রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০০৮

ক্যানবেরার খেরোখাতা ৮

বেশ অনেকদিন পর লিখতে বসছি। আজকাল কি যে হয়েছে আমার, নিজেই সেটা বুঝতে পারি না। লেখকরা অনেক সময় বলে থাকেন " লেখা আসছে না ", ক্রিকেটাররা বলে " ফর্ম নাই " । আমি লেখকও নই, ক্রিকেটারও নই ; একজন সাধারন ব্লগার মাত্র । আজকাল একদমই লিখতে ইচ্ছে হয় না। এটাকি অলসতা ? মনেতো হয় না। ব্যস্ত দিন শেষ করে যখন বাসায় এসে কিছুই করতে ইচ্ছে হয় না। নিত্যকার অভ্যাস বসত সন্ধ্যায় পিসির সামনে বসি, বন্ধুদের সাথে আন্তর্জালিক আলাপ চারিতায় মেতে উঠি, একটু আধটু আন্তর্জালিক জগতে ঘোরাফেরা করে পিসি বন্ধ করে ঘুমুতে যাই। সকালে উঠে সেই নিত্যকার জীবন। আমার এক বিলাত প্রবাসী বন্ধু বলে এ জীবনকে বলে ' ডগি লাইফ '।

ক্যানবেরায় প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে। প্রথম যেবার এসেছিলাম তখনকার কথা মনে পরে সবসময়ই। সেবার সামান্য ঠান্ডাতেই কাঁপুনি দেখে সবাই বলেছিলো " বাপু, সবেতো শুরু ! শীত আসতে এখনো ৪ মাস বাকি। শীত আসুক, তখন বুঝবে মজা"। মজা পাওয়া হয়নি আদৌ। ইলেকট্রেসিটি বিল বাঁচাতে হিটার ব্যবহার করা হতো কম, সারা রাত সেই রকম ঠান্ডায় জমে যাবার উপক্রম হতো। এখন বাসায় সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেম। ঠান্ডা বোঝার উপায় নেই একদম। সময় বদলেছে, জীবনও বদলাচ্ছে খুব দ্রুত।

বাসার খুব কাছেই মানুকা ওভাল। অবশ্য এরা বলে মানেকা ওভাল । কথায় আছে না মক্কার লোক হজ্ব পায় না। বাসার এতো কাছে মানুকা ওভাল কিন্তু খেলা দেখতে একবারো সেখানে যাওয়া হয়নি। গত কমাস আগে ভারত-শ্রীলংকা ক্রিকেট হলো, যাওয়া হয়নি। আজ ছিলো সিডনী সোয়ানের সাথে ওয়েস্টার্ন বুলডগের ফুটি ম্যাচ ,যাওয়া হয়নি। আমি অবশ্য ফুটি বা রাগবি কোনোটাই ঠিকমতো বুঝতে পারি না। তবে রাগবিটা একটু ভালো লাগে। বেশ মারদাঙা খেলা। মারদাঙায় আবার আমার বিশেষ দূর্বলতা আছে।

সকালে উঠেই যে কাজটি করা হয় সেটি হলো দেশের খবরের কাগজগুলোতে চোখ বুলানো। মন খারাপ করা সব খবরের মাঝে ভালো খবর খুঁজতে থাকি। তেমন একটা অবশ্য পাওয়া হয় না। কুয়েত থেকে এক কাপড়ে ফেরত আসা বাংলাদেশী ভাইদের খবর পড়ে মনটা প্রচন্ড খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রক্তমাখা শরীরে লোকগুলোর কান্নামাখা অসহায় চেহারা দেখে রাগে-ক্ষোভে-কস্টে চিৎকার করে অনেককিছুই বলতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু পারি না। পত্রিকার পাতায় যখন পড়ি, দূতাবাসের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের নির্লিপ্ত আচরন তখন ইচ্ছে হয় সেই বরাহ নন্দনদের পশ্চাত দেশে কষে লাথি মেরে বলি " কুত্তাকি আওরাত, তোগো বেতনতো আমগো ট্যাক্সের টাকা থেইকাই আসে, সেইটা কি ভুইলা যাস ? হারামখোরের দল "। দেশের রাজনীতির খবরগুলোকে চাইল্ড পর্নের মতোই চরম অশ্লীল বলে মনে হয়। ইচ্ছে করেই এসব আবর্জনা পড়া এড়িয়ে যাই। দেশটা কি নিয়ে কিছু ভন্ড ভাঁড় পিংপং খেলছে, আমরা আমজনতা হচ্ছি সেই পিংপং বল। খেলার বল হিসেবে আমরা দারুন; পিঠে সয় , প্রানেও সয়।

সকালে উঠেই শুনতে পেলাম, আজ নাকি বন্ধু দিবস। এক সময় এসব দিবস-টিবস বেশ ঘটা করে পালন করা হতো। কার্ড-ইমেইল-এসএমএস এ বন্ধু দিবসে বার্তা আদান প্রদান করে আর্চিস-হলমার্ক -গ্রামীনের লাভের অংশ বেশ বাড়িয়েছিলাম। এখন কোনো দিবসও পালন করি না। বছরের সব দিনই আমার জন্য বন্ধু দিবস, বছরের সব দিনই আমার জন্য মা দিবস বা বাবা দিবস। সবাইকে নিয়ে ভালোবেসে আনন্দে কাটাতে চাই বছরের প্রতিটি দিন।
পরিবারে নতুন অতিথি আসছে। একটা স্বপ্ন। আমাদের ভালোবাসার ফসল। উনার জন্য অবশ্য কেনাকাটা কিছুই শুরু করা হয়নি। এ মাস থেকেই টুকটুক করে কেনা কাটা শুরু করবো বলে ভাবছি। আপাতত লিস্ট করছি, লিস্টের আকৃতি প্রতিদিনই বারছে। দেখা যাক সেটা কত বড় হতে পারে।

1 টি মন্তব্য :

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।