মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০০৭

ব্লগীয় ঝড় ও আমার কিছু কথা

গত কাল সকালে ব্লগে ঢুকতেই ব্লগার যুক্তিগ্যের পবিত্র আল কোরআন নিয়ে একজন ব্লগারের লেখা পড়লাম। পুরোটা ভালো করে পড়ার আগেই লগআউট করতে হয়েছিলো। সন্ধ্যায় ভাস্করদার বাসায় গিয়ে শুনি বিশাল এক ঘটনা নাকি ঘটে গিয়েছে ব্লগে।

যুক্তিগ্য(বানানটা খুব কঠিন, টাইপ করতে পারছি না বলে দূঃখিত) নামে একজন ব্লগারের পোস্টা নাকি মুছে ফেলা হয়েছে। সবার আন্দোলনের মুখে সেটা নাকি আবার ফিরিয়ে আনাও হয়েছে।

ব্লগে আগেও বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে। অনেকেই আপততি জানিয়েছেন, কেউ বা সমর্থন। এটাই স্বাভাবিক। সবার যে ভালো লাগবে এটার কোনো মানে নেই।

কিছুদিন আগেই দেখলাম কোনো এক "ঝুমকা" সোজা কাট পেস্ট চটি মেরে দিলো ব্লগে। হোসেইন ছাড়া কেউ তেমন জোড়ালো প্রতিবাদ করলো না, পোস্ট মুছে ফেলাতো দূরের কথা। পরে সেটা মুছে ফেলা ও ঝুমকাকে ব্যান করা হলেও এবারে যেমন কাউকে না জানিয়েই করা হয়েছিলো সেবার তা করা হয়নি।

অতীতেও বিভিন্ন অবসিন ও ব্যক্তি আক্রমন করে পোস্ট এসেছিলো। মনে আছে আস্তমেয়েকে নিয়ে বাজে কিছু পোস্ট করেছিলো বোকারাম নামে এক পারভার্ট ব্লগার। সুমন চৌধুরিকে ধন্যবাদ জানাই ফ্লাডিং দিয়ে তা প্রতিবাদ করার জন্য। আরিফ জেবতিক প্রতিবাদ পোস্ট লিখেছিলেন আস্তমেয়ের জন্য। প্রচন্ড অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলাম কিছু ব্লগার এরজন্য আস্তমেয়েকেই দায়ী করেছিলো। ডটেড রাসেল পারভেজ এমন ভাবে লিখেছিলো যেনো আস্তমেয়ে এসবের প্রাপ্য। তখনও নোটিশবোর্ড সেই পোস্ট মুছতে অনেক অনেক দেরী করেছিলো, যা এবারে হয়নি। হয়তো নোটিশবোর্ডের মনে হয়েছিলো সেটা অনুভূতীকে আঘাত করেনি।

এবার কাউকে কাউকে কিছু না জানিয়েই নোটিশবোর্ড পোস্ট মুছে ফেল্লো, সেটা ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করছে বলে। যুক্তির খাতিরে মেনে নিলাম সেটা ধর্মীয় অনূভূতীকে আঘাত করেছে, কিন্তু কোন যুক্তিতে বোঝা গেলো যে সেটা ধর্মীয় অনূভূতীকে আঘাত করেছে? সামহোয়্যারইনের কেউ একজনের মনে হোলো সেটা ধর্মীয় অনূভূতীতে আঘাত করেছে আর সেটা মুছে ফেলা হোলো সংগে সংগে!! আজব। লেখকের স্বাধীনতা কোথায় থাকল?

প্রত্যেক লেখকেরই রয়েছে লেখার স্বাধীনতা, রয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা।তবে সেই স্বাধীনতা মানে এই নয় যে , যা ইচ্ছে লিখে ফেলবো বা বলে ফেলবো। স্বাধীনতারও একটা সীমারেখা আছে। সেটা অতিক্রম করলেই সেটার প্রতিবাদ করা যায়, যায় প্রতিরোধ। নইলে সারা পৃথিবী মগের মুল্লক হয়ে যাবে, যার যা ইচ্ছে করা শুরু করবে।

প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনতা আছে যার যার ধর্ম পালনের ও তার প্রচার করার। ব্লগেও যখন কেউ ইসলাম নিয়ে লিখে তখন আমি কোনোরকম আপততিকর কিছু খুঁজে পাই না। একজন হিন্দু বা ক্রিসচিয়ানও তার ধর্ম নিয়ে লিখতে পারেন। একজন নাস্তিকও তার মত প্রকাশ করতে পারবেন। সেটার স্বাধীনতাও তার রয়েছে। তবে কোনোক্রমেই তা যেনো আস্তিকের ধর্মানুভূতীকে আঘাত না করে। সেটা আঘাত করলেই সেই স্বাধীনতাকে খর্ব করার অধিকার অবশ্যই একজন আস্তিকের রয়েছে। তবে একজন আস্তিক বা নাস্তিককে যুক্তি দিয়ে প্রমান করতে হবে যে সেটা তার বা তাদের ধর্মানুভূতীকে আঘাত করেছে, বলপ্রয়োগ বা গলাবাজী করে না।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ধর্ম এমন কিছু বিষয় না যে এটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে না বা প্রশ্ন করা যাবে না। আমি আমার অতীতের লেখায় সেটা বলেছিও। তবে সে আলোচনা অবশ্যই হতে হবে সুন্দর, যুক্তিনির্ভর ও অন্যের অনূভূতীকে আঘাত না করেই। একজন মুসলমানের কাছে আল কোরআন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহিত, যেমন একজন হিন্দুর কাছে পবিত্র গীতা। কেউ একজন বলে বসে " তোমাদের কোরানে আমি মুতি" তবে অবশ্যই তা ধর্মীয় অনূভূতিকে আঘাত হানবে। সে ক্ষেত্রেই এর প্রতিকার করতে হবে। একজন মুসলমানের পবিত্র দ্বায়িত্ব আল কোরআনের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষা করা, এটাও মনে রাখা উচিত সবার।

