মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৩

ফেবু স্ট্যাটাস মালা ১


নিজের কোনও স্ট্যাটাস না থাকলেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখি, গত ১ মাসে লেখাগুলো তুলে রাখলাম। পুরাই আব জাপ
 
১। ১জন মৃত মানুষ শুধুই কি ১ টি সংখ্যা ? হয়তো এই মানুষটি কারো আদরের সন্তান, কারো স্নেহময় পিতা , কারো প্রেমময় জীবনসংগী, কারো বন্ধু। রক্ত ভেজা মেঝেতে মুখ থুবড়ে পরে থাকা মানুষটির মৃত্যু আমাকে উল্লসিত করে না - সে আমার স্বপক্ষের হোক আর বিপক্ষেরই হোক। কোনো মৃত্যুই আমাকে উল্লসিত করে না।
২। একজন মানুষের অধঃপতনে নানা কারন থাকে। পিতা/মাতার জিনগত উত্তরাধিকার মানুষের আচরন - ব্যবহারে প্রভাব রাখে। এটা প্রমানিত, বিশ্বাস না করলে সহজ রাস্তায় উইকি ঘাঁইটা দেখেন। বিভিন্ন কলাম - টক শো - ফেসবুক - মিডিয়ায় লেখা পড়া জানা তথাকথিত শিক্ষিত অনেক মানুষের কথা - আচরন - ব্যবহার দেখে মনে হয় এদের জন্মের দোষ আছে; সৎও ভালো পিতা/মাতার সন্তানরা জানোয়ার হয় না। ফেসবুকের কল‌্যানে দেশ - বিদেশে থাকা, নিজে পেশায় সফল হওয়া, নামের আগে ড. লাগানো অনেক জানোয়ার দেখছি। পোষাক জীবন যাপনে আধুনিক কিন্তু ভেতরে ভন্ডামী শয়তানি আর কপটতায় পূর্ন। কন্ডম না ফাটলে এই সব জানোয়ারের জন্ম হইতো না।

৩।
যুদ্ধের বড় একটা ভুল হলো শত্রুকে হেয় করে দেখা বা অবহেলা করে মস্করা করা। জামাত - সুন্নাহ - হেফাজতীরা শতাংশ হিসেবে অল্প কিন্তু ধ্বংশ চালাতে সংখ্যায় অনেক। সামনে আরো আসছে , আরো ভয়ংকর খারাপ।

৪। বীষদাঁত না ভেঙে সাপ নিয়ে খেলতে গেলে সে সাপ কামড়াবেই
 

৫। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা বড্ড ধুরন্দর ও ধুর্ত। আবেগময় আম জনতার মতো প্রথমেই টেক্কা না চালায়া সময় মতো কখন টেক্কা চালতে হবে ঠিকই জানে। সোহেল রানাকে গ্রেফতার করাটা সরকারের একটা চাল। সোহেল রানার গ্রফতারে মানুষ খুশি , মনোযোগ অন্যদিকে ঘুড়ে যাচ্ছে।
নিশ্চিৎ ভাবে বলতে পারি ক্ষমতাসীন দলের চেলা হবার কারনে সোহেল রানা কিছু দিন জেলে থাকবে। ঘুষখোর পুলিশ টাকা খেয়ে ও সরকারের প্রভাবে এমন চার্জশীট দেবে যাতে মামলা দূর্বল হবে। বাংলাদেশের আদালতও টাকা খেয়ে ও সরকারের প্রভাবে ঢিমে তালে মামলা চালাতে থাকবে, সময় মতো সোহেল রানা জামিনে বের হয়েও আসবে। নিত্য নতুন ঘটনা বহুল দেশে মানুষ এমন কিছু নিয়ে মেতে উঠবে যে কিছু দিন পর এটা মানুষ ভুলেও যাবে।
সামনে গোলাম আজম আর কামারুজ্জামানের রায় আসছে। সাঈদি আর কাদের মোল্লার মামলার আপিলের শুনানী চলছে, রায়ও সামনে। এগুলো মানুষের মনোযোগ সড়িয়ে দেবে। সরকার এ সুযোগে রামপালে ঠিকই কয়লা চালিত তাপ বিদ‌্যূত কেন্দ্রের কাজ শুরু করে দেবে। দূর্নীতি - চাঁদা বাজী - শেয়ার মার্কেট ইত্যাদি ইত্যাদি অপকর্ম আপাতত চাপা পরে যাবে। অতীতে বিচার হয়নি, বর্তমানেও হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও হবে কিনা আল্লাহই জানেন।

৬।
বিদেশে বসে নিরাপদ পরিবেশে নরম সোফায় বসে উহ - আহ ছাড়া কিছুই করতে পারি না। কয়েক বছর আগে সাভারের বাইপাইলে একটা গার্মেন্টস ধসে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিলো, সংখ্যা মনে নাই। তখনও উহ-আহ করেছিলাম, শাস্তি দাবি করে গরম স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম কি? মনে নাই। টাকা - ক্ষমতার কাছে সব কিছু বিক্রি হয়ে এক সময় সেটা গল্পে পরিনত হয়েছিলো, এবারো সেটা হবে। সেসময়ও কিছু হয়নি, এবারো হবে না। নিজের স্বজন মারা গেলে যে হাহাকার আসে সেটা অন্যের ক্ষেত্রে আসে না, নিজের ভোঁতা স্বার্থপর অনুভূতিটা নিয়ে আক্ষেপও হয় না এখন আর। মানুষ মারা যায় - বিবেকও মারা যায় সেই সাথে। মৃত মানুষগুলোর জন্য মাগফেরাত কামনা করি, আশা করি আল্লাহর দরবারে এর বিচার হবে।
পৃথিবীর বিচারতো কেনা- বেচার জায়গা, কে কতো দামে বিক্রি হবে সেটাই চলে।

