রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০০৭

ব্লগীয় সালতামামি ২০০৭

এক বছরের বেশী সময় ধরে সামহোয়্যারইনের "বাঁধ ভাঙার আওয়াজ" ব্লগের সদস্য। ঠিক মনে নেই কি ভাবে এ ব্লগের সন্ধান পেয়েছিলাম, খুব সম্ভবত গুগলের সার্চ করতে গিয়েই! ভালোলাগা থেকেই শুরু। লেগে আছি ব্লগেই হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও।

১।

বাংলায় টাইপ করার কোনরকম পূর্ব অভিগ্যতা না থাকায় প্রথম প্রথম প্রচন্ড সমস্যা হতো। ৩ শব্দের এক বাক্য টাইপ করতে সময় লাগতো ৩ মিনিট। হাঁটি হাঁটি পায়ে পায়ে শুরু করলাম লেখা। এ সময় বেশ সাহায্য পেয়েছিলাম ব্লগার এস এম মাহবুব মুর্শেদের কাছ হতে। তার উদ্ভ্রান্ত ইয়াহু থেকে বিশাল এক মেইল পেয়েছিলাম যা অনেক কাজে এসেছিলো। অনেক কৃতগ্যতা মামুর কাছে।
প্রথম পোস্টের প্রথম কমেন্ট ছিলো শাওনের কাছ হতে, যা পরে অতিথি হয়ে গিয়েছিলো সামহোয়্যারইনের ইউনিকোড কারসাজিতে। কৃতগ্যতা শাওনের কাছ হতেই। শাওনের হাত খুলে লিখে যাবার আহবানে সারা দিতে গিয়ে হাত-পা-মুখ খুলে সেই যে লেখা শুরু করলাম, সে লেখা চলছেই। মাঝে সাজে ব্যক্তিগত-পেশাগত-পড়াশোনা-সাংসারিক ব্যস্তাতায় লেখার চেষ্টা কমে গেলেও বন্ধ থাকেনি।

২।

ব্লগের মাধ্যমে অনেকের সাথেই পরিচিত হবার সৌভাগ্য হয়েছে যা ব্লগের না আসলে কখনই সম্ভব হতো না।
জামাল ভাস্কর, মৌসুমের মতো সাহসী ও সাদা মানুষকে পেয়েছিলাম ব্লগের মাধ্যমেই।
প্রত্যুৎপন্নমতিত্য এবং তিমুরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ব্লগের মাধ্যমেই, ব্লগের মাধ্যমেই বন্ধুত্বের সুচনা যা ব্যক্তিগত জীবনেও বন্ধুত্বের সূচনা করেছে।
শুভ ভাইয়ের মমতা-ভাতৃত্ব-ভালোবাসার সন্ধান পেতামই না যদি ব্লগে না আসা হতো।
গুরু আরিফ জেবতিকের স্বেচ্ছা শীষ্যত্ব গ্রহনও ব্লগের মাধ্যমেই।
ঝড়ো হাওয়ার বাসায় গিয়ে মমতা-ভালোবাসার আঘাতে জর্জরিত হবার সৌভাগ্য হতো না ব্লগে না আসলে।
ভাস্করদার বাসায় রাগইমনের সাথে সামনা সামনি দেখা করার সৌভাগ্য-দূর্ভাগ্য দুটোই হয়েছে, মনে হয়েছে ভদ্রমহিলা খোলা মেলা মনের হলেও মাথায় কিন্চিত সমস্যা আছে।
ব্লগ জীবনের প্রথম অংশগুলোতে কৌশিকদার গালা-গালীতে জর্জরিত হতে হলেও সেই মানুষটির হাস্যজ্বল আচরনের সাথে পরিচিত হতে পারতাম না ব্লগে আসলে।
অন্ধকার ভাইয়ের সাথে দেখা হবার সৌভাগ্য ব্লগের মাধ্যমেই। আজিজের অন্তরে উনার সৌজন্যে পেটপূজা বা শর্মা খাবার কথা ভুলো কি ভাবে? ত্রিভুজ ছাগলের সাথে পরিচিত হবার সময় আবিস্কার করলাম দুপেয়ে একজন কিভাবে ব্লগে ছাগলের মতো আচরন ও লেখা লেখি করতে পারে। আস্তমেয়ের সাথে পরিচয় ব্লগে, সামনাসামনি দেখাও হয়েছে। তাকে দেখে অবাক হয়েছি একজন মানুষ কিভাবে ইসলামকে জামাতে ইসলামীর সাথে গুলিয়ে ফেলে এবং কিভাবে বিভ্রান্ত হয়ে যায় !! ছোট বোনের মতো দেখি আস্তকে,যদিও তার রাজনৈতিক চেতনার সাথে আপোষ করার দূর্ভাগ্য কোনোদিনই হবে না।
মাশা, আবু সালেহ, জানতে চাই, মাশিদের সাথে পরিচিত হলেও আলাপ করা হয়নি।
ফয়সাল আরেফিন "অণৃন্যের" সাথে দোস্তালী থাকলেও তার সাথে দেখা করতে পারিনি দোস্তের কোন এক অজানা কারনে।
আড্ডাবাজের সাথে দেখা করার থাকলেও উনার ডিগবাজীতে সেটা সম্ভব হয়নি।
অনেক শখ ও স্বপ্ন ছিলো বিষন্ব মানব নাজমুল আলবাব মামুর সাথে দেখা করার জন্য সিলেট যাবো, সম্ভব হয়নি। মনের টান যখন রয়েছে তখন ইনশাল্লাহ দেখা হবেই মামু ও উনার বাবাইয়ের সাথে।
আর অনেকের সাথেই আলাপ আছে মেসেন্জারে, ঘনিস্ঠতা হয়নি।
অনেকের সাথেই ফোনালাপ হয়েছে , যেমন; জ্বীনের বাদশা, ইরতেজা।