ব্লগে প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করে পোস্ট দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে পোস্ট দেয়া হচ্ছে। ব্লগ কতৃপক্ষকে তখন কোনো একশন নিতে দেখা যায় না, যদিও তা আমাদের দেশ ও ইতিহাসের পুরোপুরি পরিপন্থি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে এটা নয় যে আমার পিতা-মাতার হ্ত্যাকারীর সাথে কোলাকুলি করতে হবে।

স্বাধীনতা বিরোধীদের ছবি দিয়ে তাদের গুন গান গাওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে একজন শহীদ সন্তানের মনে কি অনূভূতি হতে পারে সেটা কি আমরা বা সামহোয়্যারইন কতৃপক্ষ লক্ষ্য করেছি। সে সময় তো কোনো সময় সেই পোস্ট মুছে দেয়া হয় না !

কাদীয়ানীদের অমুসলিম ঘোষনা করে তাদের কতল করার পবিত্র (!?) আহবান জানিয়ে যখন মানবতা বিরোধী পোস্ট দেয়া হয় তখনতো সে পোস্ট মুছে দেয়া হয় না? আশরাফ হোসেন নামক একজন ব্লগার একবার হোলোকাস্ট মিথ্যা বলে এক পোস্ট লিখেছিলো। মানবতাবিরোধী ও ইতিহাসের চরম এক কলংকজনক এক অধ্যায়কে জায়েজ করার সেই মহান (?!) পোস্ট তো মুছে ফেলা হয়নি। একটা সভ্য সমাজে আর যাই হোক মিথ্যা ও হত্যাকে সমর্থন জানিয়ে কোনো লেখাকে মেনে নেয়া হয় না।

ব্লগে আজকাল জামাতের গুন গান করে পোস্ট লেখা হচ্ছে। আমি এতে আপততিকর খুঁজে পাই না। একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতাদর্শ যদি প্রচার করা যায় তবে জামাতের টাও করা যাবে। যেদিন দেশ থেকে জামাতকে দূর করা যাবে সেই দিন ব্লগ থেকেও জামাতকেও দূর করা যাবে। রাজনীতিতে আমরা মেনে নি্তে পারবো আর ব্লগে কেনো সেটা মেনে নিতে পারবো না? ব্যক্তিগত ভাবে জামাতের অতীত ও বর্তমানকে আমি প্রচন্দভাবে ঘৃনা করলেও এটাই নোংরা বাস্তবতা যে তারা একটা ফ্যাক্টর। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এর প্রতিরোধ করতে হবে, দরকার হলে অস্ত্র দিয়ে। ব্লগ থেকে বের করে দিয়ে বা মুছে দিয়ে না।

বেশ কিছুদিন আগে আলীর একটা পোস্ট মুছে দেয়া হয়েছিলো জরূরী আইনের পরিপন্থি বলে। আমি সেটা পড়তে পারি নাই। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে তখন ব্লগে কোনোরকম প্রতিবাদ আসেনি।

ব্লগে মাঝে মাঝেই অশ্লীল কিছু পোস্ট আসে , আসে গালীতে ভরপুর পোস্ট। সেটা কি অনুভূতীকে বা রুচিতে আঘাত হানে না। তখন ব্লগ কতৃপক্ষ চোখে ঠুলি লাগিয়ে বসে থাকে। আজব সব চিজ!

ব্লগ কতৃপক্ষের ভাব সাব দেখে মনে হয় সব কিছু বোঝার ক্ষমতা শুধু তাদেরই আছে। মাঝে মাঝে মনে হয় মাথা আছে তবে ঘিলুর বদলে রয়েছে গোবর। ফ্রি দিচ্ছে বলে যা খুশি ইচ্ছে করে যাবে ও সেটা আমাদের মেনে নি্তে হয়। মনে হয় বিবেকটাও কিনে নিতে যায় তারা।

যুক্তিগ্যের পোস্ট মুছে দেয়া হয়েছিলো।
কাল আমার বা অন্যকারো লেখা মুছে দেয়া যে হবে না সেটার নিশ্চয়তা কোথায়?
ফ্রি লিখতে দিয়েছেন বলে যা খুশি একটা করে ফেলবে সেটাতো হতে পারে না।
মোদ্দা কথা, ব্লগ হতে হবে মত প্রকাশের স্বাধীন একটা প্লাটফরম। তবে তা অপরের মতকে সম্মান প্রদর্শন করেই।

(লেখাটি সামহোয়্যারইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে একিসাথে)

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।