৭। ব্যাপার না, আমরা সব ভূলে যাবো। আগেও গেছি 

৮। সালমান রুশদি যখন স্যাটানিক ভার্সেস লেখে তখন সেইটা পড়ে আমার ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানছিলো
, তবে মোল্লাদের মতো তার মন্ডুপাতের জন্য জানপাত করি নাই। সালমান রুশদির সেই লেখাটাকে অনেক পর-গো-তিশীল মানুষ লেখার স্বাধীনতা - বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তার পক্ষে নেয়, সেইটাও তাগো স্বাধীনতা। হাসনাত আবদুল হাইয়ের "টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি' গল্পটা পড়ে আমার মনের মাঝখানটাতে আঘাত হানছিলো, ভাবছি এই লোকটা এতো নোংরা কেনো তবে এইবারো মোল্লাদের মতো তার মন্ডুপাতের জন্য জানপাত করি নাই। তবে এইবার অনেক পর-গো-তিশীল বাক স্বাধীনতা বা লেখার স্বাধীনতার কথা বলে নাই, বরন্চ হাসনাত হাইয়ের মন্ডুপাত চাইছে। সালমান রুশদি বা হাসনাত হাই টাইপের মানুষরা যতোই লেখালেখি করুক তাতে ইসলাম মানুষের মন থেকে দূর হয়ে যায় না, শাহবাগের চেতনা এক বিন্দু কমে না। এর মাঝে তাদের কাছা খুলে গিয়ে লেজ টা বের হয়ে যায়। আর মন্ডুপাতের কথা কইলাম না ? নিজের আঁতে আঘাত না হানা পর্যন্ত সবাই সুশীল - সুবিধাবাদী, সব কিছুকে নিজের মতো সাজাতে চায় - দেখতে চায় - যুক্তি সাজায়।

৯।
অনেকই খোঁটা দেয় " মিয়া বিদেশে থাকেন, দেশে কি হচ্ছে সেটাতো জানেন না - বুঝেন না", তেমন গায়ে মাখি না, পাল্টা বলিও না যে' আপনে দেশে থাইকা কি করতেছেন?"। এইটা সত্য যে বিদেশে আমরা যারা থাকি তারা নিরাপদেই থাকি। জামাতি বা হেফাজতীরা ইচ্ছা করলেই আমাদের কোপাইতে পারবে না - গুলি করতে পারবে না - রাস্তায় শোয়াইয়া জবাইও করতে পারবে না। কিন্তু দেশে আমরা শেকড় রাইখা আসছি, দেশে থাকা অনেক মানুষই এইটা বুঝতে চায় না যে শেকড় ছেড়ার কস্ট বড় কস্টের। দেশে আমাদেরও পরিবার আছে - স্বজন আছে - বন্ধু আছে। আমি বা আমরা নিরাপদে থাকলেও তারা কিন্তু নিরাপদে নাই। বলা যায় না শয়তানের দল কখন কোথা হতে আইসা কারে মাইরা ফেলায়। আজ কাল অনেক আতংকে থাকি। রাতে ফোন আসলেই কাঁপা হাতে ফোন ধরি, এই বুঝি কোনো খারাপ খবর। এইটা কিন্তু ঠিক যে বিদেশে নিরাপদে বইসা অনেক বড় কথা বলি - ছাগু কার্টুন আইঁকা হিন্দি চুল ফেলি আর মজা লই -স্যাটায়ার লিখি। কিন্তু দেশে আমার যেই ভাইরা জানটাকে বুক পকেটে নিয়া লড়াইয়ে তারা কিন্তু নিরাপদে নাই। যেকোনো মুহুর্তেই কিছু একটা হয়ে যাইতে পারে। সময়টা খুবই খারাপ, সামনে আরো আসছে। সাবধানে থাইকেন। অহিংস হোন আর সহিংস হোন, হাতের কাছে কিছু রাইখেন, সাপ মারতে লাঠি লাগে। নাইলে সেই আপনারে কামড়াবে।

১০। প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রীক হয়ে গেলেই মনে হয় সুখে থাকা যায়।
চুলোয় যাক দেশ -
চুলোয় যাক দেশের মানুষগুলো -
চুলোয় যাক স্বজনের কাতর চোখ ।
দূর মহাদেশেই মহা সুখ।
শান্তি মাসি ওপারের বস্তিতে ফুঁপিয়ে কাঁদে।।

১১।যুদ্ধটা একটা ছাঁকনির মতো। কে সাহসী - কে কাপুরুষ - কে বেইমান/দালাল আর কে দেশপ্রেমিক সেইটা বোঝা যায়। এই সুযোগ সব সময় আসে না। ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময় এসেছিলো, এবার আবারো এসেছে। বোঝা যাচ্ছে কে কোন শ্রেণীতে পরে। তবে শাহবাগ আন্দোলনে সব চাইতে বড় পাওয়া হইলো " নিজেকে জানা ", নিজের দৌড় বুঝতে পারছি।

২টি মন্তব্য :

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।