর্ঘ নিঃশ্বাষ

1 টি মন্তব্য :
"সেগুন কাঠের দুইখান বিশাল আলমাড়ি, আলমারি ভরা দামি শাড়ি, কাজ করা বিশাল বিশাল খাট, ঘর ভর্তি ফার্নিচার, দামি দামি জিনিস, , দুইখান বড় ফ্রিজ, বিশাল একখান টিভি, কম কইরা হইলেও লাখ দশেকের জিনিসতো হইবোই। আরো কত কিছু যে রাইখা আসছি বউ, কি আর কমু। এর পর থেইকা ট্রাক নিয়া যাইতে হইবো" বলে অহিদর বউয়ের দিকে তাকায়। বলেই একটা একটা দীর্ঘ নিঃশাষ ফেলে।

বাবা নাম রেখেছিলো অহিদর রহমান। সময়ে সেটাই অহিদর ডাকাত। ভেতরগড়ের অহিদর রহমানের মুল পেশা ডাকাতি, একসময় চোরাচালানী করতো। তেমন কিছু না, ওপার থেকে এপারে মাল নিয়ে আসা। বিডিআরের লাঠির বাড়ি আর সহ্য হয় না। তার উপর বিএসএফ যখন চাচাতো ভাই কামালকে গুলি করে মেরে ফেল্লো , সে কান ধরে প্রতিগ্যা করেছে, আর চোরাচালানী না। মাঝে কিছুদিন ঢাকায় রিক্সা চালালেও শরীরে পোষায় নাই। এলাকায় এসে কিছুদিন দিনমজুরি করলেও ৫০ টাকা দিন, সেটায়ও পোষায় না। চালের দামও ২৬ টাকা কিলো। শুধু ভাতে তো আর পেট ভরে না। তেল লাগে, নুন লাগে, ডাল লাগে।

গ্রামের করিম গাজি কইলো মিয়া এই সব করলে হইবো না, আমাগো লাইনে আসো। করিম মিয়া ২ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন মেম্বার। করিম চাচার কথা প্রথমে অহিদর শুনতে চায় নাই। বাপে কইছিলো ' বাজান, মইরা গেলেও অসৎ পথে যাইবা না'। করিম গাজি হেসেছিলো অহিদরের কথা শুনে।এক কার্তিকে মেয়েটারে যখন থানার হাসপাতালে নিতে হইছিলো তখন টাকার জন্য যখন সবার কাছে হাত পাতছিলো তখন করিম চাচা আইসা কইলো ' এই টাকা গুলা নেও, মেয়েটার চিকিৎসা করো'। অহিদর টাকাটা নিয়ে ফেলফেল কইরা তাকিয়ে করিম গাজিকে বলেছিলো ' চাচা, আপনার টাকা আমি যত তাড়াতাড়ি পারুম শোধ দিমু'। করিম গাজি হাসে। সে টাকা আর দেয়া হয় নাই। শেষ মেশ করিম গাজির দলে যোগ দেয়। গত বৈশাখে করিম গাজি জেলে যাবার পর অহিদর এখন দলের সর্দার।

প্রথম প্রথম গ্রামের স্যালো মেশিন ডাকাতি, গরু চুরি বা গ্রামের গৃহস্থের ঘরে ডাকাতি করতো। মানুষ আজকাল ঘরে টাকা পয়সা রাখে না, সোনা দানাও ব্যাংকে রাখে। আর গ্রামের গরীব গৃহস্থের ঘরে ছেঁড়া কাঁথা, ২ টা হালের বলদ, আর দুইবস্তা ধান ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। লাঠির বাড়ি দিলে হয়তো চৌকির নিচ থেকে ৫০০ টা টাকা বের করে দেয়।

