সোমবার, ২ জুলাই, ২০০৭

অস্ট্রেলিয়ায় আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন : শিক্ষকতা

২০০৭-০২-২৬ ০৬:৪৭:০৪

এখানে পড়তে এসে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষকতার ধারায় অনেক পার্থক্যর্ লক্ষ্য করেছি।

1.
বাংলাদেশে একজন ছাত্র ব্যাচেলর শেষ করেই যেভাবে সরাসুরি লেকচারার / ফ্যাকালটি মেম্বার হিসেব কাজ করার সুযোগ পায় সেটা একিবারেই অনুপস্থিত এখানে। বাংলাদেশের ওই ব্যপারটাকে পুরোপুরি হাস্যকর ও বাজে মনে হয় আমার কাছে।এখানে একজন ছাত্রের রেজালটের পাশাপাশি শিক্ষকতার পেশার প্রতি আগ্রহ, গবেষনায় অভিগ্যতা ও আগ্রহ ইত্যাদি বিষয় চলে আসে।

একজন ফ্রেস গ্রাজুয়েট (ব্যচেলর) কোনোক্রমেই লেকচারার হিসেবে কাজ করতে পারে না। বড়োজোর সে টিউটর হিসেবে কাজ করতে পারে আন্ডার গ্রাড স্টুডেন্টদের জন্য। টিউটর হিসেবে তাকে ল্যাব বা টিউটোরিয়াল ক্লাস নিতে হয় ও এসাইন্টমেন্ট মার্কিং করতে হয়। এই টিউটর হিসেবে কাজ করতে হলে তাকে ভালো রেজালটের এর সাথে সাথে অবশ্যই অনার্স করা থাকতে হয়।
একি ব্যপার প্রযোজ্য একজন ফ্রেস মাস্টার্সপাস করা ছাত্রের জন্য। সে শিক্ষকতায় যুক্ত হতে চাইলে তাকে টিউটর হিসেবেই যোগদান করতে হয়। অভিগ্যতা ও পারফরমেন্স তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।

টিউটর এর পরবর্তি ধাপ এসোসিয়েট লেকচারার। এসোসিয়েট লেকচারার এর পরটর্তিধাপে লেকচারার ও সিনিয়র লেকচারার। বাংলাদেশের এসিসটেন্ট প্রফেসরের সমতুল্য হচ্ছে সিনিয়র লেকচারার। সিনিয়র লেকচারারের পর এসোসিয়েট প্রফেসর ও প্রফেসর। একজন এসোসিয়েট প্রফেসর হতে হলে বহু বছরের শিক্ষকতার অভিগ্যতার পাশাপাশি পি.হেইচ.ডি, প্রচুর গবেষনা অভিগ্যতা, পাবলিকেশন, রিসার্চসুপারভিশনে অভিগ্যতা, সুনাম ইত্যাদি থাকতে হয়। প্রফেসর খুবি সম্মানিত একটা পদ । সব কিছু মিল্লেই যে একজন প্রফেসর হতে পারবেন এর কোনো নিশ্চয়তা নাই। এজন্যই অস্ট্রেলিয়ান একটি বিশ্ববিদ্যলয়ে হাতে গোনা প্রফেসর বা এসোসিয়েট প্রফেসর দেখা যায়।
তুলনামূলক ভাবে বাংলাদেশে এর বিপরীত অবস্থা। একজন ছাত্রের খুব ভালো রেজালট ও তদবির থাকলেই ব্যাচেলর শেষ করেই সরাসুরি সে লেকচারার হিসেবে জীবন শুরু করে। বেশ কিছু বছর পর পি.হেইচ.ডি করে ফেলতে পারলে এসিসটেন্ট প্রফেসর। ধীরে ধীরে এসোসিয়েট ও ফুল প্রফেসরশীপ। একজন লেকচারার বা সিনিওর লেকচারার শুধু সময়ের খেলায় প্রফেসর হয়ে যাবেন সেটা এখানে সম্বব না। সমস্ত যোগ্যতা পূরন করেই তাকে আবেদন করতে হয় পরবর্তিপদের জন্য।এজন্যই বাংলাদেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতো প্রফেসর দেখতে পাওয়া যায় এখানে 10 টা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চাইতে কম প্রফেসর দেখতে পাওয়া যাবে।

