ক্যাঙারুর দেশে আসার আগে আম্রিকা থেকে বেড়াতে আসা মামা তার বিখ্যাত কিশুরগইন্জা ডায়ালেক্টে জিজ্ঞেস করেছিলেন " কেমন লাগছে নতুন দেশ যাইতোছো ?" ।
'চ্যালেন্জিং', এক শব্দের উত্তর দিয়ে বলেছিলাম , হয়তো নতুন জীবন শুরু হবে।
আসলেই নতুন জীবন শুরু হয়েছিলো। প্রায় বন্ধু হীন , পুরো স্বজনহীন এক নতুন দেশ। যে জীবন এখনো চলছেই। মাঝে সাজে মনে হয় সব ছেড়ে ছুড়ে চলেই যাই দেশে। হয়তো চলেও যাবো হঠাৎ করেই; কোনো একদিন । কে জানে !
শর্ট হল বিমানে চড়া হলেও লং হলের বিমানে সেবারই ছিলো প্রথম বার। সিংগাপুর থেকে বিমানে উঠেই চোখ বড় হয়ে গিয়েছিলো। এত্ত বড় বিমান ! অনেকে হয়তো অবাক হতে পারনে আমার এরকম কথা শুনে, কিন্তু যে মানুষটি জীবনেও এত্ত বড় বিমানে চড়েনি সেতো অবাক হবেই।
ঢাকা বিমানবন্দরে কোনো সমস্যা হয়নি। সুটকেস ওজন করতে গিয়ে দেখি যে ওজন নেবার অনুমতি ছিলো তার চাইতে ২২ কেজি বেশী। তাড়াহুড়োয় এত ওজন হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি। কি আর করা, অনেক কিছুই ফেলে আসতে হয়েছিলো। খুব খারাপ লাগছিলো জিনিসগুলোর জন্য, কিছুই করার ছিলো না। ইমিগ্রেশন কখনোই আমার জন্য সমস্যা নয়, সেবারই ছিলো না। পুলিশের ছেলে হলে আলাদা সুবিধা পাওয়া যায় যেই সুবিধার রঙিন চশমায় ইমিগ্রেশন পুলিশের হয়রানি চোখে পরে না।
বিমানে উঠবার পর শুরু হলো কখন বিমান ছাড়বে।
এর মাঝে একটি কথা ইচ্ছে করেই বলা হয়নি। ঢাকা থেকে উঠা আমিই ছিলাম শেষ যাত্রি। অতিরিক্ত মাল বাদ দিয়ে স্যুটকেস গুছিয়ে - সব কিছু ওজন শেষ করে বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন যখন শেষ করছি তখন আমার নাম ধরে ডাকা হচ্ছে যাতে আমি বিমানে উঠি, সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। বিমানে উঠেই দেখি সবাই আমার দিকে বিরক্ত দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে। সেবার আমার জন্য ৫ মিনিট দেরী করেছিলো সিংগাপুর এয়ারলাইন্স।
রানওয়েতে বিমান যখন ছুটছিলো তখন মনে হচ্ছিলো এত্ত জোরে না ছুটলেই কি নয়। যখন বিমান মাটি ছেড়ে আকাশে উড়াল দিলো তখন মনে হচ্ছিলো শেকড় তীব্র কস্টের সাথে ছিড়ে যাচ্ছে। শেকড় ছেঁড়ার কস্ট বড্ড কস্টের। সিটের সামনের ছোট্ট স্ক্রিনে যখন দেখলাম দেশের সীমানা পের হয়েছি তখন খুব কস্ট লাগছিলো, হয়তো চোখে কিছু পানিও জমেছিলো।
আমি এখনো বাইরে কখনো স্থায়ী ভাবে থাকতে যাইনি,কিন্তু দেশকে ছেড়ে যাওয়ার সময় নিজেকে রিফিউজি মনে হয়েছে। সবার মনে এমন বোধ আশে - এমনটি এই পোস্ট পড়ার আগে মনে হয়নি, সাধুবাদ আপনাকে
উত্তরমুছুনএখন থেকে আপনার ব্লগ আমি আমার ব্লগ লিস্টে add করে দিয়েছি|
প্রথমেই অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য।
উত্তরমুছুনহয়তো সবারই এমনটি মনে হয় , কেউ প্রকাশ করেম কেউ করে না।
হ্যা ভাই " শেকড় ছেঁড়ার কস্ট বড্ড কস্টের"
উত্তরমুছুনআমিও শেকড় ছিড়তে যাচ্ছি মাস দুয়েক পর ... পড়ে মনটা খারাপই হলো।
উত্তরমুছুন