গত বৃহস্পতিবার বালিয়াডাঙি বাজারে চাচাতো ভাই শফিয়ারের সাথে দেখা। শফিয়ার বলে "ভাইজান, থানায় নতুন এসি ল্যান্ড আসছে, ঘর ভরা জিনিস। দেখবা নাকি একবার"। প্রথমে ইতস্থতা করলেও অহিদর ভাবে এতদিনতো গরীব লোকের বাড়ী ডাকাতি করলো, এবার না হয় বড়লোকের বাড়ী ডাকাতি করি।কিছুদিন খোঁজ খবর নিয়ে গত রাত ৩টায় এসি ল্যান্ডের বাড়ীতে দল নিয়ে ঢুকে। "বুঝলা বউ, বন্দুকটা সাহেবের দিকে ধরতেই ব্যাটা কাঁপতে কাঁপতে আলমারি খুইলা দিলো। শাড়ির মাঝ থেইকা যখন ক্যাশ টাকা গুলান বাহির কইরা দেয় তখন যদি দ্যাখতা। দুই মনি একটা জিন্দা লাশ থর থর কইরা কাঁপতাছে দেইখা হাসিই আসছিলো।" বলেই ভাগের টাকাগুলা বউকে দেখায়, পাঁচশ টাকার ৪ টা বান্ডিল। "এর পর দেখি বউটার হাতে বড় বড় সোনার বালা, একেকটা ২ ভড়িতো হইবোই। সাহেবকে দুইটা বাড়ি দিতেই সুরসুর করে বউটা হাতের বালা খুলে দেয়, এর পর আলমারি থেইকা গয়নার বাক্স। এই বালাটা পছন্দ হয়?" বলেই অহিদর হাহা করে হাসে। বউ অবাক হয় , লোকটা কি পাগল হয়ে গেলো?

" বুঝলা বউ, দশ বচ্ছর ধইরা ডাকাতি করি, একটা ভালো চৌকিই বানাইতে পারি নাই, তুমারে একটা বালাও বানায় দিতে পারি নাই। আর ওই সাহেব ৪ বছর চাকরি কইরাই এতো কিছু কইরা ফেলাইলো ! কত টাকা বেতন পায় ?"
---------------------
অনেক আগে এরকম একটি গল্প পড়েছিলাম। স্মৃতি থেকে তার কিছুটা এবং নিজের আশ পাশ থেকে কিছুটা নিয়ে গল্পটা লেখার চেস্টা করলাম।

গল্পঃ সাদা কালো

কোন মন্তব্য নেই :
-- ভ্রাতা তোমার কাছে কি অতিরিক্ত ১ ডলার হইবে? ট্রেনের টিকিট কিনিবার জন্য কিছু ডলার কমতি পড়িয়া গিয়াছে।
এই সাত সকালে মুখ হতে ভক ভক করে বিয়ারের গন্ধ বেরুচ্ছে। বিরক্ত ভংগিতে তাকাতেই দেখে এক এবরোজিনি হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে নাফিজের দিকে।
'তোমার ভগ্নির সহিত উপগত হইতে চাই' মনে মনে একটা গালী দেয় নাফিজ। ভাগ্যিস মানুষ মনের কথা পড়তে পারে না। -- না, ভ্রাতা আমার কাছে তোমাকে দেবার মতো অতিরিক্ত ডলার নেই। পকেটে অবশ্য কিছু ভাংতি আছে। ভাবছে দেবে না কি ১ ডলার!
-- নো ওরিস মাইট।
--ভ্রাতা তুমি কি ভারতবর্ষ হইতে আগমন করিয়াছ?
'শালার কাউলা' বলে মেন মনে আরেকটি গালী দেয়। আজকাল গালী দেবার বদঅভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
-- না ভ্রাতা, আমি বাংলাদেশ হইতে এই পান্ডববর্জিত দেশে আগমন করিয়াছি।
-- এটা কোথায় ?
অবাক হয় না নাফিজ। বাংলাদেশ নামক ছোট্ট দেশটিকে চেনার দরকার নেই এদের, চিনতেও পারে না।
-- ভ্রাতা, তোমাকে দেখিতে তো আমাদের মতোই মনে হয় ?
কাউলা বলে কি ! নাফিজ একটু অবাক হয়। সে কি দেখতে এবরোজিনিদের মতো দেখতে? সবাইতো বলে ও নাকি অনেক ফর্সা। আয়নায় আজ ভালো করে দেখতে হবে। তার নাকটা একটু মোটার দিকে তাই বলে এবরোজিনিদের মতো এতো বদখত না।
নাফিজকে অবাক হতে দেখে লোকটি একটু হাসে।
-- ভ্রাতা আমি এলেক্স। আমাকে দেখিয়া কি মনে হইতেছে যে আমি মাতাল? মুখ বাড়িয়ে হো হো করে হাসা শুরু করে। আশে পাশের মানুষ অবশ্য অবাক হয় না। রেডফার্ন ষ্টেশনে এরকমটি প্রায়শই দেখা যায়।
-- বুঝিয়াছো ভ্রাতা, আমি এক জারজ এবোরিজিনি। আমার বাবা ছিল এক জারজ সাদা। আমার মার সাথে উপগত হইয়া আমাকে পৃথিবীতে আসার সুযোগ করিয়া উনি ধন্য হইয়াছিলেন। তার পর আমাকে বাহ্য পদার্থের মতো আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করিয়া উনি নরকবাসী হইয়াছেন। রক্তে আমি সেই আজো জারজ সাদা রক্ত বহন করিয়া চলিয়াছি, মৃত্যতক বহন করিবো।
নাফিজ এলেক্সের দিকে তাকায়। একটু অবাক হয়। এলেক্সকে একটু অন্যরকম লাগছে তার।
-- সি ইয়া মাইট, অনেক ভালো লাগিলো তোমার সাথে গল্প করিতে। দেখি অন্য কারো কাছ হইতে কিছু ডলার পাওয়া যায় কি। আজ আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। মায়ের কবরে ফুল দিতে যাইবো। কিন্তু ট্রেনের টিকিট কিনিতে পারিতেছিনা। তোমাকে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
পকেটে হাত দিতে গিয়েও থেমে যায় নাফিজ।
-- সি ইয়া। এলেক্সকে দেখে আরকজনের কাছে হাত পেতে ডলার চাইতে।
ট্রেন আসছে দেখে নাফিজ সামনে এগিয়ে যায়। ট্রেনে উঠার পর ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের কাজে। আশে পাশে সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। পেছনের সিটে এক ছেলের কথা শুনে কান পাতে। মনে হচ্ছে বাংলাদেশীই হবে, খুব সম্ভবত ছাত্র।

