বুধবার, ১১ জুলাই, ২০০৭

জলপাই চরিত (মিলিটারি নামা)

মিলিটারি , আর্মি, জলপাই ওলা যেই নামেই ডাকি না কেনো আমরা ক্যান্টনমেন্ট নামের চিড়িয়া খানায় বসবাস তাদের। একদল সংঘবদ্ধ ও প্রশিক্ষিত নেকড়ের দল।

রিক্রুটের প্রথম দিন থেকেই তাদের তৈরি করা হয় হত্যায় পারদর্শি করে। দেশের সাধারন মানুষদের মধ্য থেকে তাদের আগমন হলেও তাদের মনে এমন একটা ধারনা ঢুকিয়ে দেয়া হয় যেনো তারা সাধারনের চাইতেও অসাধারন।

" ব্লাডি সিভিলিয়ান " বলে জনমানুষকে হেয় ও ছোট করে দেবার প্রবৃত্তি প্রশিক্ষনের প্রথম দিন থেকেই দেয়া হয় তাদের। এ জন্য পিতা-মাতা সিভিলিয়ান হলেও ব্লাডি সিভিলিয়ান বলে গালি দিতে তাদের একটুকুই বাঁধে না। এমন এক মন মানসিকতায় তারা চলে যায় যে গালি যে তারা দিচ্ছে সেই বোধ টুকুও তাদের লোপ পেয়ে যায়।

অফিসার ও জওয়ান ট্রেনিং , দুটোতেই তাদের মনে এমন একটা ধারনা দিয়ে দেয়া যেনো তারা দেশের সবচাইতে শ্রেষ্টতর মানুষ এবং দেশের বাকি সব মানুষ দূনীতি বাজ ও অথর্ব। ট্রেনিং এর প্রতিটি পর্যায়ে একজন মানুষ হিসেবে তৈরি না করে একজন সিজনড খুনি হিসেবেই তৈরি করা হয় এদের।

আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও এখনো কলোনিয়াল মন মানসিককতায় আচ্ছন্ন এদের অফিসার গোত্র। জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে গিয়ে অবশ্য মন- মানসিকতার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। তবে দেশে ফেরত চলে আসার পর সেই পরিবর্তিত মানসিকতা আবার পরিবর্তিত হয়ে যায় অন্যান্য চিড়িয়ার সংস্পর্শে এসে।

ক্যান্টনমেন্ট নামের চিড়িয়াখানায় বসবাস করা এসব চিড়িয়া সব সময়ই দেশের সাধারন জনমানব থেকে বিচ্ছিন্ন। সাধারনের সাথে মিশে যতটুকু পরিবর্তন ঘটে ক্যান্টনমেন্ট নামক চিড়িয়াখানায় ফেরত গিয়ে সে টুকুও তারা ভুলে যায়। "মানুষ-নেকড়ে-মানুষ-নেকড়ে-... " একটা অসীম চক্রে ঘুর্নায়মান সব সময়।

দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্ভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য জনগনের করের টাকায় আর্মিকে তৈরি করা হলেও স্বাধীনতার পরবর্তি প্রতিটি সময়ে এদের দেখা গিয়েছে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে। এজন্য অবশ্য দায়ী করা যায় দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যার্থতাকেও। সামরিক বাহিনীর এ প্রবৃত্বি চলে আসছে মূলত পাকিস্তান আমল থেকেই। এই মন মানসিকতার পরিবর্তন কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকলেও সময় ও সুযোগ বুঝে বার বার মাথা চারা দিয়ে উঠে। দেশের আর দশটা সরকারি সংস্থার মতো হলেও তৃতীয় শক্তি হিসেবে রয়ে গিয়েছে সব সময়। যার কুৎসিত প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি আমরা এখন।

দেশের মানুষ যখন রাজনৈতিক দলগুলোর লুন্টনে অতিষ্ট ঠিক সে সময় আর্বিভাব ঘটলো সামরিক বাহিনীর। একসময় পর্দার আড়ালে থাকলেও সামনে চলে আসছে এরা। দেশের মানুষ প্রথমে শান্তির নিশ্বাস ফেল্লেও আস্তে আস্তে তাদের বোধোদয় ঘটবে। মানুষের স্মৃতি হতে অতীতের সামরিক শাসনের কথা এখনো হাড়িয়ে যায় নি।

মুখে ললি-পপ নিয়ে কিছু ক্ষনের জন্য হয়তো মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায় তবে তা স্থায়ি হয় না। সামরিক বাহিনী হলো সেই ললি-পপ। প্রথমে মিষ্টি পরে তা হাওয়া। মানুষ এখন আতংকিত, ভীত । অনেকে মনে করছে দেশ এখন শান্ত , কোনো সমস্যা নেই। এটা একপ্রকার ঝড়ের পুর্বে শান্ত আবহাওয়া। খুব বেশি দিন লাগবে না এ মোহো ভাঙতে।

সামরিক বাহিনী আসলে ট্রেন সময় মতো ছাড়ে কিছু দিন, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম কমে, গাছের নিচে চুন কাম চলে কিছু দিন। এর তলে তলে চলে লুন্ঠন। সামরিক বাহিনী যদি দেশের পরিবর্তন ঘটাতেই পারতো তবে অতীতের জিয়া - এরশাদের মতো জলপাই কৃমিরা দেশকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারতো। তাদের ব্যাংকের একাউন্টের আকার বাড়লেও সাধারন মানুষে যেই মফিজ ছিলো সেই মফিজ ই রয়ে গিয়েছিলো।

মানুষ এখন দেখছে রাস্তায় কান ধরিয়ে উঠা বসা করাচ্ছে মটর বাইক চালানোর সময় হেলমেট না পড়াতে, মানুষ এখন দেখছে কান ধরিয়ে দাড় করিয়া রাখছে রাস্তায় হর্ন বাজানোতে, মানুষ দেখছে সন্তানের সামনে বাবার অপমান, মানুষ দেখছে ৬০০০ টাকা বেতনের এসআই এর কলার চেপে টেনে নেবার দৃশ্য, মানুষ দেখছে বড় চুল রাখার জন্য মাথা নেড়ে করে দেবার দৃশ্য। হয়তো কেউ হাত তালি দিচ্ছে, হয়তোবা না।

যেদিন তাকে কান ধরিয়ে দাঁড়িয়ে রাখবে সন্তানের সামনে সেদিন আর কেউ চোখের পানি ফেলবে না বা হাত তালি দেবে না। মোহো ভাঙবে অতীতের মতোই আবার।

তিমি মাছ ধরা হচ্ছে, ধরা হচ্ছে রাঘব বোয়াল, ধরা হচ্ছে রুই কাতলা।
ধরা হচ্ছে না জলপাই রঙের পাঙাস মাছ বা রাঘব বোয়াল মাছ। ধরা হবেও না।
জলপাই তো আর জলপাই খেতে পারে না।

----------
কিছুটা এলোমেলো লেখা, ভেবে চিন্তে না।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।