ছোটবেলায় খুব হেংলা পাতলা থাকলেও কিছুটা বড় হবার পর থেকেই শরীরের ওজন আতংকজনক ভাবে বাড়ছিলো। একসময় তা বিশাল অবস্থা ধারন করলো। এটা অবশ্য অনেকটাই পারিবারীক ভাবে পাওয়া।
প্রেম ভালোবাসাও ছিল না যে গার্লফ্রেন্ড কে মুগ্ধ করার জন্য ভালো ফিগার থাকতে হবে। হোস্টেলে খেলা ধুলার মধ্যে থাকায় শরীরের ওজন স্বাভাবিক হলে আসলেও ছুটিতে বাসায় আসলে সেই লাউ সেই কদু হয়ে যেতাম।
তখন ১৯৯৩ সাল, এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে অফুরন্ত অবসর । ৪/৫ মাস খেলাধুলা থেকে দূরে থাকায় ওজন এমন বেড়ে গিয়েছিল যে আমার বন্ধু সন্জু বল্লো তুই ফুটবল খেলবি না ফুটবল তোরে নিয়ে খেলবে ! চরম অপমানজনক কথা।
তখন পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলিতে থাকতাম। বাসার খুব কাছেই সদরঘাটে " নবযুগ শরীর চর্চা কেন্দ্র"। ঢাকার অন্যতম পুরোনো জীম। এক সময় নাম ছিল কায়দে আজম ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। ভর্তিহয়ে গেলাম সেখানে। ওস্তাদ হিসাবে পেলাম বিখ্যাত জাহাংগির ভাইকে। জাহাংগির ভাই ৪৫ বছরের মস্তপালোয়ান, নয়াবাজারের এক সময়ের মাস্তান। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য হিসাবে 'ল্যাংগোট' পড়ানোর ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানও হোলো জীমে সেবার। ল্যাংগোট হোলো কাপড়ের তৈরি অন্তবার্সের মতো একটা জিনিস, বিশেষ ভাবে তা পড়তে হয়। আগের দিনের পালোওয়ানরা ওটা পড়ে ব্যায়াম করলেও আমি তা শর্টেসের নীচেই পড়তাম, শরম লাগতো এমনি এমনি পড়তে।
বয়স কম থাকাতে সবাই আমাকে খুব পছন্দ করতো। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ দিয়ে শুরু, দীর্ঘ ৩ বছর ফ্রি হ্যান্ড করে গিয়েছি। ইন্সট্রুমেন্ট যাকে ওখানে লোহা বলতো আমাকে করতে দেয়া হতো না।অনেক পরে কলেজ পাস করার পর প্রথম ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করি। ৩ বছরের ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ আমাকে একটি সুন্দর স্ট্রাকচার দিয়েছিল যার অনেকটা এখনো আছে।
পাটুয়াটুলি থেকে আগা মাসিহ লেনে চলে আসার পরো থেমে থাকেনি জীম। পরে এলিফ্যান্ট রোডে চলে আসার পর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিহলাম তখন পড়াশুনার চাপে অনেক কিছুর মতো আমার ভালোবাসা জীমকেও বিদায় দিতে হয়েছিল।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য হোলো কুস্তি। ল্যাংগোট পড়ে মাটিতে কুস্তি লড়া। আমিও বেশ কিছুদিন কুস্তি শিখেছিলাম। সে আরেক ভালোবাসা। গ্রেকো রোমান কুস্তির কায়দা কানুন শিখলেও রিংয়ে নামা হয়নি বয়স ও যোগ্যতা কম থাকায়।
বক্সিং ফেডারেশন থেকে একবার বক্সিং ক্যাম্প হয়েছিলো। খুব আগ্রহ থাকাতে আমিও বেশ অনেকদিন শিখেছিলাম, যদিও এ খেলাটাকে আমি এখন আর পছন্দ করি না। বক্সিং করতে গিয়েই আমার জীবনের প্রথম বড় একটা দূঘটনা ঘটে। প্রাকটিসের সময় হঠাৎ মাথায় আঘাত লাগে। সামান্য বমি হলেও তা কেয়ার করিনি সে সময়। পরের দিন প্যারালাইজড এর মতো অবস্থা কিছুটা। অনেক দিন ভুগিয়েছিল এটা এবং এর রেশ কিছুটা আজো রয়ে গিয়েছে। বাসার কেউ জানতো না যে আমি বক্সিং করতাম। গ্লোভস ও অন্যান্য গিয়ার জীমে রেখে আসতাম।
খুব ইচ্ছে ছিল "মিঃ ঢাকা" ও "মিঃ বাংলাদেশ" বডি বিলডিং এ অংশগ্রহন করবো। বয়স কম থাকতে ও ওরকম স্ট্রাকচারে পৌছুতে না পারায় সে স্বপ্ন আর পূরন হয়নি।
জীম আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। সুগঠিত শরীর ও আত্মবিশ্বাস। করেছে সাহসী। বক্সিং শিখলেও আমি জীবনে কখনো কারো উপর তা প্রয়োগ করিনি। ওস্তাদ বলতেন যে বক্সিং জানে না , তার সাথে যেনো কোনোদিন তা প্রয়োগ না করি। আমি এটা সব সময় মেনে চলি। তবে বডি বিলডিং করাতে অনেকটা ড্যাম কেয়ার ভাব চলে এসেছিল এক সময়। মনে হয় এখনো অনেকটা আছে। কিছুটা আক্রমনাত্মক ও ।
জীবনের একটা খুবি সুন্দর সময় কেটেছিল সে সময়। খুব সুন্দর মনের অনেক মানুষের সাথে পরিচয় ও বন্ধুত্বহয়েছিল সে সময় এবং সেই সব জীম বন্ধুদের সাথে এখনো যোগাযোগ আছে।
আমার জীবনে নবযুগ শরীর চর্চা কেন্দ্রের অনেক অনেক অনেক প্রভাব।
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।