সোমবার, ৩০ জুন, ২০০৮

গল্পঃ অহিদর ডাকাতের দীর্ঘ নিঃশ্বাষ

"সেগুন কাঠের দুইখান বিশাল আলমাড়ি, আলমারি ভরা দামি শাড়ি, কাজ করা বিশাল বিশাল খাট, ঘর ভর্তি ফার্নিচার, দামি দামি জিনিস, , দুইখান বড় ফ্রিজ, বিশাল একখান টিভি, কম কইরা হইলেও লাখ দশেকের জিনিসতো হইবোই। আরো কত কিছু যে রাইখা আসছি বউ, কি আর কমু। এর পর থেইকা ট্রাক নিয়া যাইতে হইবো" বলে অহিদর বউয়ের দিকে তাকায়। বলেই একটা একটা দীর্ঘ নিঃশাষ ফেলে।

বাবা নাম রেখেছিলো অহিদর রহমান। সময়ে সেটাই অহিদর ডাকাত। ভেতরগড়ের অহিদর রহমানের মুল পেশা ডাকাতি, একসময় চোরাচালানী করতো। তেমন কিছু না, ওপার থেকে এপারে মাল নিয়ে আসা। বিডিআরের লাঠির বাড়ি আর সহ্য হয় না। তার উপর বিএসএফ যখন চাচাতো ভাই কামালকে গুলি করে মেরে ফেল্লো , সে কান ধরে প্রতিগ্যা করেছে, আর চোরাচালানী না। মাঝে কিছুদিন ঢাকায় রিক্সা চালালেও শরীরে পোষায় নাই। এলাকায় এসে কিছুদিন দিনমজুরি করলেও ৫০ টাকা দিন, সেটায়ও পোষায় না। চালের দামও ২৬ টাকা কিলো। শুধু ভাতে তো আর পেট ভরে না। তেল লাগে, নুন লাগে, ডাল লাগে।

গ্রামের করিম গাজি কইলো মিয়া এই সব করলে হইবো না, আমাগো লাইনে আসো। করিম মিয়া ২ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন মেম্বার। করিম চাচার কথা প্রথমে অহিদর শুনতে চায় নাই। বাপে কইছিলো ' বাজান, মইরা গেলেও অসৎ পথে যাইবা না'। করিম গাজি হেসেছিলো অহিদরের কথা শুনে।এক কার্তিকে মেয়েটারে যখন থানার হাসপাতালে নিতে হইছিলো তখন টাকার জন্য যখন সবার কাছে হাত পাতছিলো তখন করিম চাচা আইসা কইলো ' এই টাকা গুলা নেও, মেয়েটার চিকিৎসা করো'। অহিদর টাকাটা নিয়ে ফেলফেল কইরা তাকিয়ে করিম গাজিকে বলেছিলো ' চাচা, আপনার টাকা আমি যত তাড়াতাড়ি পারুম শোধ দিমু'। করিম গাজি হাসে। সে টাকা আর দেয়া হয় নাই। শেষ মেশ করিম গাজির দলে যোগ দেয়। গত বৈশাখে করিম গাজি জেলে যাবার পর অহিদর এখন দলের সর্দার।

প্রথম প্রথম গ্রামের স্যালো মেশিন ডাকাতি, গরু চুরি বা গ্রামের গৃহস্থের ঘরে ডাকাতি করতো। মানুষ আজকাল ঘরে টাকা পয়সা রাখে না, সোনা দানাও ব্যাংকে রাখে। আর গ্রামের গরীব গৃহস্থের ঘরে ছেঁড়া কাঁথা, ২ টা হালের বলদ, আর দুইবস্তা ধান ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। লাঠির বাড়ি দিলে হয়তো চৌকির নিচ থেকে ৫০০ টা টাকা বের করে দেয়।

গত বৃহস্পতিবার বালিয়াডাঙি বাজারে চাচাতো ভাই শফিয়ারের সাথে দেখা। শফিয়ার বলে "ভাইজান, থানায় নতুন এসি ল্যান্ড আসছে, ঘর ভরা জিনিস। দেখবা নাকি একবার"। প্রথমে ইতস্থতা করলেও অহিদর ভাবে এতদিনতো গরীব লোকের বাড়ী ডাকাতি করলো, এবার না হয় বড়লোকের বাড়ী ডাকাতি করি।কিছুদিন খোঁজ খবর নিয়ে গত রাত ৩টায় এসি ল্যান্ডের বাড়ীতে দল নিয়ে ঢুকে। "বুঝলা বউ, বন্দুকটা সাহেবের দিকে ধরতেই ব্যাটা কাঁপতে কাঁপতে আলমারি খুইলা দিলো। শাড়ির মাঝ থেইকা যখন ক্যাশ টাকা গুলান বাহির কইরা দেয় তখন যদি দ্যাখতা। দুই মনি একটা জিন্দা লাশ থর থর কইরা কাঁপতাছে দেইখা হাসিই আসছিলো।" বলেই ভাগের টাকাগুলা বউকে দেখায়, পাঁচশ টাকার ৪ টা বান্ডিল। "এর পর দেখি বউটার হাতে বড় বড় সোনার বালা, একেকটা ২ ভড়িতো হইবোই। সাহেবকে দুইটা বাড়ি দিতেই সুরসুর করে বউটা হাতের বালা খুলে দেয়, এর পর আলমারি থেইকা গয়নার বাক্স। এই বালাটা পছন্দ হয়?" বলেই অহিদর হাহা করে হাসে। বউ অবাক হয় , লোকটা কি পাগল হয়ে গেলো?

" বুঝলা বউ, দশ বচ্ছর ধইরা ডাকাতি করি, একটা ভালো চৌকিই বানাইতে পারি নাই, তুমারে একটা বালাও বানায় দিতে পারি নাই। আর ওই সাহেব ৪ বছর চাকরি কইরাই এতো কিছু কইরা ফেলাইলো ! কত টাকা বেতন পায় ?"
---------------------
অনেক আগে এরকম একটি গল্প পড়েছিলাম। স্মৃতি থেকে তার কিছুটা এবং নিজের আশ পাশ থেকে কিছুটা নিয়ে গল্পটা লেখার চেস্টা করলাম।

1 টি মন্তব্য :

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।