রবিবার, ১৭ জুন, ২০০৭

এ.বি.সি.ডি : অস্ট্রেলিয়ান বোর্ন কনফিউজড দেশী

এ.বি.সি.ডি দিয়ে অনেক কিছুই হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ান বোর্ন কনফিউজড দেশী বা আমেরিকান বোর্নকনফিউজড দেশী। দুটোই আসলে কনফিউজড একটা প্রজন্ম।

বাংলাদেশ থেকে যারা এসে এসব দেশে থিতু হয়েছেন তাদের জন্য মাঝে মাঝে বেশ মায়া হয়। তারা আপ্রান চেষ্টা চালান দেশের সব কিছুকে ধরে রাখতে। ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অনেক সময় ইচ্ছে হলেও সেটা সম্ভব হয় না।

সবচেয়ে বড় একটা সমস্যা দেখা দেয় এসব দেশে জন্ম হওয়া ছেলে-মেয়েরা। তার না একুলের না ও কুলের। এসব ছেলে-মেয়েদের জন্যই অনেকের দেশে ফেরত চলে যাবার স্বপ্ন পূরন হয় না।

এ জন্য বাবা-মাদের যে দোষ একেবারেই নেই সেটা না। অনেকেই প্রথম থেকেই আপ্রান চেষ্টা চালান ছেলে -মেয়েদের এদেশের সাথে মিশ খাবার জন্য তৈরি করতে। এর জন্য শুরু করেন ইংলিশ শিখিয়ে সাহেব বানানোর চেষ্টায়। দেখা যায় ঘরে-বাহিরে ছোট্ট একটা বাচ্চার সাথে ইংলিশ কথা বলতে। এজন্যই মনে হয় অনেক এ.বি.সি.ডি কে দেখা যায় হাস্যকর আধো-বাংলা বলতে। এদিকে বাবা-মা কিন্তু অবলীলায় বাংলায় কথা বলছেন। এভাবেই আস্তে আস্তে স্মৃষ্টি হয় একটা বিশাল গ্যাপের , সেটা প্রজন্ম পার্থক্য থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক পার্থক্যে রূপ নেয় এক সময়।

এ দেশে জন্ম নেয়া ছেলে-মেয়েরা এ দেশকেই তাদের দেশ বলে মনে করে ও এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশকে তাদের মনে হয় বেড়ানোর জায়গা বা বাবা-মার দেশ। তাদের আচরনেও সেটা প্রকাশ পায়। স্বাভাবিক কারনেই এ সব ছেলে-মেয়েদের আচরন, কথা-বাতর্া, চাল-চলন সব কিছুতেই ভিন্নতা প্রকাশ পায় তাদের মা-বাবার চাইতে। বাবা-মা আপাদমস্তকে বাঙালি কিন্তু ছেলে-মেয়ে অজি।

আমি একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি। এরা জন্মসুত্রে অজি হলেও অস্ট্রেলিয়ার মুল স্রোতের সাথে মিশতে কোথায় যেনো একটা বাধা রয়েছে। পড়াশুনা , কর্মক্ষেত্রে অজিদের সাথে মিশতে গেলে সমস্যা না হলেও সামাজিক বন্ধনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এজন্য এবিসিডি-অজি বিয়ে খুব একটা চোখে পড়া না। বাবা-মা দের দেখা যায় দেশী ছেলে বা মেয়ে খুঁজতে, সেটা দেশ থেকে আমদানি করাও হতে পারে বা আরেকজন এ.বি.সি.ডিও হতে পারে।

সাংস্কৃতিক পার্থক্যের জন্য বাবা-মার সাথে এদের একটা বিশাল গ্যাপের স্মৃষ্টি হয় যেটা আগেই বলেছি। অনেক এ.বি.সি.ডি কেই এজন্য ছোট বেলা থেকেই বাবা-মা ধর্ম শিক্ষা দিতে দেখা যায় আজ কাল। এজন্যই প্রতিটা শহরেই ইসলামিক স্কুল ও বাংলা শেখার স্কুলের অস্তিত্ত দেখা যায়। যার সংখা বাড়ছে কিন্তু ফলাফল অজানা এখনো।