৩।

ব্লগে আসা মুলত বাংলার প্রতি পাগলপরা টান থেকেই। বাংলা লেখা ও পড়া থেকে দূরে থাকার যুগের বেদনা কিছুটা হলেও দূর করেছে বাঁধ ভাঙার আওয়াজ ব্লগ। ব্লগে মুলত লেখেন শখের অপেশাদার লেখকরা (যারা ব্লগার হিসেবেই পরিচিত হতে ভালোবাসেন ) যাদের অনেকেই প্রবাসী। দেশে বসেও অনেকেই লিখছেন। মনের যা আসে তাই লেখার চেষ্টা করেছি। হয়তো আনাড়ী সব লেখা মানোর্ত্তীন্ন হয়নি, তবুও নিজের স্মৃষ্টিতে নিজেই মুগ্ধ হয়েছি।



চার



অণৃন্য, বিপ্লব রহমান, মাসুম ভাইয়ের জীবন্ত সংবাদ প্রবাহ যেমন তাৎক্ষনিক সংবাদ পেতে সাহায্য করে ঠিক তেমনি আরাফাতুলের হেবো গল্প বেশ মজা দেয়।
তবে ব্লগে তথ্যবহুল লেখার প্রচুর অভাব লক্ষ্য করেছি। তারপরো অনেক লেখা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে যা ব্লগে না আসলে কখনই সম্ভব হতো না।
আরিফ জেবতিক, শুভ ভাইয়ের আষেগময় কিন্তু কঠিন যুক্তিময় লেখাগুলো পড়তে পেরেছি। ভ্যালেরি মুভমেন্টের সময় আরিফ জেবতিকের লেখা ও নেতৃত্ব মনে থাকবে অনেক কাল।
জামাল ভাস্কর সম্ভবত ব্লগের একমাত্র বামপন্থি, ‌উনার অনেক লেখাই মাথার উপর দিয়ে গেলেও ভাবার প্রেরনা যুগিয়েছে প্রতিনিয়ত। রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে উনার স্পস্ট অবস্থান ও কথন ভালো লেগেছে। প্রথম অবস্থায় একবার রাপাং খাপু নামে এক ব্লগারের সাথে উনার বিতর্ক উপভোগ করেছি অনেক।
পিয়াল ভাই এবং হাসান মোরশেদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা তথ্যবহুল লেখাগুলো সবসময় নিজের চেতনাকে জাগ্রত করতে সাহায্য করেছে। তবে মতের মিল না থাকায় এদের অনেকই আমাকে জামাতপন্থি বা সন্দেহভাজন বা মোল বলেছেন যা নিজেকে অনেকটুকুই আহত করেছে ( সম্ভবত এ ধারনা উনারা এখনো ধারন করেন !)।
তীরন্দাজ ভাইকে আমার প্রচন্ড সাদা মনের, বাস্তবমুখী , সাহসী ও সচেতন ব্লগার বলে মনে হয়েছে, যা তার ভক্তে পরিনত করেছে।
কৈশরের স্বপ্নের লেখক মাসকাওয়াথ আহসানকে ব্লগে পেয়ে কৈশরকে ফীরে পাই প্রতিনিয়ত।
সাদিকের কিছু লেখা ভালো লাগলেও তার কিছু লেখা তার অপরিপক্কতার প্রমান করেছে।
