সোমবার, ৩০ জুন, ২০০৮

ক্যানবেরার খেরোখাতা ৭


নিজেকে নিয়ে সদাব্যস্ত একজন স্বার্থপর মানুষের মতো পথ চলতিতে অনেক কিছুই ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাই। হয়তো পাশে একজন মানুষ কাঁদছে, আর্তনাদ করছে কস্টে; দেখেও না দেখার অভিনয় করি। এরকমটিই হয়েছিলো শ্বাশতকে নিয়ে লেখাটি যখন পড়ি। এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বস্তুত অসহায় বোধ করি এরকম লেখা পড়লে । নিজের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করেই অসহায়বোধটা চলে আসে। কিন্তু কিছু স্ক্রু ঢিলা পাগল মানুষের পাগলামী অবাক করেছে। নিজের খেয়ে পরের মোষ তাড়ানোর মানুষ তাহলে আমাদের দেশে এখনো আছে ! দূর থেকে শুভকামনা ও শ্রদ্ধা এইসব স্ক্রু ঢিলা পাগল মানুষদের প্রতি। এই সব মানুষদের জন্যই সাহস ফীরে পাই। ভালো কিছু করার প্রেরনা পাই।

মাঝে মাঝে একটা চিন্তায় মাথায় ঘুরে ফীরে। আচ্ছা ৭১ এর মতো আরেকটি যুদ্ধে যদি হানা দেয়া আমাদের দেশে তবে আমি কি করবো ! চেতনা বুকে ধারন করে প্রবাসের নিরাপদ আবাসে বসে ফান্ড রেইজ করবো, দেশের পক্ষে প্রচারনা চালাবো নাকি সেই সব স্ক্রু ঢিলা সাহসী মানুষদের মতো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে যুদ্ধে যাবার জন্য দেশে ফীরে যাবো।

ক্যানবেরার মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতোই মানসিক অবস্থা এ মুহুর্তে , বিনা কারনেই মন খারাপ। কোনো কিছু করতে ইচ্ছে হয় না। অলসতা বলতে যা বোঝায় আদতে সেটাও নয়। অনেক কিছুই জমা হয়ে আছে কিন্তু করতে ইচ্ছে হয় না। প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে এখানে। গত পরশু সামান্য বৃস্টিও হয়েছিলো, মন খারাপ করা বৃস্টি। বৃস্টির মাঝেও গত পরশু আমার এক বড় ভাইয়ের বাড়ী গিয়েছিলাম, রবাহুত অতিথি যাকে বলে। অনেকদিন পর শুটকি ভর্তা দিয়ে গরম গরম ভাত খাবার সৌভাগ্য হোলো। বার বার মায়ের হাতের শুটকি ভর্তার কথা মনে পড়ছিলো। আজকাল মনের ভেতরকার অনুভূতিকে চেপে রাখার সেই কঠিন ক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি। সেখানকার সেই ভালোলাগার সেই অনুভূতিগুলো কি সুন্দরভাবে চেপে রেখেছিলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া-ভাবী। আপনাদের ছোট্ট আতিথিয়তা আমাদের কাছে কত বড় সেটা আপনারা জানেন না।
৩প্রবাসে ৩ ধরনের দেশী মানুষের খোঁজ পেয়েছি। প্রথম দলের কাছে বিদেশের সবকিছুই স্বর্গের মতো মনে হয়, দ্বিতীয় দলের কাছে বিদেশের সব কিছুই বিরক্তিকর এবং তৃতীয় দল মনে হয় সুশীল, এরা কিছুটা সুবিধাবাদী, ভালো খারাপের মাঝে থাকতে চান। আমি তৃতীয় দলের। আমার বাবা পড়েন প্রথম দলের। কোন এক মুঘল আমলে উনি আমেরিকান সৈন্যদের সাথে তথাকথিত গনতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন। সেই থেকে উনি আমেরিকার মহাভক্ত। আমেরিকার সব কিছুই সুন্দর, এমনকি আমেরিকার কাকও উনার কাছে সুকন্ঠি। তবে রামের সুমতির মতো উনারও সুমতি হয়েছে মনে হয়। জনাব বুশের কর্মকান্ড উনাকে কিছুটা হলেও শান্ত করেছে। আশে পাশে অনেককেই দেখছি আমার বাবার দলে। বিদেশের সব কিছুই উনাদের ভালো লাগে, ব্লাডি মুজলিম টেরোরিস্ট বলে গালী দিলেও সেটা মধুর বাণী মনে করে মুসলিমদের সব কিছুর জন্য দায়ী করেন। উনারা গুয়ানতানামোর চরম মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের কথা চেপে গেলেও তিব্বতে চায়নার কর্মকান্ড নিয়ে কুম্ভিরাশ্রু বর্ষন করেন।

একটা সময় বাংলাদেশের বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে চরম আগ্রহ থাকলে এখন এক ধরনের নিরাসক্তি চলে এসেছে। শেখ হাসিনার প্যারোলে মুক্তিতে কে কাঁদার অভিনয় করছে বা বেগম খালেদা জিয়ার হাঁটুর চিকিৎসা সৌদি আরবে না করিয়ে আইভরি কোস্টে করা হবে কি সেটা নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে হয় না। রাজনৈতিক রংগমন্চের ভাঁড় গুলোর ভাঁড়ামি দেখে বলতে ইচ্ছে হয় " এইবার ক্ষ্যান্ত দ্যাও বাহে, দ্যাশটারে আর কতো ধর্ষন করপা?"। এ মুহুর্তে দালাই লামা অস্ট্রেলিয়ায়, ব্যস্ত ফটো সেশনে । প্রধান মন্ত্রি কেভিন রাড এশিয়ায় তার হানিমুনের শেষ পর্যায়ে। উপ প্রধানমন্ত্রি জুলিয়া নিউজিল্যান্ডে। সামনের সপ্তাহে আবারো পার্লিয়ামেন্ট সেশন বসছে। বিরোধী দল নেতা ডাঃ নেলসনের " The Truth, the whole truth and nothing but the truth" কথার উত্তরে হ্যারি পটার খ্যাত কেভিন রাড কি বলেন সেটার অপেক্ষায় আছি।

একগাদা দেশী মাছ কিনলাম। দেশী মাছ কিনে দেশী মাছ খেয়ে দেশে না যাবার কস্ট ভোলার চেস্টা। এ যেনো দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার অপচেস্টা। সপ্তাহটা মন্দ গেলো না। ঘুমোনোর বেশ সুযোগ পেয়েছি অনেকদিন পর।
ওম শান্তি।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।