ছেলে-মেয়েরা একটু বড় হলেই গার্লফ্রেন্ড বা বয় ফ্রেন্ড বানাচ্ছে, যা এখানে পুরোপুরি স্বাভাবিক। কিন্তু দেশ থেকে আসা বাব-মা দের পক্ষে সেটা মেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না । দেখা দেয় সংঘাত।

বাবা-মারা চান তাদের ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশের সংস্কৃতি শিখুক বা জানুক । সেটা গান-বাজনা বা সাহিত্যের মতো ধারায় হতে পারে। এর জন্য তারা চেষ্টাও কম করেন না। তবে অনেক ক্ষেত্রই সেটা সম্ভব হয় না তেমন একটা। আসলে এটা ঠিক আশাও করা যায় না অনেক ক্ষেত্রে কারন ছোট বেলা থেকেই যদি সে শিক্ষা না দেয়া হয় তবে বড় হলে সেটা হয় জোর করে বড়ি গেলানোর মতো ঘটনা। এজন্য লুংগি পড়া বাবার সাথে নাকে , ভুড়ুতে পাইরেসিং করা ছেলের সংঘাত অথবা শাড়ি পড়া মায়ের সাথে লো-কাট জিন্স পড়া মেয়ের সংঘাত হতে থাকে।

আমি এটাও লক্ষ্য করেছি এদের সবকিছু অজিদের মতো হলেও সাদা অজিরা এখনো ইন্ডিয়ান বলে এদের, অজি বলে না। এতো কিছুর পরও কোথায় যেনো একটা পার্থক্য রয়ে যায়।

আমি একবার আমার এক অজি হাউজমেট কে নিয়ে বাংলাদেশীদের ইফতার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় কিছু ছোট্ট ছেলে নিজেদের মধ্য ইংলিশ কথা বলছিলো। সেটা দেখে আমার অজি হাউজমেট ব্যাংগাত্বক ভাবে বলেছিলো " যতোই ইংলিশ বলুক অজি হতে এদের শত বছর লাগবে ও শরীরের রং বদলাতে হবে " । আমার অজি বন্ধুকে দোষ দেয়া যাবে না, সে বিয়ে করেছে একজন মালয়েশিয়ান-ইন্ডিয়ান কে। সে আমার চাইতে বেশি জানে এ বিষয়ে।

ধমর্ীও পরিচয় একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁরাচ্ছে আজ কাল প্রবল ভাবে। ইসলামি নাম নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় এদের। যেটা সাদা অজিদের ক্ষেত্রে হয় না। এ জন্য অনেকে নাম পরিবর্তন করে ফেলে। নাদিয়া হয়ে যায় ন্যাড, সুমন হয়ে যায় স্যাম।

আরেক ব্যপার লক্ষ্য করেছি আমি। অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর মাইগ্রেট এসেছে ইউরোপ থেকে। কেউ কেউ বা 60/70 বছড় ধরে এখানে। এরা অজির মূল স্রোতের সাথে মিশে গেলেও নিজেদের ভাষা বা সংস্কৃতিকে হারায়নি। সেই প্রজন্ম বা এখানে জন্ম নেয়া পজন্মকে এখনো দেখা যায় নিজেদের মধ্য কথা বলতে গিয়ে নিজেদের ভাষায় কথা বলতে বা নিজেদের মতো করে সব উৎসব ঊদযাপন করতে। চায়নিজ দের ক্ষেত্রে দেখছি এরা অস্ট্রেলিয়ার সব কিছু গ্রহন করলেও নিজেদের সত্বাকে ধরে রাখতে।

এ সব এ.বি.সি.ডি নিয়ে অনেক সময় শংকা হয় আমার। হয়তো সবার ক্ষেত্রে সেটা হবে না তবে অনেকের ক্ষেত্রেই সেটা হবে। নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম পরিচয় হারিয়ে এক সময় তারা এমন এক প্রজন্ম হয়ে উঠবে যার আসলে কোনো নির্দিষ্ট পরিচয় নাই। তবে সমালোচোনা করলেও অনেক অনেক ব্যতিক্রম আছে এখানে। বাংলার বিভিন্ন ধমিয় বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বা উৎসবে এদের সাবলিল অংশগ্রহন আমার ধারনাকে মাঝে মাঝেই ভুল প্রমানিত করে। আশান্বিত হই।

২০০৭-০৩-১২ ২০:০৯:২৬

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।