বুধবার, ৭ জানুয়ারী, ২০০৯

যেমনটি গেলো ২০০৮

বছরের শুরুতে অনেকেই অনেক রকম রেজুলেইশন করে থাকেন। কেউবা বাড়ী কেনার স্বপ্ন দেখেন, কেউবা বছর শেষে ব্যাংকের হিসেবের ওজন বাড়ানো, কেউবা বা নিজের শরীরের ওজন কমানো- বাড়ানো। একেকজন একেক রকম। হয়তো বছর শেষে হিসেব করতেও বসেন কি পেলাম আর কি পেলাম না। ডেবিট - ক্রেডিটের হিসেব হয়তো কখনো মেলানো যায় , কখনো না।

আমি ঠিক করি একজন পরিপূর্ন মানুষ হবার জন্য যে বিশাল ঘাটতি আছে নিজের মাঝে সেটা কিছুটা হলেও পূরন করবার। বিশাল কোনো টার্গেট বা গোল কখনোই সেট করি না, যেটা আমি ছুঁতে পারবো না। আর দশটা গড়পরতা মানুষের মতো বাঁধা ধরা কোনো কিছুতে নিজেকে বাঁধার ইচ্ছে হয় না। তবে ইচ্ছে হয় জীবনটাকে আরেকটু শান্তিময় করতে। সুখ-শান্তির মাঝে ফারাকটুকু কমিয়ে আনবার।

বছরের শুরুটা অন্যরকম ছিলো। প্রথমবারের মতো জীবনসংগিনীকে নিয়ে বর্ষবরন, হাজারো মানুষের মাঝে। বছরের শুরুতে দিনগুলো গদাই লস্করি চালে চলতে থাকলেই মাস গড়াতে থাকতেই ব্যস্ততা বেড়ে যায়। একঘেয়ে এক ব্যস্ততা। নতুনত্ব কিছু নেই।

ব্লগিং চালিয়ে গেলেও লেখার হার কমে এসেছে। কমিউনিটি ব্লগগুলোতে ঘোরাঘুরি বেড়েছে। তবে ক্লান্ত - স্রান্ত দেহে কোনো কিছুই লিখতে ইচ্ছে হয় না। নানান ঝামেলাও লিখতে দেয় না। তবে সবার লেখা পড়তে ভালো লাগে। বই পড়ার নেশাটা জাগিয়ে তুলবার চেস্টা করেছি, হয়নি। টিভি দেখার পরিমান বেড়েছে। চলতি ধারা মুভি দেখার আগ্রহ কমে এসেছে, নানান ধরনের - নানান স্বাদের মুভি দেখেছি। বাংলা গান, বিশেষ করে পুরোনো বাংলা সিনেমার গানের প্রেমে পড়েছি।

মার্চের কোনো এক মধ্যরাতে দেশ থেকে ফোনে দাদুর মৃত্যু সংবাদ শুনতে পেয়েছি। মন খারাপ করে পরের দিন অফিসে কিবোর্ডও গুঁতিয়েছি। কাউকে বুঝতে দেইনি। কেনো জানি আজ কাল সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করতে পারি। হয়তো মন প্রচন্ড খারাপ হয় কিন্তু কি অস্বাভাবিক ভাবে সবকিছুই স্বাভাবিক ভাবে সবকিছু মেনে নেই। আজ কাল মধ্যরাতের ফোন গুলোকে বড্ড ভয় পাই। এই বুঝি কোনো খারাপ সংবাদ এলো দেশ থেকে। ইচ্ছে হবে ছুটে যেতে কিন্তু যেতে পারবো না। কি ভয়ংকর স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন ! বছরের সবচাইতে বড় হাড়ানো আমার দাদুর মৃত্যু।

নিজের মাঝে পরিবর্তনটুকু টের পাচ্ছি। নিজেকে নিজের বিচারের দাড়িপাল্লায় উঠাবার সাহস করতে পারছি। আজকের সুমন আর ৬ বছর আগেরকার সুমনের মাঝে ফারাকটুকু টের পাই। মাঝে মাঝে এটা নিয়ে ভালো লাগে, মাঝে মাঝে নিজেকে নিয়েই ভয় হয়। ৬ বছর আগের সুমনের মাঝে যে কোমলতা ছিলো তার অনেকটুকুই আজ নেই। মানুষকে সে আজ সহজেই বিশ্বেষ করতে পারে না, কথার মার-প্যাঁচের মাঝে আসল অর্থ বের করতে চায়, কঠোরতে চলে আসছে তার মাঝে।

বেশ সামাজিক হয়েছি বলা যায়। একটা সময় ছিলো যখন শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। সব কস্ট বেদনা ভুলে থাকার জন্য সবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে শুধুই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা। বউ আসার পর এটা আর করা সম্ভব হচ্ছে না। আস্তে আস্তে সবার সাথে মিশতে চেস্টা করছি, চেস্টা করছি ঈদের নামাজ পড়তে, চেস্টা করছি বাঙালী কমিউনিটির অনুস্ঠানে যোগ দিতে। এখানে মানিক ভাইয়ের কথা না বল্লেই নয়। প্রিয় এই মানুষটির বাসায় দাওয়াত খেয়ে, উনাদের সাথে মিশবার সৌভাগ্য হয়েছে , যা ভুলবার নয়।

অক্টোবরের ৮ তারিখে আমার প্রথম সন্তান জম্ন হলো। সে এক অন্যরকম অনুভূতী, এ এমন এক অনুভূতী যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারা যায় না। সবকিছু কেমন যেনো বদলে যাচ্ছে। নতুন স্বপ্ন - নতুন কিছু করার তাগিদ - নতুন কিছু করার প্রেরনা। বছরের পাওয়া- না পাওয়া হিসেবের যতটুকু ঘাটতি ছিলো সন্তানের জন্ম তার সবটুকুই যেনো পূরন করে দিয়েছে। শত কস্টের মাঝেও ছেলের মুখের হাসি সব কিছু ভুলিয়ে দেয়। এটাই বছরের সবচাইতে বড় পাওয়া।

ক্রেডিট কার্ডের লোন শোধ করা সম্ভব হয়নি পুরোটা। ওজন কমানোর চেস্টা করেছি তবে কমছে না আবার বাড়ছেও না। মাথার চুল কমছে , হাহাহহাহা। চেহারা ভারিক্কি হয়েছে একটু, কথার স্টাইল পরিবর্তন ঘটেছে একটু। চাকুরীর উন্নতি হয়নি তেমন একটা, আয় বেড়েছে কিন্তু সেই হারে খরচও বেরেছে। অল্পতেই সন্তুস্ট থাকার চেস্টা করেছি।

কেউ যদি বলে হিসেব কি মেলাতে পারলে ?
আমি বলি, সব হিসেব কি মেলানো যায় বৎস ?

তবে সুখে আছি- শান্তিতে আছি। সবকিছু নিয়েই শান্তিতে আছি।

২টি মন্তব্য :

  1. হ। আমিও সামাজিক হয়েছি আর অনেক অনেক সামাজিকতা মেইনটেইন করছি। হা হা হা

    উত্তরমুছুন
  2. প্রথম বাবা হবার কারনেই ২০০৮ সালটি সারা জীবন মনে থাকবে। ওজন কমাবেন আশা করি ২০০৯ সালে।

    উত্তরমুছুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।