শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০০৭

ঠাকুরগাঁ , আমার ছোট্ট শহর, আমার শৈশব

ঠাকুরগাঁ , আমার ছোট্ট প্রিয় শহর।
বাংলাদেশের ম্যাপের এককোনায় লুকিয়ে থাকা ছিমছাম ছোট্ট একটি শহর।

বাবার ছিলো বদলির চাকুরি। একবার সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন ঠাকুরগাঁয়।৩ রুমের ছোট্ট একটি টিনের বাসায় থাকতাম সবাই মিলে। আম্মু , আমরা ৩ ভাই বোন, প্রায় সমবয়সী ছোট দুই চাচা, এক ফুফু আর আমার গ্রেট "কাকা"। কাকার ছিলো বিশাল এক মটরবাইক। পুরো শহরে কাকার মতো এতো বড় মটরবাইক আর কারো ছিলো না। সেটা নিয়ে আমারো ছিলো অনেক গর্ব। বাসার টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে শান্তির ঘুমের কথা এখনো ভুলতে পারি না।

বাসার সামনে সামনে বিশাল এক মাঠ। বিকেলে সবাই মিলে টেনিস বল দিয়ে বোমবাস্টিং বা সাত চাড়া খেলা। মাঝে মাঝে একটু আধটু মারামারি !!

গুড্ডি ওড়ানোর কথা বলতেই হয়। সারাটা দিন ধরে সুতায় মান্জা দেয়া। (মানজা দেবার কতো যে তরিকা ছিলো !!) গুড্ডি কাটা কাটির মহাযুদ্ধ (আসলেই মহাযুদ্ধ), ভোকাট্টা গুড্ডির পেছনে পাগলের মতো ছুটে বেড়ানো, একটা গুড্ডি পেলে বীরের মতো সবাইকে দেখানো, আবার নিজের গুড্ডি কাটা গেলে কাঁদা । কি দারুন দিন ছিল সব।

সাইকেল চালানো শিখেছিলাম সেখানে। বয়স কতোই বা তখন। এই ৫ কি ৬। সাইকেলের সিটে বসতে পারতাম না। হাফ প্যাডেলে সাইকেল চালিয়ে সারা শহর ঘুরে-বেড়ানো। আহ, দারুন দিন ছিলো সেসব।

সে সময় ঠাকুরগাঁয় পড়তাম ফুলকুড়ি নামে ছোট্ট একটি কিন্ডারগার্ডেনে । টুকটুকে হলুদ রঙের ইউনির্ফম। হেডমিসট্রেসের নামটা মনে নেই, উনার মেয়ের সাথে ছিলো আমার হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। সেটা মাঠে নয়, পড়াশোনায়। ও হতো প্রথম আর আমি দ্বিতীয়। আমার আর প্রথম হওয়া হলো না সেখানে।

শুক্রবারে যে মসজিদে মিলাদ হতো সেই মসজিদে দল বেঁধে ছুটে যেতাম। কোথায় নামাজ, চোখ ও মন পরে থাকতো তবারকের দিকে। মিলাদ শেষ হতেই তবারক নিয়ে হুড়োহুড়ি।

দুজন স্যারের কাছে পড়েছিলাম সসময়। জন্মদিনে জীবন স্যারের দেয়া ঝিনুকের গিফটের কথা ভুলতে পারি না। অসীম স্যারের কাছে পড়েছিলাম কিছুদিন। স্যারের প্রিয় বাই সাইকেলের প্রতি ছিলো দারুন লোভ। চুরি করে কতো যে চালিয়াছি ! স্যার পরে কলকাতা চলে যান। অসীম স্যার ছিলেন বিখ্যাত কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্যের ছোট ভাই।

একবার বাড়ী থেকে পালিয়াছিলাম। অনেককেই দেখতাম বাড়ী হতে পালাতে, আর আমি পালাবো না !! সে কি হয় ? আম্মু একবার দুষ্টুমির জন্য মার লাগালেন। আর আমি সেই মার খেয়ে বাসার পেছন দেয়াল দিয়ে সোজা পালালাম। এক্কেবারে গ্রামের বাড়ী। পড়নে ছিলো হাফ প্যান্ট ও সাদা স্যান্ডো গেনজি। গ্রামের বাড়ী যেতেই দাদা পুকুরে জাল ফেল্লেন, পালানোর পুরষ্কার । গরম গরম মাছের ভাজা। বিকেলে কাকা আমাকে ঠাকুরগাঁ নিয়ে আসলেন। তখন আম্মুর কি আদর। এখনো ভুলিনি।

সেই ছোট্ট শহর আর সেই ছোট্ট নেই। ছোট থেকে বড় হয়েছে। নতুন নতুন বাড়ী হয়েছে, কাঁচা রাস্তা হয়েছে পাকা । লোক জন বেড়েছে। তবে প্রিয় শহর প্রিয়ই রয়ে গিয়েছে।

বয়স বেড়েছে , পুরোনো বন্ধুরা পুরোনোই রয়ে গিয়েছে। এখনো সবাই এক সংগে দেখা হলে সেই আগের বয়সে ফীরে চলে যাই। মাঝে মাঝে মনে হয় টাইম ট্রাভেল করে যদি ফীরে চলে যাওয়া যেতো শৈশবের সেই সব দিনগুলোতে।

কোথায় গেলো সেই সব দিন !!

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।