2.
আমাদের দেশের শিক্ষকদের মধ্যে যে অহেতুক রাশভারী মনোভাব বা তথাকথিত ব্যক্তিত্ব দেখা যায় তার অনেকটাই অনুপস্থিত এখানে। খুব সহজ সরল এবং ইনফরমাল ভাবে তারা মেশেন ছাত্রদের সাথে যা কোনোক্রমেই আশা করা যায় না আমাদের দেশে। বিশাল এক দূরত্ব বিরাজ করে আমাদের দেশে শিক্ষক ও ছাত্রের মাঝে। পড়াশুনা ও অন্যান্য অনেক কাজেই ছাত্রদের শিক্ষকদের সাহায্য নিতে হয় এবং এসব ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কাছ থেকে অভাবনীয় সাহায্য পাওয়া যায়। এর ব্যতিক্রম আছে তবে তা আমার অভিগ্যতায় খুবই নগন্য। এখানে একজন শিক্ষক শুধু পড়াশুনার সম্পর্কের মাঝেই নিজেকে গুটিয়ে রাখেন না নিজেকে। ছাত্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে তা আরো দূরে এগিয়া যায়।শিক্ষক ও ছাত্রের মাঝে যে বন্ধুত্ব পূর্নসম্পর্কথাকতে পারে সেটা মনে হয় আমাদের দেশে চিন্তাও করা বোকামী। এখানে সম্মান প্রদর্শন প্রকাশটা একটু অন্যরকম। একি সাথে বসে কফি-সিগারেট হতে পারে এটা এদেশে কল্পনা করা না গেলেও এখানে অনেকটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে সেটা মানানসই না হলেও এখানকার সংস্কৃতিতে মোটেই বেমানান না। এ জন্যই ক্যাফেটেরিয়ার কিউতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি.সি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবাক হইনি। আমরা অবশ্য ভি.সি কে নাম ধরেই ডাকি। এটা চিন্তাও করে মহা পাপ হবে আমাদের দেশে। অবশ্য এ জন্য ভি.সি কে তাঁর প্রাপ্য সম্মান থেকে বনচিত করা হয় না।

3.
প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের শিক্ষকরা অবশ্য কোনোক্রমেই পিছিয়ে নেই । বহু বছর ধরে আমাদের শিক্ষকরা দেশের বাহিরে যাচ্ছেন উচ্চ শিক্ষার জন্য এবং মেধায় আমাদের শিক্ষকরা অনেক ক্ষেত্রেই এখানকার শিক্ষকদের চাইতে এগিয়ে।তবে আমার কাছে মনে হয়েছে উনারা দেশের বাহিরে যা কিছু শিখেছেন তা দেশে এসে অনেকটুকুই ভুলে যান। তাদের টিচিং প্রাকটিস অনেকটাই পুস্তক নিভর্র। গতানুগতিকের বাহিরে তারা খুব একটা যেতে যান না। পড়াশুনাটাও অনেকটুকুই পরীক্ষা নির্ভর। তুলনামুলক ভাবে এখানকার শিক্ষকরা অনেকটুকুই ডায়নামিক। বই ও তত্বের বাহিরে যে একটা বিশাল জগৎ থাকতে পারে সেটা তাঁরা তাঁদের ছাত্রদের হাতে কলমে ধরিয়ে দেন। পড়াশুনায় এজন্য মজাও পাওয়া যায় অনেক। একজন ছাত্র বা ছাত্রি কোর্স শেষ করে অবাক হয়ে দেখে কোর্সের বিষয়বস্তুর সাথে সাথে সে আরো অনেক কিছু জানতে পেরেছে।

4.
পোষাকেও অনেক ভিন্নতা দেখতে পেয়েছি। আমার এক এসোসিয়েট প্রফেসরকে সারা বছর দেখতাম হাফ প্যান্ট পরা, বেনী করা কোমর পযনর্্ত বিশাল চুল, কটকটে রঙয়ের টি-শার্ট ও সাইকেল চালিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে।পোষাকে ইনফরমাল হলেও তবে কাজ কর্মেপুরোপুরি প্রফেশনাল।

5.
বাংলাদেশের অনেক শিক্ষক যাঁরা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেব কাজ করতেন তাদের এখানে সিনিওর লেকচারার বা লেকচারার হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়। অল্প কজন অবশ্য এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবেও কাজ করছেন।আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি সেখানে 3 জন বাংলাদেশী শিক্ষক আছেন। যাদের মধ্যে দুজন সিনিওর লেকচারার ওএকজন এসোসিয়েট লেকচারার।

6.
সাদা মাটা ভাবে কিছু লেখার চেষ্টা করলাম। এটা আমাদের দেশ ও অেেস্ট্রলিয়ার মধ্যে কোনো সিরিয়াস তুলনা না। মনে হলে কিছু পরিবর্তন ভা যোগ করতে পারি।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।