প্রিয় আব্বু,
আশা করি ভালো আছো, এখানে আমরা সবাই ভালো।
তোমার চিঠি পেলাম দুই দিন আগে, তুমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার ভাবনা এবং অভিগ্যতা জানতে চেয়েছ।
35 টা বছর যে কিভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না , মনে হয় এইতো সেই দিন।
সোনালী সব দিন ছিল সব।
25 শে মার্চের ক্রাকডাউনের পর সবকিছু যেনো পালটে গেল, এ রকম যে কিছু একটা হবে তা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, প্রস্তুতিও ছিল। রাজনৈতিক নেতাদের দিক নির্দেশনা ছিল কিন্তু কিছুটা সিদ্ধান্ত হীনতা আমাদের কিছুটা আশাহত করেছিল।
ভাবছিলাম কি ভাবে যুদ্ধে যাওয়া যায় , ভারত সীমান্ত কাছে থাকাতে যুদ্ধে যোগ দেওয়া টা স হজ ছিল আমার জন্য । শিলিগুড়ির কাছে একটা ইয়থ ক্যাম্পে রিপোর্টকরলাম এপ্রিলের শেষের দিকে। শারিরীক পরিক্ষাতেও উতরে গেলেও সমস্যা হলো পরবর্তিধাপে। বামপন্থি মতবাদের অনুসারী হওয়াতে যোগ দিতে পারলাম না, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নেও অবাক হয়ে দেখতে পেলাম রাজনীতি র নোংরা খেলা । মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পারলাম না।
ভাবছিলাম কি করা যায়, চলে গেলাম রৌমারিতে। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় একমাত্র রৌমারিতে ই পাকিস্তানি রা পা রাখতে পারেনি। স্বপ্ন পূরন হলো। যুদ্ধে যোগ দিলাম। প্রবাসি সরকার স্বীকৃত ক্যাম্প না হওয়াতে মুলত সেক্টর কমান্ডারের আওতায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমরা যুদ্ধ করতাম।
এর অনেক পর সেক্টর 2 এ যোগ দিলাম। মেজর খালেদ মোশাররফ ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। আসাধারন একজন মানুষ ছিলেনতিনি।সেক্টর 2 তে এসে বামপন্থি অনেক বন্ধু ও সতীর্থপেলাম। সেক্টর 2 তেই কোনো পন্থি না দেখে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করা হতো।
অনেক কষ্টের দিন ছিল সে সব। এতো কষ্টের মাঝেও হাসি মুখে যুদ্ধ করে যেতাম, দিন গুনতাম কবে দেশ স্বাধীন হবে। টানা 8 মাস বাবা-মাকে দেখতে পাইনি , যোগাযোগও করতে পারি নি , অনেক ইচ্ছে হতো, কিন্তু পারতাম না। তখন তো আর এখনকার মতো মোবাইল বা টেলিফোন ছিল না।
যুদ্ধের সময় এমনও হয়েছে টানা 2/3 দিন আধ পেট বা না খেয়ে থেকেছি , ঠান্ডায় গরম কাপড় ছিল না, বৃষ্টিতে ভিজেছি অনেক দিন, মাইলের পর মাইল হেঁটেছি, ক্নান্ত লাগলেও পরোয়া করিনি ।যুদ্ধের গল্প না হয় আরেক দিন বলব তোমাকে।
17ই ডিসেম্বরে ঢাকায় প্রবেশ করলাম আমরা , সে এক অন্যরকম অনুভুতি।
তোমার আব্বু
ঢাকা
------------------------------
চিঠিটা অনেক সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে কিছু পারিবারিক কথা থাকাতে।মুল সুরটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।
২০০৭-০১-০৫ ০৭:৪৭:২৯
kub valo laglo
উত্তরমুছুন