অফিসে ঢুকতেই দেখে তার প্রজেক্ট ম্যানেজার নতুন বিএ মেয়েটির সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। এ লোকের কাজই হচ্ছে অফিসে নতুন কেউ জয়েন করলে তাকে নিয়ে বিছানায় যাবার চেস্টা চালানো। অথচ সে ২ বাচ্চার বাবা একজন সংসারী মানুষ।
-- হাই নাফিজ, কেমন চলিতেছে চ্যাম্প?
-- ভালোই চলিতেছে ঠিক যেমনটি তুমি আশা করিতেছ।
হাহাহা করে হেসে পিএম বলে নাফিজ ডিফেন্সের নতুন এক বিশাল প্রজেক্ট আসিয়াছে। সামনে কঠিন সময়, যন্ত্রে তেল দাও।
কঠিন সময় ! হুহ্ ডিফেন্সের কাজ মানেইতো এক গাদা মিটিং, এক গাদা ট্যুর। আর তার ভাগে এক গাদা বিরক্তিকর ডকুমেন্টশন, মাথা গরম করা সব এনালাইসিস।
সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে খুব। পেছনের বেলকনীতে সিগারেট ধরিয়ে জানালার কাঁচে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠে। এলেক্স দাঁড়িয়ে আছে ! ধুর !! সিগারেটে জোরে কয়েকটা টান দিয়ে ভাবছে পিএম এর কথা। শালা ওকে এবারো প্রজেক্টের ফোকাসে আনবে না। তাকে দিয়ে সব কাজ করাবে কিন্তু নাম হবে নতুন বিএ মেয়েটির।
কাঁচে আবার নিজের প্রতিবিম্ব দেখে। তার রঙটাকি সাদা হলে সুবিধে হতো?

ক্যানবেরার খেরোখাতা ৭

কোন মন্তব্য নেই :

নিজেকে নিয়ে সদাব্যস্ত একজন স্বার্থপর মানুষের মতো পথ চলতিতে অনেক কিছুই ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাই। হয়তো পাশে একজন মানুষ কাঁদছে, আর্তনাদ করছে কস্টে; দেখেও না দেখার অভিনয় করি। এরকমটিই হয়েছিলো শ্বাশতকে নিয়ে লেখাটি যখন পড়ি। এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বস্তুত অসহায় বোধ করি এরকম লেখা পড়লে । নিজের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করেই অসহায়বোধটা চলে আসে। কিন্তু কিছু স্ক্রু ঢিলা পাগল মানুষের পাগলামী অবাক করেছে। নিজের খেয়ে পরের মোষ তাড়ানোর মানুষ তাহলে আমাদের দেশে এখনো আছে ! দূর থেকে শুভকামনা ও শ্রদ্ধা এইসব স্ক্রু ঢিলা পাগল মানুষদের প্রতি। এই সব মানুষদের জন্যই সাহস ফীরে পাই। ভালো কিছু করার প্রেরনা পাই।

