বুধবার, ৪ জুলাই, ২০০৭

এ আজাদি ঝুটা হে, লাখো ইনসান ভুখা হে


47 ভারত বিভাজনের সময় বামপন্থিদের এই স্লোগান যে মিথ্যা ছিলো না বর্তমান বাস্তবতা সেটা হাড়ে হাড়ে প্রমান করে।

1971 এর স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রে বা স্বাধীন বাংলা সরকারের ঘোষনাপত্রে বা প্রথম সংসদে যে স্বপ্নের কথা বলা হয়েছিলো সেটা শুধু কাগজে কলমেই রয়ে গিয়েছে, বাস্তবে রূপ নেবার সাহস পায় নি।

অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা , আইনের শাষন, গনতন্ত্র, স্বাধীন বৈদেশিক নীতি, দূনীতিমুক্ত ও শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি কথা প্রতিটি সরকার বলে এসেছে। তবে তা কখনই সফল রূপ নেয় নি।

বংগবন্ধু সরকারের কাছ থেকে মানুষ যা আশা করেছিলো তার কোনোটাই তিনি বা তাঁর সরকার পূরন করতে পারেনি। এর ব্যার্থতার পিছনে নানা যুক্তি থাকতে পারে, তবে তিনি বা তার সরকার যে আশা পূরন করতে পারেন নি সেটা সত্য। জাতির পিতা বংগবন্ধু একজন সফল রাস্ট্রনায়ক হতে ব্যার্থ হয়েছিলেন পুরোপুরি।
পরবর্তিতে যে সব সরকার এসেছিলো মূলত তা গনতন্ত্রের আবরনে সামরিক ও একনায়ক শাষন। জিয়া - এরশাদের দীর্ঘ16 বছরের সামরিক ও একনায়ক শাষনের পরে বাংলাদশ গনতন্ত্রের স্বাদ পায় মূলত 1991 এ এসে। 1971 পরবর্তি প্রথম গনতান্ত্রিক নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বি.এন.পি , পরবর্তিতে আওয়ামি লীগ , আবার বি.এন.পি এবং বর্তমানে অন্তবর্তিকালীন সরকার।

স্বাধীনতার এ 36 বছর পরে কি পেয়েছি আর কি পাইনি সেটা লিখতে গেলে সেটা মহাভারত হয়ে যাবে।

একটা স্বাধীন দেশ, লাল-সবুজ পতাকা আমাদের গর্ব হলেও এটা অনেকটাই মধ্যবিত্ত সূলভ আবেগ আমার কাছে, যখন দেশের এক বিশাল অংশ এখনো চরম দারিদ্্র সীমার মধ্যে বসবাস করে।

এই দীর্ঘ 36 বছরে কিছুমধ্যবিত্ত শ্রেনী উচ্চ বিত্তে রূপান্তরিত হয়েছে, গ্রাম থেকে এসে এক শ্রেনীর মানুষ মধ্যবিত্তের কাতাড়ে দাড়িয়েছে, তবে উচ্চবিত্ত আরো উচ্চবিত্ত হয়েছে। নিম্ন ও উচ্চবিত্তের ব্যবধানটা এতো বেড়ছে যা একটা স্বাধীন - সার্বভৌম দেশে আশা করা যায় না। এই শ্রেনী ব্যবধানটা দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে। মাইক্রো ক্রেডিট নামক স্যালাইনে নিম্নও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনী বেঁচে বর্তে থাকলেও সামগ্রিক অর্থে ভাগ্যের তেমন একটা পরিবর্তন ঘটছে না।

শিল্পায়নে অগ্রগতি হলেও সেখানে রয়েছে বিশাল শোষন। ৳1650 সর্বনিম্ন বেতন ধার্য করে মালিক পক্ষ আত্মতৃপ্তিতে ঢেঁকুর তুল্লেও শ্রমিক তথা নিম্মবিত্তের নাভিঃশ্বাষ।

71 এ মুক্তিযুদ্ধে নিম্নবিত্ত শ্রেনীর বিশাল অংশগ্রহন থাকলেও পদকের ক্ষেত্রে হতে হয়েছিলো বনচিত। চেয়ার টেবিলে বসে মেজর নূর বীর প্রতিক পেলেও অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা অজানা শহীদ পায়নি কোনো পদক।

বি.এন.পির প্রথাম টার্মে ধুমধাম করে পদক বিতরনের অনুষ্ঠান দেখে অনেকে চমৎকৃত হলেও আমাকে কষ্ট দিয়েছিলো। সাধারন পোষাকে, কম্পিত পদক্ষেপে , ভীত মা যখন তার সন্তানের পদক নিচ্ছিলো তখন আমার মনে হচ্ছিলো এই তো শেষ, পদক নিয়ে মা ফীরে যাবে গ্রামের সেই কষ্টের জীবনে । হয়তোবা পদক বন্ধক দিয়ে চাল কেনার টাকা যোগার করতে হবে তাকে।

কেউ মনে রাখিনি আমাদের এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের , তাদের পরিবারকে। 26 মার্চ , 16 ডিসেম্বরে আমাদের আবেগ উথলিয়ে পরে, পরে সবই ভুলে যাই আমরা। পরিপূর্ন সম্মান ও পুরস্কার কখনোই পায়নি আমাদের সেই বীর মুক্তিসেনারা। পত্রিকার পাতায় খবর পড়ে মনটা এতোই খারাপ হয়ে যায় যে নিজের কাছে নিজেকেই ছোট লাগে।বিবেকর কাছে প্রশ্নযাগে।

আজ স্বাধীন বাংলা পতাকা উড়িয়ে রাজাকার গাড়ি হাঁকায়, ক্ষমতার চেয়ারে বসে। বিচারের বানী কাঁদে তখন চিলেকোঠায়।

আজ দূনীতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ।
আজ স্বাধীন বৈদে শিক নীতি স্বপ্ন এখনো আমাদের কাছে।

যেদিন দেশের প্রতিটি মানুষ ...তিন বেলা আত্মতৃপ্তিতে পেট পুরে খেতে পারবে,শান্তিতে ঘুমুতে পারবে, পরিপূর্ন চিকিৎসা পাবে,লেখা পড়ার সমান অধিকার ও সুযোগ পাবে, স্বাধীন ও নিরেপক্ষ বিচার পাবে,সেদিন বলবো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরিপুর্ন হয়েছে, সফল হয়েছে। ততোদিন এই সব স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ফালতু আমার কাছে।ফালতু মধ্যবিত্ত সুলভ আবেগ ।

দেশকে গরিব রেখে স্বাধীনতার স্বাদ বিস্বাদ লাগে।
সারা পৃথিবী যখন সামনে এগিয়া যাচ্ছে তখন আমরা শুধু পিছিয়েই যাচ্ছি।
আর কতো ?
২০০৭-০৩-২৬ ০৩:৩১:৪৭

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।