শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৭

এলিজি টু রুবি আক্তার

সমকালের শেষের পাতায় ছোট্ট ১ কলামের একটি নিউজ। বড্ড অবহেলায় ছাপা একটি নিউজ। রুবি আক্তার রাতের সিফট শেষে বাড়ী ফেরার পথে ধর্ষিত হোন। একদল সন্ত্রাসী রুবিকে পথিমধ্যে থেকে অপহরণ করে জামগড়া গফুর মন্ডল স্কুল এন্ড কলেজের মাঠে নিয়ে গিয়ে পালাত্রক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষ ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার পর সন্ত্রাসীরা লাশ সেখানে ফেলে রেখে যায়।

১৬৫০ টাকার বেতনের এক শ্রমিক ধর্ষিত হয়ে মারা যাবার খবর বিশাল করে ছাপার কি আছে !! আরে বাবা এতে অবাকের কি আছে ? গার্মেন্টসের এক শ্রমিক ধর্ষিত হয়ে মারা গিয়েছেন , এতো নিত্যদিনের ঘটনা।

শেরাটনে বিজিএমইএ এর ১৬৫০ টাকা প্রতি প্লেটের বার্ষিক ডিনার পার্টিও এর চাইতে বড় কভারেজ পায়। আর পাবেই না কেনো !! বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ফরেন কারেন্সি আনছেন উনারা। পত্র-পত্রিকায় লাখ টাকার বিগ্যাপন দেন উনারা। এরাই দেশের শাষক, এরাই জাতির বিবেক , এরাই সুশিল সমাজ।
আর এই শ্রমিকরা কি করে ? দুই দিন পর পর বকেয়া বেতন বোনাসের জন্য আন্দোলন করে। বড্ড অবুঝ এরা। বড্ড বিশৃংখল এরা।
রুবি আক্তাররা রাত দিন কাজ করেন। নিয়মিতই ওভার টাইম। শিপমেন্ট ধরতে হবে না !! তবে বেতনটাই শুধু নিয়মিত হয় না, এই যা। প্রতিবাদ করলেই ছাঁটাই।

বেতন পান ১৬৫০ (মালিক পক্ষের আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা সর্বনিম্ন বেতন ১৬৫০ টাকা )। তাও যদি নিয়মিত পান !!

ছোট্ট এক রুমে ৪/৫ জনে গাদাগাদি করে থাকা। ভাগা-ভাগী করে আলু-চাল-ডালের খিচুড়ী যাদের নিয়মিত মেনু ( বিশ্বাষ হয় না, টংগি-সাভার-মিরপুর-আশুলিয়া বা অন্যান্য যে সব জায়গায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বেশী সে সব এলাকার মুদির দোকানীদের জিগ্যাসা করতে পারে, তারা কি বেশী বিক্রি করেন গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাছে)।

মাইল-মাইল হেঁটে কাজে যাওয়া ( কয়টা গার্মেন্টসের নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট আছে?) বৃষ্টি নেই, বাদলা নেই , কাজে যেতেই হবে। নইলে ছাঁটাই। এপয়েন্টমেন্ট লেটার আবার কি জিনিস এরা জানলেও জানে না।

কারখানায় প্রোডাকশন ম্যানেজার-লাইন সুপারভাইজারদের খবরদারী , সেক্সুয়াল এবিউজ (বিতর্ক আসতে পারে, তবে এটাই নোংরা সত্য)।

রাস্তায় পাড়ার ছেলেদের নোংরা ইভ টিজিং। মাঝে সাজে পাড়ার ছেলেদের লাগানো (এর চাইতে ভালো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না বলে দূঃখিত)। না লাগাতে দিলে রুবি আক্তারের মতো গণধর্ষন ! পূরুষের নোংরা চোখ এড়ানোর জন্য বোরখা পরেও রক্ষ্যা নেই। পুরুষ যদি চোখে পর্দা না পরে নারী হাজার পর্দা পরুক না কেনো রক্ষা তাদের নেই।

এতো কিছুর পরোও রুবি আক্তাররা টাকা জমান। ছোট্ট বোনের জন্য লাল টুকটুকে শাড়ি বা বাবার জন্য সাদা সস্তা জামা কেনেন বা মায়ের জন্য মিলের ছাপা শাড়ি। টুকটুক করে টাকা জমান ভবিষ্যতের জন্য।

রক্ত পানি করে যে শার্টের জন্য এরা যে ১ সেন্ট (অনেকে বলেন ১৭ সেন্ট) পান, সেই শার্ট বিক্রি করে মালিকরা লাভ করেন ১ ডলার।

রুবি আক্তাররা বৃষ্টির পানিতে ভেজেন,
রুবি আক্তাররা টিয়াস গ্যাসে কাঁদেন,
রুবি আক্তাররা গুলি খান,
রুবি আক্তাররা একাকী কাঁদেন,
রুবি আক্তাররা ধর্ষিত হোন,
রুবি আক্তাররা খুন হোন,
ঠিকানা হয় অজানা।

আজকের খবরটা পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। নিয়মিত এ রকম খবর পড়তে পড়তে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, বিবেক ভোঁতা হয়ে গিয়েছে, তবুও কেমন জানি লাগছে। রুবি আক্তার যদি আনিসুল হকের মেয়ে হতো বা লতিফুর রহমানের মেয়ের মতো ধর্ষিত ও খুন হতো তবে পত্রিকার পাতায় পাতায় কতো বিশাল খবরই না হতো। রুবি আক্তাররা আসলেই অচ্যুত এ দেশে। আজতো রুবি আক্তার যদি আমাদেরই কারো ছোট্ট আদরের বোন বা আমাদেরই কারো প্রেয়সী হতে পারতো।

রুবি আক্তার বয়স ১৮,
হেলপার , এনভয় গার্মেন্টস।
স্থায়ী ঠিকানাঃ ঘিওর, মানিকগঞ্জ ।
অস্থায়ী ঠিকানাঃ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ।
ভবিষ্যত ঠিকানাঃ অজানা।

"রুবি আক্তার" অজানা বোন আমার। ব্লগের পাতায় লেখা ছাড়া আর কিচ্ছুই করতে পারি না আমি। বড়ই অসহায় আমি। গলাবাজী , কলমবাজী করা ভন্ড আমি। তোমার এ চরম অপমান ও হত্যার বিচার তুমি পাবে কি না জানি না, তবে পরজন্মে পাবেই পাবে। এই কামনা করা ছাড়া এই অসহায় মানুষটির আর কিছুই করার নেই।

রুবি আক্তারের প্রতি আমার এই এলিজি।
ভালো থেকো রুবি আক্তার।
ভালো থেকো।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।