সোমবার, ৩ মার্চ, ২০০৮

মুক্তিযোদ্ধা ও আমার হতাশা

"প্রতিরোধের মার্চঃ আমি মুক্তিযোদ্ধা বলছি" প্রথম আলোর এই সিরিজটা প্রথম থেকেই মন দিয়ে পড়ছি এবং মন খারাপ হতে খারাপতর হচ্ছে। শুহুরে কলমসৈনিকের গোছানো বক্তিমা বা সুশিল শ্রেনী হতে উঠে আসে কোন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারন পড়ে এতদিন যে সত্যকে সত্য জানতাম সেটাই অনেকটুকুই ফিকে হয়ে আসে এসব স্মৃতিচারন পড়লে। গ্রাম- গন্জের প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারন মফস্বল সাংবাদিকদের লেখনিতে উঠে আসছে।

এক বছর আগের কথা। অকাল প্রয়াত "সিলেট প্রতিদিন" পত্রিকায় প্রকাশিত ব্লগার নজমুল আলবাবের কিছু প্রতিবেদন পড়েছিলাম। নজমুল বলতেন " মামু, লিংকটা দিলাম একটু পইড়েন ।" পড়তাম এবং কস্ট পেতাম। নজমুলকে বলতাম না, নজমুলের লেখনীতে যে কস্ট প্রকাশিত হতো সেটা বলে তার কস্ট বাড়াতে চাইতাম না। তার লেখায় যে লজ্জাকর সত্য প্রকাশ পেতো এখনকার প্রতিবেদেন গুলো পড়ে সেই একই সত্য প্রকাশে বিবেকের দংশনে ভুগি।

৭১ যে সাহসী কিশোর বা তরুন অস্ত্র হাতে জানের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো সেই কিশোর বা তরুন বার্ধক্যে এসে এখনও যুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধটা পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে না হয়ে সেটা এখন জীবন সংগ্রামের। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৬০০ টাকা ভাতার জন্য তাদের বারান্দায় লাইনে দাঁড়াতে হয় , এই ৬০০ টাকায় কি একটা মানুষের জীবন চলে? এমনতো নয় যে তাদের অনেক অর্থসম্পদ, ৬০০ টাকা কিছুই নয়। এই ৬০০ টাকাই বেশীরভাগ মুক্তিযোদ্ধার একমাত্র সম্বল। অবশ্য অসংখ্য এবং বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধার ভাগ্যে সেটাও জোটে না।

বছরের বেশীর ভাগ সময়ই পত্রিকার ভেতের পাতাগুলোতে এরকম অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়। যখন একজন ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা তার সন্তানকে ধর্ষনের হাত হতে বাঁচাতে ব্যার্থ হয়ে চিৎকার করে কাঁদেন তখন হয়তো আমরা একটু দূঃখিত হই, পরমুহুর্তেই সেটা ভুলে যাই দেশের রাজনীতি নিয়ে প্রকাশিত পর্ন সংবাদগুলোতে মুগ্ধ হয়ে। একজন মুক্তিযোদ্ধা রিকশাচালক বা ভিক্ষের ঝুলিহাতে সংবাদগুলো আবেগময়ী হলেও সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ভাবার সময় সবার নেই। এগুলো শুধুই দারুন নিউজ আইটেম।

মার্চ এসেছে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে ও হবে। ৭ই মার্চ আসছে, তখন মুক্তিযুদ্ধের জায়গা নেবে বংগবন্ধুর ভাষণ, ২৬ শে মার্চ আসলেই শুরু হবে স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক। পত্রিকাগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। মুক্তিযুদ্ধের ব্যক্তিগত ও বাস্তব অভিগ্যতা বন্চিত বিখ্যাত সব লেখকরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প-উপন্যাস লিখবেন, কেউবা কবিতা। আমরা মন দিয়ে সেগুলো পড়বো।

কিন্তু সেই সব সাহসী মানুষদের কথা ভাবার সময় হয় বছরে দুটো মাস, বিজয়ের ডিসেম্বর ও প্রতিরোধের মার্চ।
----------
লেখাটি আমার প্রিয় বিষন্ন মানব "নজমুল আলবাবকে" উৎসর্গ করে।

1 টি মন্তব্য :

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।