মাঝে মাঝে একটা চিন্তায় মাথায় ঘুরে ফীরে। আচ্ছা ৭১ এর মতো আরেকটি যুদ্ধে যদি হানা দেয়া আমাদের দেশে তবে আমি কি করবো ! চেতনা বুকে ধারন করে প্রবাসের নিরাপদ আবাসে বসে ফান্ড রেইজ করবো, দেশের পক্ষে প্রচারনা চালাবো নাকি সেই সব স্ক্রু ঢিলা সাহসী মানুষদের মতো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে যুদ্ধে যাবার জন্য দেশে ফীরে যাবো।

ক্যানবেরার মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতোই মানসিক অবস্থা এ মুহুর্তে , বিনা কারনেই মন খারাপ। কোনো কিছু করতে ইচ্ছে হয় না। অলসতা বলতে যা বোঝায় আদতে সেটাও নয়। অনেক কিছুই জমা হয়ে আছে কিন্তু করতে ইচ্ছে হয় না। প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে এখানে। গত পরশু সামান্য বৃস্টিও হয়েছিলো, মন খারাপ করা বৃস্টি। বৃস্টির মাঝেও গত পরশু আমার এক বড় ভাইয়ের বাড়ী গিয়েছিলাম, রবাহুত অতিথি যাকে বলে। অনেকদিন পর শুটকি ভর্তা দিয়ে গরম গরম ভাত খাবার সৌভাগ্য হোলো। বার বার মায়ের হাতের শুটকি ভর্তার কথা মনে পড়ছিলো। আজকাল মনের ভেতরকার অনুভূতিকে চেপে রাখার সেই কঠিন ক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি। সেখানকার সেই ভালোলাগার সেই অনুভূতিগুলো কি সুন্দরভাবে চেপে রেখেছিলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া-ভাবী। আপনাদের ছোট্ট আতিথিয়তা আমাদের কাছে কত বড় সেটা আপনারা জানেন না।
৩প্রবাসে ৩ ধরনের দেশী মানুষের খোঁজ পেয়েছি। প্রথম দলের কাছে বিদেশের সবকিছুই স্বর্গের মতো মনে হয়, দ্বিতীয় দলের কাছে বিদেশের সব কিছুই বিরক্তিকর এবং তৃতীয় দল মনে হয় সুশীল, এরা কিছুটা সুবিধাবাদী, ভালো খারাপের মাঝে থাকতে চান। আমি তৃতীয় দলের। আমার বাবা পড়েন প্রথম দলের। কোন এক মুঘল আমলে উনি আমেরিকান সৈন্যদের সাথে তথাকথিত গনতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন। সেই থেকে উনি আমেরিকার মহাভক্ত। আমেরিকার সব কিছুই সুন্দর, এমনকি আমেরিকার কাকও উনার কাছে সুকন্ঠি। তবে রামের সুমতির মতো উনারও সুমতি হয়েছে মনে হয়। জনাব বুশের কর্মকান্ড উনাকে কিছুটা হলেও শান্ত করেছে। আশে পাশে অনেককেই দেখছি আমার বাবার দলে। বিদেশের সব কিছুই উনাদের ভালো লাগে, ব্লাডি মুজলিম টেরোরিস্ট বলে গালী দিলেও সেটা মধুর বাণী মনে করে মুসলিমদের সব কিছুর জন্য দায়ী করেন। উনারা গুয়ানতানামোর চরম মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের কথা চেপে গেলেও তিব্বতে চায়নার কর্মকান্ড নিয়ে কুম্ভিরাশ্রু বর্ষন করেন।

