মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০০৭

জামায়াতে ইসলামীর সুবিধাবাদী ভূমিকা, "অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত" ও শংকা

এক.
দস্তরি তাজাজি বইয়ে জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্বিক নেতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদি লিখেছেন, " আইন পরিষদ গুলোতে মহিলাদের সদস্য হওয়ার অনুমতি দেওয়া হোলো পাশ্চাত্য জাতিসমুহের অন্ধ অনুকরন। ইসলামের নীতিমালা এর অনুমতি দেয় না। ইসলামের রাজনীতি ও দেশের প্রশাসনিক দায়িত্ব কেবল পূরুষের ওপরই ন্যস্ত"

১৯৫৪ এর নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহ রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন কি না এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উততরে তিনি বলেছিলেন ," মহিলাদের কর্মক্ষেত্র আলাদা। সুতরাং মিস ফাতেমা জিন্নাহর রাষ্ট্রপ্রধান পদ গ্রহনের প্রশ্ন আসেই না। এটা হোলো পূরুষের কাজ।"

কিন্তু যখন সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে যখন মনোয়ন দেয়া হয় তখন তিনি সুর পাল্টে ফেলে বলেন , " মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যপারে কোনঐ বাধ্যবাধকতা নেই। মহিলাদের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা বা হজ্ব করা অবৈধ বলাও অন্যায়।"

ঠিক একই জিনিস বর্তমান সময়েও আমরা দেখছি। বিএনপির সাথে জোট বেঁধে ক্ষমতার লড়াইয়ে নামতে বা বেগম খালেদা জিয়ার পদতলে বসে রাজনীতি করতে তাদের সুবিধাবাদী চরিত্রে বাঁধে না। অথবা শেখ হাসিনার সাথে এক টেবিলে বসে রাজনীতির আলোচনায় বসতে তাদের বাঁধে না।

দুই.
জামায়াতের কথা ও প্রচারনা শুনে বা পড়ে অনেকরই মনে হতে পারে, ঠিকইতো আল্লাহর বিধানেইতো মানুষ চলবে, মানুষের আবার বিধান কিসের।
কোথায় আছে সে বিধান ?
সেটা আছে কোরানে, আল্লাহর কালামে।
আর কোথায় আছে সে বিধান?
সেটা আছে হাদিসে, নবীর (সা.) কথায়।
আর কোথায় আছে সে বিধান ?সেটা আছে ইজমায়। সাহাবাদের কথায় ও নির্দেশনামায় ও বানীতে।
আর কোথায় আছে সে বিধান ?সেটা আছে কিয়াসে।

কিন্তু সেই কালাম, কথা ও জীবনযাপনের ব্যখ্যা করে আমাদের সমকালে গ্রহনযোগ্য বিধান কে দেবে?জামায়াত বলছে, এটা দেবে তারা। কোরান সম্পর্কে তাদের ব্যখ্যাই বিধান। ... ওদের ব্যখ্যাই হচ্ছে বিধান ...

এটাই হচ্ছে জামায়াতের সব চাইতে বিপদজ্জনক দিক।

তিন.
জামায়াত গনতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে গনতন্ত্র হোলো মানুষের তৈরি আইন। আর এই আইন দ্বারা মানুষের কল্যান সম্ভব নয়। গভর্নমেন্ট বাই দি পিপল, ফর দি পিপল , অব দি পিপলের বদলে তারা বিশ্বাস করে গভর্নমেন্ট বাই আল্লাহ,ফর আল্লাহ, অব আল্লাহ।
আর মহান আল্লাহতায়ালা দ্বারা নির্বাচিত কারা ? জামায়াতে ইসলামী।
কাজেই গনতন্ত্র নামে 'ইহুদি-নাসারাদের মতবাদ' তারা কিছুতেই মানে না।

কিন্তু তারা নির্বাচনে অংশগ্রহন করে কেনো ?

চার.
জমায়াত চায় গনতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করতে এবং তারা একি সাথে বিশ্বাস করে এই গনতান্ত্রিক পন্থায় তারা বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে গনতান্ত্রিক পন্থা, নিয়ম, প্রক্রিয়া বা সংবিধান মানুষের তৈরি। তারা বিশ্বাস করে মানুষের তৈরি বিধান দ্বারা রাষ্ট্র ও সমাজ চলতে পারে না। তারা বিশ্বাস করে রাষ্ট্র ও সমাজকে চালাতে হবে আল্লাহর তৈরি আইন/বিধান দ্বারা, কোরআন-সুন্নাহর ভিততিতে।ক্ষমতায় গিয়ে তার প্রথমেই যে কাজ টা করবে তা হোলো গনতান্ত্রিক প্রকৃয়াকে ধ্বংস করে তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা।
তা হলে কি হবে ?গনতান্ত্রিক নিয়ম বা প্রক্রিয়ার সুযোগ গ্রহন করে সেই নিয়ম বা প্রক্রিয়াকের ধ্বংস করার জন্য যে অপশক্তি ততপর সেই অপশক্তিকে কি আমরা সুযোগ করে দিবো?

পাঁচ.
সমাধান কি ?

জামায়াত কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা ?
নিষিদ্ধ করা হলেই কি পরিপূর্ন সমাধান চলে আসবে। তাও নয়, বরং নিষিদ্ধ করলে এই ভয়ংকর দানবটা ভয়ানক সব কান্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
আর নিষিদ্ধ না করলে কি হবে ?
জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করলে গনতন্ত্রকে খেয়ে ফেলার জন্য গনতন্ত্রকে ব্যবহার করতে থাকবে। জামায়াতকে গনতন্ত্রে অংশগ্রহন করতে দেবার মানে হোলো সাপের লেজ খাবার মতো ঘটনা, নিজের মুখ দিয়েই নিজের লেজ খাওয়া শুরু করা। এর শেষ হবে নিজের মুখ দিয়ে নিজের মুখ খাওয়া।

ছয়.
জামায়াতের মতো আরো অনেক ছোট কিন্তু আরো ভয়ংকর উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল আছে বাংলাদেশে। জামায়াতের কর্মকান্ডের ফাঁক তাকে এসব অপশক্তি শক্তি সন্চয় করছে ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে। এদের দিকেও সমান ভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নইলে একদিন এরা জামায়াতকেও ছাড়িয়ে যাবে। 'বাংলা হবে আফগান আমরা হবো তালেবান' এই শ্লোগানের বদলে আমদের শুনতে হবে " বাংলা হোলো আফগান আমরা আজ তালেবান"।

-----------------
লেখাটি মৌলিক রচনা না।
দৈনিক প্রথম আলোর ২২মে ২০০৭ এ প্রকাশিত আনিসুল হকের অরণ্যে রোদন কলামের "দলে গনতন্ত্রচর্চাঃ জামায়াতের কি হবে?' হতে সংগৃহিত ও নিজের মতো করে সংক্ষিপ্তাকারে লেখা ও পরিমার্জিত।
পোস্টের ৬ নম্বর প্যারা নিজস্ব ভাবনা।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।