শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৩

নাস্তিক কার্ড

যুদ্ধকে যদি তাস খেলার সাথে তুলনা করা যায় তবে প্রতিপক্ষের হাতে কি ধরনের কার্ড আছে এবং সে কখন কোন কার্ডটা টেবিলে ফেলবে তার সম্পর্কে খুবই ভালো ধারনা থাকতে হয়, নচেৎ পরাজয় নিশ্চিৎ।  আন্দোলনের এক পর্যায়ে জামাত ই ইসলামী আর তার দোসর বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদি দল (বিএনপি )যখন 'নাস্তিক' কার্ডটা টেবিলে ফেলেছিলো তখন অনেকেই এর সম্ভাব্য ভয়াবহতা আন্দাজ করতে পারেন নাই। অনেকেই এটাকে মজা করেছিলো , আবার অনেকেই নিজেকে আস্তিক প্রমানে ব্যস্ত ছিলো। শাহবাগ আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে যারা আছেন/ছিলেন তারাও ব‌্যস্ত ছিলো তাদের "আস্তিকতার" প্রমানে।

লেখার প্রথমেই যা বলেছিলাম, সেই কার্ড সম্পর্কে ধারনা থাকা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে যখন এই নাস্তিকতার কার্ড ফেলা হয় তখন জামাত গ্রামে - মফস্বলে এমনকি বড় বড় শহরগুলোতে তথাকথিত নাস্তিক ব্লগারদের লেখা কপি করে বিলি করেছিলো, যার প্রভাব পরবর্তিতে দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশে 'আমার দেশ বা নয়া দিগন্ত' পত্রিকাগুলো দেশের মানুষ যতটুকু পড়ে , ইন্টারনেটের সুযোগ থেকে দূরে থাকা সাধারন মানুষ ব্লগ পড়বার সুযোগ পায় না। ব্লগে যেমন অনেক ভালো লেখা হয় তমেনি অনেক ফালতু বস্তাপঁচা লেখাও হয়। এজন্যই আমার দেশ/নয়া দিগন্তের মিথ্যা প্রচারনা মানুষ যেমন গিলেছে ঠিক তেমনি ব্লগারদের সম্পর্কে ভালো কথা গুলো মানুষের কাছে পৌঁছুতে পারেনি তেমন ভাবে। গোয়েবলস এর কথা মতো " একটি মিথ্যা শত বার বল্লে সেটা সত্যের মতো শোনায়" । আরেকটি ব্যপার, শাহবাগ আন্দোলন শহুড়ে মধ্যবিত্তের মাঝে যেমন সারা জাগিয়েছে তেমনিভাবে গ্রাম - মফস্বলে সেভাবে সারা জাগাতে পারে নি।

নিজের বাংলা ব্লগের ৭ বছরের অভিগ্যতা থেকে নাস্তিকতা চর্চা সম্পর্কে অনেক কিছুই বলা যায়। এমন অনেক অনেক লেখা এসেছে যেখানে লেখক তার মতাদর্শ কারো উপরে না চাপিয়ে তুলনামূলক ধর্মতত্ব আলোচনা করেছেন, ধর্মের অনেক কিছু নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। এসব পোস্টে সুন্দর আলোচনা - প্রতি আলোচনা হয়েছে। আবার অনেক পোস্ট এসেছে যেখানে নাস্তিকতার নামে নোংরামীই হয়েছে, হয়েছে অন্যের বিশ্বাসে আঘাত হানা। এসব লেখা যতটুকু নাস্তিকতার প্রচার তার চাইতে ছিলো অন্যের ধর্ম বিশ্বাসকে অশ্লীল ভাবে আঘাত হানা। আর এর সবই হয়েছে বাক স্বাধীনতার নামে। আর এই সব আক্রমনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিলো ইসলাম ধর্মকে আক্রমন করে, যাকে সোজা বাংলায়  উগ্র ইসলাম বিদ্বেষ ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। এখন এই লেখা গুলোই কিন্ত জামাত ফটো কপি করে বিলি করে সাধারন মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। অনেক শহুড়ে মানুষের কাছে ধর্ম একটি ফ্যাক্টর না হলেও গাঁ-গেরামের মানুষের কাছে ধর্ম একটি বিশাল ফ্যাক্টর।

বাংলা ব্লগিং এ রিভার্স নিক বলে একটা টার্ম চালু আছে। হয়তো হিন্দু নাম দিয়ে এমন লেখা যাতে মনে হয় একজন সনাতন ধর্মালম্বী ইসলাম ধর্মকে আক্রমন করছে। আবার মুসলিম নাম নিয়ে এমনভাবে লেখা যাতে নাস্তিকতার নামে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পায়। রিভার্স নিকে মুক্তিযুদ্ধে পোস্ট লিখে তার মাঝে এমন সব তথ্য ঢুকিয়ে দেয়া যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। নাস্তিকতার নামে এই সব বিদ্বেষী লেখা হয়েছে বাক স্বাধিনতা নামে, এক সময় আমরা এসবে সায়ও দিয়েছে - সমর্থনও করেছি। অনেক সময় ভাবিনি এসবই এক সময় আমাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হতে পারে, যা হয়েছে এবং হচ্ছে । এর মাধ্যমে আন্দোলনের দিক ও উদ্দেশ্যকে অনেকটুকুই ঘুড়িয়ে দেয়া গেছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই সব উগ্র নাস্তিক যাকে ব্লগাররা ছাগ নাস্তিক বলে তারা কি জামাতের পেইড এজেন্ট ছিলো ? দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনায় জামাত কি ব্লগ ও ব্লগার যারা সব সময়ই জামাত বিরোধীতায় সোচ্চার তাদের বিতর্কিত করার জন্য এসব করেছিলো ! সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
Self-Censorship is the most effective to practice Freedom of Speech everyday - Micheal Anti 

1 টি মন্তব্য :

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।