একটা সময় বাংলাদেশের বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে চরম আগ্রহ থাকলে এখন এক ধরনের নিরাসক্তি চলে এসেছে। শেখ হাসিনার প্যারোলে মুক্তিতে কে কাঁদার অভিনয় করছে বা বেগম খালেদা জিয়ার হাঁটুর চিকিৎসা সৌদি আরবে না করিয়ে আইভরি কোস্টে করা হবে কি সেটা নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে হয় না। রাজনৈতিক রংগমন্চের ভাঁড় গুলোর ভাঁড়ামি দেখে বলতে ইচ্ছে হয় " এইবার ক্ষ্যান্ত দ্যাও বাহে, দ্যাশটারে আর কতো ধর্ষন করপা?"। এ মুহুর্তে দালাই লামা অস্ট্রেলিয়ায়, ব্যস্ত ফটো সেশনে । প্রধান মন্ত্রি কেভিন রাড এশিয়ায় তার হানিমুনের শেষ পর্যায়ে। উপ প্রধানমন্ত্রি জুলিয়া নিউজিল্যান্ডে। সামনের সপ্তাহে আবারো পার্লিয়ামেন্ট সেশন বসছে। বিরোধী দল নেতা ডাঃ নেলসনের " The Truth, the whole truth and nothing but the truth" কথার উত্তরে হ্যারি পটার খ্যাত কেভিন রাড কি বলেন সেটার অপেক্ষায় আছি।

একগাদা দেশী মাছ কিনলাম। দেশী মাছ কিনে দেশী মাছ খেয়ে দেশে না যাবার কস্ট ভোলার চেস্টা। এ যেনো দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার অপচেস্টা। সপ্তাহটা মন্দ গেলো না। ঘুমোনোর বেশ সুযোগ পেয়েছি অনেকদিন পর।
ওম শান্তি।

ক্যানবেরা খেরোখাতা ৬

কোন মন্তব্য নেই :

দিনগুলো যেনো রেসের ঘোড়া, রেসকোর্সের সেই পাগলা ঘোড়ার মতো দৌড়ুচ্ছেই তো দৌড়ুচ্ছেই, থামতে চাইলেও থামতে পারছে না। সপ্তাহ যে কিভাবে কেটে যায় সেটা বোঝার আগেই নতুন সপ্তাহ শুরু হয়ে যায়। এ সপ্তাহের তাজা খবর হলো আমি আধেক বেকার হলাম। পুরো বেকার হবার অভিগ্যতা অতীতে হয়েছে তবে এবারেরটা একটু অন্যরকম, 'আধেক বেকার'। সপ্তাহ শেষে দুটো বড় বড় প্রেজেন্টেশন দেবার পর মনে হলো দুটো বিশাল বোঝা কাঁধ হতে নেমে গেলো, মনে হচ্ছিলো অনেক কিছুই শেষ হলো। কিন্তু শেষ হলো আরেকটি শুরু হবার দরজা, আরেক পর্ব শুরু হবার পালা। সেই নতুন দরজা দিয়ে নতুন জীবন শুরু করার অপেক্ষার প্রহর গুনছি।

২‌
ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব একটা বন্ধু বৎসল নই। বেছে বেছে মানুষের সাথে মিশতেই পছন্দ করি। হয়তো এজন্যই বন্ধুর সংখ্যা হাতে গোনা। ক্যানবেরা এসেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মনের মিল না হলে বন্ধু বানাবার অভিনয় আমি করতে পারি না। ক্যানবেরায় আমার একজন বড় ভাই আছেন। উনি হয়তো জানেন না উনাকে আমি দারুন পছন্দ করি। বয়সে অনেক বড় হলেও একজন মানুষ মনের দিক থেকে কি সুন্দর ভাবে তরুন থাকতে পারেন তার একটা উদাহরন হতে পারেন উনি। একবার উনার বাসায় যাবার কথা ছিলো, উনি রান্না করে আমাদের অপেক্ষায় বসে ছিলেন , কিন্তু আমাদের যাওয়া হয়নি। এ লজ্জা-ভয়ে উনাকে অনেকদিন ফোন করতেই সাহস করিনি। বলা হয়নি ট্যাক্সি করে যাবার টাকা ছিলো না বলেই যাওয়া হয়নি। ঠিক করেছি আগামি সপ্তাহে একবার বিরক্ত করবো উনাদের সবাইকে।


