সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০১০

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ৫

ফেসবুকে এক ছোটভাইয়ের আমেরিকা যাত্রার মুহুর্তে অনুভূতি পড়ে নিজের কথা মনে পড়ে গেলো। সেই অর্ধযুগ আগের কথা, অথচ মাঝে মাঝে মনে হয় এইতো সেদিন।

বাসায় আম্মু অনেক কিছু রান্না করেছিলো। কিছুই খাওয়া হয়নি। আম্মু বার বার এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছিলেন, আমি চেস্টা করছিলাম কিন্তু কিছুই খেতে পারছিলাম না। সবাই ফোন করছিলো মোবাইলে - ল্যান্ড ফোনে,  শুভকামনা - শুভ যাত্রা জানিয়ে। অপেক্ষা করছিলাম প্রিয় মানুষ/গুলো ফোনের। এক মুহুর্তে কথা শেষ করেই কস্টের মাত্রা যেনো বেড়ে যাচ্ছিলো। জীবনের অনেকটা বছর হোস্টেলে থাকলেও কেনো যেনো বাসা ছেড়ে যাবার কস্ট টুকু কখনোই কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এ এক অস্থির করা অনুভূতি।

বিমানে বসে মন প্রচন্ড খারাপ ছিলো। কখন যে বিমান সিংগাপুরে এসে পৌঁছেছিলো টেরই পাইনি। সময় মাঝে মাঝে খুব দ্রুত কেটে যায়। ট্টানজিট খুব কম সময়ের ছিলো। বলতে গেলে এক দৌড়ে এক বিমান থেকে আরেক বিমানে যাওয়া। ঢাকা থেকেই বোর্ডিং পাস নেয়া ছিলো, সেখানে দেয়া ছিলো গেট নাম্বার। প্রথমে ভেবেছিলাম গেট হয়তো কাছেই হবে। পরে দেখি সেটা প্রায় আধেক ঘন্টার দূরত্বে। এই হন্টন তো সেই দৌড়।

বিমানে উঠে দেখি এ যে আরো বিশাল বিমান। দু পাশে তিনটা করে সিট, মাঝে ৫ কি ৬ টা। আমার সিট পড়েছিলো ঠিক যেখানে খাবার দাবার রাখে সেই জায়গাটুকুতে।  খাবারের গন্ধটুকু বিরক্তকর ছিলো। কিছুক্ষন পরেই বিমান সিডনীর উদ্দেশ্য রওনা দিলো। খুব সকাল বেলা সূর্য যখন উঠি উঠি করছে তখন
‌আকাশে যখন বিমান বিশাল দুখানা পাখা মেলে উড়াল দিলো তখন মনে হচ্ছিলো বিমান কখন সিডনী পৌঁছুবে। কিভাবে কাটবে ৮ ঘন্টার দীর্ঘ সময় টুকু।  অনেকেই দেখছিলাম হেডফোন লাগিয়ে গান শোনার চেস্টা করছেন। আমার কিচ্ছুই ইচ্ছে হচ্ছিলো না।

আমার পাশের দু সিটে ছিলেন এক সুইস বয়স্ক কাপল। উনারা পৃথিবী ভ্রমনে বেড়িয়েছেন। ভদ্রলোক খুব ভালো ইংলিশ জানেন। অনেক আগ্রহ বাংলাদেশ সম্পর্কে। প্রথমে ভেবেছিলাম উনারা মনে হয় বাংলাদেশ চেনেনই না বা চিনলেও বন্যা - ঝড়ের দেশ হিসেবে চেনেন। এটা সেটা কত্ত যে আলাপ। ভদ্র মহিলা খুব কথা বলতেন। প্রথমে ভেবেছিলাম মনে হয় খুব মুডি মানুষ। দূপুরে খাবারের সময় যখন উনি উনার ডেজার্ট আমাকে এগিয়ে দিলেন তখন অবাক নয়নে উনার দিকে তাকাতেই উনি হেসে বল্লেন " মাই সান , ইটস ফর ইউ । উই অলসো হ্যাভ এ্যা গ্রান্ডসান লাইক ইউ এন্ড হি অলসো লাইকস ডেজার্ট এ লাট জাস্ট লাইক ইউ ‌"। আমি এখনো বুঝতে পারিনা উনি জানলেন কিভাবে যে আমি মিস্টি পছন্দ করি। পৃথিবীত মানুষের বাহিরের রঙ হয়তো ভিন্ন, ভিন্ন বিভিন্ন জিনিসে কিন্তু ভেতরে কোথায় যেনো একটা মিল রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।