পাগলা হোসেইনের স্পস্ট বচন মুগ্ধ করে প্রতিনিয়ত। আমি যে তার এক ফ্যান সেটা মনে হয় সে জানে না ! আজ জানালাম।
ফাহমিদ ভাইয়ের পুরাতন লেখাগুলো নতুন করে পড়ার সৌভাগ্য হচ্ছে।
মিরাজ ভাইয়ের লেখা পড়ছি।
ডটেড রাসেলের রাসেলের লেখক ক্ষমতায় মুগ্ধ হই যদিও এই মানুষটি ব্লগ জীবনের প্রথম অংশে নোংড়া গালাগালী করে কস্ট দিয়েছিলো অনেক যা কখনই ক্ষমা করতে পারবো না। ডটেড রাসেলের মাঝে লেখক ক্ষমতায় ইর্ষান্বিত হয়েছি সব সময়ই, তবে এ প্রতিভাকে মনে হয় সে নিজেই ধ্বংশ করে ফেলছেন।
কৌশিকদা বা আড্ডাবাজের লেখা স্বভাবসুলভ মধ্যবিত্ত সুলভ। সময়ে আগুন ঝড়ালেও সেটা সময়মতোই গর্তে লুকিয়েছে। জলপাই শাষনের প্রারম্ভে আরিফ জেবতিক বা জামাল ভাস্করের স্পস্ট অবস্থান দেখা গেলেও আড্ডাবাজ বা কৌশিকের মতো ব্লগারকে চুপ মেরে থাকা অবাক করেনি।
মুখফোরের লেখাগুলো আসলেই মারাত্মক তবে মুখফোরের পেছনের লেখককে কেনো জানি ভালো লাগেনি কখনই।
সুমন চৌধুরি ওরফে সাধক শংকুর রাজনৈতিক লেখার সাথে সাথে বিভিন্ন রসালো রেসিপি আমার মতো খাদ্য প্রেমিককে প্রেমায়িত করেছে। অপবাকের উপন্যাস আকৃতির রাজনৈতিক বিশ্লেষন পড়লেও ভালো লাগেনি, বড্ড একঘেয়ে।
ব্লগের সিরিয়াস ব্লগার রেজওয়ান ভাইয়ের ব্লগ সবময়ই ফলো করেছি ও করবো।
ব্লগার চোরকে দারুন মিস করি। ভালোলাগা-অপছন্দ-ভালোবাসা মেশানো এক ব্লগার। চোরের লেখাম কমেন্ট, কবিতা, তীব্র কিন্তু সরস কমেন্টগুলো ব্লগের সম্পদ হয়ে থাকবে। ‌উনিও ব্লগে ছেড়ে চলে গিয়েছেন তবে অন্য নামে কমেন্ট করেন বলে আমার ধারনা। ব্লগ একটি নেশা !!
আরেক সরস কিন্তু আগুন ব্লগার ধূসর গোধূলীকে মিস করি প্রতিনিয়ত।
আরো অনেকেই ব্লগ থেকে চলে গিয়েছেন, যাদের খুব একটা মিস করি না।

আস্তমেয়ের লেখক ক্ষমতা বা প্রতিভায় মুগ্ধ হলেও তার বিভ্রান্ত ধারনা দেখে অনেকসময় রেগেছি। ইসলামকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে জামাত প্রীতি মানতে পারিনি কোন সময়ই। তার লেখাকে অনেকসময়ই অন্যের দ্বারা লেখা মনে হয়েছে বিশেষ করে রাজনীতি ও ধর্ম নিয়ে লেখাগুলোকে। মাঝে মাঝে অবাক হই একজন মানুষ এতো প্রমান, এতো যুক্তির পরও কিভাবে অন্ধভাবে জামাতকে সমর্থন করেন। আল্লাহ উনার হেদায়েত করুন।

