সোমবার, ২ জুলাই, ২০০৭

অস্ট্রেলিয়ায় আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন : গ্রুপ মেট ও রিসার্চ

২০০৭-০২-২৫ ০৬:১৬:২২

অস্ট্রেলিয়াতে পড়তে এসে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি অস্ট্রেলিয়ান পোস্ট গ্রাড ছাত্রদের বেশিরভাগই বেশ বয়স্ক। সে তুলনায় আমার যারা উপমহাদেশ বা অন্য দেশ থেকে পড়তে এসেছি তারা অনেক কম বয়সী। আমাদের মধ্যে অনেকই সবে মাত্র ব্যাচেলর বা মাস্টার্সশেষ করে সরাসুরি মাস্টার্সবা পি.হেইচ.ডি করতে চলে আসা। এখানে বয়সের ফারাকটা অনেক ক্ষেত্রেই তা বাবা-ছেলের বয়সের পার্থক্যের মতো। মাঝে মাঝে তো বেশ সমস্যায় পরেই যেতাম। পকক কেশ- দাড়ি ওলা একজনের পাশে বসে ক্লাস করা বা গ্রুপ ওয়ার্ককরতে প্রথমে বেশ সমস্যা হলেও পরে অবশ্য তা মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম।

প্রতিটি কোর্সেই গ্রুপ ওয়ার্কথাকতো।এর মধ্যে ছোট্ট এসাইনমেন্ট থেকে শুরু করে প্রজেক্ট বা সেমিনারের মতো বিশাল কাজও ছিল।

পোস্ট গ্রাড লেভেলের ইনফরমেশন সিসটেম ম্যানেজমেন্টের একটি কোর্সে আমার গ্রুপ মেট ছিল মধ্য 50 এর এক ইংলিশ-অস্ট্রেলিয়ান। ভদ্্রলোক অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো ওফ স্টাটেসটিকস এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ লেভেলের অফিসার। বয়সের বিশাল ফারাক। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে সেটা একমুহুর্তের জন্যও টের পাইনি।

ভদ্্রলোকের কাছ থেকে শিখেছিলাম রিসার্চএর জন্য কিরকম খাটা-খাটনি ও সময় দিতে হয়।

আমাদের দুজনকে একটা সেমিনার পেপার প্রেজেন্ট করতে হয়েছিল। বিষয় ছিল "অস্ট্রেলিয়ান আই.টি সেক্টরে পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরে পারচেজিং প্রাকটিস " , বিশাল এক কাজ।

গ্রুপ মেট হিসেবে আমি বেশ ফাঁকিবাজ। সেই লোক আমাকে ফোন ও ই-মেইল করে করে পাগল করে তুলতো। একবার বিশাল এক ব্যাঙ মেরে সিডনী চলে গেলাম। ফিরে এসে তার সাথে দেখা হতেই সে 10 কেজি ওজনের কাগজ পত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বল্ল এটা পড়ে শেষ করতে 2 দিনের মধ্য। কি আর করা, বাধ্য হলাম। পড়ে শেষ করে তার একটা সামারীও তৈরি করতে হয়েছিলো।

পুরো সিমেস্টারে এক মুহুর্তের জন্য রেহাই পাইনি তার হাত থেকে। লাইব্রেরী , ল্যাব , এ অফিস সে অফিসে ঢুঁ মারা, ই- মেইল করা , মেইলের উত্তর দেয়া, কতো যে কাজ!! তবে এতো খাটা-খাটনির পর একদিন দেখলাম আমি অস্ট্রেলিয়ান টেন্ডার ও পারচেজিং প্রসেসে একজন বিষেশগ্য হয়ে গিয়েছি।

সেমিনার টা ভয়াবহ রকম ভালো হয়েছিলো। 3 টা বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ান গভর্নমেন্ট এর ডেলিগেট দের সামনে সেমিনার পেপার পড়তে বুক কাঁপলেও ভালো ভাবে উৎরিয়ে গিয়েছিলাম।

অস্ট্রেলিয়ায় সেটাই ছিল আমার প্রথম বড় কোনো প্রেজেন্টেশন।

ভদ্্রলোকের নাম ছিলো গ্রাহাম ওয়েগনার।
মহা সিরিয়াস ওই লোকের কাছ থেকে শিখেছিলাম কিভাবে ও কতো সিরিয়াসলি রিসার্চ ওয়ার্ককরতে হয়।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।