শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০০৮

বীরাঙ্গনা গুরুদাসীর জন্য একটি ভন্ড এলিজি

বীরাঙ্গনা গুরুদাসী তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাতের লাঠির আলতো বাড়ি মেরে আর এসে বলবেন না, ‘কেমন আছিস বাবা? ভালো আছিস তো? দে কয়ডা টাহা (টাকা) দে, তোরা না দিলি পাব কনে ক।’


স্বাধীনতার পর কোনো এক বিষন্ন দূপুরে বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত করে আমরা উনাদের ধন্য করেছিলাম, যথাসময়ে ভুলেও গিয়েছিলাম। দীর্ঘ ৩৭ টি বছর ধরে উনাদের কেউ হয়তো বীরাঙ্গনা গুরুদাসীর মতো ভিক্ষের ঝোলা হাতে আমাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেরিয়েছেন, কেউবা আত্নহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন আবার কেউবা আজো কস্টে নিভৃতে কাঁদেন। পাগলী বলে হয়তো অনেকের দিকেই ছুড়ে দিয়েছি ঢিল।

স্বাধীনতার জন্য নিজের সম্মান বিলিয়ে দিতে বাধ্য হওয়া এসব মানব সন্তানের খবর নেবার তাগিদ বা প্রয়োজন অবশ্য আমাদের নেই। আমরা উনাদের বীরাঙ্গনা বলে নিজেদের ধন্য করেছি কিন্তু সমাজে-পরিবারে গ্রহন করে নেইনি।

আজ পত্রিকার ভেতরের পাতার ছোট্ট কবরটি পড়ে কেউবা তাকে জননী ডাকছি, আমার মতো কেউবা ব্লগের পাতায় ভন্মামী করে এলিজি লিখে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছি কিন্তু জীবদ্দশায় কেউ তাঁদের খোঁজ নেবার প্রয়োজনটুকু বোধ করিনি। জীবিত অবস্থায় কিছু না করে মারা যাবার পরে এসব করা ভন্ডামী ছাড়া আর কি !

বীরাঙ্গনা গুরুদাসীর নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় না থাকাতে রাস্ট্রীয় সম্মান অবশ্য উনার ভাগ্যে জুটেনি। যে মানুষটি ৩৭ টি বছর কোনো সম্মান পাননি দেশের কাছ থেকে, সমাজের কাছ থেকে, আমাদের কাছ থেকে; তার কাছে একদিনের লোক দেখানো সম্মানে কি এসে যায়।

বীরাঙ্গনা গুরুদাসী ওপার থেকে তাকিয়ে অভিশাপ দিয়ে বলছেন " ধিক এই অকৃতগ্য বাঙালী জাতি"।

------------------------------
বীরাঙ্গনা গুরুদাসী  আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক( প্রথম আলো) , খুলনা

বীরাঙ্গনা গুরুদাসী তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাতের লাঠির আলতো বাড়ি মেরে আর এসে বলবেন না, ‘কেমন আছিস বাবা? ভালো আছিস তো? দে কয়ডা টাহা (টাকা) দে, তোরা না দিলি পাব কনে ক।’ সবার পরিচিত সেই অসহায় গুরুদাসী মন্ডল (৬৫) চিরবিদায় নিয়েছেন। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে নিজ বাড়িতে গত ৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে তিনি পরলোকগমন করেন। ছাব্বিশে মার্চ, ষোলই ডিসেম্বর, একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে আর তাঁকে দেখা যাবে না।
গুরুদাসীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে খুলনার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা কপিলমুনিতে হাজির হন। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রউফ, পাইকগাছার নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। একাত্তরের এই দিনে কপিলমুনি হাইস্কুলের যে মাঠে গণ-আদালত বসিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল, সেই মাঠেই গুরুদাসীকে শেষ শ্রদ্ধা ও সালাম জানায় মুক্তিযোদ্ধাসহ উপস্িথত সাধারণ মানুষ। এ দৃশ্য দেখে কপিলমুনির হাজার হাজার শোকার্ত সাধারণ মানুষ।
গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য পুলিশের একটি চৌকস দল উপস্থিত থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় গুরুদাসীর নাম না থাকায় তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়নি। তবে মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় পতাকা দিয়ে তাঁর মরদেহ আচ্ছাদিত করে পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে শেষ সালাম জানান। পরে কপিলমুনি শ্মশানঘাটে তাঁকে দাহ করা হয়।

২টি মন্তব্য :

  1. বীরাঙ্গনা গুরুদাসী এর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

    মাগো তুমি যত দিন বেচে ছিলে তোমার জন্য কিছুই করতে পারি নি। হয়ত খুলনা পাথে ঘাটে হয়ত কোন ফেরি ঘাটে কিংবা শহরের কোন ব্যস্ত ট্রাফিক সিগনালে হাত পেতে ভিক্ষা চেয়ে ছিলে আমার কাছে কিংবা তোমার অন্য কোন ছেলের কাছে। হয়ত দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়ে ছিলাম। হয়ত সে দিন তুমি একটা টাকার অভাবে এতটুকু ভাত খেতে পার নি।

    মা তুমি মরে গিয়ে একটি সাধারণ গার্ড অব অনার পাওনি, তুমি কি জান তোমার ধর্ষনকারীরা রোজ রোজ গার্ড অব অনার পায়,সরকারী গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে সাইরেন বাজিয়ে চলে।

    মা অভিশাপ দাও আমাকে। আগুনে মুখ পুড়িয়ে ফেলি।

    উত্তরমুছুন
  2. আর ৫০ বছর পরে ওনাদের নামও কেউ আর জানবে না! একটা পরিপূর্ণ লিস্ট নাই আমাদের!

    উত্তরমুছুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।