বুধবার, ১৩ জুন, ২০০৭

মফিজের ভারত ভ্রমন - 2 ( মালদা টু আলিগড় ট্রেন জার্নি)

২০০৭-০১-১৮ ০৮:৪৬:৩০

সন্ধা 6 টায় ট্রেনে চেপে বসলাম আমি ও আমার সেই বন্ধু। দুজনেরই উপরের বাংকে সিট পড়েছে। কি আর করা, আশা ছিল নিচে পড়বে , দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে যাবে দীর্ঘপথ।
প্রথমেই ঝামেলা হোলো এক বিহারীর সাথে।বিহারীরা এমনিতেই কেমন যেনো অসভ্য টাইপের হয়।
যাই হোক ট্রেন চলা শুরু হলো। বিহার আসতেই সাবধান হয়ে গেলাম, শুনেছিলাম বিহারীরা চোর,অসভ্য ও আক্রমনাত্মক হয়। সিট নিয়ে গ্যানজাম করে।অনেক রাতে টের পেলাম কে জানি আমার পায়ের উপর শোয়া। দেখি এক ব্যাটা। আমি সরতে বল্লাম, সে এমন এক দৃষ্টিতে তাকালো যে আর সাহস পেলাম না কিছু বলার।আর সেই বন্ধু আমার অবস্থা দেখে আর হাসে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি টয়লেটের সামনে বিশাল কিউ।সেই 2 রাত 3 দিনের লম্বা জার্নিতে আর টয়লেটে যাওয়া হয়নি । অবাক হচ্ছেন ? জনাব কথা সত্য।
বিহার আসতেই ভাষাও বদলে গেলো, বিচিত্র উচ্চারনে হিন্দি।হিন্দি এমনিতেই কম বুঝি ,তার উপর বিচিত্র উচ্চারন ! ট্রেন কোনো স্টেশনে থামতেই যেই জিগ্যেস করে " এ ট্রেইন কাঁহা যায়া " আমি বলি " মুঝে নেহি জানতা " , উত্তরে যে অবাক করা দৃষ্টি পেয়েছিলাম তা এখনও ভুলতে পারি না।
বলতে পারবেন ' মংফুলি ' কি ? মংফুলি শুনেই দিলাম ডাক , দেখি বাদাম !
আরেকটা জিনিস খেয়েছিলাম ' কাকড়ি' শসার মতো খেতে , গরমে অসাধারন।
দীর্ঘ রাস্তায় কত বার যে মাটির ভাঁড়ে চা খাওয়া হয়েছিল তা মনে নেই, অসাধারন ছিল চা, সাথে সিগারেট। আমি আমার বাংক থেকে আমার বন্ধুর সাথে সিগারেট শেয়ার করি আর সবাই চেয়ে চেয়ে দেখে।
পথে পরিচয় হোলো বি.এস.এফ এর অফিসারের সাথে, পানজাবি । তার খুব আগ্রহ বি.ডি.আর এর ব্যপারে। মনে যা আসলো তাই বলে গেলাম, সে তো অবাক।
কিছু বাংগালী ছেলের সাথে পরিচয় হয়ে গেলো, মজার সব ছেলে। দিল্লিতে কাজ করে সবাই।সারা পথে তারা অনেক সাহায্য করেছিল।ট্রেনে খাবার অডর্ার নিয়ে যায় একবার।প্রথম বার মিস করেছিলাম । তাই পথে লুচি আর আলু ভাজি খেতে হয়েছিল। দ্্বিতীয় দিন আর ভুল করিনি। খাবার আসার পর দেখি বিশাল পাতে প্রচুর ভাত, যেনো আমরা সবাই খাদক, তবে রান্না ভালো ছিল।পথে কত জায়গা যে পড়েছিল মনে নেই।
লৌখনও, একাহাবাদ, পাটনা; ঐতিহাসিক সব জায়গা।মোগল সরাই এ ট্রেন অনেক ক্ষন থেমেছিল। মথুরা আসার পর রাধা-কৃষনের কথা মনে পরা গিয়েছিল।
পুরি- বেনারস আসার পর দেখলাম জটাধারি সাধু। ট্রেন থেকে দেখা যাচ্ছিল বিখ্যাত সব ঘাটগুলোকে।অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম আর খুবি ইচ্ছা হচ্ছিল নেমে যেতে। কিন্তু হয়নি। বেটার নেক্সট টাইম বলে নিজেকে শান্ত করেছিলাম।
যেখানেই ট্রেন থামছিল আমরা দুই বন্ধু নেমে হাঁটছিলাম, যেনো দুই শিশু।
খুব সকালে আমরা আলিগড় পৌছুলাম। জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখি আবাক করা দৃশ্য। লাইন ধরে মানুষ প্রাতকৃত সারছে। আমরা যে তাকিয়ে আছি তার কোনো ভৃুক্ষেপই নেই, যেনো সবি স্বাভাবিক ব্যপার।ট্রেন থেকে যখন নামলাম তখন বিদ্ধস্থ অবস্থা দুজনেরই। রিকসা নিয়ে রওয়ানা হলাম স্যার সৈয়দ নগরের দিকে। ওখানেই হবে আমাদের সমায়িক নিবাস।
------
ছবি ঃ মালদা টু আলিগড় ট্রেন রুট।
আমার বন্ধুর নাম ঃ বলা যাবে না, বর্তমানে সে প্রধান উপদেষ্টার মনিটরিং অফিসার।

রেটিং:০.০/০
৩টি মন্তব্য
৬৭বার পঠিত

অতিথি বলেছেন :
২০০৭-০১-১৮ ১৫:১০:১৬
ভালই লাগতেসে পড়তে। চালাইয়া যান।
ভাসমান বলেছেন :
২০০৭-০১-১৮ ১৬:৪৪:১৬
আমারও এইরকম একটা অভিজ্ঞতা হইছিলো।ভালে িলিখছেন
অতিথি বলেছেন :
২০০৭-০১-১৯ ০৯:৩৪:০১
(চামহাসি)

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।