বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০০৮

ক্যানবেরার খেরোখাতা ১০

গত কিছুদিন দারুন ব্যস্ততা গেলো। রেসের পাগলা ঘোড়ার মতো চোখে ঠুলি বেঁধে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সব কিছু করবার আপ্রান চেস্টা। ব্যস্ততা উপভোগ করি কিন্তু মাঝে মাঝে বড্ড ক্লান্ত লাগে, মনে হয় ব্যস্ততা কবে কমবে? কবে একটু শান্তিমত ঘুমুতে পারবো ? ঘুমন্ত সন্তানের মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ভাবি ! আহ কি শান্তির ঘুম ঘুমুচ্ছে আমার বাবালা ! ইচ্ছে হয় শৈশবে ফীরে যাই। নিশ্চিন্তে মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমুই। অনেকদিন শান্তির ঘুম হয় না।

ছেলে আমার বড় হচ্ছে। দেখতে দেখতে কিভাবে যে ওর বয়স ১ মাস হয়ে গেলো ভাবতেই পারি না। আজ কাল হাসতে শিখেছে, স্বর্গীয় হাসি। ছেলের ফোকলা মুখের ভোকলা হাসি দেখলে সব কস্ট ভুলে যাই। মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকি ছেলের দিকে। মাঝে মাঝে নিজেকে চিমটি মেরে নিজের মনেই বলে উঠি, সত্যিই আমি বাবা হয়েছি।
অনেকদিন পর একটা মুভি দেখে আরাম পেলাম। Nyfes, গ্রীক মুভি। সিনোপসিসটা তুলে দেই একটু
"It is 1922, the year of the ASIA MINOR catastrophe, Greek men are at war and young Greek women (as well as from other impoverished countries) unable to find a husband are forced to accept arranged marriages and to emigrate in America where Greek men have emigrated before in search of jobs. They travel onboard King Alexander, a ship that does the regular transatlantic passing. All the brides-to-be have a picture and a name of the man they are going to marry. They are sad, leaving their country and family behind, but also apprehensive, trying to figure out their future life. The main characters are NIKH and NORMAN, who have the chance to get to know each other and whose lives are going to be affected by this trip." মুভির ট্যাগলাইনটা মনে ধরেছে " It's not a punishment to remember someone you love. The punishment is to forget "। একটা মুভি মনের মাঝে কতোটুকু নাড়া দেয় সেটা অনেকসময় আন্দাজ করা যায় না। মুভিটা অনুভব করতে হয়, মুভির গভীরে যেতে হয়। Nyfes এর থিম সংটা এখনো কানে বাজছে। ভাষা বুঝি না কিন্তু কেমন যেনো মন খারাপ করে দেয়া উদাস সুর।

নলেজ ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেমের বিশাল এসাইন্টমেন্টা মনের মাঝে এঁকে ফেলেছি। ডিসকাশন পেপারের উপর ভিত্তি করে এখন এর সামগ্রিক নকশা তৈড়ি করা সময়ের ব্যপার। এদিকে হাতে সময় কম। শুধু বানালেই হবে না ম্যানেজম্যান্টকে খুশি করাতেও হবে। আবার সেই রেসের ঘোড়ার মতো চোখে ঠুলি বেঁধে রেস ট্ট্যাকে দৌড়ুতে হবে। কিন্তু, এত কস্টের ফল কি পাবো !? ইনশাল্লাহ।

আজ পোলাও রাঁধলাম। আফসোসের ব্যপার, আজো নরম হয়ে গিয়েছে। পানি কতটুকু দিতে হবে সেটার হের ফের করি ফেলছি আজ কাল। অথচ আগে এটা হতো না একদমই। পোলাওয়ের সাথে লালচে ঝাল মুরগী ভুনা , ফ্রেন্চ ড্রেসিং দেয়া কাঁচা-পাকার টমাটোর সালাদ। অনেকদিন পর বেশী খাওয়া হয়ে গেলো। নড়তেও পারছি না। ওপস........

