আমি বা আমরা অনেকেই
নিজের অতীত লুকোতে পছন্দ করি, এতে হয়তো সাময়িক প্রশান্তি পাওয়া যায়। অনেকেই নিজের পূর্বপূরুষ
আরব থেকে এসেছিলো বলে গর্ব বোধকরে। বড় গলায় যখন কেউ কেউ বলে তার দাদা - দাদার বাবা
'খান বাহাদুর ছিল তারা মনে হয় ভুলে যায় যে ,সারমেয় সুলভ বাধ্য অনুগত হয়ে ইংরেজদের আদেশ
পালন করে অবসরে যাবার সময় ইংরেজ শাষকরা তাদের একান্ত বাধ্যগত চাকুরেদের খান বাহাদুর
- রায় বাহাদুর উপাধী দিত এককালে।
অতীতের পূর্ব বাংলা
- আজকের বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত - উচ্চ বিত্তদের শ্রেনী উত্তরনের যাত্রা শুরু হয়েছিলো
মুলত বিংশ শতাব্দীর শুরুতে। লেখাপড়া শিখতে কৃষক পিতার সন্তানরা হাঁটা শুরু করেছিলো
শহরের দিকে, লেখাপড়া শিখে সরকারী চাকুরির স্বপ্নে। ৪৭ এ দেশভাগের পর মুসলমান বাঙালির
সামনে বিশাল সম্ভাবনা খুলে যায়, শিক্ষিত হিন্দু বাঙালিদের দেশ ত্যাগে তাদের সামনে
চাকুরির বাজার । সৎ - অসৎ পন্থায় শ্রেণী উত্তরন ঘটতে থাকে। কৃষক সন্তান শহুড়ে মধ্যবিত্ত
হিসেবে স্থান করে নেয়। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধিন দেশে মধ্যবিত্তের আবারো বিশাল
উত্থান ঘটে। বৈধ অবৈধ পথে অনেক মধ্যবিত্তই উচ্চবিত্ত পরিনত হয়। নিজেদের সন্তানদের বিজাতী
শিক্ষায় শিক্ষিত করে জাতে তুলবার আপ্রান চেস্টা থাকে এই শ্রেণীর। আচার আচরন ও প্রকাশে
অতীত লুকিয়ে নিজেকে অন্যভাবে দেখানোর আপ্রান চেস্টা থাকে এই শ্রেণীটির। অথচ জমির দলিল
ঘাঁটলে বা একটু পেছনে তাকালেই খুঁজে পাওয়া যাবে এই মানুষগুলোর পূর্বপূরুষ ছিলেন ভূমিপূত্র
কৃষক। আমি আমার দাদাকেই দেখেছি হাল চাষ করতে, এজন্য গর্ব বোধ হয় সবসময়ই।
ঢাকার বারিধারায় ধনি
মানুষগুলো আদেশ জারি করেছে যে বারিদারা এলাকায় রিকশাচালকরা লুঙি পড়ে রিকশা চালাতে পারবে
না, লুঙিতে নাকি শালিনতা নস্ট হয় - দেখতে খারাপ লাগে ! গরিব রিকশা চালকদের বাধ্য করা
হয়েছে ট্রাউজার পড়ে রিকশা চালাতে। নিজের বাসায় কে লুঙি পড়বে কে আন্ডি পড়বে সেটা স্বীদ্ধান্ত
নেবার স্বাধীনতা সবার আছে। কিন্তু সরকারী রাস্তায় বা পাবলিক প্লেসে লুঙি পড়ার নিষেধ
করবার কোনো অধিকার যে বারিধারার নব্য ধনিদের নেই সেটা বোঝার ক্ষমতা তাদের হয়নি। হাইকোর্ট
স্যুয়োমোটো জারি করেছে, দেখি এই ঠুনকো আভিজাত্যে ভোগা মানুষগুলো কি উত্তর দেয়। বারিধারায়
মূলত অবসর প্রাপ্ত সরকারী আমলারা থাকে। চাকুরিকালীন অবস্থায় তারা যেমন দেশকে নিজের
সম্পত্তি মনে করতো - অবসর নেবার পরও তাদের সেই মানোভাব পরিবর্তন হয়নি। সেই সাথে যুক্ত
হয়েছে নিজের অতীতকে অস্বীকার করার মতো হিনমন্যোতা।
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।