শনিবার, ১০ মে, ২০০৮

ক্যানবেরার খেরোখাতা ৪

১.
সরকারের খাতায় এখনো হেমন্তকুমারের নাম লেখা থাকলেও ক্যানবেরায় শীতল রায়ের পদধ্বনি ভালো ভাবেই শোনা যাচ্ছে। দূরের পাহাড়ে বরফ পড়ছে শুনেই কনকনে ঠান্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে। গরম দেশের মানুষ বলেই হয়তো একটু শীতেই কাবু। প্রথম যখন এই বুনো শহরে এসেছিলাম তখনকার কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠি।চরম অর্থ ও মনোকস্ট হতে বাঁচার জন্য একটু উষ্ণতার খোঁজ যখন করছিলামে শীত তখন জাঁকিয়ে বসে জীবনটাকে জমিয়ে দিচ্ছিলো। সময় বদলেছে, জীবন বদলেছে , অবস্থা বদলেছে কিন্তু অনুভূতি বদলালো না।

২.
গত ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি সরকারের "সিভিল পার্টনারশীপ বিল" আটকে দিয়েছিলো সে সময়কার লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন সরকার। নামে সাথে লিবারেল থাকলেও মুলত এরা রক্ষনশীল, 'কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন'। এবারেও এরকমটি চেস্টা চালিয়েছিলো এখানকার স্থানীয় সরকার। তবে এবারের বাধা এসেছে নিজ দল থেকেই। যদিও বর্তমান ক্ষমতাশীল লেবার সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিলো তার রাজ্য ও আন্চলিক সরকারের স্থানীয় আইনে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না। তবে ক্ষমতার বাহিরে বসে অনেক কিছুই বলা যায় কিন্তু ক্ষমতায় এসে সেটা মানা যে কত কঠিন সেটা বোঝা যায়। বোঝো রাড বাবাজি।"সেম সেক্স সিভিল ইউনিয়ন" পাশ না হওয়াতে রক্ষনশীলরা যেমন খুশি তেমন চরম নাখোশ সমকামিরা ও তাদের প্রতি রক্ষনশীলরা। সময় বদলেছে, পোষাক বদলেছে, ঘোড়ার ডাকের পরিবর্তে তড়িৎ ডাক এসেছে কিন্তু মননে পরিবর্তন আসেনি।

৩.
গত সপ্তাহে নার্গিসের ভয়ে ভীত ছিলাম। সিডরের পর আর কাউকে চাইনি। সে নার্গিস হোক আর চামেলীই হোক। ভাগ্যিস একটু বাঁক খেয়ে বার্মায় তোলপার তুলে নার্গিসের নৃত্য থেমেছে। নৃত্য শেষে রেখে গিয়েছে ধ্বংস - মৃত্যু। মৃতের সংখ‌্যা একেক জন একেকটা বলছে। নার্গিসকে নিয়ে সবাই ভয়ে থাকলে তা বার্মার সামরিক সরকারকে ভীত করেনি। এইনা হলে ফৌজ ! ডার নেহি। চরম অপ্রস্তুত সামরিক জান্তার এই চরম অপ্রস্তুতির মাশুল দিলো হাজারো নিরীহ মানুষ। এদিকে এত কিছুর পরো বার্মায় কিন্তু থেমে থাকবে না প্রহসনের নির্বাচন। সামরিক জান্তাদের বুদ্ধিমত্তা সবখানেই মনে হয় একই রকম। আমাদের দেশেইতো একপাল সামরিক ছাগল দেখা যাচ্ছে। সারা পৃথিবী- সারা দেশ যখন খাদ্যসংকটের মুখোমুখি তখন জেনারেল মইন চালের দোকানে সারি সারি চালের বস্তা দেখে বলে " কোথায় খাদ্য সংকট , দোকানে দোকানে চালের অভাবতো নাই, সব মিডিয়ার স্মৃস্টি"। আস্ত ছাগল একটা।

৪.
বাঙালী আড্ডায় নিরব শ্রোতা হয়ে থাকতেই ভালোবাসী। যেখানে সবাই বলতে চায়, কেউ শুনতে চায় না। আমার মতো শ্রোতা পেলেতো সবাই খুশি হবেই। ১/১১ এর পর অনেককেই খুশিতে বাকবাকুম হতে দেখেছিলাম। - "যাক বাবা , দেশে এতদিনে শান্তি এলো", "পাবলিককে ডান্ডার উপরে রাখতে হবে", " মাইরের উপর ভিটামিন নাই " ইত্যাদি অখাদ্য বাক‌্য শুনতে হয়েছে বিভিন্ন আড্ডায়। এই সব লোককেই এখন বলতে শুনছি " ইলেকশন আদৌ হবে ?" , "কবে? " , " শালার আর্মিরা দেশটাকে শেষ করে ফেলছে "।একই অংগে বহুরুপ।

৫.
এ সপ্তাহে নিজের জীবনে তেমন বিশাল কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সামনে একটা চ্যালেন্জিং সময় আসছে, আপাতত সেটার প্রস্তুতিতেই ব্যাস্ত। আন্তর্জালিক খেরোখাতা বলেই এখানে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কিছুই লেখা হবে না সংগত কারনেই।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।