বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০১০

অভিজ্ঞতা বলে - চলমান ১

হ্যান্ড শেক শব্দটার বাংলা অনুবাদ করতে গেলে সেটায় আমরা করমর্দন বলি, যদিও সে সময় হাত 'মর্দন' করার সাথে সাথে ঝাঁকাঝাঁকিও চলে সমান তালে। হ্যান্ড শেক করবার সময় মানুষের আন্তরিকতা বোঝা যায়। আলতো ছোঁয়ার করমর্দনে আর যাও হোক আন্তরিকতা বোঝা যায় না, সেটা হয় নিতান্তই আনুস্টানিকতা বা লোক দেখানো ভদ্রতা। আবার তাই বলে প্রচন্ড জোরে কুস্তিগীরের মতো হাত চেপে এদিক ওদিক ঝাঁকালেও শরীরের সাথে সাথে মনেও চাপ ফেলে। আমি বাপু আর্ম রেসলিংতো করতে যাচ্ছি না।

চোখে চোখে কথা বলার মাঝে আত্নবিশ্বাসের সাথে সাথে ভদ্রতা ও কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ পায়। কোনো এক কালে এক ভদ্রলোকের সাথে আলাপ চারিতার সময় হঠাৎ লক্ষ্য করেছিলাম উনার চোখ আসে পাশে বার বার ঘুর পাক খাচ্ছে। অথচ সেদিনটা ছিলো আমার জন্য বেশ গূরুত্বপূর্ন একটি সময়। উনি মুখে বলছিলেন আমার সাথে কথা বলার জন্য উনি নাকি অধীর আগ্রহে সময় গুনছিলেন কিন্তু তার চোখ বলছিলো অন্য কথা। ২ সন্তানের জনক সেই ভদ্রলোকের চোখ বার বার ঘুড়ছিলো পাশের টেবিলে বসা সল্প বসনা দুই কিশোরীর দিকে !

শেখ সাদির সেই গল্পটার কথা আমরা সবাই অন্তত একবার হলেও শুনেছি। সেই পোষাক নিয়ে গল্পটার কথা মনে আছে না ? অভিজ্ঞতা বলে, শেখ সাদি ঠিকই বলেছিলেন। পড়নের "পোষাক" মানুষের কাছ থেকে সম্মান ও যত্ন আত্তি এনে দেয়। পোষাককে যদি রূপক অর্থে 'আর্থিক অবস্থার' সাথে তুলনা করি তবে দেখা যাবে যার যত আর্থিক অবস্থা ভালো সেই তত সম্মান পাচ্ছে, হয়তো দেখানো তবুওতো পাচ্ছে। গরীব বা তুলনামুলকভাবে দূর্বল মানুষটির দিকে তাকানোর সময় বা আগ্রহই কারো নেই। অথচ সেই মানুষটির অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে দৃশ্য বদলে যায়, তেলে মাথায় তেল দেবার জন্য সবার মাঝে অদৃশ্য প্রতিযোগীতা শুরু হয়। এ থেকে খুব কম মানুষই দূরে থাকতে পারে। অভিজ্ঞতা বলে, এই অল্প মানুষকে খুঁজে নিতে হয়, এরাই প্রকৃত মানুষ।

সমালোচনা করতে আমরা প্রচন্ড ভালোবাসী। এই আমার কথাই ধরুন না, সমালোচনা করার মতো ব্যক্তি বা বস্তু পেলেই হলো। মহা উৎসাহে নেমে পড়ি কোনো কিছু আগ পাশ না ভেবেই। অথচ কেউ নিজের সমালোচনা করলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি, আত্ম পক্ষ সমর্থন করবার নাম করে সেটার প্রতিবাদ করি। অভিজ্ঞতা বলে, সমালোচনা সহ্য করবার ক্ষমতা অর্জন করা অবশ্যই জরুরী , আর যদি সেটা হয় গঠনমুলক সমালোচনা। যদি কেউ ইচ্ছে করে নিরুৎসাহিত করবার জন্য সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা করে সেটা বোঝারও ক্ষমতা থাকতে হবে। নিজেকে পরের দর্পনে দেখবার ক্ষমতা থাকতে হবে। সমালোচনাকারীকে বন্ধু হিসেবে দেখলে অনেক ফায়দা হবে ( তাবলিগী ব্রাদারদের শব্দ ধার করলাম)।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।