আদার ব্যপারির মতো অর্থনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর চেস্টা করি মাঝে সাজে। আজ সাব প্রাইম মর্টগেজ ক্রাইসিস নিয়ে বউয়ের ছোটখাটো লেকচার শুনে জিনিসটা বেশ পরিস্কার হলো। স্টক মার্কেটে কোনো স্টক না থাকলেও স্টক এক্সচেন্জের ইনডেক্স নিয়ে আগ্রহ দেখাই যদিও স্টক সম্পর্কে কিছুই বুঝি না। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিও ভালো যাচ্ছে না। অজি ডলারের ডাল হুহু করে কমে যাওয়াতে একসময় আবিস্কার করলাম নিজের আয় মাসে ৫০ হাজার টাকা কমে গিয়েছে। দেশে টাকা পাঠাতে হলে অতিরিক্ত ডলার পাঠাতে হবে কিন্তু আয়তো বাড়েনি একবিন্দু, ১ মাস আগে যা ছিলো সেই রয়ে গিয়েছে। শাঁখের কড়াতের মতো অবস্থা। এদিকে জিনিস পত্রের দামও বাড়ছে। সংসার করতে এসে এখন হারে হাড়ে বুঝতে পারছি স্বল্প ও নির্দিস্ট আয়ে কি কস্টেই না আমার বাবা-মাকে সংসার চালাতে হয়েছে।

এখানে এখন বসন্ত। এদিক সেদিক বেড়াতে গেলে দারুন লাগে। সবকিছুতেই তারুন্যের ছোঁয়া। গাছে গাছে নতুন পাতা, হরেক রকমের বাহারী ফুল। দারুন লাগে। সন্ধ্যা নামার পর হাঁটতে বেরুলেই ফুলের সুবাস ভেসে আসে। মনটা কেমন জানি উদাস হয়ে যায়। অনেক ছোট বেলা রংপুরে এক বাসায় সবাই মিলে ভাড়া থাকতাম। সে বাসার পাশেই একটা কামিনী ফুলের ঝাড় ছিলো। কিছু দিন আগে সন্ধ্যায় হাঁটবার সময় মনে হচ্ছিলো কোথায় যেনো কামিনী ফুল ফুটেছে। ধুর ছাই, এই পান্ডব বিবর্জিত দেশে কামিনী ফুল আসবে কোথা থেকে !

আজ সকালে এক কাবুলীওয়ালার সাথে কথা হচ্ছিলো। একগাদা আফগান এম.পিকে অস্ট্টেলিয়ান সরকার কাবুল থেকে ক্যানবেরায় উড়িয়ে নিয়ে এসেছে গনতন্ত্র শেখাবার জন্য। হায়রে গনতন্ত্র ! এভাবে কি গনতন্ত্র শেখানো যায়? তাও আবার কাবুলীওয়ালাদের যারা গনতন্ত্রের স্বাদ পায়নি হাজার বছর ধরে। নিজের দেশের কথা ভাবছিলাম সে সময়। আমাদের দেশেও গনতন্ত্রের নামে এক অদ্ভুত রংগলীলা চলছে। পতিত স্বৈরাচারের সাথে জোট করে নির্বাচন, স্বাধীনতা বিরোধী পশুদের সাথে জোট করে নির্বাচন, ধর্ম ব্যবসায়ীদের সাথে জোট করে নির্বাচন। খেলারাম খেলে যায়, দেখারাম দেখে যায়। দেখছিতো দেখছিই। গতকাল ছিলো শহীদ নুর হোসেন দিবস। আচ্ছা, শহীদ নুর হোসেন অন্য জগত থেকে কি অবাক হয়ে দেখছে না তার রক্তদানের কি অসাধারন প্রতিদান ?

আজ বিকেলে সম্তাহের বাজার সদাই করে বাসায় ফিরছিলাম। বাসার কাছেই দারুন সব দামী রেস্টুরেন্টের বিশাল হাট। ফিরতি পথে দেখলাম একটা পরিবার রেস্টুরেন্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে মেনু দেখছে। আমি দেখছি তাদের চোখ। কি অপার আগ্রহ নিয়ে তারা মেনু দেখছে কিন্তু চোখে একরাশ হতাশা। শখ আছে, সাধ্য নেই। এরকম চোখ দেখলে কস্ট লাগে, বুকের মাঝে কেমন জানি খচ করে উঠে। ইচ্ছে হচ্ছিলো ছুটে গিয়ে বলি " কি খেতে চাও, আমি খাওয়াবো" । হয়ে উঠে না, এখানেও সাধ ও সাধ্যের বিরোধ।

বাহিরে বেশ ঠান্ডা পরেছে। এই এক অদ্ভুত আবহাওয়া এখানকার। দিনে প্রচন্ড গরম কিন্তু রাতে ঠান্ডা। এসিতে মনে হয় জমে যাচ্ছি, হিটার ছাড়লে মনে হয় সওনায় সেদ্ধ হচ্ছি। ধ্যাত্তারি, জীবনটা লাইফ হয়ে গেলো।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।