ত্রিভুজ , আশরাফ হোসেন , বিজলীর খড়ি বা ফজলে ইলাহীর মতো জামাতী ভন্ড, নব্য রাজাকারদের লেখা পড়তে না চাইলেও পড়েছি। ভাঙা কলের গানের মতো মিথ্যাচার পড়তে না চাইলেও শত্রুপক্ষের কথা জানতে সে সব পড়েছি ও কিছু ক্ষন পর পর টয়লেটে গিয়ে থুথু ফেলে এসেছি। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন।

পাঁচ

সাহিত্যের প্রতি অনাগ্রহ মূলত ব্লগের কবিতা-গল্ল-উপন্যাসের প্রতি তেমন একটি আকর্ষন করে না।
তারপরো নজমুল আলবাব, আনোয়ার সাদাত শিমুলের লেখা সবচাইতে বেশী টেনেছে, ব্লগের প্রিয় লেখক উনারা। জানা কিন্তু অজানা কারনে এরা আর লেখেন না এখানে।
অমিত আহমেদের লেখা পড়েছি, কোনটা দারুন, কোনোটা ভালো লেগেছে আবার কোনোটাবা মোটামুটি। অন্যতম পছন্দের লেখক।
মোহাম্মদ জুবায়েরর লেখা পড়েছি, তবে মাঝে মাঝে তা এতো ঝুলে গিয়েছে যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছি।
হাসান মোরশেদের লেখা তেমন একটা আকর্ষব করেনি, যদিও উনার লেখনির স্টাইল অনুসরন করার চেষ্টা করি আমি।
মাহবুব মোরশেদের লেখা পড়েছি তবে সবগুলো ভালো লাগেনি। পোমো প্রজন্মের লেখা বলেই হয়তো !
পথিকের কবিতা বা রাগ ইমনের পাগলামী উপভোগ করতে পারি নাই।
শেখ জলিল ভাইয়ের সাথে পরিচয় উনার লেখার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। অনেক মায়া নিয়ে উনি লেখেন।
ব্রাত্য রাইসুকে ক্ষেপানো খুব সহজ বলে উনাকে ক্ষেপিয়ে মজা পেয়েছি অনেক তবে ‌উনার কবিতা মিস করিনি।
মাশার লেখা দারুন লাগে, তবে আজ কাল উনি আর লেখেন না ব্লগে।‌

আমি যাদের কথা বলছি তার মুলত প্রথম দিককার লেখক/ব্লগার। নতুন অনেকেই এসেছেন যাদের লেখা পড়ি তবে তাদের কথা আসবে আগামী বছরে।


ছয়
সামহোয়্যারইন ব্লগে ব্লগিং শুরু করার আগে মুলত ব্লগিং করা হতো না। ব্লগস্পটে যা কিছু ছিলো তা মুলত দিনলিপি যা ইংলিশেই লেখতাম। সামহোয়্যার ইনে সন্ধান পাবার প্রথমদিকটায় মুলত পড়া হতো বেশি। ব্লগিং সম্পর্কে ছোট্ট কিন্তু দারুন এক উপকারী কিছু টিপস ছিলো শোহাইল মোতাহির চৌধুরির ব্লগে। সেটা এখনো অনুসরন করি।
সবার লেখাই পড়তাম, এখনো পড়ি। যখন লেখা শুরু করলাম তখন কমেন্ট পেতে খব ভালো লাগতো, এখনো লাগে। তবে ব্লগে কিছু ব্লগারকে দেখতাম সবার ব্লগে কমেন্ট না করতে " গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল জাতীয় নাক ঊঁচু ব্লগার"; এটা এখনো দেখা যায়।
অনেকসময়ই কমেন্টগুলো মুল পোস্টের চাইতেও সমৃদ্ধ হয়ে যায়। পোস্ট - কমেন্ট যোগ করে দারুন একটা ব্যাপার । বাঁধ ভাঙার আওয়াজ ব্লগের মুল আকর্ষনই সম্ভবত কমেন্ট বা মিথোস্ক্রিয়া। সেটা অনেক সময়ই ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে যায় । সেটা অতীতেও ছিলো এখনো আছে। মুলত কমেন্ট - পোস্ট পড়ে একজন ব্লগারের মনন- নীতি- আদর্শের অনেকটুকুই ধারনা পাওয়া যায়। একজন মধ্যবয়স্ক লোক যখন

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।