বিয়ে করার পর থেকেই সংসার চালানোর আনন্দ-কস্ট-জ্বালা হাড়ে হাড়ে অনুভব করছি। সেদিন আলুর ডাল রান্না করলাম, হঠাৎ করেই । যখন দেশে ছিলাম তখন মাঝে মাঝেই আমাদের পরিবারে বিশাল অর্থসংকট চলে আসতো। তখন মাকে দেখতাম সেই রকম পরিমান ঝোল দিয়ে তরকারী রাঁধতে। আলুর ডাল একম এক আইটেম। আলু সিদ্ধ করে ভেঙে সেটাকে তরকারীর মতো ঝোল ঝোল করে রান্না, মাঝে সাজে সেখানে ডিম ভাজির স্লাইস। বিশাল পরিবারের জন্য উপযুক্ত তরকারী। পরিবারের আকৃতি বড় থাকায় সব তরকারীতেই ঝোল বেশী দেয়া হতো। এ কারনেই হয়তো ভুনা খাবারের প্রতি আমার আগ্রহ কম। আমার বউ অবশ্য আলুর ডালের কথা আগে শুনেনি। আমার এ মুহুর্তে অর্থসংকট নেই তবে মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আলুর ডাল খেতে। আজ ব্লগে একটা গাছের ছবি দেখলাম। অনেক বছর আগের কথা, তখন আমরা রংপুরে । সেখানে সেই কাঁটাওলা বুনো গাছটিকে কি ভাবে তরকারী হিসেবে খাওয়া হয় সেটা জেনেছিলাম, মা রান্নাও করতেন, কিছুটা শখে কিছুটা অর্থ সাশ্রয়ের জন্য। ভাবছি ৭৪ এর দূর্ভীক্ষের সময় রংপুরের মানুষ সেটাকে ডাটার বদলে তরকারীতে ব্যবহার করতো, হয়তো আজো করে। দেশ স্বাধীন হবার অনেক বছর হয়েছে কিন্তু সেই গরীব মানুষগুলো গরীবই রয়ে গেছে। বাজারে চালের যে দাম, সেখানে ডাটা কেনা ! সেই বুনো কাঁটাওলা গাছই হয়তো একমাত্র সম্বল।

৪বাংলাদেশ হাইকমিশন অনেক দিন পর একজন নতুন হাইকমিশনার পাচ্ছে। লে। জে. জহিরুল আলম। ক্ষমতার বলয় হতে বিচ্যুত, স্বর্গ হতে বহিঃস্কৃত একজন মানুষ আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে এই ক্যাঙারুর দেশে আসছেন শুনে পুলকিত হতে পারছি না। সচারচর সামরিক বাহিনী হতে আসা এসব মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রতি সন্দেহ আছে আমার। বেশ ক বছর আগে বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়েছিলাম। অভ্যর্থনা কক্ষে তাক ভর্তি ইনকিলাব দেখে মনে হয়েছিলো দেশে মনে হয় সেটাই একমাত্র পত্রিকা। আশা করি উনি অন্তত এ ধারা হতে বের হয়ে আসতে পারবেন এবং সেই সাথে হাইকমিশনের সেই দেশীয় চালে কাজকর্মের একটু পরিবর্তন আনতে পারবেন। উনার কাছে এর চাইতে বেশী এ মুহুর্তে আশা করতে পারছি না।


গত ২ জুন থেকে ক্যানবেরার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে বিশাল পরিবর্তন করা হয়েছে। বাসের রুট নাম্বার, প্লাট ফরম, টাইম টেবিল সব কিছুই নতুন করে সাজানো হয়েছে। সিটি সেন্টার ইন্টারচেন্জে গিয়ে দেখতে পেলাম অনেক মানুষ পথ হারানো শিশুর মতো এলোমেলো ঘুরে বেড়াতে, আমিও তাদের একজন। হয়তো প্রথম দিন বলেই সব কিছু এলোমেলো লাগছিলো। এতো কিছুর মাঝেও সবাইকে শান্তভাবে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখলাম। আমাদের দেশ হলে হয়তো প্রধানমন্ত্রির গায়ের চামড়া তুলে নেবার আগুন গরম শ্লোগান দিয়ে কিছু বাস ভাঙচুর হয়ে যেতো। তবে ঢাকায় বলাকা বাসে ঝুলে যাবার অভিগ্যতা থাকায় এখানে সিটে বসতে পেরে গর্ববোধ করি।


একটা ব্যস্ত সপ্তাহ গেলো। আরেকটি ব্যস্ত সপ্তাহ শুরু হলো। দেশে যেতে খুবই ইচ্ছে করছে, কিন্তু যাওয়া হবে না। কস্ট, শুধুই কস্ট।